somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মধ্যযুগীয় বর্বর নির্যাতনে সিলেটে শিশু হত্যার পর সেই ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে!!!

১৩ ই জুলাই, ২০১৫ ভোর ৪:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সিলেটের কুমারগাঁও এলাকার একটি গ্যারেজ থেকে ভ্যান চুরির অভিযোগে এক শিশুকে পিটিয়ে হত্যার ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ার পর এ নিয়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়। প্রায় আধাঘণ্টা ধরে সেই নির্মম নির্যাতনের দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করেছে নির্যাতনকারীদেরই একজন।

গত ৮ জুলাই ২০১৫ তারিখ বুধবার সকালে শিশুটিকে হত্যার পর লাশ গুম করার প্রচেষ্টার সময় স্থানীয়রা হাতেনাতে একজনকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেছেন। নিহত সামিউল আলম রাজন (১৩) সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নের বাদেআলী গ্রামের মাইক্রোবাস চালক শেখ আজিজুর রহমানের ছেলে। তার মায়ের নাম লুবনা আক্তার। স্থানীয় অনন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করা রাজন সবজি বিক্রি করত।

কুমারগাঁও এলাকার একটি গ্যারেজ থেকে ভ্যান চুরির অভিযোগে গত বুধবার রাজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর একটি মাইক্রোবাসে তুলে রাজনের লাশ নিয়ে যাওয়ার সময় মুহিত আলম (২২) নামের একজনকে হাতেনাতে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেন স্থানীয়রা।

জালালাবাদ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আলমগীর হোসেন জানান, ওই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। যদিও কিছু কিছু সংবাদ মাধ্যম বলছে, মুহিত আলম সহ চারজনকে আসামি করে জালালাবাদ থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন রাজনের বাবা শেখ আজিজুর রহমান। এই মামলায় মুহিত আলম (২২), তার ভাই কামরুল ইসলাম (২৪), তাদের সহযোগী আলী হায়দার ওরফে আলী (৩৪) ও স্থানীয় চৌকিদার ময়না মিয়া ওরফে বড় ময়নাকে (৪৫) আসামি করা হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলোতে ছড়িয়ে পড়া ২৮ মিনিটের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, রাজনকে কুমারগাঁও বাসস্টেশনের একটি দোকানঘরের বারান্দার খুঁটিতে বেঁধে রাখা হয়েছে। এতে দুজন নির্যাতনকারীর চেহারা স্পষ্ট দেখা গেলেও কণ্ঠ শোনা গেছে অন্তত তিন-চারজনের।

ভিডিওতে দেখা যায়, একজন জিজ্ঞসে করছে, ‘এই ক (বল) তুই চোর, তোর নাম ক... লগে কারা আছিল...’ এসব বলতে বলতে রাজনকে ক্রামাগত পেটানো হচ্ছে। টানা প্রায় ১৬ মিনিট রাজনকে নৈশপাহারায় ব্যবহৃত গোলাকার লম্বা কালো লাঠি দিয়ে পেটাতে দেখা যায়। শিশু রাজন একপর্যায়ে কাতর হয়ে ক্ষীণ গলায় আর্তনাদ করতে থাকে ‘আমি মরি যাইয়ার! কেউ আমারে বাঁচাও রে বা!’ মারপিটের একপর্যায়ে কয়েক মিনিটের জন্য রাজনের হাতের বাঁধন খুলে রশি লাগিয়ে হাঁটতে দেয় নির্যাতনকারীরা।

এ সময় ‘হাড়গোড় তো দেখি সব ঠিক আছে, আরও মারো...’ বলে রাজনের বাঁ হাত খুঁটির সঙ্গে বেঁধে আরেক দফা তখন পেটানো হয়। ততক্ষণে নির্মম আঘাতে রাজনের শরীর ও চোখ-মুখ ফুলে গেছে ! নির্যাতনের দৃশ্য যে ভিডিও করছিল তাকে একপর্যায়ে নির্যাতনকারীদের একজন জিজ্ঞেস করে, ‘ঠিকমতো ভিডিও ধারণ হচ্ছে কি না।’ ভিডিও ধারণকারী তখন উত্তর দেয়, ‘ফেইসবুকে ছাড়ি দিছি, অখন সারা দুনিয়ার মানুষ দেখব।’

শেষ দিকে রাজন যখন লুটিয়ে পড়ে তখন নির্যাতনকারীদের একজন সঙ্গীদের কাছে জানতে চায়, ‘কিতা করতাম?’ অপর নির্যাতনকারী তখন বলে, ‘মামায় যে কইছন, ওই কাম করি ছাড়ি দে!’ শিশু রাজনের শেষ আকুতি ছিল, ‘আমারে পানি খাওয়াও!’ তখন তার চোখ-মুখ বেয়ে অঝোরে ঘাম ঝরছিল। এই আর্তনাদেও মন গলেনি পাষণ্ডদের। রাজনকে তখন তারা বলে, ‘পানির বদলা ঘাম খা!’ কিন্তু রাজনকে আর ঘাম খেতে হয়নি। ততক্ষণে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে ছোট্ট রাজন।

গোটা ভিডিওতে মারধরের সময় রাজনের আর্তচিৎকার এবং নির্যাতনকারীদের অট্টহাসি ও নানা কটূক্তি শোনা যায়। রাজনের নখ, মাথা ও পেটে কালো লাঠি দিয়ে আঘাত করার পাশাপাশি বাঁ হাত ও ডান পা ধরে মোচড়াতেও দেখা যায়। এরপর খুঁটির সঙ্গে বেঁধে আরেক দফা পেটানো হয় রাজনকে। এই সময় রাজন নির্যাতনকারীদের কাছে পুলিশে দিতে অনুরোধ করলে জবাবে নির্যাতনকারীদের একজনকে বলতে শোনা যায়, “আমি পুলিশ।”

জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আক্তার হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, গত বুধবার এ ঘটনার পর অভিযুক্তরা রাজনের লাশ গুম করার চেষ্টা করে। ওই দিনই পুলিশ লাশসহ মুহিতকে আটক করে। তবে ওই ঘটনা সাধারণ চোর পেটানোর ঘটনা হিসেবেই চাপা পড়ে যায়। মুহিতের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডের একটি ভিডিও জব্দ করা হয়েছে। ওসি জানান, ভিডিওচিত্রে নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের সাথে চারজন সম্পৃক্ত বলে দেখা গেছে। আদালত আজ রোববার মুহিতকে সাত দিনের হেফাজতে নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন।

রাজনের মা লুবনা আক্তার জানান, বুধবার রাতে ছেলে বাড়ি না ফেরায় তাঁরা জালালাবাদ থানায় জিডি করতে যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, একটি কিশোরের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। একপর্যায়ে জালালাবাদ থানায় তাঁরা তাঁদের সন্তানের মৃতদেহ শনাক্ত করেন। লুবনা জানান, স্বামী আজিজুর একজন মাইক্রোবাসচালক। যেদিন ভাড়ায় মাইক্রোবাস চালাতে পারেন না, সেদিন সংসারের খরচ চালাতে রাজন সবজি বিক্রি করতে বের হয়। বুধবার রাজনের বাবা গাড়িতে (ভাড়ার ট্রিপে) ছিলেন বলে বাড়ি ফেরেননি। তাই সেদিন ভোরে টুকেরবাজার থেকে সবজি নিয়ে বিক্রির জন্য বের হয় রাজন।

রাজনের মা লুবনা জানান, তাঁর দুই ছেলের মধ্যে রাজন বড়। অনন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাজন চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছে। রাজনের মা লুবনা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, 'আমার পুয়া (ছেলে) চোর না। ই কথা সারা এলাকার মানুষ জানে। (কামরুল) সৌদি আরব থেকে ফিরা অখলতের চোর ধরার সখ পূরণ করতে গিয়া জীবন দিছে আমার পুয়া! আমি ফাঁসি চাই। উচিত বিচার চাই।'

এদিকে শিশু রাজন হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে সিলেট সদর উপজেলার কুমারগাঁও এলাকাবাসী। আজ রোববার সকালে কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ডের পাশে মানববন্ধন করে এলাকাবাসী। মানববন্ধন শেষে এলাকাবাসী বিক্ষোভ কর্মসূচিরও আয়োজন করে। এ ছাড়া গতকাল শনিবার সকালে বাইয়ারপাড়া গ্রামবাসী তেমুখী পয়েন্ট থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জালালাবাদ থানার সামনে গিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা অবিলম্বে রাজনের খুনিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে ফাঁসির দাবি জানান।

শিশু রাজন হত্যায় গ্রেপ্তারকৃত মুহিত আলম শেখপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল মালিকের ছেলে। তার ভাই কামরুল ইসলাম সৌদি আরবে থাকে। কিছুদিন আগে কামরুল ইসলাম দেশে আসে। কামরুল যাতে পালাতে না পারে সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও জালালাবাদ থানার জানান ওসি দাবি করেন। রাজনের বাবা আজিজুর রহমান বলেন, তিনি যেদিন মাইক্রোবাস চালাতে পারেন না, সেদিন সংসার খরচ চালাতে সবজি বিক্রি করতে বের হত রাজন। ছেলের খুনিদের ফাঁসির দাবি জানান তিনি।

শিশু রাজন হত্যার এই ঘটনার দুটি দিক সুস্পষ্টভাবে খুবই স্পর্শকাতর এবং রাষ্ট্রের জন্য চরম লজ্বাজনক। প্রথমত চুরির অভিযোগ এনে নির্যাতনকারীরা নিজেরাই আইন হাতে তুলে নিয়ে শিশুটিকে মারা যাবার পূর্ব পর্যন্ত নির্যাতন করেছে। দ্বিতীয়ত রাষ্ট্রের প্রচলিত আইন ও বিচার বিভাগের প্রতি নির্যাতনকারীদের আদৌ কোনো আস্থা নেই। তৃতীয়ত রাষ্ট্রের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বিশেষ করে জালালাবাদ থানার পুলিশ এই ঘটনাকে নিতান্ত সাধারণ চোর পেটানোর ঘটনা হিসেবেই চাপা দিতে চেয়েছিল। পরে বাধ্য হয়ে মামলা নিলেও পুলিশ বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি। চতুর্থত এই ঘটনায় মামলা হলেও পুলিশ এখনো অপর আসামীদের ধরতে পারেনি। পঞ্চমত পুলিশ শিশু রাজনের হত্যাকে গুরুত্ব দেয়নি। গরিব মানুষের সন্তানকে চোর অভিযোগ দিয়ে মেরে ফেলায় বরং নির্যাতনকারীদের প্রতিই পুলিশের এক ধরনের দুর্বলতা এই ঘটনায় স্পষ্ট হয়েছে। কারণ এই ঘটনায় সৌদি প্রবাসী কামরুল ইসলামের কাছ থেকে বড় অংকের টাকার ধান্দার কারণেই পুলিশের এই রহস্যময় নির্লিপ্তা সুস্পষ্ট হয়েছে। কার্যত এই ঘটনায় এখন জালালাবাদ থানার পুলিশের বিরুদ্ধেও দায়িত্বে অবহেলার দায় চেপেছে।

রাষ্ট্রের প্রচলিত আইন ও বিচার কাঠামোর প্রতি আস্থা থাকলে হয়তো শিশুটিকে চুরির অভিযোগে আইনের কাছেই নির্যাতনকারীরা সমর্পন করত। যেহেতু আইন ও বিচার কাঠামোর প্রতি তাদের কোনো আস্থা নাই, তাই আইন নিজেরাই হাতে তুলে নিয়েছে। আর সেই কাজে নির্যাতনকারীদের সহযোগিতা করেছে স্বয়ং আইন শৃংখলার দায়িত্বে নিয়োজিত একজন নিম্নস্তরের সদস্য, স্থানীয় একজন চৌকিদার। ওই চৌকিদারের বরং দায়িত্ব ছিল, চুরির অভিযোগ যদি সত্য হয়, তাহলে শিশুটিকে আইনের কাছে সমর্পন করা। কিন্তু চৌকিদার ময়না মিয়া তা না করে নির্যাতনকারীদের উল্টো সহযোগিতা করেছে।

সবচেয়ে ভয়ংকর যে বিষয়টি সেটি হল, শিশুটির লাশসহ হাতেনাতে নির্যাতনকারীদের একজনকে ধরে স্থানীয়রা পুলিশে সোপর্দ করলেও, দিনের পরবর্তী সময়ে শিশুটিকে হত্যার জন্য পুলিশ সুস্পষ্টভাবেই যথেষ্ট তৎপরতা দেখায়নি। যে কারণে পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের এখনো আটক করতেও পারেনি। বা আটক করার মত প্রচেষ্টা বা সদিচ্ছাও দেখায়নি। পুলিশ বরং এই ঘটনা থেকে টাকা কামানোর একটা মোক্ষম উপায় পেয়েছে এমন একটি ভঙ্গি এখনো বজায় রেখেছে। শিশু রাজনকে নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা এবং হত্যা পরবর্তী সকল কর্মকাণ্ডই স্পষ্টত বাংলাদেশে শিশু নির্যাতন, নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা, বাংলাদেশের সামাজিক ব্যবস্থা, বাংলাদেশের পুলিশ ও বিচারবিভাগ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

জনগণের সেবা করার জন্য জনগণের ট্যাক্সের পয়সায় রাষ্ট্র যে পুলিশ লালনপালন করে, সেই পুলিশ একটি শিশুকে নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা এবং হত্যাকারীদের একজনকে হাতেনাতে ধরার পরেও কেন এমন রহস্যময় আচরণ করার সুযোগ বা সাহস পায়? তাহলে এই পুলিশ আসলে কোন ধাতুতে গড়া? এই নির্যাতনকারী আর এই পুলিশের মধ্যে আসলে তফাৎ কতোটা? নির্যাতনকারীরা শিশু রাজনকে নির্যাতনের মাধ্যমেই হত্যা করেছে। আর পুলিশ সেই হত্যাকে পুঁজি করে টুপাইস কামানোর একটি ধান্দা খুঁজেছে।

একটি শিশুকে নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যার পর লাশ গুম করার সময় নির্যাতনকারীদের একজনকে স্থানীয়রা ধরে দিলেও অন্য নির্যাতনকারীদের ধরার জন্য পুলিশ কেন তৎপরতা দেখায়নি? আইনের প্রতি অবহেলা করে পুলিশের এই যে ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি সচল রাখার প্রবনতা, তাহলে এই রাষ্ট্রে এধরনের পুলিশের কতোটুকু প্রয়োজনীতা রয়েছে?

স্বাভাবিক ভাবেই শিশু রাজনকে প্রকাশ্যে নির্যাতন, নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা, এই পুরো ঘটনা মোবাইল ফোনের ভিডিওতে ধারণ করা, সেই ভিডিও ধারণ শেষে তা আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে ছড়িয়ে দেওয়া এবং হত্যার পর লাশ গুম করার প্রচেষ্টা, এই সবগুলো কর্মকাণ্ডই দেশের প্রচলিত আইনের দৃষ্টিতে কঠোর শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

জব্দকৃত ভিডিও ফুটেজ রাজন হত্যা মামলার অন্যতম প্রামাণ্য দলিল, যা নির্যাতনকারীরা নিজেরাই তৈরি করেছে। রাজন হত্যায় জড়িত একজন আটক হলেও বাকিদের এখনো পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। দেশের প্রচলিত আইনেই এখন হত্যাকারীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক কঠোর সাজার ব্যবস্থা করতে হবে।

পাশাপাশি বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় আইন নিজের হাতে তুলে নেবার যে প্রবনতা, আইন ও বিচারবিভাগের প্রতি মানুষের যে অনাস্থা, আইন প্রয়োগে আইন শৃংখলা বাহিনীর যে গাফিলতি, আইনের অপপ্রয়োগ, ভিকটিম গরিব হলে পুলিশের মামলায় ইচ্ছাকৃত গরিমসি বা গুরুত্ব না দেওয়া, আসামীপক্ষ ধনি হলে পুলিশের টাকা খাওয়ার ধান্দা, এমন বিষয়গুলো যে এখন বাংলাদেশের প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থারই অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে, এটি একটি রাষ্ট্রের জন্য বড় ভয়ংকর দুঃসংবাদ।

বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সকল সংস্থার শিশু নির্যাতন ও শিশুকে রক্ষা করার সকল আইনকেই সমর্থন করে। তাই বাংলাদেশে একজন শিশুকে এভাবে নির্মম ভাবে নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করার পর হত্যাকারীদের কোনো ভাবেই রেহাই পাবার সুযোগ নাই। দেশের প্রচলিত আইনেও শিশু রাজন হত্যাকারীদের কঠোর সাজা হওয়ার কথা। কিন্তু বাংলাদেশে এভাবে যত শিশু নির্যাতন হচ্ছে, হত্যা হচ্ছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং এর বিচারকার্য যেনো ততোটাই ঢিলেতালে চলছে। সেই সুযোগে এ ধরনের নির্যাতন এবং নির্যাতন থেকে হামলাকারীদের পৈশাচিক উল্লাস করার প্রবনতা দিনদিন বাড়ছে। দেশে আইন আছে কিন্তু আইনের প্রয়োগ নেই, এই কথা আর কত দিন চালানো যাবে?

একুশ শতকের বাংলাদেশে হতভাগ্য শিশু রাজনকে পৈচাশিক ভাবে নির্যাতন চালিয়ে হত্যার মাধ্যমে হত্যাকারীরা স্পষ্টত একটি পূর্বাভাস দিয়েছে। কট্টরপন্থী সন্ত্রাসীরা যেমন বিভিন্ন নির্যাতন ও হত্যার ছবি ধারণ করে পরবর্তী সময়ে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে জনমনে ভীতি সৃষ্টি করতে চায়, শিশু রাজনকে নির্যাতন, নির্যাতনের ভিডিও ধারণ, এবং সেই ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার এই লক্ষনটি সুস্পষ্টভাবেই কট্টর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকেই অনুসরণ করার প্রবনতা। এক্ষেত্রে হত্যাকারীরা শুধু একজন শিশু রাজনকে হত্যা করেনি, বরং বাংলাদেশের গোটা সমাজব্যবস্থায় শিশু রাজনদের মত হতভাগ্যদের জন্য একটি ভীতিও ছড়িয়ে দিতে চেয়েছে। পাশাপাশি আইন যে নিজের হাতে তুলে নিয়ে এভাবে মধ্যযুগীয় বর্বরতায় একটি শিশুকে হত্যা করে পৈশাচিক আনন্দ নেওয়া যায়, এই নেগাটিভ ধারণাটি হত্যাকারীরা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছে।

মূলত শিশু রাজনকে এভাবে নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করে হত্যাকারীরা দেশের আইন ও বিচার বিভাগকেই বৃদ্দাঙ্গুলি দেখিয়েছে। এখন রাষ্ট্র এই ঘটনাকে কতোটা গুরুত্ব দেয়, তার উপরই নির্ভর করবে আগামীতে বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা পুর্নবার কতোটা ঘটবে বা এই ধরনের কর্মকাণ্ডের কতোটা বিস্তারলাভ করবে।

..................................
১৩ জুলাই ২০১৫
ঢাকা


সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০১৫ ভোর ৫:০৮
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×