রাসেদ তার বাবার লাশের পাশে গালে হাত দিয়ে বসে আছে, এখন আর তার চোখে পানি নেই কিন্তু গালে কান্নার দাগ স্পষ্ট, দু একজন মানুষ উকি দিয়ে দেখছে, রাসেদ কিছু দেখছে না। সে শুধু সামনে তাকিয়ে আছে, তার বাবার লাশটা ও তার কাছে এখন স্পষ্ট নয়, সে তাকিয়ে আছে তার কেবল ফেলে আসা কয়েক ঘন্টা আগে যেন সে এখানে নেই এটা একটা স্বপ্ন মাত্র অথবা...!
এই তো মাস দুয়েক আগে রাসেল ভর্তি হয়েছে কলেজে, সে সব সময় যেন হাওয়াই ওড়ে, গতকাল সে কলেজ শেষ করে তার ছাইকেলে চেপে নতুন একটা হিন্দি গানের সুর ভাজতে ভাজতে বাড়িতে আসল, দ্যাখে বাবা ভাত খাচ্ছে সে ও ড্রেস চেন্জ না করে কোন রকমে হাত মুখ ধুয়ে বাবার সাথে খেতে বসে গেল। বাবা তাকে ড্রেস চেন্জ না করে খেতে বসায় মৃদ ধমক ও দিল। সে বিকালে স্যারের বাসা থেকে পড়ে এসে দ্যাখে তার বাবা বারন্দায় শুয়ে আছে তার মা বাবার বুকে তেল মালিশ করে দিচ্ছে, আর ছোট বোনটা বাবাকে হাত পাখা দিয়ে বাতাস করছে, রাসেদ সাইকেল রেখে দৌড়ে বারান্দায় গেলে তার মা তাকে বলল, তোর বাবার বুকে ব্যাথা করছে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। তারপর গ্রামের ডাক্তার দ্যাখানো হল সেখান থেকে স্থানীয় হাসপাতালে। হাসপাতালের ডাক্তার রাসেদ কে ডেকে ঢাকার একটা নামকরা সরকারি হাসপাতালের ঠীকানা দিয়ে বাবা কে যতদ্রুত সম্ভব ওখানে নিয়ে যেতে বলল। রাসেদ তার মাকে এসে বলায় মা তো কান্নাকাটি শুরু করে দিল, কে নিয়ে যাবে তোর বাবাকে বলে, রাসেদ তার মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বল্ল, মা তুমি চিন্তা করোনা আমি বাবাকে নিয়ে যাবো। রাসেদ তার বাবাকে ঢাকার সে হাসপাতালে নিয়ে আসল, মা বাড়িতে থাকল টাকার যোগাড় করতে। আসার সময় রাসেদ মায়ের হাত ধরে বল্ল মা বাবাকে আমি সুস্থ করে দ্রুত বাড়ি নিয়ে আসব তুমি কান্না কাটি করোনা আমাদের জন্য দোয়া করো, তার বাবা ও তার মাকে বলেছিল তুমি কেদনা আমার কিছু হবেনা আমি দু এক দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে ফিরে আসব। সারা রাস্তা দোয়া দূরুদ পড়তে পড়তে রাসেদ তার বাবাকে নিয়ে পৌছাল সেই হাসপাতালে, পৌছানোর সাথে সাথে তাদের কে ঘিরে ধরল এক দঙ্গল মানুষ, কে কি বলছে প্রথমে কিছুই বূঝলোনা রাসেদ। একটু পর সে বুঝলো লোকগুলো তার বাবাকে ভর্তি করিয়ে দেবে সে জন্য তাদের কে টাকা দিতে হবে। সবাই মিলে তার অসুস্থ বাবাকে নিয়ে টানা টানি শুরু করে দিল সে তাড়াতাড়ি একজনের সাথে কন্ট্যাক্ট করে তার বাবাকে ভর্তি করিয়ে নিল। ভর্তির পর তার বাবাকে ফেলে রাখল মেঝেতে, অন্য একজন এসে বলল সে সিট ম্যানেজ করে দিতে পারে তাকে টাকা দিতে হবে, রাসেদ টাকা দিয়ে তার বাবার জন্য একটা সিট ও ম্যানেজ করল, ডাক্তার এসে দেখে কতগুলি টেষ্ট আর ঔষধ এর নাম লিখে দিল ছুটাছুটি আর সবখানে টাকা দিয়ে দিয়ে সেগুলো করে ফেলল রাসেদ, একদিনে সে যেন ওনেক বড় হয়ে গেছে, টানা টানির ধকলে রাসেদের বাবা আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছে, ডাক্তার এসে একাট ইন্জেকশান এর নাম লিখে দিল রাসেদের হাতে আর দ্রুত অক্সিজেন দিতে বলে চলে গেল, রাসেদ দৌড়ে চলে গেল ইন্জেকশান আনতে, এদিকে আয়ারা রাসেল এর বাবার অক্সিজেন আর দেয়না, কারন আগে টাকা নিতে হবে তার পর না অক্সিজেন, আগেই দিয়ে ফেললে পরে কি আর টাকা পাওয়া যাবে, এই জন্য তারা বসে থাকল রাসেদের আসার অপেক্ষায়, ভাগ্যের নির্মম পরিহাস রাসেদ ও ঔষধ টা সহজে পেলনা তাকে কয়েকটা দোকান খুজতে হল, এদিকে তার বাবাও সময় মত অক্সিজেন পেল না, রাসেদ ইন্জেকশান নিয়ে ফিরে এসে দ্যাখে তার বাবা আর নেই।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সকাল ১১:২২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




