ঐ অর্ধাহারী মানুষটাকে দেখুন,
অপুষ্টিতে ভোগা দু'শ ছয়টা হাড়
খুব সুন্দর করে গুনে শেষ করতে পারবে
অশিতীপর বৃদ্ধও। নিজের শরীরের ভার
যার বইতে গেলে জোড়ে জোড়ে শ্বাস
নিতে গিয়ে দম বন্ধ হয়ে যাবার যোগাড়
কেমন করে আপনার চার সদস্যের
সাত দিনের রাক্ষুসে বাজার বয়ে নিয়ে যাচ্ছে
নগ্ন পায়ে, হেঁটে? আর আপনি?
আপনার উদরে জমে আছে এক পাজা
থোকা থোকা সভ্যতার অসভ্য চর্বি,
গায়ে মানুষের মাংস থল থল, যেন
ঐ মানুষগুলোর শরীরের সমস্ত মাংস
কামড়ে খেয়ে রেখে এসেছেন
ঐ দু'শ ছয়টি হাড়। আর গায়ে জড়িয়ে
পরিপাটি জামা বেশ কেতাদুরস্ত ভাব
হেঁটে যাচ্ছেন একাকি ওর পিছু পিছু পাছে
আপনার সাত দিনের বাজার ঐ ছোট লোকের
বাচ্চা, পালিয়ে নিয়ে যায়। মাঝে মাঝে
আপনি হাতের বিদেশি রোলেক্স ঘড়ি দেখছেন
আভিজাত্যের ঢঙে, যেন স্বর্গে যাবার
শেষ ট্রেনটিও মিস হয়ে যাবে - এই তাড়ায়
ভদ্রলোকের ভোল পাল্টে রেগে উঠেন
ছোটলোকি কায়দায়, "ওই ব্যাটা হাট জোড়ে"।
শরীরে জমে থাকা কালের ময়লা ধূলি, আর
আপনার বোঝার ভারে তৈরি হওয়া ঘাম - একাকার
হয়ে মিলে বিভত্স্য উত্কট গন্ধ, আপনার
নাসারন্ধ্র হয়ে রাক্ষুসে মস্তিস্কে তীব্র জ্বালা ছড়ায়;
আপনি একবার পকেট থেকে সুগন্ধী টিস্যু বের করে
নাকে ধরছেন, আবার কখনও বুক পকেটে
নাক ঘষছেন ফরেন বিষ থেকে যেন
স্বর্গীয় সুগন্ধে শেষ বাচার চেষ্টায়।
আপনার চিন্তায়, ইশ! কিনে আনতেন যদি
আর কতক ইলিশ; সামনের মাসে পাওয়া না গেলে
সাধ মিটবে আঙ্গুল চুষে। এবার দয়া করে একটু সামনে
যান, দেখেন ওর ঘামে ভেজা মুখ, পড়তে পারছেন কি
ওর স্বপ্নহীন দু' চোখে কোন কথা ভাসে? কোমর দুলিয়ে
হাঁটছে, জোড়ে জোড়ে পা চলছে, আপনার তাড়ায় শুধু নয়
ওর কল্পনায় তখন আট জনের সংসার। আপনার দেওয়া টাকা
ওদের একজনের একবেলা, ধরতে হবে আপনার মত
আরো গোটা পনেরো খদ্দের , তবেই জুটবে আহার
আট জনের দুই বেলার। একবেলা আগে থেকে নাই,
একটু দেরি হলে আর একবেলা যাবে
অর্ধাহার কী একেই বলে! এত নিত্য দিনের ব্যাপার!
দেখুন ঐ উলঙ্গ শিশু, চার হাত-পা আকাশে ছুঁড়ে
কী এক বিশাল আর্তচিত্কার! ঘোমটার শাড়ি
বের করে দেয় উন্মুক্ত শুষ্ক বক্ষ - যেখানে থাকার কথা ছিল
ক্ষুধার যন্ত্রনায় কাতর ঐ শিশুর বেচে থাকার সুধা,
সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই এক বিন্দু, ব্যস্ত এই কৃষকবধু
উঠান-ডোয়া লেপে ধান শুকাবার - সে তো আপনারই আহার!
দেখুন ঐ অর্ধনগ্ন কৃষক, দেখুন ঐ
গামছার নেংটি পড়া জেলে, দেখুন না
একবার কামার-কুমাড়-তাঁতী, সবাই
কী ভীষণ ব্যস্ত আপনার সভ্যতার চাকা ঘুরাবার।
ওরা জীবিকার প্রয়োজনে সভ্যতা গড়ে, আপনার
সুখ সভ্যতার ভোগে, তাই আপনি সভ্য আর ওরা
অসভ্য গেঁয়োভূত-চাষা-জানোয়ার। তারপরও
আপনাকেই ওরা তোষে, আর আপনি
রক্তে-মাংসে-মেধায় বড় হচ্ছেন ওদের রক্ত চুষে।
ওরা হাভাতে মরে, ঘটে বিদ্যে পাবে কোথা থেকে
ওরা তাই পিষ্ট হয়ে মরে আপনার পদতলে। কি সুন্দর
বুদ্ধি করে ওদের দিলেন ফেলে এই চক্রের দুষ্টকলে।
তাই আপনার সন্তান হবে আরেকজন আপনি
আর ওদের? যোগ হবে আরেক ভুখা-নাঙা
অসভ্য মজুর-কামলার ।
জানি এই কবিতা ওরা কেউই পড়তে পারবে না
আপনিই শুনাবেন পড়ে আপনার মত করে।
দোহাই আপনার সৃষ্টিকর্তার, নিবেন না নাম তখন
এই অধম-নগন্য কবির ,অংশ করে বুদ্ধিবৃত্তি চর্চার।
আজ এখন এই মুহুর্তে অন্তত একবার আমি
আপনাকে "তুই" বলে ডাকতে চাই; সকল
শ্রমিকের শ্রম জনিত ঘামকে সালাম জানিয়ে
বলতে চাই -
গুষ্টি কিলাই তোর বুদ্ধি বৃত্তির, গুষ্টিকিলাই তোর সভ্যতার!

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




