৪২ বছরের কলঙ্ক রাষ্ট্র তার বুক থেকে ঝেড়ে ফেলবেÑ তেমন আশাই জেগেছিল গত মাসে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির রায়ে। অথচ দ্বিতীয় রায়ে এসেই বিশাল এক হোঁচট খেল সমগ্র দেশ। মানবতার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের ৬টির মধ্যে ৫টি প্রমাণিত হয়েছে বলে ট্রাইব্যুনাল অভিমত দিয়েছেন। অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় জাতি আশা করেছিল, কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তি হবে। কিন্তু রায়ে ঘোষিত কাদের মোল্লার দণ্ড যাবজ্জীবন। এ রায়ে তাই স্তব্ধ হয়ে গেছে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ। শহীদদের পরিবার-পরিজন যেন স্বজন হারানোর বেদনা নতুন করে পেলেন। তাদের আহাজারিতে বাংলার আকাশ কি আরেকবার ভারি হয়নি?
আইনের প্রতি শ্রদ্ধা ও বিচারের প্রতি পূর্ণ আস্থা রেখেই আমি আমার ক্ষোভ জানাতে চাই। পুরো জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে চাই- এই রায়ে আমার, আমাদের আশা পূরণ হয়নি। যে রায় হলে একাত্তরের শহীদ, লাঞ্ছিত মা-বোনদের ত্যাগের প্রতি সম্মান প্রকাশ পেত, এটি তেমন রায় নয়। সে কারণেই প্রতিটি গণমাধ্যমে জনমানুষের যে প্রতিক্রিয়া জানতে পেরেছি তা মোটেও স্বস্তির নয়। সবার জিজ্ঞাসা- ধর্ষণ, গণহত্যাসহ গুরুতর অভিযোগগুলো যেখানে প্রমাণিত হয়েছে, সেখানে যাবজ্জীবনের মতো লঘু শাস্তি দেয়ার কারণ কী?
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেইসবুকে প্রতিটি মানুষের স্ট্যাটাসে এই ক্ষোভ তীব্রভাবে প্রকাশিত। সমগ্রজাতি আজ ত্রিশ লাখ শহীদের কাছে লজ্জিত- এমন প্রতিক্রিয়াও উঠে এসেছে। অনেকে সন্দিহান হয়েছেন, আঁতাত নাকি ভয়! কেউ আবার এক ধাপ এগিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন, টানা ৯৬ ঘণ্টা হরতাল আর লাগাতার আন্দোলনের ডাকে না আবার দেলোয়ার হোসেন সাঈদী বেকসুর খালাস পেয়ে যায়। একজনকে দেখলাম উষ্মা প্রকাশ করলেন, শুকরের পাল দেখে সরকার এবং রাষ্ট্র ভয় পেয়েছে, লজ্জা-লজ্জা-লজ্জা। এমনি আরও হাজারো স্ট্যাটাসের কথা বলা যাবে যেগুলোর মূল সুরÑ এ রায়ে জাতি লজ্জিত। পত্রিকা মারফত জানতে পারলাম, কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার এক বাদী এ রায়কে প্রত্যাখান করেছেন, অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। ’৭১-এর নির্যাতিতরা এ রায় মানতে পারে না, মানেনি। সুখের কথা, তাঁদের সঙ্গে পুরো জাতির আবেগ-অনুভ‚তি আজ একসুরে বাজছে। ২০০৮-এর নির্বাচনে গণরায়ের পরও যদি এ সরকার আস্থাহীনতায় ভোগে তবে তাদেরকে সাহসী করার রসদ দিয়ে যাচ্ছে এই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে জনমানুষের অভিন্ন ক্ষোভ-অসন্তুষ্টি-খেদ। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ এবারও জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনে সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। কাদের মোলøার বিচারের রায়ের আগের দিন জামায়াত নেতারা দাম্ভিক স্লোগানে (একাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার) শকুনকে আহ্বান করেছিল। এই আহ্বানে ভীত হওয়ার কিছু নেই। মনে রাখতে হবে ওদের একাত্তরের হাতিয়ার যতই বর্বর আর ষড়যন্ত্রী হোক না কেন আমাদের একাত্তরের হাতিয়ার অনেক বেশি সাহসী, ত্যাগী। তাই ওরা পরাজিত আর আমরা ছিনিয়ে এনেছিলাম স্বাধীনতার লাল সূর্য। একাত্তরে যেমন পেরেছিলাম, প্রয়োজনে আবার পারব।
(৭ ফেব্রুয়ারি, আমাদের অর্থনীতি পত্রিকায় প্রকাশিত।
পত্রিকার অনলাইন সংস্করন: আমাদের সময়।)

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




