somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কাজী রিফাত
এক প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়ালেখার চেষ্টা করে চলেছি,চেষ্টা সফল হচ্ছে না।ভার্সিটি আমাকে টানে না।কাজের কাজ যেটা হচ্ছে গলায় 'পড়ালেখায় করছি' এমন একটা সার্টিফিকেট ঝুলে আছে।

যে শহরে তুমি নেই,সে শহর আমার না।

৩০ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১১:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(লেখাটার মূল বিষয়বস্তু পুরনো।বিশেষ এক মানুষকে উৎসর্গ করে লেখা হয়েছিলো।মানুষটা চলে গেছে।আমার মস্তিষ্কে কিছু সুন্দর স্মৃতিই শুধু রেখে গেছে। :) )

ধানমন্ডি ১৩/২ রোডে একটি পুরনো গোছের দোতলা বাড়ি।বাড়ির নাম রেহেনুমা কটেজ।বাড়ির নামেই শুধু রেহেনুমা রয়ে গেছে,আসল রেহেনুমা মারা গেছে বেশ কয়েক বছর আগে।রেহেনুমার একমাত্র মেয়ে নীরা।সবেমাত্র এস এস সি পাশ করে কলেজে উঠেছে।ইদানিং সে কলেজে যাচ্ছে না।কলেজ তার ভালো লাগে না।দিনের একটা সময় সে ছাদে হেটে বেড়ায়।সকালের চড়ুইগুলোর সাথে কথা বলে,দুপুরের রোদ নিজ গায়ে মাখে,সন্ধ্যার লালচে আভা দেখে মুগ্ধ হয় আবার রাতে জোছনা দেখে হু হু করে কেঁদে ওঠে।

রেহেনুমা কটেজের সামনে আরেকটা দোতলা বাড়ি।বেশ কিছুদিন খালি থাকার পর হটাত একদিন একটি পরিবার আসে সেই বাড়িতে।নীরা ছাদ থেকে পরিবারটাকে পর্যবেক্ষণ করে।হাসিখুশি একটি পরিবার।সকাল হলে একসাথে সবাই নাস্তা করে ফেলে।গৃহকর্তা অফিসে চলে যায়,মেয়েটা কলেজে যায়,বড় ছেলেটা চশমা চোখে ভার্সিটি যায় আর মা ঘর গোছানোতে ব্যস্ত হয়ে পরে।বিকেলে বড় ছেলেটা হারমোনিয়াম নিয়ে বসে যায়।পাশে মা আর ছোট বোন বসে গান শোনে।তারা হয়তো লক্ষ্য করে না দূর থেকে আরেকটা মেয়ে একমনে গান শোনে।

বিকেল শেষে সন্ধ্যের লালচে আভা আকাশ ঢেকে ফেলে তখনো ছেলেটার গলায় সুর থাকে আর নীরা সেই সুরে মুগ্ধ হয়।

ইদানিং নীরা দিনের পুরো সময়টাই ছাদে থাকে।বিকেলের অপেক্ষা করে,অপেক্ষা করে অযাচিত একটা কন্ঠের,দূর থেকেই চশমা পরা একটা ছেলে তাকে শাসন করে।সদ্য কলেজে ওঠা নীরা হয়তো বুঝতেই পারে না দূর থেকে শাসন করার অধিকার শুধু প্রেমিকরাই রাখে।বিকেল হয় হারমোনিয়ামে সুর ওঠে।

"বিরহের এ রাত একেলা কেঁদে হলো ভোর
হৃদয়ে মোর শান্তি নাহি কাঁদে পরান মোর॥
হে মদিনাবাসি প্রেমিক ধর হাত মম"

নীরা পাগলের মত হাত বাড়িয়ে রাখে বাড়িটার দিকে,ছেলেটা সেই হাত দেখে না।হয়তো দেখে।আমি জানি না।

যেভাবে হটাত করে বাড়িটাতে একটা পরিবার এসে উঠেছিলো সেভাবেই হটাত করে বাড়িটা একদিন খালি হয়ে যায়।বাড়ির সামনে একটি গাড়ি আসে তাতে আসবাবপত্র বোঝাই হয়।নীরা ছাদে দাঁড়িয়ে অবিশ্বাসী চোখে তাকিয়ে থাকে।নীরার বুকে ঝড় ওঠে,সেই ঝড় রেহেনুমা কটেজেই সীমাবদ্ধ।আসবাবপত্রের গাড়িটা চলে যায়।একটু পর বাড়ির অন্য সদস্যরা রিক্সায় উঠে রওনা দেয়।নীরার খুব ইচ্ছা হয় চিৎকার করে বলতে

"প্লিজ আপনারা যাবেন না।আপনারা কি জানেন বন্ধুবিহীন জীবনে আপনারাই আমার একমাত্র বন্ধু?আপনারা চলে গেলে আমি কাদের দিকে তাকিয়ে থাকবো?আচ্ছা আপনারা চলে যান কিন্তু ঐ চশমা পরা ছেলেটাকে রেখে যান।বিকেলে ওনার গান না শুনলে আমার ঘুম হবে না।প্লিজ আপনি যাবেন না।"

নীরা বলতে পারে না।শুধু নীরা না,কোন নিঃসঙ্গ মেয়েই হয়তো বলতে পারে না।

রিক্সা চলতে শুরু করে,একসময় রেহেনুমা কটেজের আড়ালে চলে যায়।ঠিক এই সময় কোন এক বাড়িতে টেপরেকর্ডার বেজে ওঠে।

"চলে যদি যাবি দূরে স্বার্থপর,আমাকে কেন জোছনা দেখালি?
হবি যদি নাও ভাসিয়ে দেশান্তর,পাথরের বুকে ফুল কেন ফোটালি?"

নীরা আজকাল কলেজে যায়,কলেজে যায় বললে ভুল হবে।কলেজ এপ্রোন পরে শহরভ্রমনে বের হয়।যেই শহরে চশমা পরা একটা ছেলে হারিয়ে গেছে।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১১:৫৯
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×