এই পোষ্টটা একটা কপি পেস্ট পোষ্ট।
মূল পোষ্ট পাবেনঃ আমারবর্ণমালা এবং সোনারবাংলা ব্লগে
সামু থেকে সদ্য ব্যানকৃত ব্লগার লালসালু শাহরুখ খানের বাংলাদেশ অভিযান নিয়ে পোষ্ট দিয়েছেন।
এই পোস্টে আমি কোন কমেন্ট গ্রহন করব না।
পোষ্টঃ
শাহরুখ খানে বাংলাদেশে এসেছে, ভাল পারফর্ম করে গেছেন। ব্লগে ব্লগে ওনার বিরুদ্ধে অনেক পোষ্ট এসেছে। সবাই একটা কথা বুঝাতে চেয়েছেন তা হল “বাঙ্গালীর জাত গেল”! কেউ অস্বীকার করতে পারেন নি বৈশাখী টিভিতে ওনার অনুষ্ঠান দেখেন নি, তার মানে যারা ওনার সমালোচনা করেছেন তারা ওনার অনুষ্ঠান দেখেই সমালোচনা করেছেন। আমি গতকাল ঐ সময়ে ব্যস্ত ছিলাম। আশুলিয়ায় নিজের একটা অফিস নিয়েছি, সেই অফিসের উদ্ভোধন ছিল গতকাল। বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত সাড়ে দশটা। এসে শাহরুখ খানের কনসার্টের শেষ অংশ দেখার সৌভাগ্য/দূর্ভাগ্য হয়েছে। নতুন কিছু দেখলাম না। বাসার সবাই মিলে মানে বাবা মা ভাই বোন সবাই মিলে প্রোগ্রাম দেখলাম! ব্রা পেন্টি পড়ে নর্তকীরা নাচানাচি করল, দেখে কেউ কারো সামনে লজ্জা পেল না। কারন, গত দশ/পনের বছরে ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলো আমাদের ব্রেইন যেভাবে ওয়াশ করেছে তাতে আমাদের চোখ থেকে লজ্জা দূর হয়ে গেছে। প্রথম প্রথম (দশ বছর আগে) ভারতীয় টিভিতে যখন এ ধরনের দৃশ্য দেখাত তখন দ্রুত টিভি চ্যনেলে বদলানো হত। অথবা মুরুব্বিকে টিভি রুমে রেখে আমরা চলে আসতাম। এখন ডিজুস যুগ হয়ে গেছে। এখন আর আগের মত লজ্জা লাগে না।
মনে পড়ে, আমার খালাতো বোনকে একবার এক ইভ টিজার ‘সেক্সী’ ডেকেছিল, সে বাসায় এসে ঐদিন প্রচুর কান্নাকাটি করেছিল। কয়েকদিন সে স্কুলে যায় নি। এখন সে নতুন ড্রেস পড়ে তার বন্ধু বান্ধবীদেরকে জিজ্ঞেস করে “দেখ, এই পোষাকে আমায় সেক্সী লাগে না?” সবই হল টিভির খেলা। একসময় যেটা তার কাছে গালি মনে হল এখন সেই শব্দ তার কাছে ‘গৌরবের’ মনে হয়। আমি ভারতের চ্যানেলের সঙ্গীত প্রতিযোগিতা দেখেছি। সেখানে উপস্থাপক গায়িকাদের কন্ঠকে ‘সেক্সী’ কন্ঠ বলেন, চেহারা সুন্দর হলে বলেন “ইউ আর লুকিং সেক্সী” সেই গায়িকাও খুব খুশি হয়, সাথে সাথে তার বাবা মাকেও দেখানো হয়, বাবা মার গর্বিত হাস্যোজ্জল মুখ। যেন বাবা মা খুব খুশি হয়েছে কারন তার মেয়ে সেক্সী! এভাবে ধীরে ধীরে এই ভাইরাস বাংলাদেশে ছড়ানো হয়েছে। বাংলাদেশে এখন সুন্দরী প্রতিযোগিতা হয়, স্টেজে শর্ট স্কার্ট পরে মেয়ে পার্ফম করছে মানে তার দেহপল্লব সারা দেশের মানুষকে দেখাচ্ছে আর দর্শক সারিতে মেয়েটির বোরখা পরা মা গর্বিত নয়নে মেয়েকে দেখছেন। এই ভাইরাস এমনভাবেই দেশে ছড়িয়েছে এখন আর কোন এন্টিভাইরাস দিয়ে সারানো সম্ভব কিনা সন্দেহ! একেবারে বুট সেক্টরে হামলা করেছে।
শাহহরুখ খানের কথা দিয়ে শুরু করেছি, আজকের আলোচনাটা ওনাকে নিয়েই। শাহরুখ খান শুধু আমি কেন সারা বাংলাদেশে ওনার অনেক ভক্ত আছে। উনি আমাদের দেশে এত জনপ্রিয় যে যদি জিয়াউর রহমনের বাড়ী বগুড়া উনি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নির্বাচনে দাঁড়ান তাহলে খালেদা জিয়া জামাতন হারানোর ভয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবন নিশ্চিত। তবে ওনার স্টেজ শো এর বিরুদ্ধে এত কথা কেন? ব্লগাররা যুক্তি দিয়েছেন শাহরুখ খানের স্টেজে ব্রা পেন্টিওয়ালা নর্তকীদের পোষাক ছিল আপত্তিজনক। ওনাদের কাছে আমার প্রশ্ন, এই পোষাকের মেয়ে কি আপনারা টিভিতে দেখেন নি? ভারতের ফিল্মে এই পোষাক তো স্বাভাবিক। শুধু ফিল্মেই নয় ভারতের যেকোন কনসার্টেই তো এই পোষাকে মেয়েরা নাচে। এটা আমাদের চোখ সয়ে গেছে। সেদিন আর বেশীদিন দূরে নয় যেদিন বাংলাদেশের মেয়েরা ওপেন প্রোগ্রামে এই পোষাক পরে নাচবে। মেয়ের বাবা মা মেয়েকে এই ধরনের নাচ শেখানোর স্কুলে ভর্তি করাবে। মেয়ে অর্ধ নগ্ন পোষাকে যখন স্টেজে উঠবে তখন লুল দর্শক তালি দিবে শীষ দিবে তখন বাবা মায়ের বুকটা গর্বে ফুলে উঠবে, তাদের জনম স্বার্থক হল। তাদের মেয়ে আজ সুপারস্টার! এই প্রসঙ্গে একটা কথা মনে পড়ে গেল। আমার এক সাবেক রুমমেটের বাড়ী কুষ্টিয়ায়। ঐবার জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে ব্যারিষ্টার আমীরুল ইসলাম ঐ আসন (কুষ্টিয়ার একটা আসন) থেকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন। তখন ওনার মেয়ে ব্যারিষ্টার তানিয়া আমীর এক জনসভায় চিত্রনায়ক নাঈমকে নিয়ে আসবেন। সবাই দূর দূরান্ত থেকে বাস ভাড়া করে ঐ প্রোগ্রামে যাচ্ছিল। আমার বন্ধু তার আরেক বন্ধুকে জিজ্ঞেস করল “ঐহানে যাওয়ার কি আছে?” চিত্রনায়ক নাঈম তো এত আহামরি গোছের কেউ না। বন্ধুর জবাব “আরে নাঈমকে দেখতে কে যায়? আমীরের লন্ডনে পড়ুয়ায় মেয়েটা (তানিয়া আমীর) কঠিন মাল! একেবারে ………………….. খাসা। তাছাড়া তানিয়া হাফ প্যান্ট পড়ে সমাবেশে আসবে। সবাই ঐ মেয়ের ফর্সা রান দেখতে যাবে। আমার বন্ধু প্রশ্ন করল “তানিয়া হাফ প্যান্ট পড়ে সমাবেশে আসবে এটা কীভাবে জানলা?” বন্ধুটি উত্তর দিল “এর আগে কয়েকটা সমাবেশ হয়েছিল, সেখানে তানিয়া হাফ প্যান্ট পড়েই এসেছিল। তাই চল বকবক না করে তানিয়া আমীরের রান দেখে আসি। কয়দিন পরে মেয়েটা বুড়ী হয়ে যাবে তখন দেখে আর মজা পাবি না। তাছাড়া সে যখন নিজেই নেত্রী হয়ে যাবে তখন মাথায় ঘোমটা থাকবে!”
এটা প্রায় চৌদ্দ বছর আগের কথা। আমার বিশ্বাস এখন আর কেউ ওনার রান দেখতে বাস ভাড়া করে যাবে না, সবার হাতে হাতে মোবাইল আছে মেমরি কার্ডেই দুই একটা খাঁটি বাঙ্গালী নারীর পর্ণ ভিডিও আছে। গোপন ক্যমেরায় তোলা না, মেয়েটার ইচ্ছাতেই ভিডিও করা হয়েছে যা মেয়েটার ক্যমেরার সামন পোঁজ দেখলেই বোঝা যায়।
শাহরুখ খানের বিষয়ে আলোচনা শুরু করে ওনার বিষয় বাদ দিয়ে অন্য কথা বলার মানে হল “বাঙ্গালীর লজ্জা শরম দূর হয়ে গেছে”।
এখন আবার আসি শাহরুখ খানের কথায়। উনি ঢাকায় যে প্রোগ্রাম করেছেন সেটাকে অনেকে উলঙ্গ প্রোগ্রাম বলছেন। আমি বলছি এই ধরনের প্রোগ্রাম বাংলাদেশে অহরহ হয়, তবে স্টেডিয়ামে টিকেট কেটে এই প্রথমবার হয়েছে।
আমি বিজিএমইএ ইন্সটিটিউট অব ফ্যাশন এন্ড টেকনোলোজীর (বিআইএফটি) ছাত্র ছিলাম। বাংলাদেশে গারমেন্টস শিল্প প্রসারের জন্য প্রতি বছর দুটি মেলা হয় একটা বাটেক্সপো আরেকটা নীটেক্সপো। বিআইএফটির ছাত্ররা বাটেক্সপোতে ভলান্টিয়ারের কাজ করে। বাটেক্সপোর তিন দিন ব্যাপী অনুষ্ঠানে প্রতি রাতে কালচারার প্রোগ্রাম হয় যেখানে ভারতীয় নর্তকীরা নাচে ও ভারতীয় শিল্পীরা গান গায়। ২০০৩ সালে ঐ প্রোগ্রামে বোম্বে ভাইকিংস, শান এদের গান দেখেছিলাম, সাথে ছিল নাচ ফ্রি। নাচ মানে ঐ একইঃ ব্রা প্যান্টি পড়ে রান দেখানো। রাস্তার ধারে যেসব পোলাপাইন ইভ টিজিং করে তারা সাধারনত বেকার শ্রেনীর। আমাদের ধারনা সমাজের উঁচু শ্রেনীর মানুষরা ইভ টিজিং ফিজিং এ নেই। ঐ প্রোগ্রামে যারা উপস্থিত ছিল তাদের বেশিরভাগ ছিল গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীর মালিক ও তাদের পরিবার। একেকবার নাচের বিশ্রী অঙ্গভঙ্গির সাথে সাথে তারা শীষ বাজিয়ে উল্লাস করছিল। অনেকে অনেক আজে বাজে কমেন্ট করছিল। সবচেয়ে ভদ্র কমেন্টটা হল “এই মেয়েকে এক রাত পেলে…………………”
বিআইএফটির ছাত্র হিসেবে হোটেল সোনারগাঁ, শেরাটনের অনেক ফ্যশন শোতে অংশগ্রহন করেছিলাম। মানে আমি সাইজে লম্বা ছিলাম (প্রায় ছ’ফুট) বলে আমাকে নিয়মিত মডেল হতে হত। তাছাড়া আমার গায়ের রং কাল ছিল। যেসব পোষাক কালো রঙের মানুষকে মানায় তা আমার গায়ে পরানো হত। এভাবে ২০০২ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত সোনারগাঁ শেরাটন সহ অনেক ফ্যশন শোতে অংশগ্রহন করেছিলাম। প্যারিস থেকে একবার একটা মডেলের দল আসল। তারা ঢাকায় একটা ফ্যাশন শো করল। প্রত্যেকটা ফ্যশন শো’র একটা থিম থাকে মানে ঐ ফ্যশন শো’তে কি ধরনের পোষাকের বা কোন কোন আইটেমের মার্কেটিং হবে তার একটা ধারনা কাস্টমারদের দেয়া হয়। ঐ ফ্যশন শো’র উদ্দেশ্য ছিল ‘ঘরের ভিতরে সেক্সী পোষাক” মানে ঘরের বৌ তার স্বামীকে আকর্ষণ করতে হলে কিছু স্পেশাল পোষাক পরতে হবে। সেইসব পোষাকের প্রদরশনী। আমার মনে তখন প্রশ্ন জেগেছিল “ঘরে কি স্বামী স্ত্রী ছাড়া আর কেউ থাকে না?” ঐ প্রোগ্রামে দেখলাম দর্শকরা একেকটা মডেল দেখছে আর লুলধ্বনি করছে। সত্যি করে বলছি মডেলরা সব ফিনফিনে পোষাকে ছিল যার ভিতরে ব্রা প্যন্টি ছিল না। আলাহর কসম, ভিতরের সবকিছু দেখা যাচ্ছিল! পরে শুনেছি, ঐ প্রোগ্রামের ঐ মেয়েগুলিকে “বাংলাদেশের ভিআইপি কাস্টমারদের কাছে রাতে শোয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।” এবং বুঝলাম এটাই সেই প্রোগ্রামে আসল উদ্দেশ্য।
আমার এই পোষ্টের মূল বক্তব্য হলঃ শাহরুখ খানের দোষ দিয়ে কোন লাভ নাই। উনি দেশে আসার আগেই আমরা বাঙ্গালীরা লুল হয়ে গেছি। ওনার বদনাম করার আগে নিজেকে ভা মানুষরূপে গড়ি।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১:২২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



