somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মা

০৮ ই আগস্ট, ২০১০ রাত ৮:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পৃথিবীতে আমি যাদের ভালোবাসি তাদের মধ্যে আমার মা সবার ওপরে।জন্মের পর থেকে আমাদের প্রতি তার ভালবাসার নমুনা দেখে বিস্মিত হই।একজন মানুষ কিভাবে তার সন্তানদের এতো ভালবাসতে পারেন?একথা মনে হয় সব মার জন্যেই সত্য কিন্তু আমি যেহেতু আমার মাকে দেখেছি তাই তার কথাই বলছি।বুঝ হওয়ার পর থেকেই বাবার সাথে একটা দুরত্ব তৈরি হয়েছিল।তাই মা-ই ছিল একমাত্র আশ্রয়।একদিন সন্ধাবেলা বাবা চুল কাটার জন্য সেলুনে নিয়ে গেলেন।তারপর বাসায় ফিরে বললেন 'যা,গোসল করে আয়'।মার অনুমতি ছাড়া সেলুনে যাওয়া তারওপর সন্ধাবেলা গোসল করা দুইটা বেপারে মা'র প্রবল আপত্তি ছিল।বাবা কে একপশলা বকাঝকা করে মা তার কাজে চলে গেলেন।বাবা এই সুযোগ এ আমারে ভালো করে সাওয়ার এর নিচে দলাইমালাই করে গোসল করিয়ে দিলেন।ফলশ্রুতিতে যা হয়ার তাই হলো।রাতে প্রচন্ড জ্বর।তখন মার চেহারা খানি হয়েছিল দেখার মতো।বাবাকে মুখ দিয়ে এমন রাম ধোলাই দিলেন যে বাবার জন্য তখন আমার অন্তর থেকে একটাই শব্দ বের হয়েছিল-'বেচারা'।এরপর মা পরলেন আমাকে নিয়ে।প্রথমে মাথায় পানি দিলেন এরপর গা মুছিয়ে ওষুধ খাইয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলেন।আমি তখন আধো ঘুম আধো জাগরনের মধ্যে।কিন্তু মাঝে মাঝেই কপালে পাচ্ছিলাম মার হাতের স্পর্শ।অনেক রাতে জ্বর বেড়ে গেলো।সাথে সাথে বেড়ে গেলো মার চিন্তা।সারারাত ধরে মাথায় পানি দিলেন।সকাল হলো।তাও মা পাশে বসে থাকলেন।আমাদের তিন ভাইয়ের জ্বর হলে খিচুনি উঠে যায়।তাই মা সারারাত জেগে ঘন্টার পর ঘন্টা মাথায় পানি দিলেন।যেই বাবার জন্য অবস্থা তার দেখা পেলাম সকাল বেলা।এসে জিজ্ঞেস করলেন-'কিরে জ্বর কি খুব বেশি?'ব্যস তার কাজ শেষ।এটা ছিলো জ্ঞান হয়ার পর আমার প্রথম অসুখের বর্ননা।এরপর জিবনে আর ও বহুবার জ্বর হয়েছে এবং প্রতিবার এক মমতাময়ী নিজের সব কষ্ট মুখ বুজে সহ্য করে আমাকে আরোগ্য করেছেন।তিনি আমার মা।
পাচ বছর হতে চল্লো ঢাকায় এসেছি।হলে থাকি।এখনও মাঝে মাঝে জ্বর হয়।চুপচাপ পরে থাকি।মাথায় এখন কেউ পানি দেয় না।রাতে কারো স্পর্শ পাই না কপালে।কেউ মুখে তুলে খাইয়ে দেয় না।মাঝে মাঝে চোখ দিয়ে টপ টপ করে দুয়েক ফোটা পানি পরে।আর ওইদিকে মার'ও চোখে জল আমার কথা ভেবে।খোদা দুনিয়াতে ভালবাসার অনেক ধরন দিয়েছেন।কিন্তু সন্তানের প্রতি মার এই ভালবাসার বুজি কোন তুলনা হয় না।
ছোটোবেলায় গোসল করে কাপড় চোপড় বাথরুম এ ফেলে চলে আসতাম।সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে দাত মেঝে নাস্তা করে স্কুল এ চলে যেতাম।কখনো ভেবে দেখিনি ময়লা কাপড় চোপড়গুলো কে ধুলো,বিছানাটা কে পরিস্কার করলো,নাস্তাটা কে বানালো।স্কুলে প্রায় প্রতিদিন নতুন নতুন ইস্ত্রি করা জামাকাপড় পরে যেতাম।তখন ভাবিনি কে এই ময়লা জামাগুলো ধুয়ে ইস্ত্রি করে রেখেছে।এখন ভাবি।এখন বুজি।এখন তো নিজের কাপড় নিজেকেই ধুতে হয়,ইস্ত্রি করতে হয়।নিজের বিছানা নিজেই গুছাই।খুব কষ্ট হয়।এখন ভাবি মা বিশটা বছর কিভাবে এই কাজগুলো নিয়মিত করতেন?কোনদিন তো তার মুখে কষ্টের লেশমাত্র দেখিনি।এখন সব থেকে বেশি খারাপ লাগে যখন জিন্স প্যান্ট গুলা ধুই।একেকটা জিন্স প্যান্ট পানিতে ভিজানোর পর কমসেকম ১০কেজি ওজন হয়।আর মা এরকম জিন্স প্যান্ট কতগুলা ধুয়েছেন তার তো কোন ইয়ত্তা নেই।ইশস কতো কষ্টটাই না দিয়েছি।মা হয়তো সব ভুলে গেছেন।কিন্তু আমি ভুলি কি করে?
যেদিন বুয়েট ভর্তি পরিক্ষার ফল দিলো সেদিন আমার চান্স পাওয়ার খবর শুনে মার চোখে পানি চলে এসেছিলো।সেটি ছিলো আনন্দ অশ্রু।কিন্তু আমার চোখ দিয়ে তো পানি বের হয়নি।তাহলে কি আমার থেকে আমার মার খুশিটা বেশি ছিল?মা-বাবার কাছ থেকে আজ অনেকগুলো বছর আমি বিচ্ছিন্ন।তাদের অনুপস্থিতি খুব একটা ফিল করি না।কিন্তু মা ঠিক-ই প্রতিদিন ফোন করেন।কি খেলাম,কি করি,কেমন আছি জানতে চান।মাঝে মাঝে এই ভালবাসার নামটা কি জানতে বড়ো ইচ্ছা হয়।পেপার বা টিভিতে কোন খারাপ খবর দেখলে মা ফোন করেন।রুম থেকে বের হতে বারন করেন।মাঝে মাঝে খুব বিরক্ত হই।কিন্তু আমার প্রতি তার ভালবাসার গভীরতা যখন টের পাই তখন সব রাগ ,বিরক্ত পানি হয়ে যায়।
বন্ধ পেলেই বাসায় চলে যাই।ইন্টার পর্যন্ত বাসাটাকে নরক মনে হতো।কিন্তু এখন স্বর্গ মনে হয়।দুরে থাকার কারনে মা আমাকে যতোটা মিস করেন তার পুরটাই পুষিয়ে নিতে চান।সকাল বেলা ঘুম থেকে ডেকে তোলেন না।মাথায় হাত বুলিয়ে দেন।চোখ মেল্লে বলেন 'নাস্তা করবি না'।এই কথা শোনার পর কেন জানি মন পেট দুটোই ভরা মনে হয়।
মায়ের তুলনা শুধু মা।এত কথা বললাম তাও মনে হচ্ছে কিছুই বলা হয়নি।যতটা ফিল করি তার কিছুই লিখতে পারলাম না।আমার গায়ে একটি চোট যেনো মায়ের মনে একটি ক্ষত।এতো কথা বলার পর একটা কথাই বলার আছে-"মা,আমি তোমাকে অনেক অনেক অনেক বেশি ভালবাসি।"
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×