ক্রস ফায়ার, ধর্ষণ-অসামাজিক কার্যকলাপসহ বিভিন্ন মামলার ভয় দেখিয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত একজন কানাডিয়ান নাগরিকের নিকট থেকে জোরপূর্বক বিবাহ রেজিস্ট্রি ভলিয়ম বইয়ে স্বাক্ষর নেয়ার অভিযোগে দিনাজপুরের খানসামা থানার ওসি কৃষ্ণ কুমার সরকারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। আদালত ওসির বিরুদ্ধে মামলা আমলে নিতে সরকারের নিকট পূর্ব অনুমতির জন্য প্রয়োজনীয় আদেশের কপি পাঠিয়েছে।
বুধবার বিকেলে দিনাজপুর বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত-২ (খানসামা)-এ এই মামলা দায়ের করেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক তারিক আব্দুল্লাহ। আদালতের বিচারক মো. ইসমাইল হোসেন খানসামা থানার ওসি পাবলিক সার্ভেন্ট হওয়ায় ফৌ:কা:বি: ১৯৭ ধারার বিধান মোতাবেক তার বিরুদ্ধে মামলা আমলে নিতে সরকারের নিকট পূর্ব অনুমতির জন্য প্রয়োজনীয় আদেশের কপি পাঠিয়েছে।একই সঙ্গে ওসিসহ ১০ জন আসামির বিরুদ্ধে জুডিশিয়াল ইনকোয়ারির আদেশ দিয়েছেন আদালতের বিচারক।
মামলার বিবরণে জানা যায়, মামলার বাদী তারিক আব্দুল্লাহ ২০০৪ সাল থেকে কানাডার নাগরিক। কয়েকমাস আগে তিনি দিনাজপুরে আসলে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে তার নিকট আত্মীয় খানসামা উপজেলার পাকেরহাট এলাকার আব্দুল জব্বার মিয়া তার স্বামী পরিত্যক্ত মেয়ে রাহানা জান্নাতের সঙ্গে কানাডিয়ান নাগরিক তারিক আব্দুল্লাহর বিয়ের প্রস্তাব দেয়।এতে তিনি রাজী না হওয়ায় ২৮ জুলাই আব্দুল জব্বার মিয়া, এনামুল হক, রাহানা জান্নাত, এহছান্নুল্লাহ, একরামুল, মাজেদা বেগমসহ কয়েকজন জোরপূর্বক বিয়ের জন্য তারিক আব্দুল্লাহকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে আটকিয়ে রাখে। পরে বিষয়টি মোবাইলে খানসামা থানার ওসি কৃষ্ণ কুমার সরকারকে জানানো হলে পুলিশ পাঠিয়ে কানাডিয়ান নাগরিকসহ অন্যান্যদেরকে থানায় নিয়ে আসে।পরে সেখানে এক বৈঠক হয় এবং বৈঠকে ক্রয় ফায়ার, ধর্ষণ মামলা, অসামাজিক কার্যকলাপসহ বিভিন্ন মামলার ভয় দেখিয়ে ওসি অন্যান্যদের সহযোগিতায় জোরপূর্বক ১০ লক্ষ এক দেনমহর ধার্য করে বিবাহ রেজিস্ট্রির ভলিয়ম বইয়ে স্বাক্ষর নেয়। মামলার অভিযোগে বাদী উল্লেখ করেন তাকে উদ্ধারের জন্য ওসি ২০ হাজার টাকা উৎকোচ গ্রহণ করেছেন।এসব অভিযোগের ভিত্তিতে মামলার বাদী তারিক আব্দুল্লাহ খানসামা থানার ওসি কৃষ্ণ কুমার সরকারসহ আব্দুল জব্বার মিয়া, এনামুল হক, রাহানা জান্নাত, এহছান্নুল্লাহ, একরামুল, মাজেদা বেগম, মতিয়ার রহমান বুলবুল, আব্দুল কাদের মিয়া ও কাজী সাফিউর রহমানের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন।
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম জানান, যেহেতু ওসি কৃষ্ণ কুমার সরকার একজন পাবলিক সার্ভেন্ট। তাই কা:বি: ১৯৭ ধারার বিধান মোতাবেক তার বিরুদ্ধে মামলা আমলে নিতে সরকারের কাছে পূর্ব অনুমতির জন্য প্রয়োজনীয় আদেশের কপি পাঠিয়েছে আদালত। পাশাপাশি ওসিসহ অন্যান্য আসামিদের বিরুদ্ধে জুডিশিয়াল ইনিকোয়ারীর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
দিনাজপুর সিনিয়র চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে খানসামার ওসি কৃষ্ণ সরকারের বিরুদ্ধে অজু হওয়ায় দিনাজপুর পুলিশ সুপার স্ট্রেন্ড রিলিজ করে লালমনির হাট সদর থানায় পাঠানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, যে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি গ্রেফতার বাণিজ্য করার অভিযোগে যে সব থানার ওসিদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে খানসামার থানার ওসি বর্তমান স্টেন্ড রিলিজ প্রাপ্ত কৃষ্ণ সরকার পঞ্চম স্থানে রয়েছে।
আরোও জানা গেছে ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় খানসামার ৫৪ টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪৮টি কেন্দ্র বিএনপি জামায়াত পুরিয়ে দেয়। ৪৮ টি ভোট কেন্দ্র পুড়িয়ে দেয়ায় খানসামা থানায় ৪৮ টি মামলা হলেও কোন মামলার এজাহারে বা চার্জসিটে থানা বিএনপি ও কিংবা জামায়াত শিবিরের উপজেলা পর্যায়ের কোনো নেতা কর্মীর নাম নেই বলে অভিযোগ করেন জেলা যুব লীগের সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম।