somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার লেখক মশাইকে নিয়ে আরেকটি গল্প!

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
লেখকমশাইয়ের কলম



ও বসে বসে লিখছে আর আমি পাশে বসে ওর জন্য তৈরি করে আনা কফিটুকু খাচ্ছি। সবসময় লিখতে বসার আগে ও আমাকে এক কাপ কফি দিতে বলে কাগজ কলম নিয়ে লেখায় মনোনিবেশ করে তারপর আমি কফি নিয়ে আসলে ও এমনভাবে লেখায় ডুবে থাকে যে আর কফির দিকে ফিরেও তাকায় না। তাই বাধ্য হয়ে বসে বসে আমিই কফিটুকু খাই।
আমার লেখকমশাই লিখে ভাল। লোকমুখে শুনতে পাই আমি নাকি বেশ ভাগ্যবতী। লেখকমশাইয়ের মত নাকি মানুষই হয় না। ও কলম চালিয়ে যাচ্ছে। আমি ওর খাতার দিকে তাকিয়ে আছি। আমি যে ওর লেখা পড়ছি তা না, আমি দেখছি ওর কলম চালানোটাকে। লেখালেখি করার জন্য ওর এই স্পেশাল কলমটাকে আমার বেশ হিংসে হয়। কি রকম বেহায়ার মত কলমটা সারাক্ষন ওর সাথে সাথে থাকে। ওর বুকপকেটটাকে নিজের করে দখল করে রেখেছে। কলমটাকে ও কতই না ভালবাসে। কালি শেষ হয়ে গেলে নতুন শিষ কিনে নিয়ে আসে তবু কলমটাকে ও হাতছাড়া করে না।

আমি একবার ওর জন্মদিনে খুব সুন্দর একটা কলম এনে দিয়েছিলাম। ও বেশ খুশিও হয়েছিল। আমার জন্য চারলাইনের একটা কবিতা লিখে ধন্যবাদও জানিয়েছিল। আমি বলেছি ঢং না করে এখন থেকে এই কলম দিয়েই লিখবে তুমি। ঐ পুরানো কলম ছাড়ো। দুদিন লিখেছিলোও বেশ। কিন্তু তার কিছুদিনপর আমি রান্নাঘরে কাজ করছিলাম এমন সময় ও দৌড়ে এল। খুশিতে গদগদ অবস্থা। শুধালাম ব্যাপার কি? খুশির চোটে তার মুখ দিয়ে কথা বের হয়না। তবুও অনেক কষ্টে বলল, জানো তোমার দেয়া কলমটার কালিটা খুব ভাল। বললাম, এতদিনে মনে হল? ও আরো খুশিতে আটখানা হয়ে আমাকে বলল, এটার শিষটা না আমার কলমটার সাথে ম্যাচ করেছে। আমি এটার শিষ দিয়ে আমার কলমটা ব্যবহার করব। বুঝলাম বেচাড়া তার কলমটা ছাড়তে পারছে না তাই "সাপও মরবে, লাঠিও ভাঙবে না" পলিসি এপ্লাই করেছে। কিছু বললাম না।


ও লিখছে। বললাম, বাজার করে আনো। আজকে রান্না করার কিছু নেই। কোন জবাব দিল না। আবারো বললাম, বাজারে যাও একটু। এবার ও কথা বলল, এ লেখাটা শেষ করে নেই। তারপর যাবো। অপেক্ষা করে রইলাম। ওর লেখা আর শেষ হয় না। রাগ হল। আমি উঠে অন্য ঘরে চলে গেলাম। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। ও টেবিল থেকে উঠেছে। বলল, বাজারের ব্যাগ দাও। আমি চুপ করে দাড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি। ওর মুখটা হাসি হাসি দেখাচ্ছে। ভ্রু কুঁচকে তাকালাম। আমার তাকানো দেখেই ও বুঝে গেল আমি কি জানতে চাচ্ছি।বলল, আসলে গল্পের এন্ডিংটা চমত্কা র হয়েছে একেবারে আমার মনের মত। তাই ভাল লাগছে।

ও বাজারে চলে গেল। আমি ওর টেবিলে রাখা খাতা কলম গুছাচ্ছি। আমি ওর বই পত্র গুঁছাতে গিয়ে কখনো ঝামেলা লাগাতে চাই না। আর তাছাড়া বই পড়ার দিকে আমার তেমন একটা মনোযোগ নেই। বহুকষ্টে আমি ওর দুটো বই পড়ে শেষ করেছি। তারপরও অনেককিছু বুঝিনি পরে ওকে জিজ্ঞেস করে ক্লিয়ার হলাম। টেবিল গুঁছাতে গিয়ে আবারো আমার কলমটার দিকে নজর গেল। তারপর কি মনে করে ওর খাতাটা উল্টালাম। আজকে কি লিখেছে যে ওর মুখটা এত হাসি হাসি, দেখতে মনে চাচ্ছে। প্রথমে চোখ পড়ল গল্পের টাইটেলের দিকে! টাইটেল দেখে আমার চোখ ছানাবড়া । "তোমার দেয়া কলম আমার বুক পকেটে রাখা"- আমার মাথা ঘোরা শুরু হয়ে গেল। চোখে অন্ধকার দেখছি। কোন রকমে চেয়ারটা টেনে বসে পড়লাম। ওর কলম প্রীতি আমি বেশ খেয়াল করেছি কিন্তু এতটা ভাবতে পারিনি। রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে। কলমটা হাতে নিলাম। কে দিয়েছে এটা? ওর অতীত নিয়ে চিন্তা করছি। আমি ছাড়া ওর জীবনে কোন নারী আছে বলে জানতাম না। তবে কলমটা দেয়া কার?

দুদিন পর। ও লিখতে বসেছে। আমি ওর জন্য কফি করতে গেলাম। ও আমাকে ডাকল, শুনছো? আমার কলমটা পাচ্ছি না। আমি ভাল করে খুঁজে দেখতে বললাম। ও সব ওলট পালট করে রান্না ঘরে চলে এল। বলল, তুমি প্লিজ খুঁজে দাও না। আমি পাচ্ছি না তো। আমি ওর টেবিলে এসে অনেক খোঁজাখুঁজি করলাম। পেলাম না। তারপর ওকে বললাম, অন্য তো আরো অনেক কলম আছে। একটা দিয়ে লিখলেই তো হয়। ও বলল, ধুর না। এই কলমটা ছাড়া আমার লেখা হয় না। আগামীকাল একটা গল্প জমা দিতে হবে। প্রকাশক একটু আগেও ফোন করেছিল। গল্পটার হাফ শেষ করেছিলাম। কি করি বলো তো এখন। বললাম, অফিসে নিয়ে গিয়ে ভুল করে রেখে আসো নি তো? ও মাথা ঝাকালো, কলমটা আমি কখনই এভাবে কোথাও ফেলে আসি না। আমি টেবিলেই রেখেছিলাম। কি আর করবো বেচাড়া কলম খুঁজে পেল না। লেখালেখিও বাদ দিয়ে গালে হাত দিয়ে বসে আছে। অন্য কলম দিয়ে যে চেষ্টা করে নি তা না। দেখলাম
দু এক লাইক আঁকিবুকি করে রেখে দিল।

রাতে হঠাত্‍ আমায় ঘুম ভেঙে গেল। মন খারাপ লাগছে। ওর কলম প্রীতি আর গল্পের নাম মিলে একটা গন্ডোগল অবস্থা মনের ভিতর। হঠাত্‍ খেয়াল করলাম চোখ বেয়ে গড়িয়ে পানি পড়ে আমার বালিশ ভিজে যাচ্ছে।
সকালে ও অফিসে চলে গেলে আমি পুরো ঘরটা এলোমেলো করলাম। কলমটা খুঁজে পেলাম শেষপর্যন্ত। খাটের একটা কোণায় পড়ে ছিল। ফোন করে ওকে জানিয়ে দিলাম "কলম পাওয়া গেছে"। ও তেমন একটা আগ্রহ দেখালো না। খুব অবাক হলাম আমি।

রাতে বাসায় ফিরলে কলমটা ওর হাতে দিয়ে বললাম, নাও আমার সতীনকে খুঁজে পেয়েছি। ওকে তুমি বুক পকেটে রাখো। ও একটু চোখ চিকন করে আমার দিকে তাকালো তারপর কলমটা নিয়ে টেবিলের ওপর রেখে দিল। মুখে কোন কথা নেই। ভাবলাম কলম হারিয়ে ও কি বাকরুদ্ধ হয়ে গেল নাকি? ফ্রেশ হয়ে এসে আমার পাশে বসল। কোন কথা নেই মুখে আমিও চুপচাপ। প্রথমে ও-ই কথা বলল, আচ্ছা আমাকে তোমার কেমন লেখক বলে মনে হয়? এ কথা শুনে আমি চমকে উঠলাম। বললাম, ভাল। ও বলল, কি করে বুঝলে?

এবার আর আমি উত্তর খুঁজে পেলাম না। আসলেই তো কি করে জানলাম ও ভাল লেখক! এবার ও বলল, তুমি আসলে জানই না আমি কেমন লেখক। আমার বউ কখনোই আমার খাতা পত্র উল্টিয়ে আমার লেখা গল্প পড়তে আগ্রহী হয় না। একথায় আমার নিজেকে একটু অপরাধী বলে মনে হল। বললাম, হঠাত্‍ এমন মনে হল কেন? ও কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল, দুদিন আগে আমি একটা গল্প লিখেছি পড়েছো তুমি? আমি ধীরে ধীরে মাথা নাড়লাম। ও হাসল, এ থেকে বোঝা যায় তুমি আমার গল্প টল্প পড়ে দেখো না। আমি বললাম, পড়ি নি তো কি হয়েছে? ও আবারো হাসল। বলল, তেমন কিছু হয় নি। আমার খুব রাগ হল। ওকে চেপে ধরলাম, বলো কি হয়েছে?

ও মুচকি হাসল। কেমন যেন রহস্যময় লাগছে ওর হাসি। বলল, আমি ভাবতাম তুমি আমার লেখালেখিটাকে খুব পছন্দ করো। আমি বললাম, করি তো। আমি তোমাকে নিয়ে প্রাউড ফিল করি। ও হাত দিয়ে আমার কথাটা উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করল। বলল, কোথায় তুমি পছন্দ করো? পছন্দ করলে তো একবার অন্তত পড়ে দেখতে। আমার ভীষণ রাগ হয়ে গেল, পড়িনিতো কি হয়েছে? ও বলল, গল্পটা ছিল একটা প্রেমের গল্প। একটা কলমকে কেন্দ্র করে লেখা। কাহিনীর এক পর্যায়ে নায়ক-নায়িকার মাঝে কলমটা একটা দূরত্ব সৃষ্টি করে। কারন নায়কের কাছে কলমটা খুব মূল্যবান। নায়িকা কারণটা জানে না তবে সে খুব জেলাস হয়। একসময় ও কলমটা গুম করে ফেলে। তারপর আর কাহিনী আগাচ্ছিল না। এক পর্যায়ে খেয়াল করলাম আরে আমারো তো একটা প্রিয় কলম আছে। কিন্তু তুমি কলমটাকে কিভাবে নাও আমি তা জানিনা। ভাবলাম তাও একটা টোপ ফেলে দেখি। আমি ভেবেছি তুমি আমার গল্পটা পড়বে। অনেকবেশি জেলাস হবে আর কলমটার একটা হেস্ত নেস্ত করবে। পরে দেখলাম কলমটা যেখানেরটা সেখানেই পড়ে আছে। পরে নিজেই গুম করে দিলাম কলমটা। খাটের এক কোনায় ফেলে রাখলাম তারপর খোঁজাখুঁজি করি। তোমার কাছে কলমটার গুরুত্ব তুলে ধরি। আমি ভেবেছিলাম তুমি খুশি হবে কলমটা নেই। কিংবা কোন একটা রিএক্ট করবে। আমি সেটাই গল্পে তুলে ধরতে চেয়েছিলাম। এন্ডিংটা করতে পারছিলাম না। তা না তুমি কি করলে পুরো ঘর খুঁজে কলমটা ঠিকই বের করে ফেললে। এইটা কিছু হল? তখনি বুঝলাম আমার লেখালেখি খাতা কলমে তোমার কোন আগ্রহ নেই।

আমি ওর দিকে বিহ্বল হয়ে তাকিয়ে আছি। কিভাবে যেন চোখে পানি চলে এসেছে। চোখ দুটো বড় যন্ত্রনার। দুঃখ খুশি কোনটাই মানে না সাথে সাথে পানি এনে দেয়। খুশিতে আমার কি যে করতে ইচ্ছে করছে বুঝতে পারছিলাম না। কলমটা হাতে নিয়ে আমি ওর আরেকটু কাছে গিয়ে বসলাম। ওর কাঁধে মাথা রেখে রহস্যময় ভঙ্গিতে বললাম এন্ডিংটা না হয় আমিই লিখে দিব। ও আমার দিকে অবাক হয়ে তাকালো। আমি মুচকি হেসে বললাম, তোমার দেয়া কলম আমার বুক পকেটে রাখা। ওর চোখ বড় বড় হয়ে গেল। আমার খুব ইচ্ছে হল ওর এই চোখের মাঝে আমি চিরতরে হারিয়ে যাই।

লেখক মশাইকে নিয়ে লেখা আগের গল্পটি এখানে।

এই গল্পটা নিয়ে একটা স্ক্রীপ্ট লিখেছি। স্ক্রীপ্টটি দেখতে হলে এখানে ক্লিক করুন।


সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৫
২১টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×