- আপনি ডায়রি লেখেন ?
- আর বোলেন না, কতবার যে শুরু করলাম .. একদম কন্টিনিউ করতে পারিনা ..
বলতে বলতেই কম্পিউটার স্ক্রিন থেকে উপরে তাকাই ... সিলিং ছুইছুই করা ৪ টা তাকে বই, সিডি, ডিভিডি রাখা। একদম নিচেরটায় এলোমেলো সিডি, ডিভিডি .. যখনই দেখি তখনই মনে হয় গুছায় রাখা দরকার। পরে গুছাই - ভেবে সাথে সাথেই অবশ্য কম্পিউটারে ডুবে যাই আবার। আর সেই "পরে" টা আর আসতেই চায়না। সিডির উপরে বইয়ের তাকটার অবস্থা অবশ্য অত খারাপ না। একটু খুজতেই পেয়ে গেলাম যা চাচ্ছিলাম।
- দাড়ান তো একটু। একটা জিনিস দেখি।
- আচ্ছা।
তাক থেকে নামানো ডায়রির পাতা উল্টাই। দু'টা মোটা ডায়রি। কত কিছু লিখতে চেয়েও লেখা হয়নি প্রায় কিছুই। হঠাৎ করে জীবনের মত মনে হয় কি। এটা সেটা করতে চাই। কয়টাই বা করা হয়ে ওঠে।
একদম সামনের দেখি কয়েক পৃষ্ঠা লেখা আছে।
- আগের লেখা পাইসি কয়েকটা।
- তাই ? পড়েন তো।
- একদম অল্প কিন্তু..
- আরে কোন ব্যাপারনা.. পড়েন ..
হেডফোনটা ঠিক করে নেই। নেট এ নতুন পরিচিত বন্ধুর সাথে কথা হচ্ছিল। একথা সেকথায় দেখি দুজনেই সেবা প্রকাশনীর কিশোর ক্লাসিকের অনেক ভক্ত। অনেক কথা বললাম বই আর নিজেদের টুক টাক বিষয়ে। পছন্দের অনেক মিল দেখে আড্ডা জমে ওঠে। জানলাম, বন্ধুটা ব্লগ লেখেন। ব্লগের কথা থেকে ডায়রির কথা শুরু হয়। সেখান থেকেই শুরু বইয়ের তাক থেকে অনেক বছরের পুরাতন আমি টাকে খুড়ে বের করার চেষ্টা..
- ২০০০ সালের লেখা.. ২৫শে ফেব্রুয়ারী..
"আসলে অনেক সময় পরিস্থিতি মানুষকে অনেক কঠিন সময়ের মুখোমুখি করে দেয়। এক সাথে অনেক কিছু চিন্তা করতে হয়। অনেক কিছু ভেবে, নিজের কিছু দোষত্রুটি, ভুলভালের মধ্যে থেকে সবার কাছে নিজেকে গ্রহণযোগ্য করে তোলার আশাটা বোকামিই হয়তোবা"
খাইসে!! কি কাঠখোট্টা ভাষা রে বাবা। এসব আমি লিখসি!!
- হেহেহে। থামলেন কেন?
- নাহ। কেমন করে জানি লেখা। শক্ত শক্ত লাগতেসে। নিজের লেখা পড়ে নিজেই কিছুটা লজ্জা, কিছুটা দ্বিধার সাথে বলি।
- এত কিছু ভাবতে হবে না। বন্ধু উৎসাহ দেয়।
তখন যেমন করে ভাবতেন তেমনই লিখসেন। অসুবিধা কোথায়।
কিছুটা উৎসাহ পেয়ে, কিছুটা নিজের কৌতূহল থেকে কলেজ জীবনের কথা ভাবতে ভাবতে পড়তে থাকি ..
" দোষত্রুটি, ভুলভালের মধ্যে থেকে সবার কাছে নিজেকে গ্রহণযোগ্য করে তোলার আশাটা বোকামিই হয়তোবা। তবুও কলেজের অনেক পরিস্থিতিতে এতটা দুঃখিত, বিব্রত, হতবুদ্ধি হতে হয়। ... "
বন্ধুটাকে আমার সেসব ছেলেমানুষি পড়ে শোনাতে গিয়েই আমার সবশেষে লেখা নোট টা পেলাম।
"২০ শে ডিসেম্বর, ২০০৬
কত দিন পর ডায়রি লিখতে বসলাম মনে নাই। অনেক ছোটখাট, কিছু বড়সর ঘটনা ঘটে গেছে। কতো নতুন মানুষের সাথে পরিচয়, changes in the depth of relationships.. এটা সেটার অভিজ্ঞতা-- চিন্তা করলেই মনে হয়, কিছু লিখে রাখা উচিত ছিল। অনেক কিছুই আর কখনোই হয়তো মনের দরজায় নক করবে না ... "
চুপ হয়ে যাই। অনেক ছোটবেলার কথা, স্কুল-কলেজের কথা, বন্ধুদের স্মৃতি একসাথে করার চেষ্টা করি। ভাবতে থাকি। ছিড়ে যাওয়া চিঠি জোড়া দেয়ার জন্য টুকরোগুলো খুঁজতে থাকি যেন। অনেক কিছু পাই, কিন্তু তার চেয়ে বেশি পাইনা...
বন্ধু যেন মনের কথা বুঝতে পারে।
- আপনি লেখা শুরু করেন। ডায়রি, ব্লগ যেটা ইচ্ছা। তাহলে চিন্তাগুলো আর হারাবে না।
আমি হাসি। চাপা পড়া অতীত গুলোও হেসে ওঠে নাকি।
- ঠিক বলসেন। লেখার চেষ্টা করবো এখন থেকে। মনে অপ্রয়োজনীয়, এলোমেলো, কতো কিছু জমে আছে। কিন্তু অনেক প্রিয় মুহূর্ত হারায় ফেল্সি ..
মনের দরজায় এসে টোকা দেয়ার সুযোগ করে দিতে স্মৃতিগুলোর জন্য রাস্তা বানানো শুরু করি আমি...
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ ভোর ৬:৪৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




