ঘর থেকে বের হতেই কাঁপা শুরু করলাম .. কি ঠান্ডা রে বাবা.. উপরে তাকায় দেখি আকাশেরও ভীষণ মন খারাপ করা চেহারা.. কান্নাকাটি শুরু করলে সমস্যা .. ছাতা নিতে হবে তাহলে, ভাবতে ভাবতে মোবাইলে আবহাওয়ার অবস্থা দেখি। ভালই ঠান্ডা। ১ডিগ্রী সে. এর মত। সংখ্যাটাকে সমর্থন করতেই যেন কাঁপুনি আরো বেড়ে যায়। দুপুরের পর দেখি বরফ ও পড়বে। পড়লে সেটা হবে এই শীতে টোকিওতে দ্বিতীয়বারের মত তুষারপাত। তবে সাধারণত মার্চের এ সময় এত ঠান্ডা থাকেনা। ফেব্রুয়ারীর শেষ থেকেই ঠান্ডা কমা শুরু হয়। আর এবার জানুয়ারী, ফেব্রুয়ারীতে কিছু নাই, মার্চে এসে তুষার!!
ইমিগ্রেশনের কাজ ছিল কিছু। কাজ শেষে বহুজাতিক মানুষের কিচির মিচিরে ভর্তি অফিসটা পেছনে ফেলে বের হই। বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত হেঁটে ৫/৬ মিনিট। সিটে বসে জানালা দিয়ে টাইম টেবিলের সংখ্যাগুলো দেখতে থাকি। বাস ছাড়ে.. সংখ্যাগুলো ছোট হতে হতে মিলিয়ে যেতেই এলোমেলো ভাবনা এসে মনের দখল নিয়ে টানাটানি শুরু করে.. টানাহেঁচড়াতে এই সাতসকালেও ক্লান্ত লাগে যেন। তখনি আবার নিজেকে রিস্টার্ট দেবার কথাটা মনে হয়। গত দেড়/দু'বছর থেকে কতবারই তো চাচ্ছি। চাই আর ভাবি। ভাবতে ভাবতে হ্যাং করার মতোই আটকে যাই.. মাঝেমধ্যে নিজের থেকে পালাই হয়তোবা। আজকেও মনের ভেতরের অবুঝ, বিষণ্ণ, কিছুটা হতাশাবাদী ডঃ হাইডের সাথে কথা শুরু হয়ে গেল।
-কেন কেন ? রিস্টার্ট দেবার কি দরকার, ভালই তো আছ..
-ভাল থাকলে কি আর রিস্টার্ট দেয়ার কথা আসে।
-আজকেই কেন দিতে হবে। কাল দাও। পরশু দাও। আর কয়েকদিন পরে সমস্যা কি ?
বলতে পারতাম এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে। আর দেরি না করি।
তা না বলে নিজেই ভাবা শুরু করলাম, তাই তো, আজকেই কেন রিস্টার্ট দিবো। কি এমন বিশেষত্ব আজকের দিনের।
ভাবতে ভাবতে তারিখটা মনে পড়লো, ২০০৯ এর ৩রা মার্চ.. হেসে ডঃ হাইড কে বললাম, ২০০৯ এর সংখ্যাগুলো যোগ করলে হয় ১১(২+০+০+৯)। ১১ কে বাইনারি হিসেবে ভেবে সাধারণ সংখ্যায় পরিবর্তন কর। হয়ে যাবে ৩। ৩ সালের ৩য় মাসের ৩য় দিন। আর ৩ আমার অনেক পছন্দের সংখ্যা। আমি আজকেই রিস্টার্ট দিব। আমার উল্টাপাল্টা যুক্তি শুনেই হোক বা বিরক্ত হয়েই হোক, হাল ছেড়ে দিয়ে হাইড আর কিছু বলেনা।
প্রস্তুতি নিতে থাকি। পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিজের ইন্দ্রিয়, চিন্তা-চেতনা, অনুভূতি, বোধ, বিবেক,অতীত-বর্তমানের স্মৃতি - সবকিছু একসাথে করে সুইচের সামনে এসে দাঁড়াই। দী--র্ঘ দুই বছর .. তাও তো better late than never.. অবশেষে আবার তুই "আমি" হ !! - ভাবতে ভাবতে হাত রাখি সুইচে ..
আমার ভীষণ ঘুম পায়। দীর্ঘদিনের হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পর ঘুমটাকে যেমন কাম্য মনে হয়, ছোট শিশুরা ঘুমাতে না পারলে যেমন অস্থির হয়ে ওঠে .. আমি সেভাবে ঘুমকে কাছে পেতে চাই, ঘুমের জন্য অস্থির হয়ে উঠি। ঘুমের ভারে প্রাচ্যের মানুষের চেয়েও ছোট হয়ে যাওয়া চোখে স্ক্রীণের সামনে বসে শেষ ক'টা শব্দ লিখতে থাকি। তোমরা কেউ কি জানো কত্তো ঘুম বাকি আছে আমার ..
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০০৯ বিকাল ৫:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




