somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাংহাই ফিল্ম ফেস্টিভালের সেরা পরিচালক গোলাম রাব্বানী বিপ্লব

০৯ ই জুলাই, ২০০৭ সন্ধ্যা ৭:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অবসর কাটে তার ভাবনার মধ্যে। দেশ নিয়ে ভাবেন, দেশের মানুষের অবস্থা নিয়ে ভাবেন। সমাজের খেটে খাওয়া বঞ্চিত মানুষদের জীবনকে খুব কাছ থেকে দেখার চেষ্টাও করেন তিনি। দেখা ও ভাবনার সমন্বয়ে ইতিমধ্যে তিনি তৈরিও করেছেন মুভি স্বপ্নডানায়। ২২ জুন বেইজিং-এর সাংহাই ফিল্ম ফেস্টিভালে স্বপ্নডানায় মুভির জন্য সেরা পরিচালকের পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে স্ক্রিপ্ট রাইটার ও মুভি পরিচালক গোলাম রাব্বানী বিপ্লব’র সঙ্গে সম্প্রতি কথা হলো। ব্লগার বন্ধুদের সে কথাগুলো শেয়ার করলাম।

স্বপ্নডানায় মুভির আইডিয়াটা পেলেন কিভাবে?

বেশ কয়েক বছর আগের কথা। গ্রাম থেকে মামা আমার বাবার কাছে এক লোককে নিয়ে আসেন। সেই লোকের কাছে কিছু ইটালির কাগজের মুদ্রা ছিল। এগুলোর গায়ে লেখা ছিল ৫০ হাজার। ফলে বাংলাদেশি টাকায় তা আসলে কতো টাকা হবে তা জানতেই আমার বাবার কাছে এসেছিলেন তারা। বাসায় ফিরে দেখে আমি তাদের বললাম, এগুলোর দেশি অর্থমান আড়াইশ টাকার কাছাকাছি হবে। এতে করে নোটের গায়ে বড় অঙ্ক দেখে তাদের ভেতরে যে দ্বিধাদ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছিল তার অবসান ঘটে। এভাবেই স্বপ্নডানায় মুভির আইডিয়া আমার মাথায় আসে।

স্বপ্নডানায় মুভির কাহিনীটি সংক্ষেপ বলুন।

স্বপ্নডানায় মুভিটির কাহিনী মূলত গড়ে উঠেছে মাঝ বয়সী একজন ক্যানভাসার, তার পরিবার ও আশপাশের মানুষকে কেন্দ্র করে। একদিন সেই ক্যানভাসার তার ১০ বছরের ছেলেকে একটি পুরনো ট্রাউজার কিনে দেয়। বাড়িতে এনে ক্যানভাসারের বৌ সেই ট্রাউজারটি ধোয়ার সময় ট্রাউজারের পকেটে কিছু বিদেশি নোট পায়। এই নোটের দেশি মূল্যমান কতো হবে তা নিয়েই তাদের স্বপ্ন, পারস্পরিক সম্পর্কের অবনতি ও নিজেদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন ঘটানো শুরু হয়। কাহিনীর শেষ পর্যায়ে দেখা যায়, ক্যানভাসারের পরিবারের সবাই বুঝতে পারে, সামান্য এই কয়টি কাগজের নোটই তাদের সম্পর্ককে নষ্ট করে দিতে চলেছে। এ উপলব্ধির মাধ্যমেই স্বপ্নডানায় মুভির কাহিনী শেষ হয়।

স্বপ্নডানায় কখনো আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করবে তা কি কখনো ভেবেছিলেন?

সত্যি বলতে কি আমি কখনোই ভাবিনি, স্বপ্নডানায় কোনো আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভালে প্রদর্শনের জন্য মনোনয়ন পাবে। কারণ, থার্ড ওয়ার্ল্ডের মুভিগুলোকে ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভালে আমন্ত্রণ জানানোর আগে সেই মুভিতে কোন ইসু রয়েছে তাই-ই আগে বিবেচনা করা। আমাদের মতো থার্ড ওয়ার্ল্ডের দেশের ক্ষুধা, রোগ-শোক বা দারিদ্রজনিত যে কোনো ইসু নিয়ে নির্মিত মুভিগুলোই সাধারণত ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভালে প্রদর্শনের অলিখিত একটি শর্ত হিসেবে কাজ করে। ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড কর্তৃক থার্ড ওয়ার্ল্ডকে ডমিনেটেড করে দেখার অন্যতম কারণও ওটি। দর্শকরা কোনো মুভিকে ভালো বলুক বা খারাপ বলুক, তাতে করেও নির্বাচকদের যায় আসে না। তারা গ্লোবালাইজেশনের দোহাই দিয়ে মূলত নিজেদের স্বার্থকেই বড় করে দেখে।

তবে সে দিক থেকে স্বপ্নডানায় মুভির পুরস্কার প্রাপ্তিটি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। কারণ যেসব ইসুকে নিয়ে মুভি বানালে ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভালের নির্বাচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা সম্ভব সে সব কিছুই এ মুভিতে নেই। বরং মুভিতে উপজীব্য করা হয়েছে বাংলাদেশের খেটে খাওয়া মানুষরাও কিভাবে অল্পতেই সন্তুষ্ট হতে পারে সে দৃশ্যটি।

স্বপ্নডানায় মুভির জন্য সেরা পরিচালক হিসেবে আপনার নাম ঘোষণা করা হয় তখনকার অনুভূতি সম্পর্কে বলুন।

প্রথমেই বলেছি স্বপ্নডানায় মুভিটি কোনো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভালে প্রদর্শিত হবে তাই-ই কখনো ভাবিনি আমি। তাই সাংহাই ফিল্ম ফেস্টিভালের জন্য মুভিটি যখন নির্বাচিত হয় তখনই বেশ এক্সাইটেড ছিলাম আমি। কিন্তু সেরা পরিচালকের পুরস্কার পাবো তা কখনোই আশা করিনি। এ জন্য ঘোষক যখন সেরা পরিচালক হিসেবে আমার নাম ঘোষণা করে তখন তো স্টেজে গিয়ে পুরস্কার নেবো সে সাহসটিও হচ্ছিল না। বিশ্বাসই হচ্ছিল না আসলেই ঘোষক আমার নামটিই বলেছে না অন্য কারোর নাম বলেছে। এ এক অন্য রকম অনুভূতি যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।

স্বপ্নডানায় নির্মাণ করতে গিয়ে কি ধরনের অভিজ্ঞতার সঞ্চয় আপনি করেছেন?

স্বপ্নডানায় আমার প্রথম মুভি হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই অনেক কিছু শিখেছি আমি এ মুভির শুটিং করতে গিয়ে। মুভির প্রায় পুরোটাই শুটিং হয়েছে নওগার পোর্শা থানার গাঙ্গুরিয়া বাজার ও এর আশপাশের অঞ্চলে। প্রথম দফায় ২১ দিন ও পরের বারে ৬ দিনই ৬০ জনের পুরো টিম নিয়ে থেকেছি আমরা। ৪০ ডিগ্রির ওপরের তাপমাত্রায় মে মাসে মুভির শুটিং করেছি আমরা। মুভির জন্য এর কলাকুশলী ও সংশ্লিষ্টরা এতটাই নিবেদিত ছিলেন যে, নানারকম প্রতিকূলতা ও কষ্ট স্বীকার করেও তারা তাদের পুরোটাই মুভির জন্য ঢেলে দিয়েছেন। বিদ্যুৎ ও যোগাযোগের খারাপ অবস্থা সত্ত্বেও মুভির পুরো টিমই যে খেটেছে তার প্রমাণ এই সাংহাই ফিল্ম ফেস্টিভালের পুরস্কার প্রাপ্তি।

পরবর্তী কোনো কাজ হাতে নিয়েছেন?

স্বপ্নডানায় মুভিটি ইচ্ছা আছে সামনের মাসে দেশের হলগুলোতে মুক্তি দেয়ার। আর দুটো নতুন গল্পের থিম নিয়ে কাজ করছি। স্ক্রিপ্ট লেখা শেষ হলেই মুভির কাজ শুরু করবো। তবে সামনের বছরের আগে মুভির নির্মাণ শুরু করতে হয়তো পারবো না। আর নাটক, বিজ্ঞান নিয়ে যারা কাজ করছেন তারাই ওটিই করুন। আমি মুভির মানুষ, কেবল মুভি নির্মাণেই থাকতে চাই।


এক নজরে গোলাম রাব্বানী বিপ্লব

জন্ম তারিখ : ১৫ মার্চ ১৯৭১
প্রিয় রং : নীল, গোলাপী
শখ : বই পড়া, গান শোনা
অবসর কাটান : ভেবে ভেবে
স্কুল : মনিপুর হাইস্কুল
কলেজ : তেজগাও কলেজ
গ্র্যাজুয়েশন : ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
স্ক্রিপ্ট লিখেছেন : মুভি সাজঘর, স্বপ্নডানায়
দীর্ঘ সময় কেটেছে : ফিল্ম সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থেকে
ভবিষ্যৎ ইচ্ছা : ফিল্ম নিয়ে আরো কাজ করতে চান।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:২৮
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×