মানুষকে চিহ্নিত করার একটা উপায়, সেটা হলো তার মানসিকতা। সেটাকে সে অনেক ভাবে নিয়ে যেতে পারে। আমরা শিক্ষা দিকে ধাবিত হচ্ছি। বিশেষ করে নারী শিক্ষা নিয়ে আমাদের দেশে যেভাবে প্রচারণা চলে সব জায়গায়। তাতে নারী স্কুল কলেজে যাওয়ার হার বেড়েছে। বেড়েছে নারীদের উচ্চ-শিক্ষার হারও। আমরা এতে খুশি না হয়ে পারি না।
কিন্তু যখন দেখি আমাদের দেশের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করা নারীরা এখনো সমাজে নির্যাতিত হচ্ছে পরিবার দ্বারা। তাতে আমাদের নারী শিক্ষা নিয়ে সংঙ্কিত হওয়া ছাড়া উপায় দেখি না।
তেমনি একজন মেয়ে যার নাম আরেফা পারভিন। সে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে ২০০৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও ২০০৭ সালে মাস্টার্স পাশ করে। তার পরিবারের কথা ছিল মেয়ে পড়ালেখা শেষ করবে এবং তার বিয়ে দেওয়া হবে। চাকরী করা লাগবে না। এই মেয়ের পরিবার চাকরী বিরোধী এবং মেয়েদের স্বাধীনভাবে চলা-চল বিরোধী।
সে পরিবারের কথা অমান্য করে ঢাকায় থেকে পড়াশুনার পর একটা চাকুরী যোগা করে ২০১০ সালে জুন এর দিকে “আকসা ফুড ইন্ডাস্ট্রিতে’’ পাবলিক রিলেশন অফিসার হিসাবে। এর পর সে বাড়ি যায় পরবর্তী ঈদ পালন করতে। কিন্ত আর সহসা ফিরে আসতে পারে না, তার পরিবারের চাপে। ফলে তার চাকুরী আর থাকে না। এর পর আবার সে কিছুদিন পর পঞ্চগড় থেকে ঢাকায় আসে যে সে একটা চাকুরী যোগার করে সে স্বাধীনভাবে থাকবে এবং নিজের পছন্দের কাউকে বিয়ে করবে। এইটাই স্বাভাবিক এক জন স্বাধীনচেতা মানূষের। তাই গত ৪-০৯-২০১১ ইং তারিখে আনুমানিক সকাল নয়টায় আমার মোবাইলে ফোন-০১৫৫৭২১০০৬৯ নং দ্বারা, যে সুমনা তার ভাই এর সাথে দেখা করতে যাচ্ছে। এর পর সকাল নয়টা ১৫ মিনিট পর আবার ফোন দেয় হয় ০১৭৩৫১২৭৬৬২ যে সে তার ভাই এর সাথে নাস্তা খেতে যাচ্ছে। এর পর যখন হোস্টেলের কাছে আমি আসি আর সুমনা ও তার ভাই কাকেই খুজে পাইনি। খুজে না পেয়ে সন্দেহ করা হয় যে সুমনাকে তার ভাই জোড় করে নিয়ে গেছে, কারন সুমনার মোবাইলে ফোন দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এর পর আমি যাই মোহাম্মদপুর থানায় জিডি করতে, যার নম্বর ২০১।
প্রায় ২ থেকে আড়াইটার দিকে ০১৭৩৭৪৭৫০৫২ বলা হয় যে তারা তাদের বোনকে নিয়ে যাছে।
এর পর থেকে বিভিন্ন ভাবে আমার সাথে যোগাযোগ করা হয় যে আমি যদি মুসলিম হই এবং সেই অনুসারে আরেফা পারভিন (ডাক নাম সুমনা -আমার স্ত্রী) কে বিয়ে করে নিয়ে আসি তাহলে তারা আমার স্ত্রীকে আমার সাথে পাঠিয়ে দিবে।
এবং আমার স্ত্রীও আমাকে যেতে বলে, আমি তাতে যেতে রাজি হই যে যদি আমি আমার স্ত্রীকে না নিয়ে আসি তাহলে মসজিদ কমিটিতে একটা মিটিং হয়েছে যা গ্রামবাসী প্ররোচনা দিচ্ছে আমার স্ত্রীকে দোররা মারা হবে অথবা ইঞ্জেকশন দিয়ে তাকে মেরে ফেলা হবে এই কারনে যে সে একজন হিন্দু ছেলেকে বিয়ে করেছে।
আমার স্ত্রীকে বাচাঁনোর জন্য আমি আমার দুই সংগি সহ পঞ্চগড় যেতে রাজি হই। এদিকে আমার স্ত্রীর এর বড় ভাই (কামাল হোসেন) কে বলি যে আমি আসতেছি এবং আপনাদের শর্ত আমি মেনে নিবো। তার ভাই বলেছে তুমি একাই আসো। তোমার কোন সমস্যা হবে না।
তার পরদিন আমি যাই অবশ্য এটা আমার স্ত্রী জানে। আমি আমার স্ত্রীর বড় ভাইকে জানালে বলে যে বোদা (পঞ্চগড় এর থানা) তে উনার জন্য অপেক্ষা করতে। এতে আমার একটু হলেও সন্দেহ হয়, যেখানে আমার যাওয়ার কথা পঞ্চগড় আমার স্ত্রীর কাছে, তা না গিয়ে বোদায় থাকতে বলে কেন। তাই ঠাকুরগাও পার হয়ে গাড়ি থামিয়ে বললাম যে আমাদের গাড়ির একটু সমস্যা হয়েছে তাই আর যেতে পারছি না। এবং বললাম যে আপনি চলে আসুন আমরা যেখানে আছি। উনি আসে তবে একা নয়, উনার এক কার্জিন সহ মামা। এর পর আমি বললাম আমরা দুপুরে কিছু খাইনি, তাই ঠাকুরগাও যাবো এবং আমাদের গাড়ি মেরামত করাও যাবে।
আমি উনাদের আলোচনা করার জন্য বললাম কিন্তু উনারা ঠাকুরগাও এ কিছুই বলল না। এর পর আমাদের চাপা চাপি করলো যে যেন আমরা বোদা যাই সেখানে ভাল বসার যায়গা আছে এবং আরো দুই একজন আছে আলোচনা করার জন্য।
আমরা সে আলোচনা করার জন্য যেতে রাজি হই।
আমাদের কে নিয়ে গেল বোদা পার হয়ে পঞ্চগড় এর দিকে। এক বাসায় উনারা মটর সাইকেল থামিয়ে বললো এখানে আমাদের আলোচনা হবে।
বাড়ির সামনে একটা মসজিদ আছে, তার পাশে পিছনে বসার রুমে নিয়ে গিয়ে আমাদের তিনজনকে বসাল। আমরা ঘড়ে ঢুকে দেখলাম কতগুলো হিউম্যান রাইটস এর পোস্টার, প্লেকার্ড ও ক্যালেন্ডার।
এক ভদ্রলোক আসলে, সালাম দিয়ে আমাদের আস্তত্ব করলো। আমি আমার সমস্যার কথা বললাম। বললাম আমাদের অতীত প্রেম এর সম্পর্কের কথা। উনি ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে বললেন। বললেন ইতিহাস এর কথা। আরো বললেন বঙ্গ বন্ধু কেন বাঙালী নয়, কেনই বা এই দেশের আদিবাসীরাই আসল বাঙালী, ইত্যাদি।
উনি আমাদের বোঝালেন সামাজিকতা, মানবাধিকার ইত্যাদি বিষয়ে। এর পর আসল আমাদের বিয়ে সংক্রান্ত কথা। বললাম আমরা বিয়ে করেছি বিশেষ বিবাহ আইন ১৮৭২ অনুসারে যেখানে নিজেকে ধর্মীয় পরিবর্তন না করেই বিয়ে করা যায়।
উনি এটা শুনলেন এবং বললেন যে এই আইন বাংলাদেশে অনেক আগেই বাতিল হয়েছে। এর কোন মূল্য নেই আমাদের কাছে।
আমাদের বক্তব্য হলো যদি তা না থাকে যারা এই আইন এ বিয়ে করেছে তাদের বিয়ে তো অবৈধ হয়ে যাবে। তাহলে তারা অবৈধ বিয়ে করে কেন এখনো সমাজে টিকে আছে। উনি সেটা মানতেই চাইলেন না।
এবং বুঝাতে লাগলেন ধর্মীভাবে বিয়ে না করলে ওটা কোন বিয়ে না। তাই তারা এই বিয়ে মানতে পারছে না।
এর পর আমরা চলে আসতে চাই। এবং বলি যে আমি কিভাবে আমার স্ত্রীকে পেতে পারি। বললো আপনাকে মুসলিম হয়ে বিয়ে করতে হবে মুসলিম সমাজের নিয়মে। তাতে আমি এক পর্যায়ে রাজি হই এইজন্য যে আমার আর কোন উপায় ছিল না সেখান থেকে বেড় হওয়া। কিন্তু যখন আমি রাজি হলাম, তখন আমাকে একটা সীট বের করে দেয় যে এই কন্ডিশন অনুযায়ী আমাকে সিগন্যাচার করতে হবে এবং সকল সার্টিফিকেট এবং আমার পরিবারকে মুসলিম হওয়ার জন্য প্ররোচনা দিতে হবে এগুলো তার মুখে কথা ছিল যেহেতু আমি সীটের সকল কন্ডিশন গুলো পড়ে দেখার আগেই সিগন্যাচার করতে রাজি না হই।
সব সময়ের মত আমি প্রায় সময় বলেছি শুধু একপক্ষ দিয়ে সালিস বা বিচার বা কোন সিন্ধান্তে পৌছানো যাবে না। তাই মেয়ে কে হাজির করান। সে যদি আমার কাছে না আসতে চাই আমি কোন কথা না বলে সোজা চলে যাবো। আমার কোন অভিযোগ থাকবে না। তাই মেয়েকে হাজির করান।
এতক্ষণ উনাদের কেউ কথা বলেনি। এইবার মেয়ের ভাই বললো আমি মেয়ের গার্ডিয়ান তাই আমি যা বলবো মেয়ে তাই বলবে।
এর পর আমি একটা কথাই বলি মেয়ের বয়স ২৭ + সে এখনো বাচ্চা মেয়ে না যে আপনার কথা ঐ মেয়ের কথা হবে।
তার পরও সে মেয়ের ভাই প্রেসার ক্রিয়েট করা শুরু করলো যে সে মেয়েকে সামনে নিয়ে আসবে না।
এর পর আমাদের আর আসতে দিবে না। আমাকে মুসলিম হতেই হবে তাই প্রেসার দেওয়া শুরু করলো। আমি তাতে রাজি হই নি।
আমাদের তিন জনকে একরকম নজরবন্দি করে রাখা হলো যে আমাদের কাউকেই যেতে দিবে না কোন সিগন্যাচার ছাড়া।
আলভী ভদ্রলোক বললেন এখানে আসা যত সহজ বেড় হওয়া তত সহজ না। আর আমরা যদি আটকিয়ে রাখি এখান থেকে র্যাব –পুলিশও নিয়ে যেতে পারবে না।
এর পর সবার মধ্যে মারমুখি চেহারার ছাপ। আমরা ভয় পেয়ে গেলাম।
এর পর একে একে একজন ভোরের ডাকের ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক আসলো। আমার কাকু খাদেমুল ইসলাম নামে একজন কে নিয়ে আসলে। উনি বেশ কড়া কড়া ভাষায় আমাদের গালা-গালি শুরু করলো।
একসময় আমাদের নাস্তিক বলে আখ্যা দিলো।
সর্বশেষ আমাদের বেড় হতে দিল একটা স্ট্যাটমেন্ট লিখে নিয়ে যে আমার কাকুর জিম্মায় আমরা ওখান থেকে বেড় হলাম।
স্ট্যাটমেন্ট এ যে আমরা প্রেম ঘটিত বিষয়ে আলোচনা করতে আসি এবং একটা সাধারণ সমাধানে উন্নিত হই।
এর পর আমাকে খুব করা ভাষায় বললো যে আমি যেন সুমনা এর ফোন কখনো না রিসিভ করি এবং সুমনার কাছে যেন আমি খারাপ হই। আর সুমনার ভাইকে বললো যে সুমনা কে যেন বলা হয় আমরা আসিনি আলোচনা করতে।
এর পরদিন সকালে চ্যানেল আই এর পঞ্চগড় প্রতিনিধি ও পঞ্চগড় প্রেসক্লাবের সভাপতি এ রহমান মুকুল, আমাকে ফোন করে বললো যে আপনি পঞ্চগড় চলে আসেন আমরা আপনার স্ত্রীকে উদ্ধার করে দিবো।
আমরা যথারিতি গেলাম বিকাল ৩টা বাজে পঞ্চগড় এ। আমাদের নিয়ে গেল প্রথম আলোর পঞ্চগড় প্রতিনিধির সহিদ সাহেব এর বাসা।
এখানে বসে মুকুল ও সহিদ সাহেব আমাদের বসতে বলে। এবং পঞ্চগড় পুলিশ সুপার এবং ওসি এর সাথে যোগাযোগ করে যে সেই মেয়ে কে যেন থানায় নিয়ে আসে এবং ছেলের মুখোমুখি করে দেয়। কিন্তু কিছুক্ষণ পর ওসি বলে যে মেয়ে কোন সমস্যায় নেই, তাই আমরা মেয়ে কে আনতে পারলাম না।
শেষ পর্যন্ত ব্যার্থ হয়ে আমরা চলে আসবো ঠাকুরগাও এ। এই মুহুর্তে সুমনার পাশের বাড়ির আন্টি আমাকে ফোন দিয়ে বলে যে তুমি পঞ্চগড় আসো এবং সুমনাকে নিয়ে যাও মুসলিম হয়ে বিয়ে করে যাও তুমি যেখানেই বসতে চাও।
আমি কিছুটা আশার বানি শুনলাম। কিন্তু সেটাও ব্যার্থ যখন অপেক্ষা করতে করতে আর কেউ আসলো না।
এর পর আমরা সাংবাদিক মুকুল এর গাড়িতে করে পঞ্চগড় পার করে নিচ্ছি যে কেউ যেন আমাদের আঘাত না করে।
ময়দান দীঘি পার হয়ে আমি সুমনার ভাই কামাল কে ফোন দিয়ে বললাম এত নাটক করার কি ছিল, আপনার বোন আমার কাছে আসতে চাইলে আপনি কি আটকিয়ে রাখতে পারবেন। যাই হোক অনেক নাটক করলেন। সে নাটক গুলো আমি পঞ্চগড় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুকুল সাহেবের কাছে দিয়ে আসলাম যাতে পত্রিকায় ছাপানো হবে।
এর কিছুক্ষণ পর সুমনা আমাকে ফোন দিয়ে বললো যে সে বোদায় আছে আলভী সাহেবের বাসায়, সে আমাকে বললো “আমি তোমার সাথে যাবো তুমি আস’’
আমরাও বেশ আসার বানী পেলাম।
এরপর সাংবাদিক সাহেবরা একা সেখানে আমাকে না নিয়ে গিয়ে বোদা’এর স্থানীয় সাংবাদিক দের নিয়ে গেল, নিয়ে গেল বোদার ওসি সহ একটা পুলিশ টিমকে।
কিন্তু ফলাফল এখানেও ব্যার্থ। তারা সবাই জানলো সুমনা আমার কাছে আসতে চায় কিন্তু তারা আসতে দিল না। পুলিশ চলে গেল, সাংবাদিক চলে গেল। বলা হলো সুমনাকে নিতে পঞ্চগড় থানায় যেতে হবে সেখানে একটা সিগন্যাচার দিয়ে নিয়ে আসতে হবে।
আমরা যখন পঞ্চগড় এর কাছা কাছি তখন সুমনা আমাকে ফোন করে জানালো যে সে পঞ্চগড় আসে নি এবং বোদায় আছে এবং বললো তুমি চলে যাও আমি দু’দিন পর ঢাকা আসতেছি।
এর পর আমার আর কিছু করার থাকলো না। তারা বুঝিয়ে দিল পুলিশ স্থানীয় সাংবাদিক সবই তাদের দলের এবং সুমনা সেখানে বসে কাদঁতে কাদঁতে বললো আমি তোমার কাছে যাব , আমি তোমার কাছে যাবো... একসময় আমি কাদতে কাদতে বলি তুমি কোথায় বল আমি আসতেছি... কিন্তু তার একটাই সুর আমি তোমার কাছে যাবো আমি তোমার কাছে যাবো...
পরে বুঝলাম কেউ একজন তার মোবাইল নিয়ে লাইন কেটে দিল।
গত ৪-০৯-২০১১ ইং তারিখে আনুমানিক সকাল নয়টায় আমার মোবাইলে ফোন-০১৫৫৭২১০০৬৯ নং দ্বারা, যে সুমনা তার ভাই এর সাথে দেখা করতে যাচ্ছে। এর পর সকাল নয়টা ১৫ মিনিট পর আবার ফোন দেয় হয় ০১৭৩৫১২৭৬৬২ যে সে তার ভাই এর সাথে নাস্তা খেতে যাচ্ছে। এর পর যখন হোস্টেলের কাছে আমি আসি আর সুমনা ও তার ভাই কাকেই খুজে পাইনি। খুজে না পেয়ে সন্দেহ করা হয় যে সুমনাকে তার ভাই জোড় করে নিয়ে গেছে, কারন সুমনার মোবাইলে ফোন দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এর পর আমি যাই মোহাম্মদপুর থানায় জিডি করতে, যার নম্বর ২০১।
প্রায় ২ থেকে আড়াইটার দিকে ০১৭৩৭৪৭৫০৫২ বলা হয় যে তারা তাদের বোনকে নিয়ে যাছে।
এর পর থেকে বিভিন্ন ভাবে আমার সাথে যোগাযোগ করা হয় যে আমি যদি মুসলিম হই এবং সেই অনুসারে আরেফা পারভিন (ডাক নাম সুমনা -আমার স্ত্রী) কে বিয়ে করে নিয়ে আসি তাহলে তারা আমার স্ত্রীকে আমার সাথে পাঠিয়ে দিবে।
এবং আমার স্ত্রীও আমাকে যেতে বলে, আমি তাতে যেতে রাজি হই যে যদি আমি আমার স্ত্রীকে না নিয়ে আসি তাহলে মসজিদ কমিটিতে একটা মিটিং হয়েছে যা গ্রামবাসী প্ররোচনা দিচ্ছে আমার স্ত্রীকে দোররা মারা হবে অথবা ইঞ্জেকশন দিয়ে তাকে মেরে ফেলা হবে এই কারনে যে সে একজন হিন্দু ছেলেকে বিয়ে করেছে।
আমার স্ত্রীকে বাচাঁনোর জন্য আমি আমার দুই সংগি সহ পঞ্চগড় যেতে রাজি হই। এদিকে আমার স্ত্রীর এর বড় ভাই (কামাল হোসেন) কে বলি যে আমি আসতেছি এবং আপনাদের শর্ত আমি মেনে নিবো। তার ভাই বলেছে তুমি একাই আসো। তোমার কোন সমস্যা হবে না।
তার পরদিন আমি যাই অবশ্য এটা আমার স্ত্রী জানে। আমি আমার স্ত্রীর বড় ভাইকে জানালে বলে যে বোদা (পঞ্চগড় এর থানা) তে উনার জন্য অপেক্ষা করতে। এতে আমার একটু হলেও সন্দেহ হয়, যেখানে আমার যাওয়ার কথা পঞ্চগড় আমার স্ত্রীর কাছে, তা না গিয়ে বোদায় থাকতে বলে কেন। তাই ঠাকুরগাও পার হয়ে গাড়ি থামিয়ে বললাম যে আমাদের গাড়ির একটু সমস্যা হয়েছে তাই আর যেতে পারছি না। এবং বললাম যে আপনি চলে আসুন আমরা যেখানে আছি। উনি আসে তবে একা নয়, উনার এক কার্জিন সহ মামা। এর পর আমি বললাম আমরা দুপুরে কিছু খাইনি, তাই ঠাকুরগাও যাবো এবং আমাদের গাড়ি মেরামত করাও যাবে।
আমি উনাদের আলোচনা করার জন্য বললাম কিন্তু উনারা ঠাকুরগাও এ কিছুই বলল না। এর পর আমাদের চাপা চাপি করলো যে যেন আমরা বোদা যাই সেখানে ভাল বসার যায়গা আছে এবং আরো দুই একজন আছে আলোচনা করার জন্য।
আমরা সে আলোচনা করার জন্য যেতে রাজি হই।
আমাদের কে নিয়ে গেল বোদা পার হয়ে পঞ্চগড় এর দিকে। এক বাসায় উনারা মটর সাইকেল থামিয়ে বললো এখানে আমাদের আলোচনা হবে।
বাড়ির সামনে একটা মসজিদ আছে, তার পাশে পিছনে বসার রুমে নিয়ে গিয়ে আমাদের তিনজনকে বসাল। আমরা ঘড়ে ঢুকে দেখলাম কতগুলো হিউম্যান রাইটস এর পোস্টার, প্লেকার্ড ও ক্যালেন্ডার।
এক ভদ্রলোক আসলে, সালাম দিয়ে আমাদের আস্তত্ব করলো। আমি আমার সমস্যার কথা বললাম। বললাম আমাদের অতীত প্রেম এর সম্পর্কের কথা। উনি ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে বললেন। বললেন ইতিহাস এর কথা। আরো বললেন বঙ্গ বন্ধু কেন বাঙালী নয়, কেনই বা এই দেশের আদিবাসীরাই আসল বাঙালী, ইত্যাদি।
উনি আমাদের বোঝালেন সামাজিকতা, মানবাধিকার ইত্যাদি বিষয়ে। এর পর আসল আমাদের বিয়ে সংক্রান্ত কথা। বললাম আমরা বিয়ে করেছি বিশেষ বিবাহ আইন ১৮৭২ অনুসারে যেখানে নিজেকে ধর্মীয় পরিবর্তন না করেই বিয়ে করা যায়।
উনি এটা শুনলেন এবং বললেন যে এই আইন বাংলাদেশে অনেক আগেই বাতিল হয়েছে। এর কোন মূল্য নেই আমাদের কাছে।
আমাদের বক্তব্য হলো যদি তা না থাকে যারা এই আইন এ বিয়ে করেছে তাদের বিয়ে তো অবৈধ হয়ে যাবে। তাহলে তারা অবৈধ বিয়ে করে কেন এখনো সমাজে টিকে আছে। উনি সেটা মানতেই চাইলেন না।
এবং বুঝাতে লাগলেন ধর্মীভাবে বিয়ে না করলে ওটা কোন বিয়ে না। তাই তারা এই বিয়ে মানতে পারছে না।
এর পর আমরা চলে আসতে চাই। এবং বলি যে আমি কিভাবে আমার স্ত্রীকে পেতে পারি। বললো আপনাকে মুসলিম হয়ে বিয়ে করতে হবে মুসলিম সমাজের নিয়মে। তাতে আমি এক পর্যায়ে রাজি হই এইজন্য যে আমার আর কোন উপায় ছিল না সেখান থেকে বেড় হওয়া। কিন্তু যখন আমি রাজি হলাম, তখন আমাকে একটা সীট বের করে দেয় যে এই কন্ডিশন অনুযায়ী আমাকে সিগন্যাচার করতে হবে এবং সকল সার্টিফিকেট এবং আমার পরিবারকে মুসলিম হওয়ার জন্য প্ররোচনা দিতে হবে এগুলো তার মুখে কথা ছিল যেহেতু আমি সীটের সকল কন্ডিশন গুলো পড়ে দেখার আগেই সিগন্যাচার করতে রাজি না হই।
সব সময়ের মত আমি প্রায় সময় বলেছি শুধু একপক্ষ দিয়ে সালিস বা বিচার বা কোন সিন্ধান্তে পৌছানো যাবে না। তাই মেয়ে কে হাজির করান। সে যদি আমার কাছে না আসতে চাই আমি কোন কথা না বলে সোজা চলে যাবো। আমার কোন অভিযোগ থাকবে না। তাই মেয়েকে হাজির করান।
এতক্ষণ উনাদের কেউ কথা বলেনি। এইবার মেয়ের ভাই বললো আমি মেয়ের গার্ডিয়ান তাই আমি যা বলবো মেয়ে তাই বলবে।
এর পর আমি একটা কথাই বলি মেয়ের বয়স ২৭ + সে এখনো বাচ্চা মেয়ে না যে আপনার কথা ঐ মেয়ের কথা হবে।
তার পরও সে মেয়ের ভাই প্রেসার ক্রিয়েট করা শুরু করলো যে সে মেয়েকে সামনে নিয়ে আসবে না।
এর পর আমাদের আর আসতে দিবে না। আমাকে মুসলিম হতেই হবে তাই প্রেসার দেওয়া শুরু করলো। আমি তাতে রাজি হই নি।
আমাদের তিন জনকে একরকম নজরবন্দি করে রাখা হলো যে আমাদের কাউকেই যেতে দিবে না কোন সিগন্যাচার ছাড়া।
আলভী ভদ্রলোক বললেন এখানে আসা যত সহজ বেড় হওয়া তত সহজ না। আর আমরা যদি আটকিয়ে রাখি এখান থেকে র্যাব –পুলিশও নিয়ে যেতে পারবে না।
এর পর সবার মধ্যে মারমুখি চেহারার ছাপ। আমরা ভয় পেয়ে গেলাম।
এর পর একে একে একজন ভোরের ডাকের ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক আসলো। আমার কাকু খাদেমুল ইসলাম নামে একজন কে নিয়ে আসলে। উনি বেশ কড়া কড়া ভাষায় আমাদের গালা-গালি শুরু করলো।
একসময় আমাদের নাস্তিক বলে আখ্যা দিলো।
সর্বশেষ আমাদের বেড় হতে দিল একটা স্ট্যাটমেন্ট লিখে নিয়ে যে আমার কাকুর জিম্মায় আমরা ওখান থেকে বেড় হলাম।
স্ট্যাটমেন্ট এ যে আমরা প্রেম ঘটিত বিষয়ে আলোচনা করতে আসি এবং একটা সাধারণ সমাধানে উন্নিত হই।
এর পর আমাকে খুব করা ভাষায় বললো যে আমি যেন সুমনা এর ফোন কখনো না রিসিভ করি এবং সুমনার কাছে যেন আমি খারাপ হই। আর সুমনার ভাইকে বললো যে সুমনা কে যেন বলা হয় আমরা আসিনি আলোচনা করতে।
এর পরদিন সকালে চ্যানেল আই এর পঞ্চগড় প্রতিনিধি ও পঞ্চগড় প্রেসক্লাবের সভাপতি এ রহমান মুকুল, আমাকে ফোন করে বললো যে আপনি পঞ্চগড় চলে আসেন আমরা আপনার স্ত্রীকে উদ্ধার করে দিবো।
আমরা যথারিতি গেলাম বিকাল ৩টা বাজে পঞ্চগড় এ। আমাদের নিয়ে গেল প্রথম আলোর পঞ্চগড় প্রতিনিধির সহিদ সাহেব এর বাসা।
এখানে বসে মুকুল ও সহিদ সাহেব আমাদের বসতে বলে। এবং পঞ্চগড় পুলিশ সুপার এবং ওসি এর সাথে যোগাযোগ করে যে সেই মেয়ে কে যেন থানায় নিয়ে আসে এবং ছেলের মুখোমুখি করে দেয়। কিন্তু কিছুক্ষণ পর ওসি বলে যে মেয়ে কোন সমস্যায় নেই, তাই আমরা মেয়ে কে আনতে পারলাম না।
শেষ পর্যন্ত ব্যার্থ হয়ে আমরা চলে আসবো ঠাকুরগাও এ। এই মুহুর্তে সুমনার পাশের বাড়ির আন্টি আমাকে ফোন দিয়ে বলে যে তুমি পঞ্চগড় আসো এবং সুমনাকে নিয়ে যাও মুসলিম হয়ে বিয়ে করে যাও তুমি যেখানেই বসতে চাও।
আমি কিছুটা আশার বানি শুনলাম। কিন্তু সেটাও ব্যার্থ যখন অপেক্ষা করতে করতে আর কেউ আসলো না।
এর পর আমরা সাংবাদিক মুকুল এর গাড়িতে করে পঞ্চগড় পার করে নিচ্ছি যে কেউ যেন আমাদের আঘাত না করে।
ময়দান দীঘি পার হয়ে আমি সুমনার ভাই কামাল কে ফোন দিয়ে বললাম এত নাটক করার কি ছিল, আপনার বোন আমার কাছে আসতে চাইলে আপনি কি আটকিয়ে রাখতে পারবেন। যাই হোক অনেক নাটক করলেন। সে নাটক গুলো আমি পঞ্চগড় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুকুল সাহেবের কাছে দিয়ে আসলাম যাতে পত্রিকায় ছাপানো হবে।
এর কিছুক্ষণ পর সুমনা আমাকে ফোন দিয়ে বললো যে সে বোদায় আছে আলভী সাহেবের বাসায়, সে আমাকে বললো “আমি তোমার সাথে যাবো তুমি আস’’
আমরাও বেশ আসার বানী পেলাম।
এরপর সাংবাদিক সাহেবরা একা সেখানে আমাকে না নিয়ে গিয়ে বোদা’এর স্থানীয় সাংবাদিক দের নিয়ে গেল, নিয়ে গেল বোদার ওসি সহ একটা পুলিশ টিমকে।
কিন্তু ফলাফল এখানেও ব্যার্থ। তারা সবাই জানলো সুমনা আমার কাছে আসতে চায় কিন্তু তারা আসতে দিল না। পুলিশ চলে গেল, সাংবাদিক চলে গেল। বলা হলো সুমনাকে নিতে পঞ্চগড় থানায় যেতে হবে সেখানে একটা সিগন্যাচার দিয়ে নিয়ে আসতে হবে।
আমরা যখন পঞ্চগড় এর কাছা কাছি তখন সুমনা আমাকে ফোন করে জানালো যে সে পঞ্চগড় আসে নি এবং বোদায় আছে এবং বললো তুমি চলে যাও আমি দু’দিন পর ঢাকা আসতেছি।
এর পর আমার আর কিছু করার থাকলো না। তারা বুঝিয়ে দিল পুলিশ স্থানীয় সাংবাদিক সবই তাদের দলের এবং সুমনা সেখানে বসে কাদঁতে কাদঁতে বললো আমি তোমার কাছে যাব , আমি তোমার কাছে যাবো... একসময় আমি কাদতে কাদতে বলি তুমি কোথায় বল আমি আসতেছি... কিন্তু তার একটাই সুর আমি তোমার কাছে যাবো আমি তোমার কাছে যাবো...
পরে বুঝলাম কেউ একজন তার মোবাইল নিয়ে লাইন কেটে দিল।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ দুপুর ১:৩৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




