টেলিভিশন নিয়া বিভীষণ খেলতে চাইতাছে
টেলিভিশন পেশাজীবী ঐক্য পরিষদ ‘টিভি বাঁচাও-অনুষ্ঠান বাঁচাও’ আহ্বান জানিয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সেখানে উপস্থিত নামগুলো দেশের প্রখ্যাত অভিনেতা-অভিনেত্রী, প্রযোজক এবং নিমার্তারাদের। তারা টিভি ও অনুষ্ঠান বাঁচাতে কয়েকটি প্রস্তাবনা রেখেছেন। বেশ আগ্রহ নিয়ে সংবাদটি পড়তে গিয়ে যেটা দেখলাম, তা হলো সেই সমাবেশে কোনো টেলিভিশনের কর্মীদের নাম নেই। এটা যদি টেলিভিশন পেশাজীবী পরিষদ হয়ে থাকে তবে তো তাদের অংশগ্রহণ থাকা আবশ্যক ছিল। এই না থাকার অর্থ কি? যারা এই সমাবেশের আয়োজক তারা কি তবে টেলিভিশনে কর্মরতদেরকে তাদের সহযোগি ভাবেন না? এমন প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবে উঠে আসে। যদি না ভেবে থাকেন তবে তা স্পষ্ট হওয়া দরকার। আর এত বৃহৎ একটা অংশকে বাদ দিয়ে কিভাবে আন্দোলন এগিয়ে যাবে তা নিয়ে সংশয় দেখা দেয়; সংশয় দেখা দেয় যখন দেখি মালিক-শ্রমিকের ঐকের কথা বলা হয়। যারা প্রযোজক বা পরিচালক তাদের সাথে কিভাবে শিল্পী বা কলাকুশলীদের ঐক্য গড়ে উঠতে পারে? তারা তো প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে নিজের দিকে ঝোলা টানতে ব্যস্ত। কি করে শিল্পীর পারিশ্রমিক কম দেয়া যায় বা ক্যামেরাম্যানের টাকাটা না দিয়ে পারা যায় এই ভাবতেই ব্যস্ত! এদের প্রত্যেককে যদি অভিযোগ জানাতে বলা হয় তবে দেখা যাবে, টেকনিক্যাল ক্রুরা পরিচালকের বিরুদ্ধেই অভিযোগ দাখিল করবে? শিল্পীরা প্রযোজকের বিরুদ্ধেই অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ দাখিল করবে? আর এভাবে একসময় দায়টা এসে পড়বে টেলিভিশনের উপর যে, তারা অর্থ না দেয়াই এই অনাসৃষ্টি। কিন্তু সবাংর্শে কি এটি সত্য? এমন অনেক কাহিনীই শোনা যায় যে, নির্মাতা টেলিভিশনের টাকা নিয়ে ভেগে গেছে, বা অনুষ্ঠান নির্দিষ্ট সময়ে সরবরাহ করতে গড়িমসি করছে কিংবা টাকা পাওয়ার পরও কলাকুশলীদের বলে যে টাকা পাই নি বলে তোমাদের টাকা দিতে পারছি না।
আপনারা বলছেন, সব কটি টেলিভিশন চ্যানেলের অনুষ্ঠান বিভাগকে দক্ষ ও মেধাসম্পন্ন ব্যক্তিদের দ্বারা পরিচালনার নিশ্চয়তা বিধান করতে। তার অর্থ দাঁড়ায় যে, প্রত্যেকটি টিভি কিছু অদক্ষ, মেধাহীনদের দিয়ে এত ব্যাপক কর্মযজ্ঞ এতকাল পরিচালনা করে আসছে! এবং তাদের সাথেই এই আপনারা অনুষ্ঠান বা নাটক নিয়ে কথা বলছেন, তাদের মতামত শুনছেন এবঙ কার্যনির্বাহ করছেন। এর চেয়ে আসলে বড় দুভার্গ্য আর কি হতে পারে টেলিভিশনের দর্শকদের জন্য? টেলিভিশন আপনাদের পরিপূরক সংস্থা। তাকে বা তার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছোট করে নিশ্চয় শুভ কোনো ফল আশা করা যায় না। আপনারা আরো অভিযোগ করেছেন যে, টেলিভিশন অনুষ্ঠান ক্রয়ে দুর্নীতি বন্ধ করতে? যেহেতু কোনো টিভির নাম উল্লেখ করেন নি সেহেতু ধরে নিতে হবে যে, সব টিভিই দৃর্নীতিযুক্ত। তার মানে দাঁড়াল, আপনারা নিম্নমানের অনুষ্ঠান নির্মাণ করে টিভির কর্তাব্যক্তিদেরকে ঘুষ দিয়ে অনুষ্ঠানটি প্রচারের ব্যবস্থা করেন, এই তো? যদি মানসম্পন্ন অনুষ্ঠান নির্মাণ করে থাকেন তবে তো দুর্নীতির আশ্রয় নিতে হয় না। এক টিভি প্রচার না করলে অন্য টিভির দরজা তো খোলাই রয়েছে, তাই না। আর যদি সব টিভিতেই একই দুর্নীতি চলে তবে তখন তো তাকে আর দুর্নীতি বলা যাবে না, নীতিই বলতে হবে। তবে কিছু দাবীর প্রতি মনে হয় আমরা সকলেই একমত হবো যে, বিদেশি চ্যানেল থেকে দর্শকদের ফিরিয়ে আনা এবং এর জন্য ভালো মানের অনুষ্ঠান তৈরির ওপর জোর দেয়া; বেসরকারি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠান ক্রয়ের ওপর আরোপিত শতকরা ১০ ভাগ হারে অগ্রিম আয়কর কর্তন বাদ দেওয়া, দক্ষ ও মেধাসম্পন্ন টেলিভিশন কর্মী, নির্মাতা, শিল্পী, কলাকুশলী তৈরির জন্য অবিলম্বে ‘টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মাণ প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট’ চালু করা ইত্যাদি। কিন্তু দুর্ভাগ্য যেন আমাদের পিছু ছাড়ে না। সংশয় ঘোচে না। কেননা অতীতে দেখা গেছে এইরকম সংগঠন তৈরি করে কর্তাব্যক্তিরা বিভিন্ন টিভিতে তাদের আর্থিক সুযোগ সুবিধা (দু/তিনটা সিরিয়াল প্রচারের প্রতিশ্রুতি, পাওনা টাকা পরিশোধ) আদায় করে নিয়ে আন্দোলনটিকে ধ্বংস করে দিতে। এবারও কি তাই ঘটবে? আর আমরা যারা দর্শক তারা কি এভাবেই বঞ্চিত হতে থাকব ভালো অনুষ্ঠান দেখা থেকে?