বিশ্বের যেকোন দেশে যে কোন জঙ্গিবাদী কান্ডের পর জনসাধারনের ধোয়াশা কাটানোর জন্য দ্রুত ঘটনার স্বচ্ছ বিবরণ প্রকাশ করা হয়। কিন্তু বিধিবাম, আমাদের কর্তারা ধোয়াশা বাড়িয়ে রাজনৈতিক রং মাখিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য অপেক্ষা করেন এমন ধারনা জনমনে প্রকট।কল্যাণপুরের অপারেশন স্টর্ম-২৬ এর ঘটনা এবং আইএস জঙ্গিদের সাদৃৃশ্যতা নিয়ে (Click This Link) লিখেছিলাম।গুলশান ট্রাজেডীর পর খালেদা জিয়া গুলশান হামলা করেছেন এমন মন্তব্যে শহীদ মিনার চত্বর কেপেছিল।যদিও গুলশান ট্রাজেডীতে আইএস মুখপাত্র আমাক,রয়টার্স,ফক্স নিউজ সহ সারা বিশ্বের সবাই আইএসের ঘটানো বলে স্বীকার করলেও করেনি কেবলমাত্র আমাদের কর্তারা। পাশাপাশি নারকীয় গুলশান ট্রাজেডী নর্থ সাউথের সাবেক শিক্ষক হাসনাতের নির্দেশে হয়েছে এমন খবর মিডিয়ায় থাকার মাঝেই গুলশান হামলার কাহিনীর সাথে যোগ করা হল যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেমের ভাই ও নিজামীর ছেলে!!! এমনকি জামায়াতের যুদ্ধপরাধীদের পক্ষে সব মামলার ডিফেন্স টিমের প্রধান ছিলেন এমন এক আইনজীবিকে!!
আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটস (আইএস) গুলশান হামলার হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করলেও বাংলাদেশে আইএসের কোনো অস্তিত্ব নেই বলে দাবি করে সরকার।পুলিশ বলছে, জেএমবি ও সমমনা দেশীয় জঙ্গিদলগুলোই এ হামলা করেছে এমনটাই বলেছিল গুলশান হামলার পর। কল্যানপুরে ঘটনাস্থল থেকে আইএসের পতাকা ও ইউনির্ফম থাকার পরও কল্যাণপুরের জঙ্গীরা 'আইএস' নয়, 'জেএমবি'! " অন্য সময়ের মতই জঙ্গি অভিযান শেষে কল্যাণপুরের অপারেশন স্টর্ম-২৬ এ আইএস সংশ্লিষ্টতার ধারণা নাকচ করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক।অভিযান শেষে ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “তারা নিজেদের আইএস বলে পরিচয় দিলেও তাদের সঙ্গে আইএসের কোনো ধরনের যোগসূত্র পাওয়া যায়নি।”
গতকাল দিনের শুরুতেই তো অপারেশন স্টর্ম-২৬ নিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয় গুলশান হামলাকারীদের সঙ্গে এখানে নিহত জঙ্গিদের মিল রয়েছে!!!! এরা গুলশানের হামলাকারীদের একই গ্রুপের সদস্য হতে পারে!! ধরন একই !! জঙ্গিরা গুলশানের মতো কোনো ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটানোর লক্ষ্যে জড়ো হয়েছিল!! যখন লাশের ছবি প্রকাশ করা হয়, দেখা যায় সবাই আইএসের স্বীকৃত ইউনির্ফম পরিহিত!!
প্রেস ব্রিফিং এতো জানানো হয়েছিল যে ঘটনাস্থলে প্রাপ্ত নয় জন জঙ্গী সবাই কালো পাঞ্জাবী এবং বিশেষধরনের পাগড়ী পরিহিত অবস্থায় কারো কারো শরীরের সাথে ব্যাকপ্যাক ছিল। অধিকাংশ জনের পায়ে পায়ে কেডস ছিল।অনেকটাই গুলশানের জঙ্গিদের আলামত বহন করে!!
প্রত্যক্ষদর্শীরা তো গনমাধ্যমে স্বীকার করেছিল “তারা নিজেদের আইএস সদস্য বলে পরিচয় দিচ্ছিল। তারা জিহাদ করছে বলেও দাবি করছিল। তাদের সঙ্গে ২০ জন সদস্য রয়েছে বলেও তারা বলছে।”
খোদ আইজিপি তো নিজেই বলেন “তারা ফ্ল্যাটের দরজা খুলে গুলি করতে করতে পালানোর চেষ্টা করে। তাদের পরনে কালো রঙের জঙ্গি পোশাক ছিল, মাথায় ছিল পাগড়ি; সঙ্গে ছিল ব্যাকপ্যাক।”
এমনকি গুলশান হামলার ঠিক একবছর আগে আইএসের বাংলাদেশী কয়েকজনের শপথ নেয়ার যে ভিডিও অনলাইনে ভাইরাল হয় তার ব্যাকগ্রাউন্ডে তো একই রকমভাবে পতাকা ঝুলানো ছিল।
সেখানে নাকি নামী দুটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতটি পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে..সাম্প্রতিক আলোচনা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান .......................
কিন্তু পরক্ষনেই ঘোষনা করা হল এরা সবাই জেএমবি!! আমার মত সকলেই ধরেনিয়েছিল যে সব কিছ দেখে তো আইএসই মনে হচ্ছে তাহলে হয়তো কল্যাণপুরের জঙ্গিরাও হয়তো গুলশানের মত কারো নির্দেশের অপেক্ষায় ছিল প্রস্তুত হয়ে ছিল !!! কিন্তু সরকার অস্বীকার করায়.............
স্বভাবতই প্রশ্ন জাগতে পারে যদি আইএস না হয় তাহল এরা কারা?..! শুধু র্যাব পুলিশ দিয়ে সমাধানে এতো দেরি কেন ? ঘটনার ছবি গনমাধ্যমে দিতে কেন এতো দেরি হয়েছে?
পুলিশের ভাষ্যমতে, নিহতরা সবাই ‘জঙ্গি' ছিল, যাদের বয়স ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে এবং যাদের অধিকাংশই ছিল উচ্চশিক্ষিত৷ এমনকি ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার মতে গুলশান হামলায় অংশ নেয়ারাও এই একই গ্রুপের সদস্য ছিল! নিহত নয় জঙ্গির সবার পরিচয় তো এখনো পুলিশ জানে না, তাদের জঙ্গি পরিচয়, শিক্ষাগত যোগ্যতা, গুলশান হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়ে কীভাবে নিশ্চিত হলো পুলিশ কেমন করে?..!!!
জঙ্গিরা পুলিশের দিকে ১১টি গ্রেনেড ছুড়ে মেরেছে, আর রাতভর অনেক গুলি ছুড়েছে৷ অভিযানের পর চারটি পিস্তল, ২২ রাউন্ড গুলি, ২৩টি গ্রেনেড, কিছু চাকু ও তলোয়াড় এবং পাঁচ কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার করেছে বলে জানায় পুলিশ!! জঙ্গিদের কাছে তাহলে গুলি ছোড়ার মতো রিভালবার ছিল মাত্র চারটি !! চারটি রিভালবার দিয়ে হাজার খানেক পুলিশের সঙ্গে সারারাত লড়াই করা কি করে সম্ভব!! জাহাজ মঞ্জিলের উপর থেকে পুলিশের দিকে ১১ টি গ্রেনেড, অজস্র গুলি ছোড়া হলে সামান্য হলেও পুলিশের ক্ষয়ক্ষতির হওয়ার কথা!! যেখানে মাত্র দুটি গ্রেনেডে ওসি সালাউদ্দিন ও রবিউল মারা গেল!! পুলিশ কিভাবে স্প্লিন্টার থেকে জনবহুল এলাকায় নিয়ন্ত্রণ করল !!
জঙ্গিদের সাথে পুলিশের গোলাগুলি হয়, ছুড়লো গ্রেনেড, কিন্তু মরার পরে হাতে সবজি কাটার ছুরি কি করে এলো?.তারা তো নাকি গুলি করতে করতে পালাচ্ছিল...!!!!
বাড়ির সিঁড়িতে তো পুলিশের গুলির খোসাই পাওয়া গেলো !!! জঙ্গিদের কাছ থেকে উদ্ধার করা রিভালবারের গুলির খোসা কই!!!
বাংলাদেশে ক্রসফায়ার এর ঘটনাগুলো সবাই জানে। সেই ঘটনা পড়তে পড়তে অনেকেই বিরক্ত হয়ে গেছে। সেই ঘটনাগুলোর মত এতো গোলাগুলি, বোমার আওয়াজ আর ভাঁজকরা কালো পাঞ্জাবী ও মাথায় পাগড়ী পড়ে জঙ্গিদের যুদ্ধ করার ঘটনাও ঢুকে পড়েছে। এমন শংকা অনেকেরই। শংকাটা আরো প্রবল হয় যখন,ঘটনার নিয়ন্ত্রনের সাথে সাথেই সরকার,আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী,আওয়ামী লীগ কর্মীরা সবাই সফলতার অংশের ভাগ নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে!!!
খোদ গোয়েন্দাদের হাতেই রাজধানীর ১৯ জঙ্গি আস্তানার তথ্য রয়েছে। অতীতে জঙ্গি দমনের নামে জুজুর খেলায় বিএনপি-জামাতকে ঠ্যাঙ্গাতে কর্তারা ব্যতিব্যাস্ত ছিল।সেই জুজু প্রর্দশনের সুযোগেই আসল জুজু দর্শন দিয়ে গেল নারকীয় গুলশান তান্ডবে।গত বছরের নরভম্বর থেকে এ যাবত কয়েক মাসে প্রায় ১৫০০ জঙ্গি গ্রেফতারের পরও এত জঙ্গি আসে কোথা থেকে!! বিএনপি-জামাত কি তাহলে থ্রিজি স্পিডে জঙ্গি বানাচ্ছে!! এমন প্রশ্ন আসাও অমূলক নয়।
বীর বাঙ্গালী অস্ত্র ধরে হায়েনার মুখ থেকে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য ছিনিয়ে আনা জাতি। যে কোন পরিস্থিতি তারা মোকাবেলা করতে পারে শক্ত হাতে। আইএস বা আল-কায়েদা বা জেএমবি যেটাই হোক না কেন,বীর বাঙ্গালী সব রুখতে সক্ষম। আর বাংলাদেশের জনসাধারণ গুলশান হামলার পর থেকে আইএস নিয়ে ব্যাপক সচেতন।সফলতা প্রর্দশনের রাজনীতি পরিহার করে আসল ব্যাপারটা জনসাধারনের কাছে তুলে ধরতে পারলে জনগন নিজে থেকেই সচেতন হয়ে সমাজের পেট থেকে জঙ্গি নামক নরকীটদের উগড়ে দেবে। কর্তাদের পরিস্থিতি জটিল হওয়ার আগেই পদক্ষেপ নেয়া উচিত।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০১৬ ভোর ৫:৩৭