somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শিশির ভেজা রোদ
শীতের সকালে শিশিরে ভেজা ঘাস গুলো যেমন রোদের ঝলকানিতে চকচক করে উঠে..দেখে অনুভব হয় রোদটাই শিশিরে ভেজা।....... সময় কাটানোর জন্য লেখালেখির সামান্য ব্যর্থ চেষ্টা...........

অপরূপ প্রকৃতি ও সমুদ্রের সান্নিধ্যে

৩১ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৯:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রকৃতির সাথে একান্তে সময় কাটাতে... কার মন না কাঁদে।আমাদের বাংলাদেশের সবুজ-শ্যামল প্রকৃতিটা যেন ছবির মত সজ্জিত।সাগর,পাহাড়,নদী-নালা,দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ এক কথায় রূপ মাধুর্যের ষোলকলায় পূর্ণ।

দীর্ঘদিন যাবত খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো কক্সবাজার ভ্রমণের। সমুদ্রের বিশালতা দেখার, খুব কাছে থেকে উপভোগ ককরবো বালিয়াড়ির অপার সৌন্দর্য্য। অনেক আগে থেকেই শখ ছিলো, সমুদ্র সৈকতে নীল শাড়ী পরে হাঁটবো।বাতাসে আমার শাড়ীর আঁচল আর চুল উড়বে। আরো কত্ত কি!....

সময়ের আর্বতনে সাধ অার সাধ্যের সমন্বয় হয়তো হয়না....



অবশেষে অনেক ঝক্কি-ঝামেলার পর একসময় সেই দীর্ঘ দিন যাবত লালিত সুপ্ত ইচ্ছা বাস্তবে আলোর মুখ দেখলো... সিদ্ধান্ত হলো কক্সবাজার যাওয়ার।পরিবারের সবাই একসাথে যাবো,এককথায় পারিবারিক ভ্রমন।আমিতো খুশি।আগেই অনলাইনে হোটেল বুকিং দেয়া হলো কলাতলী সৈকতের নিকটবর্তী "কোরাল রীফে"।আমার বর টিকেট সংগ্রহ করলো "এনা পরিবহনের"।ভ্রমণ যাত্রায় আমরা ছয় জন...আমি,আমার বর,আর আমাদের চার ছেলে-মেয়ে।

বাস ছাড়ার সময় ছিলো রাত সাড়ে দশটায়।আমরা যথারীতি মহাখালী বাস টার্মিনালে আসলাম এবং বাসে উঠলাম।লম্বা ভ্রমন,এর আগে কখনও এত্ত লম্বা বাস ভ্রমণ করা হয়নি। আাগে থেকেই সাথে হালকা নাস্তা আর পানি নিয়েছিলাম....যদি প্রয়োজন হয়।

রাত দশটা বিশ মিনিটে গাড়ী ছাড়ল।রাতের বেলা স্বভাবতই অন্ধকারে বাইরে কিছুই দেখা যায় না।তারপরও, রাতের এই ভ্রমনটা কেন যেন ভাল লাগছিলো।হু হু বাতাস,আমাকে যেনো ছুঁয়ে যাচ্ছিলো।এক সময় গাড়ীটা মেঘনা নদীর উপরে, মানে ব্রীজের উপর এসে থামলো।জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম,অন্ধকারে কিছুই দেখা যায় না,দূরে মিটি মিটি করে জ্বলা কিছু বাতি ছাড়া।



সারা রাত কাটলো গাড়ীতে,মাঝখানে অবশ্য দুইবার যাত্রা বিরতি হয়েছিলো।সকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে গাড়ী এসে থামল,কক্সবাজার সুগন্ধা পয়েন্ট!!

আমার দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন। সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে সরাসরি হোটেলে। কিন্ত বিধিবাম! হোটেলে চেক ইন ১১টায়....রুম পেতে দেরি হবে,কি করব এতক্ষন??

বড় ছেলে বলল,মা একটু ঘুরে আসি,আমি বললাম যাও।একটু পর ফোন দিয়ে বলল,মা জানো আমি কোথায়?আমি বললাম কোথায়?চিৎকার দিয়ে বলল,সাগরের তীরে!!!



আমাকে আর পায় কে?আমি তখনই মেজ ছেলেকে সাথে নিয়ে বের হলাম। পাঁচ মিনিটের পথ,তারপর কলাতলী বীচ!!বীচে গেলাম, মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছি।এত সুন্দর!!!সাগরের বিশালতা, যে দিকে চোখ যায় শুধু পানি আর পানি।ঐ দূর দিগন্তে তাকালে, মনে হয় যেনো আকাশটা সাগরের সাথে মিশে আছে।সাগরের ঢেউ গুলো যেনো তীরে এসে মাটির সাথে খেলা করছে।দূরে ছোটো ছোটো কয়েকটা নৌকা ঢেউয়ের দোলায় দুলছিলো।আমি একটু একটু করে পানির দিকে আগাচ্ছিলাম, সাথে বাচ্চারাও।

আমার বর বলল,আগে নাস্তা, তারপর পানিতে নামো।কি আর করা, একটা পৌষি রেস্টুরেন্টে যেয়ে নাস্তা করলাম।
তারপর দুপুর পর্যন্ত পানিতে।বাচ্চারা খুব মজা করছিলো,সাথে আমিতো আছিই।এগারটা বাজলে হোটেলে চেক ইন করলাম।সবারই সারা শরীর বালি আর লবণাক্ততায় একাকার। তারপর সবাই গোসল শেষ করে.... আবার পরিকল্পনায় মনোনিবেশ.... ঠিক হলো, এখানে যে কয়দিন থাকবো, প্রত্যেক বেলার খাবার ভিন্ন ভিন্ন রেস্টুরেন্টে খাবো।এতে করে খাওয়াও হবে আবার ঘুরাও যাবে।



পরিকল্পনা অনুযায়ী....তৈরী হয়ে সবাই দুপুরের খাবারের জন্য বের হলাম।খাবার পর হোটেলে ফিরলাম।সারা রাত কেউই ঘুমায়নি ভালো করে,সবাই ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত।কাজেই হোটেলে ফিরে সবাই ক্লান্তিজনিত ঘুমে....।সূর্যাস্ত দেখবো, তাই বিকেলে বের হলাম।কিন্তু এখানেও... একটু দেরী হওয়াতে দেখতে পারলাম না।মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো।যেয়ে দেখি আকাশটা লাল হয়ে আছে।কি আর করা,আগামীকাল দেখবো।রাত নয়টা পর্যন্ত ওখানে থাকলাম।যতই রাত হচ্ছিলো ততই ঢেউয়ের গর্জন জোরে শোনা যাচ্ছিলো।সেই সাথে বাতাস।আমি তীরে, আঁধারেই ঢেউ দেখছিলাম।জোয়ারের সময়, কি ভাবে পানি দিয়ে ফাঁকা জায়গাটা ভরে যাচ্ছে।অদ্ভুত সুন্দর!!!



তারপর রাতের খাবার খেয়ে হোটেলে ফিরলাম।সিদ্ধান্ত হলো, আগামীকাল হিমছড়ি আর ইনানী বীচে যাবো।সকালে যথারীতি রওয়ানা দিলাম।একটা অটো রিজার্ভ করলাম... যেনো পথের দু পাশের, প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে দেখতে যেতে পারি।যা গাড়ীতে করে গেলে দেখা হতো না। ইনানী বীচ গেলাম। বাচ্চারা বীচ বাইকে ওঠার বায়না ধরল।ওদের শখ দেখে আমার বরও আমাকে নিয়ে উঠল একটা বাইকে।সাগর তীরে বাইকে ঘুরতে ভালোই লাগছিলো,এক অন্যরকম অনুভূতি।ফিরতি পথে হিমছড়ি যাবো।রওয়ানা দিলাম।



হিমছড়িতে আমার এক ফেসবুক ফ্রেন্ড ছোট ভাইয়ের সাথে দেখা হলো... ওকে অবশ্য আাগে থেকেই জানিয়ে রেখেছিলাম। ও আমাদের জন্য আগেই টিকেট কেটে রেখেছিলো,যার ফলে দেরী না করেই আমরা ভিতরে প্রবেশ করলাম।প্রথমে ঝর্ণা দেখলাম... যদিও কৃত্তিম.... তারপর পাহাড়ের উপর উঠলাম। উঠতে অবশ্য বেশ কষ্ট হয়েছে।বেশি কষ্ট হয়েছে আমার বরের।পাহাড়ে ওঠার পর যে দৃশ্য দেখলাম,তাতে করে সব কষ্ট দূর হয়ে গেলো।আল্লাহর শুকরিয়া আদায় না করে পারলাম না।একপাশে অথৈ সাগরের নীল জলরাশি,আর এক পাশে সবুজে ঘেরা পাহাড়।অপূর্ব! অপূর্ব! এ দৃশ্য।উপর থেকে সাগরের পানি গুলি নীল দেখাচ্ছিলো।আমি তন্ময় হয়ে তাকিয়ে রইলাম। তারপর ফিরে আসলাম হোটেলে।সেদিন আর পানিতে নামা হয়নি।বিকেল হলো,আজ আর সূর্যাস্ত দেখা মিস করা যাবে না।তাই আগেই সবাই সাগরের তীরে আসলাম।সূর্য ধীরে ধীরে অস্ত যাচ্ছিলো,আমরা ওখানেই ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইলাম,অন্ধকার হওয়ার আগ পর্যন্ত।চারিদিকে যখন অন্ধকার হলো তখন আমরা বীচ চেয়ারে বসলাম। পাশে কতগুলো ছেলে,খুব সম্ভবত বন্ধু হবে।সবাই একসাথে ভ্রমণে এসেছে।ওরা খুব মজা করে গান করছিলো।ভালোই লাগছিলো শুনতে।হোটেলে ফিরলাম।পরের দিন ইচ্ছা ছিলো চট্টগ্রাম শহর ঘুরবো।কিন্তু বাচ্চারা ও আমার ইচ্ছার কারণে কক্সবাজারেই থাকলাম।

সকাল,দশটার সময় সাগর তীরে আসলাম।কথা ছিলো সবাই আজ পানিতে নামবো এবং ইচ্ছেমতো ভিজবো।তো নামলাম, একটু ভয়ও লাগছিলো,সাঁতারও পারি না।তারপরও সবার সাথে মজা করলাম।ফটোগ্রাফার দিয়ে ছবি উঠালাম।বেলা একটার দিকে হোটেলে ফিরলাম।বিকেলে সর্বশেষ সূর্যাস্ত দেখতে আসলাম।সেদিনও অনেক রাত পর্যন্ত ছিলাম।আগামীকাল চলে যাবো,মনে হতেই খুব কষ্ট হচ্ছিলো।



পরদিন কাক ডাকা ভোরে সাগর পাড়ে গেলাম,সূর্যোদয় হবার দৃশ্যটা কেমন হয় তা দেখার জন্য।ওখানে কিছুক্ষন অবস্থান করলাম।এক সময় ছেলে বলল,মা চল,সবাই অপেক্ষা করছে।আজ ঢাকা ফিরতে হবে।একটুও মন চাচ্ছিলো না এখান থেকে চলে যেতে।তারপরও কি আর করা, যেতেতো হবেই।

সকাল ১০ টার গাড়ীতে উঠলাম,ঢাকার উদ্দ্যেশ্যে।আবার সেই চিরচেনা ইটপাথরের শহর,যানজট, কোলাহল, রুটিন অনুযায়ী জীবন যাপন।

কিন্তু কক্সবাজারের এই মধুর স্মৃতি সারাজীবন আমার হৃদয়ের এক কোনে ভালোলাগা, ভালোবাসায় অম্লান হয়ে থাকবে।.... মনে হচ্ছিলো কবিতার পংক্তিগুলো.... "আবার আসিবো ফিরে"
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১০:০৫
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×