somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গ্রাস, হুমায়ূন, শিল্প ও সত্য

১৭ ই মে, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গুন্টের গ্রাস ইসরায়েল নিয়ে কবিতা লিখে ইহুদীবাদীদের রোষে পড়েছেন। ইসরায়েল যে ১৯৪৮ সাল থেকেই একটা বিষফোঁড়া হয়ে মধ্যপ্রাচ্যের জন্য একটা মহাবিপদ হয়ে বসে আছে, এ কথা পশ্চিমা দেশগুলো অস্বীকার করে, এমন কি জার্মানীকেও আগে থেকে এ ব্যাপারে বাধ্য করে রাখা হয়েছে। অবশ্য সরকারী সিদ্ধান্ত যা-ই হোক না কেন বহু ইহুদীও ইহুদীবাদ বিরোধী - যেমন চোমস্কি। চোমস্কির লেখায় অনুপ্রাণিত ইহুদী অধ্যাপক নর্মান ফিংকেলস্টাইন "The Holocaust Industry" নামে এক বই লেখেন, যাতে তিনি তাঁর মায়ের এক উদ্ধৃতি উল্লেখ করেন - " হলোকস্টে যদি হিটলার এত ইহুদীই মেরে ফেলে থাকেন, তাহলে এত লাখে লাখে ইহুদী আগে বা এখনো জার্মানদের কাছ থেকে তার ক্ষতিপূরণ পায় কিভাবে?" ক্ষুদে সংখ্যালঘু হলেও আমেরিকার রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ভুবনে বিপুল ক্ষমতাধর ইহুদীসমাজ নিজেদের জাতভাইকেই বর্জন করে। তাঁর চাকরী যায়।

ওবামা দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হওয়ার পরে কি করবেন দেখা যাক। আমেরিকান পররাষ্ট্র মন্ত্রী পদে হিলারীকেই রেখে দেবেন, যার জামাই ইহুদী, নাকি এবারের চাইতে আরেকটু ইহুদীবাদ বিরোধী অবস্থান নেবার ইচ্ছা গোপনে পোষণ করেন এবং সে জন্য মন্ত্রীসভা ঢেলে সাজাবেন, তা জানা যাবে জানুয়ারী মাসে।

গুন্টের গ্রাস বাংলাদেশেও এসেছিলেন এক সময়। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন কেন বাংলাদেশী সাহিত্যিকরা জেনেভা ক্যাম্পে অবস্থানরত পাকিস্তানীদের নিয়ে কিছু লেখে না। সঙ্গে সঙ্গে টের পান তিনি ভীমরুলের চাকে হাত দিয়েছেন। সৈয়দ শামসুল হক থেকে শুরু করে প্রায় সব সাহিত্যিক (যাঁদের কেউই আসলে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আন্তর্জাতিক মানের কোনো মহৎ সাহিত্য সৃষ্টি করতে পারেন নি) গ্রাসের মন্তব্য অনধিকার চর্চা বলে চেঁচামেচি শুরু করেন।

মেহেরজান ছবিটিতে একটি ব্যতিক্রমী পাকিস্তানী সৈনিক ও ঘটনা দেখানোতেই আমাদের স্বাধীনতার কপিরাইট পাওয়া বিদ্বানগণ এমন মারমুখী হয়ে উঠলেন যে সে ছবি নামিয়ে নিতে হলো। তার ডিভিডিও নেই, যে লোকে নিজের ঘরে বসে একটু তার বিচার করে দেখতে পারে।

হুমায়ূন আহমেদ ইতিহাসবিদ নন, তিনি সৃষ্টিশীল সাহিত্যিক। ঐতিহাসিক ঘটনা অবলম্বন করে শিল্পকর্ম তৈরী হলে তাকে নির্ভেজাল ডকুমেন্টারী হতে হবে যাঁরা এটা বিশ্বাস করেন তাঁরা "Inglourious Basterds" দেখেছেন কি? হুমায়ূন তাঁর নানা পাকিস্তানপন্থী হলেও ভালো মানুষ ছিলেন বলেছেন কোথাও, সেই প্রসঙ্গ অনেকে টেনে আনছেন। বর্ণ হিন্দুদের অত্যাচারের কথা এবং সেই কারণে মুসলিমদের জন্য স্বাধীন আবাসভূমির (যা মূল প্রস্তাবে একাধিক স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হওয়ারই কথা ছিল) জন্মকে যাঁরা স্বাগত জানিয়েছিল তাঁদের কথা তুললেই অনেক তথাকথিত বুদ্ধিজীবী "সাম্প্রদায়িক" বা "রাজাকার" বলে মারতে আসেন।

১৯৭১ এর ৭ই মার্চ থেকে ২৫শে মার্চের রাত্রি পর্যন্ত কি ঘটেছিল অবাঙালীদের ভাগ্যে? বা ১৬ ই ডিসেম্বরের পরে? শুধু একটা উদাহরণঃ এখন যেটা ইন্দিরা রোডে অবস্থিত তেজগাঁ কলেজ হোস্টেল, সেটা ছিল নেসার নামে এক অবাঙালী ভদ্রলোকের, যিনি পাকিস্তানপন্থী হলেও কোন দুষ্কৃতি করেছেন বলে প্রমাণ নেই। ১৬ই ডিসেম্বরের আগে তিনি দেশত্যাগ করেন নি, নিজেকে নিরপরাধ ভেবে। তাঁর এক মেয়েকে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দেয়া এক তরুণ তুলে নিয়ে যায়, তাঁর বাড়ি সে ও তার বন্ধুরা দখল করে। পরে এটা তেজগাঁ কলেজ হোস্টেলে পরিনত হয়। নেসার সাহেব অনেক পয়সা ঘুষ দিয়ে প্রাণ ও বাকি পরিবার নিয়ে পাকিস্তানে পালান। সেই বাড়ির আঙিনার একাংশ পরে "কিনে নিয়ে" একদা বামপন্থী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, আমাদের আইন মন্ত্রী, তাঁর সুরম্য বাসভবন নির্মাণ করেছেন।

বহুজনের কাছেই শোনা যায় ৭ই মার্চ থেকে ২৫শে মার্চ পর্যন্ত অবাঙালীদের বাড়ি লুট, প্রাণ হরণ, মেয়ে ধর্ষণের ঘটনার কথা। জগন্নাথ হল নাকি অস্ত্র শস্ত্রে সুসজ্জিত হয়ে উঠেছিল, যে কারণে এই হলের ওপরেই ২৫শে মার্চ রাতে পাক বাহিনীর সব চেয়ে মারাত্মক আক্রমণ হয়। অবশ্য এটা অনস্বীকার্য যে পাক বাহিনী ও তার দোসরদের বিভৎস কর্মকাণ্ডের কাছে এসব ছেলেখেলা। তবে কেউ যখন বলেন, এক ব্যক্তি লক্ষকে মিলিয়ন মনে করায় ৩০ লক্ষ শহীদের স্ট্যাটিস্টিক তৈরী হয়েছিল, যেহেতু তিনি অনেকের কাছে দেবতা, তাঁর ভুলটুকু ( ৩ লক্ষই বা কম কি, সেই সংখ্যাটিও পাক বাহিনীর জঘন্য অপরাধের মাপকাঠি হিসাবে উপস্থাপন করা যেত) সবাইকে অবশ্যই মেনে নিতে হবে। এমনকি ২৯,৯৯,৯৯৯ বললেও "তুই রাজাকার" (হায় হুমায়ূন!)।

হাইকোর্ট হুমায়ূনকে ইতিহাস মেনে লিখতে বলেছেন। প্রকৃত ইতিহাসে কি শুধু শক্তিমানের, বিজয়ীর সত্যটুকু থাকে? স্বাধীনতা আমাদের সুবিশাল অর্জন, গৌরবের ধন। তার মধ্যে কি ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতা, মুদ্রার অপর পৃষ্ঠে কি আছে তা দেখার কৌতূহল প্রকাশের স্বাধীনতা, বা শিল্পীর স্বাধীনতা অন্তর্গত নয়?
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০১২ সকাল ৭:১০
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×