জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিবৃতি দাতা জিয়া পরিষদের একাধিক শিক আওয়ামী প্যানেলের প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়া নৈতিক স্খলন এর অপরাধে সাজা প্রাপ্ত দুই শিক্ষক আওয়ামী প্যানেলে নির্বাচন করছেন। ফলে কট্টর আওয়ামীপন্থী হিসেবে পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক প্রার্থী হতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
দীর্ঘ চার বছর পর অনুষ্ঠিত সিনেট নির্বাচনে মোট ৩৩টি পদের বিপরীতে ‘মুক্তিযুদ্ধের স্বপরে শক্তি’র ব্যানারে আওয়ামপন্থী এবং “বহুদলীয় গণতন্ত্র, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী ও উদারপন্থী” ব্যানারে বিএনপিপন্থী শিকরা পৃথক প্যানেলে ৩৩ জন করে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া পরিষদের কট্টোর বিএনপিপন্থী ৬জন শিক আওয়ামীপন্থী হয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় ক্যাম্পাসে সচেতন মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ২০০০ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাওয়ার পূর্বে তাকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে না দিতে বিএনপিপন্থী ২৯জন শিক যুক্তবিবৃতি দেন। ওই বিবৃতিতে স্বারকারী অধ্যাপক ফিরোজা হোসেন, সহযোগী অধ্যাপক মোঃ আবদুর রবসহ জিয়া পরিষদের সদস্য অধ্যাপক ফাহমিনা আহমেদ, সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ তারেক চৌধুরী, সহযোগী অধ্যাপক মোঃ গোলাম সোস্তফা, সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দা শাহানারা হক আওয়ামী প্যানেলে সিনেট নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। এ বিষয়ে অধ্যাপক ফিরোজা হোসেন বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অতীতেও সিনেট নির্বাচনে বিএনপি-আওয়ামীলীগ একত্রে অংশ নিয়েছে। এটি নতুন কিছু নয়।
আওয়ামী পন্থী শিকরা শুধু মাত্র নির্বাচনে জয় নিশ্চিত করতে জাতীয়তাবাদী শিকদের একটি অংশের সাথে লিয়াজো করায় এবারই সর্বপ্রথম নির্বাচনী স্লোগানে বঙ্গবন্ধুর নাম বাদ দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে আওয়ামী প্যানেলে বিভিন্ন সময়ে নৈতিক স্খলন জনিত অপরাধে সাজা প্রাপ্ত অধ্যাপক মোঃ আমীর হোসেন অধ্যাপক মোঃ লুৎফুল হাই জামী এবং সহযোগী অধ্যাপক মোঃ গোলাম মোস্তফা নির্বাচন করছেন। এদিকে নির্বাচনে আওয়ামী প্যানেলের শিকদের ভোট দেওয়ার জন্য উপাচার্য সহ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা শিক্ষকদের হুমকি প্রদান করছে বলে অভিযোগ তুলেছে জাতীয়তাবাদী শিকরা। গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭২জন জাতীয়তাবাদী শিক্ষক স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ অভিযোগ করা হয়।
এবিষয়ে বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবিরের মুঠোফোনে একাধিকরার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ ফরহাদ হোসেনকে ফোন করা হলে তিনি মিটিংয়ে ব্যস্ত আছেন বলে লাইন কেটে দেন।
আওয়ামীপন্থী শিক ও শিক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. এম এ মতিন বলেন, এবার সিনেট নির্বাচনে আওয়ামী পন্থী প্যানেলে যে শিকরা অংশ নিচ্ছেন তাদের অধিকাংশই কখনো আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না। এমনকি অনেকে বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সঙ্গে সিনেট নির্বাচন করে সিনেট সদস্য হয়েছিলেন। তিনি বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করি এজন্য এই প্যানেলকে আমি সমর্থন করি না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী প্যানেল থেকে বঞ্চিত হওয়া এক শিক বলেন, সারাটা জীবন বঙ্গবন্ধুর আদর্শে রাজনীতি করেও আজ সিনেট নির্বাচনে যোগ্যতা থাকা সত্তেও বঞ্চিত হচ্ছি। অথচ বিএনপি-জামাতের রাজনীতি করেও অনেকে আওয়ামী প্যানেলে নির্বাচন করছেন।
তিনি আরো বলেন, এবার জিয়া পরিষদ আওয়ামীলীগের সাথে যোগ দেয়ায় কি বঙ্গবন্ধু শব্দটি নির্বাসনে গেছেন!।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এ্যাক্ট ১৯৭৩ এর ১৯ ধারা অনুযায়ী ৩বছর অন্তর অন্তর নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও দীর্ঘ ৪ বছর পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আগামী সকাল নয়টা থেকে দুইটা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক কাবে ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে। এবার নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৪৭ জন শিক ভোটাধীকার প্রয়োগ করবেন।
নির্বাচন কমিশনার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক বলেন, নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ ভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আমি আশা প্রকাশ করছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো শিককে বর্তমান প্রশাসন নির্বাচনে প্রভাবিত করার জন্য বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছেন এ রকম ঘটনা আমার জানা নেই।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



