somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নৈশ কোর্স: শিক্ষা বাণিজ্যিকীকরণে আরেক ধাপ - জাহিদ রোকন

২৪ শে এপ্রিল, ২০১২ রাত ২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শিক্ষা এখন পণ্য। অর্থ থাকলেই উচ্চশিক্ষিত হবার মনোবাঞ্ছা পূরণে উদ্যোগ নিতে পারেন আপনি। পড়াশুনায় সময় অতিবাহিত না করেও পেতে পারেন আকর্ষণীয় সনদ। যার ব্যবস্থাপনায় সর্বক্ষণ শ্রম দিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন(ইউজিসি)সহ কতিপয় আমলা-শিক্ষাবিদ। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির মনোস্কাম পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন আগে? তা পূরণের অভাবনীয় সুযোগ এখন টাকার বিনিময়ে…। এভাবেই টাকা হয়ে উঠেছে আজ উচ্চশিক্ষার মূল নিয়ন্তা। মানবিক বোধ বৃদ্ধির জন্য এক ঠুনকো বস্তুতে পরিণত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ক্রমেই চরিত্র লাভ করছে প্রাইভেটের। মডেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে নতুন নির্মিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নেয়া হচ্ছে মোটা অংকের টাকা, বাকি সকল পাবলিকে প্রতিবছরই বাড়ছে বেতন-ফি। একাধিকবার প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এতো দিনেও যা করতে পারেনি এবার নির্বিঘ্নেই চালু করলো সেই বেসরকারি খাতে সান্ধ্যকালীন কোর্স।

২০০৭ এর ৪৪০তম সিন্ডিকেট বৈঠকের মধ্যদিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আভ্যন্তরীন আয় বৃদ্ধির নামে অন্তত ২০টি খাতে বেতন-ফি বৃদ্ধি করা হয়। কোন খাতে দ্বিগুণ, আবার নতুন ভাবে খাত তৈরির মাধ্যমে চলে ফি বৃদ্ধির মহোৎসব। এরপর ৪৪৯তম সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ২য় শিফট চালুর। এভাবেই প্রতিটি সিন্ডিকেট একএক করে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে ছাত্র স্বার্থ-বিরোধী সিদ্ধান্ত সব।

সাম্রাজ্যবাদী অপশক্তি বিশ্বব্যাংকের নির্দেশনায় ইউজিসি ২০ বছর মেয়াদি কর্মকৌশল আনে ২০০৬ সালে। ২০২৬ পর্যন্ত এই কৌশলপত্রের আলোকেই বৃদ্ধি করা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন-ফি, চালু করা হচ্ছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাইভেট কোর্স। এরই আওতায় ২০০৭ সালে চবিতে প্রশাসন বেতন-ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিলে প্রবল আন্দোলন গড়ে উঠে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির পাশাপাশি শিক্ষা-ব্যয় বৃদ্ধি ছাত্রদের ঐক্যবদ্ধ করতে বিশেষ প্রণোদনা যোগায়। বর্ধিত বেতন-ফি বিরোধী আন্দোলন চলাকালেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেনাবাহিনী কর্তৃক ছাত্র নির্যাতনের ঘটনায় চরম উত্তপ্ত হয়ে উঠে ক্যাম্পাস। ২০ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হলেও ২২ আগস্ট ছাত্র-পুলিশ মুখোমুখি অবস্থান নেয় চবিতে। বর্ধিত বেতন-ফি প্রত্যাহারের দাবিই ছিল ছাত্রদের মূখ্য দাবি। কিন্তু ঐদিনই সারাদেশে কার্ফু জারি করে হলগুলো বন্ধ করে দিলে গ্রেফতার-দমন-পীড়ন পরবর্তীতে আন্দোলন আর জোরালো রূপলাভ করেনি। তবে প্রশাসন হয়তো ছাত্রদের ক্ষোভ অনুমান করে পরিকল্পনার সামান্য কমই বাস্তবায়ন করে। পরের বছর আবার ডাবল শিফট চালুর উদ্যোগ নিয়ে ছাত্রদের অসন্তোষে নিশ্চুপ প্রশাসন গোপন পাঁয়তারা অব্যাহত রাখে। ২০১০ সালের জুলাই-আগস্টে পুনরায় বেতন-ফি বৃদ্ধি করা হলে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠে চবি। পূর্ণাঙ্গ দাবি বাস্তবায়নের সমূহ সম্ভাবনা সত্ত্বেও বিপথগামী নেতৃত্বের প্ররোচনায় আন্দোলন মাঝপথে থেমে যায়। নেতৃত্ব প্রশাসনের সাথে আঁতাত করে। ফলে প্রথমদিকে স্বল্প পরিসরে হলেও প্রশাসনের চাহিদার পুরোটাই অর্জন হয়েছে বর্তমানে। এতেই শেষ নয়, গত ৮ ফেব্রুয়ারি লীগ-শিবির কলহের জেরে ক্যাম্পাস বন্ধ অবস্থায় নির্বিঘ্নে চালু হয়ে গেলো সান্ধ্যকালীন কোর্স এমবিএ। ৯ মার্চ ছিলো এর ভর্তি পরীক্ষা। দু’বছর মেয়াদি এই এমবিএ তে কোর্স সংখ্যা ২০ টি। প্রতি কোর্সে টিউশন ফি ৭,৫০০ টাকা করে। প্রতি কোর্সে পরীক্ষা ফি ৫০০ টাকা করে এবং ভর্তি ফি ১৫,০০০ টাকা। অন্যান্য খরচাপাতিসহ কোর্স শেষ করতে লাগবে অন্তত দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা। যা অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায়ও অনেক বেশি।

প্রশাসন সাধারণত বড় বন্ধগুলোই বেছে নেয় ক্ষতিকর কিছু বাস্তবায়নে। এবারও যার ব্যতিক্রম হয়নি। ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবির সহিংসতায় মাসাধিককাল বন্ধের মধ্যে শুরু হলো ডাবল শিফট কার্যক্রম। সত্যজিৎ রায়ের ‘সীমাবদ্ধ’ চলচ্চিত্রে শ্রমিক বিদ্রোহের মত এখানকার লীগ-শিবির কলহও প্রশাসনের অনুরূপ ধূর্তপনা কিনা তা অনুসন্ধান যোগ্য। তবে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণে নিঃসন্দেহে একটি নগ্ন পদক্ষেপ এটি।

শিক্ষাখাতে পর্যাপ্ত বরাদ্ধ দেয়ার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু সরকার তার বদলে শুরু করেছে ব্যবসায়িক কার্যক্রম। নিয়মিত শিক্ষার্থীদের হাজারটা সংকট বিদ্যমান রেখে, ভবন নির্মাণ, আসন সংখ্যা বৃদ্ধির বদলে বাণিজ্যিকভাবে এমবিএ কোর্স চালুর সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে দুরভিসন্ধিমূলক। শিক্ষক এবং শিক্ষাঙ্গনগুলো যদি ব্যবসায়িক উপাদান হয় সেখান থেকে মানবিকতা অর্জন অসম্ভব। অসম্ভব দেশ সেবাও। আভ্যন্তরীন আয় বৃদ্ধির নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের জল-স্থল ইজারা শপিং মল তৈরি ইত্যাদি কার্যক্রম প্রগতিশীল শিক্ষাঙ্গনের অংশ হতে পারেনা। এদেশের শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি জনগণের করের টাকায় চললেও সাম্রাজ্যবাদের পা চাটা সরকার বিশ্বব্যাংকের কথাকেই বেশি প্রাধান্য দেয়। শিক্ষাখাতকে দেওলিয়া করার সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্তের আজ্ঞাসরূপ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তুকি কমিয়ে আনা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বেতন-ফি বৃদ্ধি, নৈশ কোর্স পরিচালনার মাধ্যমে উচ্চশিক্ষাকে উচ্চবিত্তের ভোগ্য পণ্যে পরিণত করছে সরকার। নৈশ কোর্স চালুর মাধ্যমে যা আরো একধাপ এগোলো।

ব্যয় নির্বাহ করতে না পারায় এদেশের নিম্নবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার অধিকার হারিয়েছে আগেই। বাণিজ্যিকীকরণের মাধ্যমে মধ্যবিত্তেরও প্রায় বিতারিত হওয়ার উপক্রম। কিন্তু আমরা কি মুখবুজে মেনে নেবো সব! ১৯৬১ তে শরীফ খান শিক্ষা কমিশন, ১৯৮৩ তে মজিদ খান শিক্ষা কমিশন এরপর ১৯৯৮ সালে মনিরুজ্জামান শিক্ষা কমিশন; যখনই শিক্ষা সংকোচন-বাণিজ্যিকীকরণ-ফি বৃদ্ধি-নৈশ কোর্স চালুর পাঁয়তারা হয়েছে ছাত্র সমাজ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে দুর্দান্ত। সফলতার মধ্যদিয়ে শিক্ষাকে রক্ষা করেছে দানবের হাত থেকে। আবারো সংকটের মুখোমুখি আমাদের শিক্ষা-অধিকার। দানবদের হাত থেকে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ রোধে-সাম্রাজ্যবাদের মোকাবেলায় আওয়াজ তোলা আজ একান্ত কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে সবার!

২৩.০৩.২০১২
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০১২ রাত ২:১৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×