প্যারি-কমিউন
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
শ্রমিক শ্রেণীর বিজয়গাঁথা এই পৃথিবীতে খুব বেশী নেই। ইতিহাস খুঁজলে সাফল্যের চেয়ে ত্যাগ আর বঞ্চনার কথাই পাওয়া যায় বার বার। ১৮৭১ সালের ১৮ই মার্চ ফ্রান্সের প্যারিসের শ্রম জীবি মানুষ প্যারিস কেন্দ্রীক যে রাষ্ট্র ব্যবস্থা চালু করেছিল তাই প্যারি কমিউন নামে পরিচিত। যদিও এই রাষ্ট্র টিকেছিল মাত্র ৭২ দিন।
১৮৫১ সালে ২রা ডিসেম্বরে লুই বোনাপার্ট নেপোলিয়ান নাম ধারন করে সম্রাট হলেন। পুঁজিবাদের দোসরদের মদদে নেপোলিয়ানের দুঃশাসন ক্রমগতভাবে অস্থির করে তুলছিল ফ্রান্সবাসীদের। ফুঁসে উঠছিল অসন্তোষ। ১৮৭০ সালে প্র“শিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করা হলো। নেপোলিয়ানের ইচ্ছা ছিল প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে এবং ধীরে ধীরে দুর্বল করে দিতে। একই সাথে এই যুদ্ধের মাধ্যমে মতা বিস্তার লাভ ঘটাতে।
শুরু হলো যুদ্ধ। চলল প্রায় ২মাস যাবৎ। ফ্রান্সের পরাজয় হলো। পতন হলো সম্রাটের। নব্য শাষক বুর্জোয়া শ্রেনী “জাতীয় প্রতিরা সরকার” নাম নিয়ে মতায় এলো। ১৮৭০ সালের সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ প্র“শিয়ান বাহিনী চুড়ান্ত বিজয়ের লক্ষ্যে এগিয়ে আসতে থাকে প্যারিসের দিকে। দুই শোষক শ্রেনী মুখোমুখি। কিন্তু ইতিহাস লেখা হলো ভিন্ন কালিতে।
বুর্জোয়া শাষক শ্রেণীর ব্যর্থতায় এবং তাতে সাধারন মানুষের অনাস্থায় শুরু হলো গৃহ যুদ্ধ। শ্রমিক শ্রেনী নিজেদেরকে সশস্ত্র করলো। শত থেকে হাজার, হাজার থেকে লাখ- এইভাবে প্রায় ৩ ল শ্রমিক শ’দুয়েক কামান নিয়ে গর্জে ওঠে শাষক শ্রেনীর বিরুদ্ধে। এখানে যদিও দ্বিমত আছে শ্রমিকশ্রেনীর যুদ্ধটি বুর্জোয়া সরকারের বিরুদ্ধে ছিল নাকি প্র“শিয়ানদের বিরুদ্ধে। তবে অধিকাংশের মত- প্রথমত এটি দেশ রার সংগ্রাম হলেও একই সাথে অধিকার রার সংগ্রামে পরিনত হয়। এদিকে শ্রমিকের জাগরণ ঠেকাতে প্যারিসের বুর্জোয়া সরকার গোপনের সন্ধি করে ফেললো আক্রমণকারী প্র“শিয়ানদের সাথে। বাইরের শত্র“কে আপন করে নিল তারা। শ্রমিকদের অস্ত্র ত্যাগের নির্দেশ দিলে অস্বীকার করে তারা। বাধ্য হয়ে “জাতীয় প্রতিরা সরকার” প্যারিস থেকে পালিয়ে ভার্সাই-য়ে গিয়ে নতুন রাজধনী স্থাপন করে। প্যারিস তখন শ্রমিকদের দখলে।
১৮৭১ সালের ১৮ মার্চ। ঐতিহাসিক শ্লোগান এল- “প্যারিস কমিউন দীর্ঘজীবি হোক”। শ্রমজীবিদের নতুন সরকার গঠন হলো। এই সরকার প্রথম যে কাজ করল তা হলো ৮দিনের মাথায় নির্বাচন। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে মতা দেওয়া হলো। তাতে-
শ্রমিক প্রতিনিধি -----৩২%
ক্ষুদে কর্মচারি --------১৫%
ক্ষুদে ব্যবসায়ী -------১৪%
শিক্ষক-আইনজীবি ---৩৯% হিসাবে প্রতিনিধি নির্বাচিত হলো।
এদের নিয়ে যে সরকার হলো, তারাই হলো প্যারি কমিউনের সরকার। নির্বাচনের পর সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে শ্রমিকরা বড় ধরনের কর্মকান্ড শুরু না করলেও তারা ছোট খাট সংস্কার কর্মকান্ড শুরু করেছিল। কলকারখানায় শ্রমিক নির্যাতন ও জরিমানা আদায় বন্ধ ছিল একটি উল্লেখযোগ্য সংস্কার। এভাবেই তারা গঠন করেছিল বিশ্বের প্রথম শ্রমিক রাষ্ট্র।
ওদিকে প্র“শিয়ান সৈন্য আর ফ্রান্সের বুর্জোয়া বাহিনী প্যারিস দখলের ষড়যন্ত্র শুরু করে। নিজেদের শত্র“তা ভুলে শ্রমিক শ্রেণীকে প্রধান শত্র“ গণ্যে এগিয়ে আসতে থাকে প্যারিসের দিকে। ১৮৭১ সালের ২১মে সৈন্যদল প্যারিসে ঢুকে পড়ে। শ্রমজীবি জনগন রাস্তায় নেমে মুখোমুখি হয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে। প্রায় ৩৬,০০০ শ্রমিক মারা যায় মাত্র কয়েক দিনে। আরো প্রায় ৩২,০০০ জনকে বন্দি করা হয়- পরবর্তীতে যাদের কাউকে গুলি করে, কাউকে নির্বাসনে পাঠিয়ে এই গণ জাগরনকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়।
কিন্তু তার আগেই ৭২ দিনের প্যারি কমিউন ইতিহাস হয়ে গেছে।
ত্যাগ আর অর্জনের এই ইতিহাস আজো কোটি কোটি শ্রমিকের চোখে স্বপ্ন দেখায়।
(আমি রাজনীতি খুব একটা বুঝিনা। বুঝিনা কোনটা গনতন্ত্র, কোনটা সমাজতন্ত্র। শ্রেফ ভালো লাগা থেকে এই লেখাটা লিখলাম। তথ্য আর ছবি গুলো ইন্টারনেট থেকে পাওয়া। )
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।
কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন
কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...
হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?
হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?
হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।