somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমায় ক্ষমা করে দিও, বঙ্গবন্ধু।

১৫ ই আগস্ট, ২০০৯ রাত ১২:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




সেই রাতটা আর দশটা রাতের মতই তো ছিল। শান্ত, নিস্তব্ধ। আর সব রাতের মতই, আর দশটা সাধারন বাঙালী পরিবারের মতই ঘুমিয়ে ছিল ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসায় একটি বাঙালী পরিবার। ঘুমিয়ে ছিলেন একজন কাজে অসাধারন অথচ চলনে সাধারন একজন মহামানুষ। আর দশদিনের মতই রাতের খাবার খেয়ে, পারিবারিক বৈঠকে হাসি ঠাট্টা করে, ছেলে, বউ, বাবা,মা নাতি মিলে সময় কাটিয়ে শান্তির ঘুমে ঘুমিয়েছিলেন ওই বাড়ির বাসিন্দারা।

সেই রাতে হয়ত ঘুমুবার আগে শিশু রাসেলকে রাক্ষস দানবের গল্প শুনিয়েছিলেন তার মা, ভয়ে হয়ত আতঁকে কেপেঁ কেপেঁ উঠেছিল রাসেল। জানতও না একটু পরেই তার জীবনে দানবেরা হানা দিচ্ছে।

দানবেরা এল।

এই দেশটা দানবেদের দখলেই ছিল। মানুষের দুঃখদুর্দশার সীমাপরিসীমা ছিল না। পরাধীনতা কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিল জনপদটাকে। একটি মানুষ অদম্য সাহসিকতায়, বিপুল মহত্বতায়, পরম মায়ায় দেশের মানুষগুলোকে আগলে রেখে দেশটাকে নেতৃত্ব দিয়ে স্বাধীনতা এনে দিলেন। প্রতিদানে কি পেলেন? সেই রাতটা। হায়! এই কষ্ট কোথায় রাখি। কোথায় রাখি।

নিচের তলার ঘরে যখন দানবেদের ক্রুর শব্দ, তখন উপরে ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের অস্থির পায়চারি। বঙ্গবন্ধু হয়ত তখন তাকে সান্তনা দিচ্ছেন, 'কিচ্ছু হবে না। এটা আমার দেশ। আমাদের দেশ। এ দেশের মানুষ আমার মানুষ।'
ছেলে গেল নিচে। কুৎসিত দানবেরা তাকে গুলি করল। হতভম্ভ ছেলে বলতে চাইল, আপনারা ভুল করছেন। আমি আপনাদের প্রিয় নেতার ছেলে। দানবেরা তার বুকে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করল। উপর থেকে সেই শব্দ শুনে তখন কি ভেবেছিলেন বঙ্গবন্ধু? এ দেশটায় তার সাথে এমন হবে! কেন?


একটা সময় উপরে উঠে এল এরা। বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে ধরল। তার মনে তখন কি ছিল- এরা কি চায়? কথা বলতে নিচের দিকে যেতেই সিড়ির মাঝে তাকে গুলি করল ঘাতকেরা। ফজিলুতান্নেসাকে আনা হল, তিনি তার স্বামীর লাশ দেখলেন। সেই স্বামী, যার দেখাই তিনি পেতেন না তার স্বামী দেশের জন্য ছুটতেন বলে, দেশের কথা বলে মামলা, জেল হয়রানীতে থাকবেন বলে, দেশটাকে স্বাধীন করতে কত কিছু করেছেন লোকটা আর তার স্ত্রী হিসেবে সেই সব হাসিমুখে মেনে নিয়েছেন তিনি, আজ নিজ দেশে স্বামীর লাশ।
তাকেও মারল ঘাতকেরা। তারপর একে একে সবাই। শিশু রাসেলের গল্পের দানব বাস্তবে এসে গেল। ভয়ে কাতর শিশুর কম্পমান কন্ঠ' আমায় মারবে না তো!' অবোধ শিশুও নিস্তার পেল না হানাদারের নিষ্ঠুরতা থেকে। সবাই শেষ। একটা দেশের মুক্তিদাতা ও তার পরিবার।

কতটা দুর্ভাগ্য আমাদের। কতটা অভাগা জাতি আমরা যে ১৫ আগষ্ট আমাদের চোখের সামনে ঘটে গেল। আমরা কিছুই করলাম না। কতটা অকৃতজ্ঞ আমরা, হত্যাকান্ডের ২১ বছর পরে এ হত্যার মামলা দায়ের হয়। একটা গরুকে কেউ মারলেও দেশে মামলা হয়। অথচ জাতির স্থপতির পুরো পরিবারকে হত্যা করে ফেলল কতিপয় জারজ, সেই মামলা হয় না। ২১ বছর পরে হলেও, এখনও হত্যাকারীরা বীরদর্পে ঘুরে বেড়ায়। বিদেশেই হোক, বেচে থাকে মানুষের মত। যা তাদের প্রাপ‌্য নয়।

ওই সব জারজদের। তাদের জারজ ছাড়া কিছু বলব না, এই দেশে এরা জারজই, এদের খুজে বের করে ...

মানুষকে আমি ঘৃনা করতে পারি না। অনেক খুজে দেখেছি, আমি আসলে ঘৃরা করতে জানি না। তবু শুধু একটা রঙের পোষাক পড়া প্রায় সকল মানষের প্রতি আমার জন্মের ঘৃনা। এরা তো মানুষও নয়। জলপাই রঙাদের আমি মানুষও বলি না। জানি সবাই সমান নয়। জলপাইদের মাঝেও সবাই দানব নয়। কিন্তু ওই রাতের জন্য আমার মনে জলপাইদের প্রতি আজন্ম ঘৃনা জন্মে গেছে। এখন তাদের কাউকে দেখলেই থুথু দিতে ইচ্ছে করে।

মাথাটা ভীষন এলোমেলো। কিছু চিন্তা করতে পারছি না। চোখটা বাড়ে বাড়ে ঝাপসা হয়ে আসে। জানি না কি লিখছি। এই লেখাটা শুধুই ঘৃনার আর ক্ষোভের। শোকের না মোটেও। ঘৃনা ওইসব জারজদের জন্য। ঘৃনা। যতটা ঘৃনা একজন মানুষের পক্ষে করা সম্ভব। যতটা ঘৃনা করলে কেউ ধ্বংশ হয়ে যায়।

এরা ধ্বংশ হোক।




এই লেখাটি গতবছর একই দিনে পোষ্ট করা একটি লেখা। রিপোষ্ট করতে ইচ্ছে হল।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০০৯ রাত ১২:৫১
২৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×