আমাদের পাশের বাসার পিচ্চি মেয়েটি। বয়স তিন-চার। ঠিক মত কথাও বলতে পারে না। খুবই ছোট একজন মানুষ যার মুখে মিষ্টি একটা হাসি যেন সব সময়ই ঝুলে থাকে। কিন্তু তারও আবেগ অনুভুতি আছে। কিন্তু ভাববার বিষয় তা কতখানি তিক্ষ্্ন।
সে দু:খ পেলে কাঁদবে, আনন্দে হাসবে, এটাই সাভাবিক।
কিন্তু এমনটা কি সম্ভব যে সে প্রবল দু:খে বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছে ?
-কিরে কোথায় যাস ?
কোন কথা নেই শুধু কান্নার আওয়াজ। কাছে গেলে চিৎকার চেচামেচির তিè আওয়াজ। সেদিন আর কোন প্রশ্ন করলাম না।
পরদিন ভোরে আবার জি¹েশ করলাম-
-কি, কাল রাতে কোথায় যাওয়া শুরু করেছিলি?
সে হাসিতে ফেটে পড়ল। তার ছোট, সুন্দর মুখে এক অদ্ভুত সারল্য। হাতে একটা বল। মাঝে মাঝেই বলটা এদিক ওদিক ছুড়ে মারছে। নিজের মনে খেলছে।
-কি বলবি না, কোথায় যাচ্ছিলি ?
এবার তার হাসি কিছুটা ম্লান হল। মুখ থমথমে। অনেকটা শ্রাবনের মেঘ ঢাকা আকাশের মত। তার মুখে এক করুন অভিব্যক্তি। এটা কি দু:খের ছাপ? ভয়াবহ কোন হতাশা? কিংবা চাপা রাগ? আমার মাথায় কিছু আসছে না। কিছুই বুঝতে পারছিনা। এরপর তার সাথে আমার যে কথোপকথোন হল তা আমাকে বিষ্মিত করেছিল। ধাক্কাটা এত বেশি যে আমি সহ্য করতে পারিনি।
-কি আমাকে বলবি না কোথায় যাচ্ছিলি?
সে কিছুই বলল না। নিরবে মাথাটা শুধু এদিক ওদিক দোলাল।
-কেন কি হয়েছে , বলবি না কেন?
-আমি বারি থাইকা চইলা যামু। আর থাকমু না।
-কেন থাকবি না কেন শুধু মারে?
সে মাথা উপর নিচ দোলাল।
-কোথায় যাবি?
-বিয়া কইরা কাকার বারি যামু গিয়া, আর আমু না
-বিয়ে করে চাচার বাড়ি যাবি?
-হু
-আর আসবি না?
-না
-খালি মারে?
-হু
-বাবা মারে, না মা?
-বাবা।
আমার বিম্মিত হবার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেছে। আমার কিছুই মনে হচ্ছিল না। শুধু জানি আমার পায়ের হাটুদুটো শরীরের ভর সামলাতে অপারগতা প্রকাশ করছিল। তিন-চার বছরের এক মেয়ের মুখে এ কি শুনি?
তিন চার বছরের কোন মেয়ের মাথায় বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার চিন্তাও আসতে পারে তা আমার ধারনার বাইরে। তাও আবার বিয়ে করে চলে যাওয়া !!
আমি জানি এটা কেউ বিশ্বাস করবে না। কিন্তু সব বিশ্বাসের মুখে চুনকালি পিচ্চিটা এরকম একটা বাস্তব আমায় উপহার দিয়েছে যা সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই।
মেয়েটির নাম 'খুশি' বা 'কুশি' ঐ জাতীয় কিছু।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ দুপুর ১:১১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




