somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এরিখ ফ্রাইড ও তার কবিতার আকাশ

০২ রা মে, ২০১৪ রাত ৯:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এরিখ ফ্রাইড ( ৬ মে ১৯২১-- ২২ নভেম্বর ১৯৮৮) একজন খ্যাতনামা কবি, লেখক এবং অনুবাদক। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরপরই অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। শিশুকাল থেকেই অভিনয়ে জড়িয়ে যান। রাজনৈতিক লেখালেখির সঙ্গেও গাঁটছড়া বাঁধেন, তাও জীবনের প্রথম পর্বেই । জামার্নি এবং অস্ট্রিয়ায় রাজনৈতিক কবিতার জন্যই প্রথম দিকে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। পরবর্তী পর্যায়ে প্রেমের কবিতা তার টুপিতে যোগ করে আরো একটি খ্যাতির পালক। তার সমকালে একজন নিরাপোষী সমালোচক হিসেবেও ব্যাপক শ্রদ্ধা অর্জন করেন তিনি। তবে লেখক হিসেবে প্রধানত নাটক আর ছোট আকারের উপন্যাসই লিখেছেন বেশি। জার্মান ও অস্ট্রিয়ায় অনুবাদক হিসেবেও তার অনেক সুনাম। এ সুনাম মহৃলত শেকসপিয়ার অনুবাদের জন্যই। এ ছাড়া টিএস এলিয়ট, ডিলান থমাস, সিলভিয়া প্লাথ সহ আরো অনেকককেই তিনি জার্মান ভাষায় রূপান্তর করেছেন। জায়নিস্ট আন্দোলনেকে যেমন তীব্র আত্রক্রমণ করে লিখেছেন, তেমনি বামপন্থীদের সমর্থন জানিয়েও প্রচুর লিখেছেন। অস্ট্রিয়ায় তার নামে একটি পুরস্কারও চালু আছে---এরিখ ফিদ্ধড প্রাইজ।

জার্মানীর নাজি বাহিনীর হাতে তার বাবার মৃত্যু এরখিকে দৃঢ়, অনমনীয় ও বাম-ঘেঁষা রাজনৈতিক দর্শনের দিকে ঠেলে দেয়। তার এই মানসিকতা- স্বভাবিকভাবেই তার সাহিত্য কর্মের ভেতরেও ছাপ ফেলে যায়। তার চাঁছাছোলা, সংক্ষিপ্ত ও বাহুল্যবর্জিত শৈলী ব্রেখটের কাছ থেকেই অনেকটা অনুপ্রাণিত। পাঠকের আবেগত সাড়া নয়, বরং বৌদ্ধিক সাড়া অর্জনই এসব কবিতার মূল ল্ক্ষ্য। ‌স্বকীয় ভাবনা-মুদ্রা’কথাটি ফ্রাইডের জন্য বেশ লাগসই, বিশেষ করে কোন নিদিষ্ট অনড় ভাবাদর্শগত অবস্থানের বিপরীতে তার স্বকীয় স্বাধীনতা সুরক্ষার ক্ষেত্রে। কোন বিষয় ঘিরে বিভ্রিুন্তকে ফাঁস করে দেয়ার ক্ষেত্রে প্রবচন আর শ্লেষাত্মক কাব্যিক রূপকাঠামো ও ভাষিক ক্রিড়া -কৌশল, বিশেষ করে শব্দক্রিড়ার নিপুন প্রয়োগ তার অনেক প্রিয়। বলাই বাহুল্য তার বাকবিভূতি আর আর শব্দ ক্রিড়ার নাগাল অনুবাদে পাওয়া, বলা যায়, সম্ভব হয়নি আমার পক্ষে। শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে চলা নানান আপ্তবিশ্বাস, কিংবা যেকোনো ধরনের সর্বজনীন ধারণা, বা সাবির্ককীকরণ বা যেকোন ধরনের সামান্যীকরণেরই বিরোধী ছিলেন এই কবি। এ বিষয়টির তদন্তে তার মন ছিলো সবসময়েই তীব্র জাগর। এ কথা তার কবিতার পাশাপাশি রাজনৈতিক গদ্যগুলোর ক্ষেত্রে তিব্রভাবে খাটে। আর সার্বিকীকরনের এর বিপরীতে ব্যক্তির একক মানবিক মর্যাদাকে পারস্পরিকক বোঝাপড়ার মূলভিত হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন তিনি।
বিংশ শতাব্দির বিম্ব যুদ্ধ, নাজিদের ইহুদী নিধন, পুজিবাদের নষ্ট ধ্বস্ত চেহারা, আর বামপন্থার উত্থান, জায়নস্টিদের নয়া চেহারা--- সবমিলিয়েই তার সমকালে অনেক লেখকের মতো তাকেও একটি বিকল্কপ্প অনুসন্ধানী, চলমানতার প্রতি গভীর অবিশ্বাসী, আর বিকল্ক ও শ্রেয় বিশ্বের তীব্র সন্ধানী এক কবি মন গড়ে দিয়েছে।

১৯৩৮ সালে নাজি জার্মানীরা অস্ট্রিয়া দখল করে নেয়। গেস্টাপোদের হাতে সেসময়ে তার বাবা নিহত হন। একই পরিণাম এড়াতে এর পরপরই ইহুদি পরিবারের সন্তান নিরোপায় ফ্রাইড ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান। পরিবারের অন্যদেরও একই ধরনের পরিণতির হাত থেকে বাঁচাতে চেষ্টা করেন। মাকে সহযোগিতা করার পাশাপাশি আরো অনেককে লল্ডনে আসতে সহযোগিতা করেছেন। ইয়ং অস্ট্রিয়া নামের বামপন্থী অভিবাসী তরুণদের এক আন্দোলনে যোগ দিলেও সংগঠনে স্তালিন প্রভাব তক্রমশ বাড়তে থাকায় এ সংগঠন থেকেও একপর্যায়ে ইস্তফা দেন তিনি। দ্বিতয়ি বিশ্বযুদ্ধের দুঃসময়ে তিনি লাইব্রেরিয়ান ও ফ্যাক্টরির একজন সহযোগি হিসেবে ঠিকা-কাজ করে টিকে থাকার চেষ্টা করেন। ১৯৪৯ সালে ব্রিটিশ জাতীয়তা গ্রহণ করেন।
১৯৪৪ সালে তার প্রথম কবিতার বই বের হয়। একই বছরে প্রথম সন্তান হ্যান্সের জন্মের প্রাক্কালে মারিয়া মারবুর্গকে বিয়ে করেন। তবে দুই বছরের মাথাতেই বিচ্ছিল্পুভাবে জীবন যাপন করতে থাকেন তারা। ১৯৫২ সালে চূড়ান্তভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। এ বছরেই ফের বিয়ে করেন নেন স্পেন্স এখনারকে। ডেভিড ও ক্যথরিন নামের দুৃটি সন্তান আসে তাদের এই দাম্পতে্য। তারপর ১৯৬৫ সালে নেনের সাথেও বিচ্ছিন্নতা নেমে আসে। তৃতীয়বারে বিয়ে করেন ক্যাথরিন বসওয়েলকে।
১৯৫৩ থেকে ১৯৬৮ পর্যন্ত বিবিসি জার্মান সার্ভিসে রাজনৈতিক কমেন্টটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। লন্ডনে অভিবাসনের পর ১৯৬২ সালে প্রথমবারের মতো ঘুরতে যান নিজ শহর ভিয়েনায়। তবে ১৯৮২ সালে অস্ট্রিয় নাগরিকত্ব ফিরে পেলেও ব্রিটিশ নাগরিকত্ব তিনি কখনোই ত্যাগ করেননি।
মর্ত্যরে শেষ নিঃশ্বাসটি ছাড়লেন ১৯৮৮ সালের ২২ নভেম্বর, পশ্চিম জার্মানের বাদেন-বাদেনে। অন্ত্রের ক্যানসারে মুমূর্ষু হয়ে। তবে সমাহিত হন লণ্ডনের কেনসাল গ্রিন সেমেটারিতে।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×