somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডরেকে ওয়ালকট: মধুকর ডঙ্গিা

০৬ ই মে, ২০১৪ রাত ৯:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.
বিদায়, কারেনেজ


অলস আগস্টে, যেসময়ে সাগর প্রশান্ত
আর বাদামী দ্বীপের পাতারা জড়ো হয় তীরে তীরে
এই ক্যারিবিয়ার, নিভিয়ে দিলাম বাতি আমি
মারিয়া কনসেপসিয়নের স্বপ্নহীন মুখের উপরে
নাবিক হিসেবে উঠে যেতে মধুকর ডিঙার ।
ইয়ার্ডের বাইরে ধূসর হয়ে এলো সকাল,
দাঁড়িয়ে আমি পাথর যেনো আর কিছুই নড়েচড়ে না
শুধু হিমসাগর জুড়ে গ্যালভানাইজের মতো কুচি কুচি ঢেউ
আর আকাশের ছাদে পেরেক সাটার নক্ষত্র-ছির্দ্র,
যতোক্ষণ না বাতাস গাছগুলোকে জ্বালাতন করা শুর করে।
যখন ঢাল বেয়ে নামছিলাম, ইয়ার্ড ঝাড়ু দিয়ে চলা
আমার রুক্ষ প্রতিবেশিনীর পাশ দিয়ে গেলাম, আর কাছ ঘেঁষে বললাম তাকে:
“ধীরে ঝাট দে, রাক্ষসী কোথাকার, গভীর নয় রে ঘুম তার।”
শুয়রনিটা এমনকরে তাকালো আমি যেনো মৃত-লোক একটা ।
টেক্সি-ছোটার রাস্তাটায়, পার্কের আলো জ্বলছে তখনো।
ড্রাইভার আমার ব্যাগটা চেয়ে দেখলো এক পলক:
“এইবার, স্যাবাইন, মনে হচ্ছে চলেই যাচ্ছো একেবারে!”
গাধাটাকে কোন উত্তরই দিলাম না, আমি শুধু উঠে
বসলাম পেছনের সিটে আর দেখতে লাগলাম লাভেন্টাইনের উপরে
আকাশ জ্বলছে, ওই জোব্বার মতো রক্তলাল
যার মাঝে ফেলে এসেছি যাকে সেই নারীটি তখনও ঘুমিয়ে চলেছে
আর আমি পেছন-আয়নায় তাকালাম আর দেখতে পেলাম
ঠিক আমার মতোই একটা লোক, আর সেই মানুষটা কাঁদছে
বাড়িঘরের টানে, পথঘাট, পুরো ওই চুদানী দ্বীপটার জন্য।

সমস্ত ঘুমন্ত বস্তুর উপরে যিশুর করুণা ঝরুক!
রাইটসন রোডের পচাঁগলা কুকুরটা থেকে শুরু করে
যখন আমিও ছিলাম কুত্তা একটা এই রাস্তাঘাটে সে-দিন অবধি;
যদি এই দ্বীপকে ভালবাসা আমার জন্য ভার হয়ে থাকে,
তবে এই অনিয়মের বাইরে উড়াল দিতে চায় হৃদয় আমার,
তবে তাদের বিশাল বাড়িঘর, দামী গাড়ি, সময়ের সুবিধাবাদিতা দিয়ে
তাদের কুলি, কালা-মানুষ, সিরিয় আর ফরাসি ক্রিওলদের দিয়ে
আমার আত্মাকে বিষিয়ে ফেলেছিলো তারা,
তা-ই তাদেরকেই দিয়ে গেলাম এ দ্বীপ আর ছেড়ে গেলাম তাদের কোলাহল--
সাগরস্নান সেরে, সড়ক ধরে চলে গেলাম।
মনোস থেকে নাসাউ সমস্ত আমি সমস্ত দ্বীপই চিনিজানি,
সাগর-সবুজ চোখের এক মরচে-মাথা নাবিক
যাকে তারা স্যাবাইন নামে ডাকে, খুবই সুলভ এক নাম
যেকোন লাল নিগারের, আর আমি, স্যাবাইন, দেখলাম সে-সময়টা
যখন সাম্রাজ্যের এসব বস্তিভিটা ছিলো স্বর্গরাজ্য।
আমি তো নেহাত-এক লাল নিগার ভালবাসে যে সাগর,
আর আছে আমার যথাযথ এক উপনিবেশীক শিক্ষা,
আমার মাঝে আছে পুর্তগিজ, নিগ্রো আর আছে ইংরেজ
হয় কেউ নই আমি, না-হয় আমিই বরং একটা জাতি।

কিন্তু মারিয়া কনসেপসিয়ন ছিলো আমার সমস্ত চেতনা জুড়ে
সাগরের ঢেউয়ের উঠা-নামা দেখতে দেখতে
ডরিসের পাশে বন্দরে যখন, পালভরা ডিঙা আর ইয়াটগুলো
সূর্যের তুলির আঘাতে সতেজভাবে আঁকা
প্রতিটা ঝিলিকের সাথে গেয়ে উঠছিলো তার নাম;
আমি জানতাম যখন কালো-চুলের সন্ধ্যা পড়বে তার
উজ্জ্বল রেশমের জামা সূর্যাস্তে, আর, সমুদ্র ভাজ করে,
তার নক্ষত্র-উপচানো হাসির চাদরের নিচে লাজুকভাবে এগোয়,
কোনও স্থিরতা নেই সেখানে, কোন বিস্মরণ নেই।
কবরখানায় পায়চারী করা শোকাকুলজনকে পুনরুজ্জীবনের
গল্প বলার মতো, তারা মৃতদেরকেই ফিরে চায়,
তাই নিজেকে নিয়ে হাসি যখন নোঙরের দড়াদড়ি
খুলে যায় আর মধুকর ডিঙাটি সাগরের দিকে ভেসে যায়:
‘লাভ নেই বারবার সাগরের মাছের প্রাচুর্যের কথা পেড়ে। চাই না
আর, সেরাফের ওই কামগন্ধহীন আলোয় সে সাজুগুজু থাক।
মারমোসেট বানরের মতো ওই বাদামী-গোল চোখগুলো চাই, আর
যে দিন আবার আমি পিঠে ঠেস দিয়ে বসতে ও হাসতে পারবো,
চাই ওই নখগুলো রবিবারের সন্ধ্যাগুলোতে যারা আমার ঘামে ভেজা
পিঠে সুসরসুরি দিতো, একটা কাকড়া যেমন সিক্ত বালিতে।”
যখন কাজ করতাম আমি, দেখতাম একের পর এক ঢেউ আসছে
মাস্তুল পেরিয়ে যা সাগরকে রেশম-কাপড়ের মতো চিরে ফেলে
মায়ের দুধের কসম, আজকে রাতের চুলা থেকে উড়ে আসবে
যে নক্ষত্রগুলো তাদের কসম, বিশ্বেস করো সবাই,
আমি ভালবাসতাম তাদের, আমার শিশু, আমার স্ত্রী
আমার ঘর; ভালবাসতাম কবিরা যেমন ভালবাসে কবিতাকে
যা তাদেরকেই খুন করে ফেলে, সমুদ্র যেমন ডুবিয়ে মারে সমুদ্রচারীকে।

কোন-না-কোন নিঃসঙ্গ সৈকত থেকে তোমরা কি কখনো চেয়ে দেখেছো
আর দেখেছো কি অনেক দূরে একটি মধুকর ডিঙ্গা? যাইহোক, যখন আমি এই কবিতা লিখি, প্রতিটা বাগধারা লবনে ভিজে চপচপে হয়ে যায়;
আমিও প্রতিটা লাইন টেনে যাই আর এই মাস্তুলে
পালের দড়িদড়ার মতোই বাধি আঁটোসাঁটো করে; সরল কথায়
আমার সাদামাটা ভাষা হয়ে উঠে এই বাতাস,
আর মধুকর ডিঙার সব পাল হয়ে ওঠে খাতার পৃষ্ঠাগুলো।
তবে আমাকে বলতে দিন, এ কাজকারবার কিভাবে-বা শুরু হলো।

(প্রথম অংশ : খসড়া)










সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০১৪ দুপুর ২:২৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×