(ছবিটি নেট থেকে নেয়া, আমার বাবারই বয়সী চেহা্রায় লেবাসেও মিল আছে)
অনার্স শেষ করে বসে আছি। রেজাল্ট দিয়েছে , মধ্যম মানের ছাত্রের জন্য এক রাত পড়ে এর চেয়ে ভালো আশা করা যায়? ৪ এ ৩.৭৩।
বাবার ৬৫ পার হলো।
সেদিন দাদীকে কবরস্থ করার জন্য বাড়ি গিয়ে বাবার মুখের দিকে তাকাতে পারছিলাম না। মাকে বললাম বাবাকে বলো অনার্সের রেজাল্টটা দিক, দেখো আমি কিছু একটা করব এবার। এবার আর উনাকে দিনমজুরি করতে হবেনা। মাস্টার্স নাহয় পরেই করব।
রেজাল্ট পাওয়ার পর জব সার্কুলার দেখি বন্ধুদের পিসিতে বসে। কোথাও অনার্সের ভাত নাই। এদেশের কম্পিউটার অপারেটর পদের জন্যও রেপুটেড ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স লাগে।
সেলুকাস!
এর মধ্যে দুয়েকটি সার্কুলার পেলাম তাতে আবেদন করা, সার্টিফিকেট তোলা দিয়ে হাজার দেড়েক টাকা লাগে। কই পাই এত টাকা? বিসিএস এর আবেদন করতে লাগবে আরো ৭০০, শিক্ষক নিবন্ধন করতেও আরো।
আমি ছাপোষা ছাত্র, মেসের সিট ভাড়া বাদে যা থাকে তাতে একবেলা করে মার দিয়ে মাস কাবার করি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স শেষ করতে গিয়ে টিউশনি সহ্য না হওয়ায় শুভাকাংখীদের পকেট থেকে প্রায় ৭০/৮০ হাজার টাকা ঋণ করেছি। দেনাদারেরা ছিড়ছে এখন।
কোথায় যাই? বন্ধুরা জিজ্ঞেস করে মাস্টার্সের ক্লাস কেন করছিনা, কেন ভর্তি হচ্ছিনা। আমি কিছু না বলে পাশ কাটিয়ে যাই একটা মুচকি হাসি দিয়ে।
আজ মনে হচ্ছে আমার মাস্টার্স করা দরকার। মা'কে ফোন দিলাম।
বাবার মায়ের (দাদীর) থেকে পাওয়া জমির একটু অংশ বাবা বিক্রি করতে চেয়েছিল। ওখান থেকে আমাকে কিছু টাকা দিতে পারেন কিনা। সরাসরি বাবাকে বলতে লজ্জা হচ্ছিল।
রাত ৮টায় ফোন দিলেন আমি লজ্জায় কিছু বলতে পারিনি। উনি গোপালগঞ্জে আছেন দিনমজুরি করতে এসেছেন। প্রতিদিন ৩৬০ টাকা। আমি বললাম টাকা লাগবেনা। আব্বা বললেন কিন্তু তোমাকে যে ভর্তি হতে হবে। ধার করে চালাও আমি শোধ করে দেবো বাড়িতে গিয়ে জমি বিক্রি করে।
ফোন রাখার পর কষ্টে বুক ভেঙে যাচ্ছিলো। উনার বয়সে সবাই দাদা হয়ে অবসর নেন। বাড়িতে বসে নাতি নাত্নী আদর করেন। আর উনি শেষ বয়সে এসে নতুন করে কোদাল কাস্তে হাতে নিয়ে জাতিকে শিক্ষিত করছেন। উনার দুই মেয়ে এক ছেলে ঢাবিতে অধ্যয়নরত। দুজন JSC পরীক্ষার্থী।
বাবা তোমাকে আর বেশিদিন কষ্ট করতে দেবোনা। এই তো কয়েকটা মাস লাগবে হয়ত...........................
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:৪২