somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সালিশ || তাসফিক হোসাইন রেইযা ||

২৮ শে মে, ২০১৭ দুপুর ২:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"আমার নগরীতে আলো নেই। এখানে শুধু অন্ধকারেই আমরা জেগে উঠি। আপনার মত আলোর শহরে থাকা মানুষ দের এখানে দিনের বেলা আসা শোভা পায়না সাহেব শোভা পায় না। আপনি বরং এখন চলে যান। যখন পুরো গ্রাম সুদ্ধ মানুষ ঘুমিয়ে পরবে তখন আসবেন। মানুষের চোখে না পরে। মানুষ দেখলে আপনাকে মন্দ বলবে।"
"কিন্তু আমার তো তোমার সাথে কথা বলার ইচ্ছে ছিল শুধু"
"আমি পতিতা। আপনাদের মত মানুষরা আমার সাথে শুধু একটা কথাই বলতে পারে। কাপড় খুলে বিছানায় শুয়ে পড়ার কথা। আর কোন কথা আমাদের জন্য বলা আপনার উচিৎ হবেনা।"
"কিন্তু। নিরু"
"আমার মুক্তি চাই না। এই অভিশপ্ত..."
নিরু কথা গুলো বলতে বলতে একটা ঘরের ভিতর ঢুকে গেল। আস্তে কথা বলার কারণে রায়হান কথাটা পুরোপুরি শুনতে পেল না। কিছুক্ষণ ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে ওর বন্ধুর কটেজের দিকে হাটতে থাকলো।
*
রায়হান একটি এনজিও এর সাথে জড়িত। ওদের এনজিও এর কাজ হচ্ছে নিপীড়িত মেয়েদের নিয়ে। মূলত তাদের পুনর্বাসন। ও টাঙ্গাইলের একটা গ্রামে এসেছিল পতিতা পল্লীর উপর একটি ডকুমেন্টারি করতে। কিন্তু এখানে এসে ওর পরিচয় হয় নিরুর সাথে। নিরুর সাথে কথা বলে রায়হানের অনুভূতি টা অনেক ভিন্ন ছিল। কারণ ওর বাচনভঙ্গির মধ্যে একটা শিক্ষিত ভাব পাওয়া যায়। আর সেখান থেকেই নিরুর ব্যাপারে রায়হানের জানার আগ্রহ টা অনেক বেড়ে যায়। প্রথমে এখানে এসে ও দিনের বেলায় যখন ডকুমেন্টারির কাজের জন্য আসার পরিচয় দেয় তখন ওকে ওর প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো দেওয়া হয় না। তখন ও বুঝতে পারে এখানে এনজিও এর লোকের পরিচয় দিয়ে কিছুই জানা যাবে না। এলাকার অনেক প্রভাবশালীদের এখানে আনাগোনা আছে হয়তোবা। রায়হান তাই রাতের আধারে তার তথ্য গুলো নেওয়ার জন্য পতিতা পল্লীর ঘরে গ্রাহক হিসেবে যায় এবং প্রথমদিনই নিরুকে শয্যা সঙ্গিনী হিশেবে ভারা করে।
"কি এমন ড্যাব ড্যাব করে কি তাকিয়ে থাকবেন? জামা কাপড় খুইলা বিছনায় আসেন"
"আসলে আমি তোমার সাথে কিছু করতে আসিনি। আমি একটা এনজিও এর সাথে আছি। পতিতা পল্লীর উপর কিছু কাজ করছি। আমার কিছু তথ্য লাগবে" নিরু কথাটা শুনে। বিছানার নিচে থেকে একটা সিগারেট বের করে জালিয়ে এক মুখ ধোয়া ছেরে "কন কি কইবেন। মাসিরে তো সারা রাতের টাকা দিছেন। যদি পারেন কথা তারা তারি কইরা শেষ করেন। তারপর আমি একটু ঘুমাই। আপনিও রাতটা এইখানে থাইকা যান। কারণ আপনি চলে গেলে মাসী ঘরে আরেকজন খরিদদার পাঠায় দিব। বুঝেনই তো রাতের ঘুম দিনে ঘুমাইলে হয় না।"
এভাবে সেদিন সারা রাত রায়হান, নিরুর কাছ থেকে পতিতা পল্লীর বিভিন্ন বিষয় জানলো। কিন্তু নিরুর কাছ থেকে ও বেশি সময় নেয়নি কিছু কথা বলেই মেয়েটাকে ঘুমাতে দেয়। এবং সেটাই হয়তো রায়হানের জন্য কাল হয়ে যায়। নিরুর চেহারায় কেমন যেন অন্যরকম একটি মায়া আছে। ঘুমন্ত অবস্থায় মেয়েটিকে মনেই হয়না সে পতিতা। শুধু চেহারায় একটা বিষাদ ভাব রয়েছে। রায়হান নিরুর কাছে তার পরের দিন আবার যায়, এবং তার পরের দিন। এভাবে টানা অনেক দিন নিরুর কাছে যায়। সারা রাতের জন্য ঠিক করে মেয়েটিকে। এমনকি রায়হানের অবস্থা দেখেতো একবার নিরুর মাসি বলেই ফেলে "কিরে মাগী। নাগর বানাইয়া ফেলছোস পোলাডারে? যাদু টাদু করছস নাকি? প্রেমে পরছে তোর? ও পড়লে পরুক তুই কিন্তু পরিস না। পুরুষ মানুষ এমনই হয়। কত দেখলাম। সব শালা মাগনা কাম করার ধান্দা" নিরু, মাসীর কথা তেমন কানে নেয়না।
*
কিছুদিন রায়হান মাঝে মাঝেই নিরুর ওখানে যায়। নিরুর কাছ থেকে পল্লির বিভিন্ন মেয়েদের কথা শুনে। কিন্তু নিরু সবসময় নিজের কথা এড়িয়ে যায়। কিন্তু একদিন রায়হানের অনেক জোর করার পরে নিরু তার নিজের গল্প বলে "আমার বাবা গ্রামে কৃষি কাজ করতো। আমাদের পরিবার মোটামুটি চলে যেত দিন এনে দিন খেয়ে। কিন্তু তাও আমার বাবার ইচ্ছা ছিল আমাকে পড়ালেখা করানোর। তিনি চেতেন না তার মেয়ে সারাজীবন তার মত মূর্খের অন্ধকারে থাকে। আমি ছাত্রীও অনেক ভালো ছিলাম। আমাদের স্কুল অনেক দূরে থাকা শর্তে ও আমি প্রতিদিন স্কুলে যেতাম। কিন্তু আমাদের চেয়ারম্যান এর ছেলে মাঝে মাঝেই আমাকে উত্যক্ত করতো। কিন্তু একদিন বিষয়টি ধর্ষণে গিয়ে দাড়ায়। মা তো অনেক আগেই মারা যায়। আমার আপন বলতে বাবাই ছিলো। আর সেই বাবাই আমাকে আমাদের বাড়ির থেকে কিছুদূরে নীরব একটা জায়গার ডোবার পাশে অর্ধনগ্ন ভাবে পায়। আমি জ্ঞান ফিরে দেখি বাবা চিৎকার করে কান্না করছে। বাবার কান্না শুনে গ্রামের লোকজন হয়তো অনেক আগেই জরো হয়ে গেছে। তখন শুধু সবাই জানার অপেক্ষা করছিলো আসলে কিভাবে কি হয়েছে। যেন বিবরণ শুনে নিজেদের কামনার চাহিদা মেটানোর জন্য ধৈর্য ধরে আছে। আমি বাবাকে সব বলি। কিভাবে চেয়ারম্যানের ছেলে আমাকে তুলে নিয়ে যায়। আমাদের গ্রামে তখন সালিশ চলতো। তো তেমনি আমার ধর্ষণের কথাটাও শালিসে উঠলো। জানেন সালিসির প্রধান কে ছিল? প্রধান ছিল সেই চেয়ারম্যান নিজেই। অবশেষে বিচার হলো। বাবাকে ৫ ডিস্মাইল ধানের জমি দেওয়া হবে। আর কিছু টাকা। বাবা হুমকি দিলো আগামীকাল থানায় যাবে। কিন্তু সেই আগামীকাল তিনি আর দেখতে পারলেন না। চেয়ারম্যান এর লোকেরা বাবাকে মেরে ফেললো। আর আমাকে নিয়ে রেখে দিয়ে গেলো এখানে। আর তারপর থেকেই আমি প্রতিদিনই ধর্ষণ হই। কিন্তু এখানে তফাত হচ্ছে। এই ধর্ষণের জন্য শালিস বসেনা। বিচার ছাড়াই মানুষ নগদ টাকা দিয়ে যায়। হয়তোবা আপনি ভাবছেন আমি বের হবার চেষ্টা করেছি কিনা? করেছি কিন্তু উপায় হয়নি"
*
সেদিন থেকেই রায়হান নিরু কে অনেকবার বলেছে এখান থেকে পালাবার কথা। কিন্তু নিরু শুধু এটাই বলেছে। "এখানে যেসব মেয়েরা আসে তারা সুধু লাশ হয়েই বের হয়। কিংবা কোন খরিদ্দার এসে সারা জীবনের জন্য কিনে নিয়ে যায়" রায়হান ও এটাই ঠিক করে নিরুকে এখান থেকে টাকা দিয়েই মুক্ত করাবে। তাই শহরের দিকে রওনা হলো টাকা আনার জন্য।
*
গ্রাম এলাকার বাজার। খুব তাড়াতাড়ি মানুষ গুলো ঘুমিয়ে যায়। দুয়েকটা দোকানে আলো জ্বলছে এবং দোকান গুলোতে দু একজন মানুষ বসে কথা বলছে। রায়হান বাজার থেকে একটু দূরে একেবারে শেষ মাথার দিকে নিরুদের পল্লীর সামনে দারিয়ে আছে। কিন্তু অন্যসব দিনের মত আজকের পরিবেশটা ঠিক তেমনি। শুধু ভিতরে একজন মানুষ নেই। সে হচ্ছে নিরু। রায়হান কিছুক্ষণ আগেই শহর থেকে সোজাসুজি নিরুদের পল্লীতে এসে হাজির হয়। আর প্রথমেই দেখা হয় মাসীর সাথে। মাসি কে বলে "আজকে আপনি চইলা যাইতে পারেন। কারণ আপনি যার লেইগা আইছেন অয় তো পালাইছে।" কিন্তু কেন যেন রায়হানের কথাটা বিশ্বাস হলোনা। কারণ নিরু বলেছিলেন, এখান থেকে পালানোর কোন উপায় নেই। আর একটু আগে পল্লীর এক মেয়ে ওকে বলে গেছে। তার ও ধারনা হয়ত নিরুকে হত্যা করে এখন পালিয়ে যাওয়ার নাটক বানানো হচ্ছে। রায়হান তাই এখনো দাঁড়িয়ে থেকে শুধু এটাই ভাবছে "ওকে কেন হত্যা করা হবে"
*
রায়হান তার কটেজের ঘরে বসে আছে। হাতে একটা চিঠি। কিছুক্ষণ আগে ওর বন্ধুর কটেজে ঢোকার সময় কেয়ারটেকার চিঠিটা রায়হান কে দেয়। এবং বলে একটা বাচ্চা ছেলে রায়হান এর জন্য চিঠিটা দিয়ে গেছে। রায়হান চিঠিটা খুলে দেখেছে শুধু একটা লাইন লেখা। "সাহেব আমি মুক্তির পথে হাঁটছি। যদি বেঁচে যাই তাহলে আবার দেখা হবে।"
*
সালিশ || তাসফিক হোসাইন রেইযা ||
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০১৭ দুপুর ২:৫১
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×