somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কারাগার (Inspired by True Events)

০৯ ই জুন, ২০১২ রাত ১১:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কর্কশ এলার্মের শব্দে জেলর সাহেবের ঘুম ভাঙল। ঘড়িতে সময় দেখাচ্ছে সকাল পাচটা বেজে পনের মিনিট। জেলর সাহেব ঘড়ির কাটা মেপে কাজ করেন। কিন্তু আজ তার শরীর কেমন যেন ম্যাজ ম্যাজ করছে। আরো কিছুক্ষণ বিছানায় গড়াগড়ি করতে মন চাইছে। গতকাল শরীরের উপর দিয়ে ভালো ধকল গেছে। মাঝরাতের দিকে তিন নাম্বার সেলের ৪৬ নম্বর কয়েদিটার কেমন যেন মাথা খারাপ মত হয়ে গেল। নিজের সেলের দেয়ালে মাথা ঠুকে রক্ত বের করে ফেলল। আর ফার্স্ট অফিসারটাও যা মাথা মোটা। ওর ধারনা কয়েদীদের যেকোনো সমস্যার ওষুধ একটাই, কড়া মাইর। ৪৬ নং কে এমন ছেঁচা দিয়েছে কাপড় টাপর নষ্ট করে একেবারে যাতা অবস্থা। এই সব হাঙ্গামা সামাল দিতে গিয়ে কালরাতে ঘুমটা একেবারেই হয়নি। এখন তো বয়স হয়েছে, তিনি অনিয়ম করলেই শরীর তা মানবে কেন?

জেলর সাহেব অবশ্য শরীরের আবদারে কান দিলেন না। বিছানা ছেরে স্নান করে ঠিক পৌনে ছয়টার মধ্যে ইউনিফর্ম পড়ে ফেললেন। তারপর এক মগ গরম কফি হাতে নিয়ে মনিটর রুমে নিজের চেয়ারে গিয়ে বসলেন। সেকেন্ড অফিসার জামান তার জায়গা থেকে জেলর সাহেবকে সালাম দিল। জেলর সালামের উত্তর দিলেন না। তার দৃষ্টি ঘুরে বেড়াচ্ছে দেয়ালে বসানো ছয়টি মনিটরের উপর।

“৪৬ নম্বরের কি অবস্থা এখন?” জেলর জিজ্ঞেস করলেন।

“এখন শান্ত আছে, মনে হচ্ছে ফার্স্ট অফিসারের ওষুধে কাজ হয়েছে। সারা রাত আর কোন গোলমাল করেনি।” জামান জবাব দিল।

“শোনো জামান, মাইর হচ্ছে অনেকটা এন্টিবায়োটিকের মত। এইটা দিয়ে তুমি চট করে অসুখ কমিয়ে ফেলতে পারবে ঠিকই, কিন্তু এইটা তোমাকে স্থায়ি কোন সমাধান দিবে না। আবার যদি তুমি অল্পতেই এন্টিবায়োটিক দিয়ে ফেল তাহলে কিন্তু উল্টা রিএকশন হতে পারে। অতয়েব এই ওষুধ ব্যবহার করতে হবে সাবধানে।”

“জি স্যার”

“ফার্স্ট অফিসার কই, তাকে আমার সাথে দেখা করতে বল”

“জি স্যার”

জামান ঘর থেকে বের হয়ে গেল। জেলরের দৃষ্টি তখনও মনিটরগুলোর উপর নিবদ্ধ। মনিটরগুলোতে কারাগারের বিভিন্ন অংশ দেখা যাচ্ছে। তিনি দেখতে পেলেন, কয়েদীদের তাদের সেল থেকে বের করে এনে সামনের করিডরে এক লাইনে দার করানো হয়েছে। এখন সবার নম্বর ডাকা হবে। এই কাজটা দিনে কয়েকবার করা হয়। তারপর ফার্স্ট অফিসার সবাইকে আজকের কাজ বুঝিয়ে দেবে। মোট ১২ জন কয়েদি, তাদের কারুকে ইট ভাঙতে দেয়া হবে, কেউ বাথরুম পরিষ্কার করবে, কেউ মোট বইবে। কোনটাই খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ নয়, শুধুমাত্র কয়েদীদের ব্যস্ত রাখতেই এই সব কাজের আয়জন করা হয়েছে। ঠিক বেলা একটায় ওরা খেতে পাবে। ওই একবেলাই খাওয়া। আগে দুবেলা খেতে দেয়া হত। কিন্তু কিছু কয়েদি জেলখানার গার্ডদের সাথে হাতাহাতি করতে চেষ্টা করার পর থেকে খাওয়া কমিয়ে একবেলা করা হয়েছে। এতে কাজ হয়েছে, খাওয়া কমে যাবার পর থেকে আর কেউ কোন প্রহরির সাথে ঝামেলা করার সাহস পায়নি।

ফার্স্ট অফিসার বিমল প্রতিদিন কাজে যাওয়ার আগে সবাইকে একবার চেক করে যে কারো সাথে নিষিদ্ধ কোন কিছু আছে কিনা। যেমন ২৭ নং কয়েদি একবার লুকিয়ে একটা স্ক্রু ড্রাইভার নিয়ে গিয়েছিল সাথে করে। ওটা দিয়ে বাথরুমের ভেন্টিলেটর খুলে পালানোর চেষ্টা করেছিল। জেলর সাহেব মনিটরে দেখতে পেলেন প্রতিটা কয়েদিকে চেক করা শেষ হলে বিমল হাতের কলমটা দিয়ে কয়েদির পুরুষাঙ্গে একটা হালকা গুতো দিচ্ছে। কাজটা করে সে বেশ মজা পাচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে। জেলর সাহেব একটা হতাশার নিঃশ্বাস ফেললেন। তার আগে থেকেই ধারনা ছিল ফার্স্ট অফিসার মানুষটা আসলে গে। দিন দিন সেই ধারনা আরো দৃঢ় হচ্ছে।

***
ড জিয়া তার দ্বিতীয় বর্ষের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির ক্লাস নিচ্ছেন। ক্লাসে জনা তিরিশেক ছাত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে ঝিমাচ্ছে। ড জিয়া বললেন, “আমরা কথা বলছিলাম ভায়োলেন্সের উৎস নিয়ে। আপনাদের কি মনে হয়, একটা মানুষ কেন ভায়োলেন্ট হয়ে উঠার পেছনে কারন কি?’’
কোন উৎসাহী হাত দেখা গেল না। ড জিয়া নিজেই উত্তর দিলেন, “এর অনেক রকম উত্তর হতে পারে। কেউ কেউ মনে করেন ভায়োলেন্স ব্যপারটা জিনগত। বাবা মায়ের মাঝে ভায়োলেন্ট বিহ্যভিওর থাকলে সেটা সন্তানের মাঝেও সংক্রমিত হতে পারে। আবার অনেকে মনে করে এটা পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। একটা মানুষ ছোট থেকে একটা প্রতিকূল পরিবেশে বেড়ে উঠলে সেটা তাকে ইনহ্যরেন্টলি ভায়োলেন্ট করে তুলে, আবার মনে করে এটা সম্পূর্ণ সারকামস্টেন্সিয়াল। একজন খুব সাধারন মানুষ যার হয়তো অতিত কোন সহিংসতার রেকর্ড নেই সেও বিশেষ পরিস্থিতিতে মারমুখী হয়ে উঠতে পারে। এবং এই বিশেষ পরিস্থিতিগুলো একেক জনের বেলায় একেক রকম। কারো কারো ক্ষেত্রে এটা তার পার্সোনালিটি ট্রেইটের উপর নির্ভর করে। যেমন ধরুন কারুর যদি শৈশবে এবিউজড হয়ার অভিজ্ঞতা থাকে তবে সে......” ড জিয়া লক্ষ করলেন তার কথা কেউ মন দিয়ে শুনছে না। ছাত্ররা নিজেদের মধ্যে কথা বলছে। তিনি ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেললেন।

***
“আপনি কি প্রোফেসর ফিলিপ যিম্বারডোর নাম শুনেছেন?”

“নামটা পরিচিত লাগছে।”

“তিনি স্ট্যমফোর্ডের শিক্ষক ছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি একটা বিখ্যাত এক্সপেরিমেন্ট করেছিলেন।”

“ও আচ্ছা, মনে পড়েছে” ড জিয়া মাথা ঝাকালেন “স্ট্যামফোর্ড প্রিজন এক্সপেরিমেন্ট, বিখ্যাত না বলে কুখ্যাত বলা উচিত।”

“তাই কি মি জিয়া?” প্রফেসর রডরিগেজ কফির মগে চুমুক দিতে দিতে বললেন। “আপনি-আমি আমরা গবেষক। সাধারন মানুষের মত করে চিন্তা করার অবকাশ কি আমাদের আছে? মিডিয়া ওই এক্সপেরিমেন্টকে যতই ক্রিটিসাইজ করুক, আমরা কিন্তু জানি ওই কাজ থেকে প্রিজন সাইকোলজি সম্পর্কে যে তথ্য আমরা পেয়েছি তা এই বিষয়ে আমাদের জ্ঞানকে প্রায় এক দশক এগিয়ে নিয়ে গেছে।”

আলাপ চলছে ড জিয়ার বাসার ড্রয়িং রুমে। ইয়েল ইউনিভার্সিটির সাইকোলজির টিচার প্রফেসর রডরিগেজ দুইদিনের সফরে ঢাকা এসেছেন। জিয়া তাকে রাতের খাবারের আমন্ত্রন জানিয়ে নিয়ে এসেছেন নিজের বাসায়। কথা হচ্ছিল মব সাইকোলজি নিয়ে।

“আপনার কথা কতটা সত্যি বলতে পারছি না। কিন্তু এথিক্যাল গ্রাউন্ডে এই এক্সপেরিমেন্ট জাস্টিফায়েবল না।”

প্রফেসর রডরিগেজ এক চুমুকে তার কফিটা শেষ করলেন। তারপর পকেট থেকে তার দামি চুরুটের প্যাকেট থেকে একটা চুরুট বের করে আয়েশ করে ধরালেন, আর একটা বারিয়ে দিলেন জিয়ার দিকে। জিয়া মাথা নারলেন। রডরিগেজ মুখ থেকে একরাশ ধোঁয়া ছেড়ে বললেন, “আমাদের মানব প্রজাতি এখন একটা র‍্যপিড এভ্যুলুশনারি পিরিয়ডের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এই এভ্যুলুশন যতটা না ফিজিক্যাল তার চেয়ে অনেকগুন বেশি সাইকোলজিক্যাল। আমাদের সোসাইটি এখন ছোট বড় অনেকগুলো ডেভেলপমেন্টের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই ডেভেলপমেন্টগুলো আসছে সহিংস এমনকি প্রাণঘাতী কার্যক্রমের মধ্যে দিয়ে। আমাদেরকে এর জন্যে প্রস্তুত হতে হবে। এই ধরনের এক্সপেরিমেন্টের এখনই সময়।”

জিয়া সিগারেট ধরিয়ে বললেন, “পাশ্চাত্যের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে হয়তো এর কিছু গ্রহণযোগ্যতা পাওয়া যায়।”

“আর আপনার দেশে? আপনি যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আসুন আপনার দেশের বর্তমান শান্তি শৃঙ্খলা নিয়ে কিছু আলাপ করি। আপনাদের দেশে হরতালের আগের দিন কিছু মানুষ এক হয়ে পাবলিক ট্রান্সপোর্টে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে, মানুষকে জিবন্ত পুড়িয়ে মারছে, ভ্যন্ডালিজম করছে। এর কারন কি? তারা কোন বিশেষ আইডিয়ালের সমর্থক নয়, তাদের পলিটিক্যল লওয়ালিটি এতটা শক্ত নয়, এর পেছনে আর্থিক স্বার্থ থাকতে পারে কিন্তু টাকার অঙ্কটা কখনই এত বড় হবার কথা নয় যা একজন মানুষকে এই পর্যায়ের ভায়োলেন্স দেখাতে উদ্বুদ্ধ করবে। তাহলে কেন? আবার ধরুন আপনাদের আইন শৃঙ্খলা কর্মীদের কথা। আপনাদের দেশে পুলিশ ব্রুটালিটি লেভেল এখন যেকোনো সময় থেকে বেশি। পিপল আর গেট্টিং মাগড, রেপড এন্ড হ্যরাসড বাই পুলিস এভরিডে। কেন এসব ঘটছে? পুলিশ এবং ভ্যন্ডালিস্ট উভয়পক্ষই কিন্তু সাধারন মানুষ, ভাওয়লেন্স সো করার পেছনে অনেকের ক্ষেত্রেই তেমন যুক্তিযুক্ত কোন কারন নেই। তাহলে তাদের মোটিভেশনটা কথায়? এটা আমাদের জানতে হবে।”

জিয়া মাথা চুলকে বললেন, “আসলে বাংলাদেশে এসব নিয়ে গবেষণার তেমন সুযগ নেই। রিসোর্সের অভাব, আর যোগ্য মানুষও কম।”

“কেন, আপনি তো আছেন?” রডড়িগেজ জিয়ার দিকে নির্দেশ করলেন।

“আমার পক্ষে কি সম্ভব বলুন। ইউনিভার্সিটি বা সরকার কেউই এধরনের কোন এক্সপেরিমেন্টে আগ্রহি হবে না।”

“ধরুন আপনি আগ্রহি স্পন্সর পেলেন। যে কিনা আপনাকে সকল ধরনের রিসোর্স দিয়ে সাহাজ্য করবে। শুধু তাই না, আপনাকে সর্বোচ্চ ইমিউনিটি দেয়া হল। আর গবেষণার ফলাফল আমেরিকান জার্নালে প্রকাশের সুযোগ তো থাকছেই। এই সব কিছু পেলে কি আপনি এ ধরনের একটি এক্সপেরিমেন্ট সুপারভাইজ করবেন?”

রডরিগেজ অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে জিয়ার দিকে তাকালেন।

***
৪৬ নং কয়েদি সেল থেকে বের হয়নি। তাকে মেঝেতে অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া গেল। মুখের পাশে লালা জমে আছে, গায়ে প্রচণ্ড জ্বর। ফার্স্ট অফিসার বিমলের ধৈর্য কম। সে কয়েকবার ৪৬ নং এর পেটে পা দিয়ে গুতা দিল। ৪৬নং শুধু মুখ দিয়ে গা গা টাইপ শব্দ করল। এবার তাকে চুলের মুঠি ধরে টেনে দার করিয়ে দেয়া হল। কিন্তু চুল ছেড়ে দিতেই সে আবার কাপতে কাপতে মেঝেতে ঢলে পড়ল। বিমল মুখ খারাপ করে গালি দিল, “শালা মাদার... ভং ধরছিস, আমার সাথে ঢং করিস, শালা তোর পুন্দে আমি...”

জেলর সাহেব সেলের ভেতরে প্রবেশ করলেন। প্রথমেই তিনি ৪৬ নং এর কপালে হাত দিয়ে জ্বর দেখলেন। তারপর চোখের পাতা টেনে দেখলেন চোখের মনি উল্টে গেছে। তিনি কপালের ঘাম মুছে বললেন, “ওর তো অবস্থা খারাপ। হাসপাতালে নিতে হবে মনে হচ্ছে।”

“আরে কিসের কি, কিচ্ছু হয়নি। সব ভং বুঝলেন। হুদাই সবাইকে ভয় দেখাতে চেষ্টা করছে। বিচির উপর একটা বাড়ি দিলেই লাফ দিয়ে উঠে দারায়ে স্যালুট দিবে।” বিমলের হাত নিশপিশ করছে।

“নাহ, মাইরে কাজ হবে না। গায়ে ভীষণ জ্বর। ডাক্তার ডাকা দরকার। রিস্ক নিয়ে লাভ নেই, মরেটরে গেলে...”

জেলর সাহেব সেল থেকে বেরিয়ে এলেন। বিমল তার পেছন পেছন এলো। “ডাক্তার ডাকবেন ভালো কথা, কিন্তু ডাক্তার যখন ওর গায়ে মাইরের দাগ দেখতে পাবে তখন তাকে কি বুঝাবেন?” বিমলের মুখ জুরে অসন্তোষ।

“ডাক্তারকে ম্যনেজ করতে হবে। কিছু এক্সট্রা পয়সা খরচ হবে।”

“আর ডাক্তার যদি বলে হাসপাতালে নিতে হবে? জানাজানি হয়ে গেলে কিন্তু বিশাল সমস্যা”

“সে তখন দেখা যাবে।”

“ডাক্তার যে মুখ বন্ধ রাখবে তার নিশ্চয়তা কি?”

“আরে আমার বিশ্বস্ত ডাক্তার আছে না? তোমার এনিয়ে টেনশন করতে হবে না। সমস্যা তোমার একার না।”

জেলর সাহেব তার অফিস থেকে তার পরিচিত এক ডক্টরকে ফোন করে তাকে অল্প কথায় পরিস্থিতি কিছুটা বুঝিয়ে বললেন। কথা শেষ করে নিচে নেমে তিনি জানতে পারলেন কয়েদি নং ৪৬ মরে গেছে।

***
যাকে বলে এলাহি কারবার।

একদিকে রিএনফোর্সড স্টিলের বার, আর তিনপাশে ইটের দেয়াল তোলা কয়েদীদের সেল। করিডোরের দুইপাশে দুইটা করে মোট চারটা সেল। প্রতিটা সেলে তিনজন করে থাকার ব্যবস্থা। করিডোরের শেষ মাথায় একটা দরোজা যেটা এই জায়গা থেকে বের হবার একমাত্র পথ। দরজায় লোহার ভারি পাল্লা বসানো। দরজার ওপাশে আছে মেস রুম, গার্ডদের থাকার ঘর, মনিটরিং রুম। পুরো জায়গাটাতে সবমিলিয়ে ছয়টা ক্যমেরা বসানো আছে যা সারাক্ষন কয়েদি ও গার্ডদের সকল কার্যকলাপ রেকর্ড করবে। ক্যমেরাগুলো নিয়ন্ত্রন করা হবে মনিটরিং রুম থেকে। এছাড়াও এই রুমে আছে ইন্টারকম যেটা থেকে লাউড স্পিকারে সরাসরি কয়েদীদের নির্দেশ দেয়া যাবে, আবার গোপন মাইক্রোফোনের মাধ্যমে তাদের কথাবার্তায় আড়িপাতার ও ব্যবস্থা আছে।

পুরো স্টাব্লিশমেন্টটা গড়ে তোলা হয়েছে একটা সরকারি গুদামের বেসমেন্টে। নিরাপত্তার দিকটাতে কোনরকম ফাঁকফোকর রাখা হয়নি। রডরিগেজ কিছু না বললেও জিয়া ঠিকই বুঝতে পারছেন এই সবই গড়ে উঠেছে আমেরিকান সরকারের পয়সায়। আমেরিকার মাটিতে এইধরনের আরেকটা গবেষণা করা প্রায় অসম্ভব। তাই তারা বাংলাদেশের মত একটা তৃতীয় বিশ্বের দেশকে বেছে নিয়েছে। এখানে মিডিয়া দুর্বল, মানুষকে সহজেই কিনে ফেলা যায়, হিউম্যান রাইটসের বালাই নেই।

ক্যন্ডিডেট বাছাই শুরু হল। প্রথমে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হল, একটি ১৪ দিনের বিহেভিওর‍্যাল এক্সপেরিমেন্টের জন্যে পুরুষ সেচ্ছেসেবি আবশ্যক। নির্বাচিত প্রতিটি সেচ্ছাসেবি দিন প্রতি ২০০০ টাকা পাবেন। আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি এই মামুলি বিজ্ঞাপনে নির্দিষ্ট দিনে ৫২ জন আবেদনকারী উপস্থিত হল। রডরিগেজ ও জিয়া মিলে তাদের ইন্টার্ভিউ নিলেন। বেশ কিছু কগনিটিভ এক্সপেরিমেন্টের মাধ্যমে তাদের সাইকোলজিক্যাল প্রোফাইল তৈরি করলেন। অবশেষে আঠারোজনকে বাছাই করা হল। তাদের মধ্যে ১২ জন কয়েদি আর ৬ জন প্রিজন গার্ড। জিয়া তাদের কাছে গবেষণার প্রক্রিয়াটি ব্যক্ষা করলেন।

“এটা একটা প্রিজন সিমুলেশন। এখানে একটি কৃত্রিম কারাগারের মত পরিবেশে আপনাদের বিহ্যাভিওর মনিটর করা হবে। আপনারা এখানে সত্যিকারের বন্দি ও প্রহরির মতই আচরন করবেন। আপনাদেরকে ১৪ দিন ধরে কিছু স্ট্রেস সিমুলেশনের মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু আপনাদের চিন্তার কোন কারন নেই। সিমুলেশন গুলো সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং সহিংসতা বা শারিরিক সংঘর্ষের আশঙ্কা মুক্ত। আমরা সারাক্ষন আপনাদের উপর নজর রাখব। আর আপনারা যে কেউ যে কোন মুহুর্তে এই এক্সপেরিমেন্ট থেকে বিদায় নিতে পারবেন। এখানে আপনাদের সহযোগিতা সম্পুর্ন ভলান্টারি।”

***
জেলর সাহেবের হাতের তালু ঘামছে। বা কাঁধটা অবশ লাগছে। একি, প্যনিক এট্যাক হচ্ছে নাকি!!! তিনি দ্রুত দুহাতে নিজের নাক মুখ শক্ত করে চেপে ধরলেন। একটু পর নাক ছেড়ে দিয়ে দেখলেন হা, এবার সহজ ভাবে নিঃশ্বাস ফেলতে পারছেন। কিন্তু তার মাথা কাজ করছে না। তার সুপারভিশনে একজন কয়েদি মারা গেছে। তিনি নিজে উপস্থিত থেকে শারীরিক নির্যাতনে অনুমোদন দিয়েছেন। তিনি নিজের মুখে অবশ্য ৪৬ নংকে মারধোর করার আদেশ দেননি, কিন্তু মারামারি তার চোখের সামনেই ঘটেছে এবং তিনি বাধা দেননি। এখন খুব ঠাণ্ডা মাথায় কাজ করা দরকার। কিন্তু তিনি কিছুতেই সুস্থির হতে পারছেন না।

“স্যার, এখন কি করবেন?” সেকেন্ড অফিসার জামান জিজ্ঞেস করল।

“ওর মৃত্যুর খবরটা সাবধানে চেপে যেতে হবে। ডেডবডিটা সরিয়ে ফেলতে হবে। খুব সাবধানে যেন অন্য কয়েদিরাও কিছু টের না পায়? সবাইকে বলা হবে ৪৬ নং কে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।”

“আর ৪৬ নম্বরের ফ্যমিলিকে কি বলবেন?”

“ওদেরকে জানানো হবে ৪৬ নম্বরকে সেচ্ছায় মুক্তি দেয়া হয়েছে।”

“কিন্তু কথা একসময় ফাস হয়ে যাবেই, তখন থানা পুলিশ...”

“এসব কথা পরে ভাবা যাবে, এখন তুমি ডেডবডি সরানোর ব্যবস্থা কর।”

“ডেডবডি কোথায় সরাব?” জামান আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করল।

জিয়া মুখ খিচিয়ে বললেন, “তার আমি কি জানি? সব কিছু আমাকে বলে দিতে হবে? ওই বেজন্মা ফার্স্ট অফিসারটা কোথায়? ওকে বল, তুই ঝামেলা পাকিয়েছিস এখন তোকেই ঝামেলা মিটাতে হবে।”

এই সময় সিপাহি নম্বর ১৩০ মনিটরিং কক্ষে প্রবেশ করল। “স্যার, কয়েদি নাম্বার ৪৬ এর ওয়াইফ দেখা করতে এসেছে।”

জেলর সাহেব কে কেউ যেন বুকের মাঝখানে একটা ঘুসি মারল।

“৪৬ নম্বরের বউ দেখা করতে এসেছে? এখন কোথায়?”

“উপরে বসিয়ে রেখে এলাম”

“বসিয়ে রেখে এলাম মানে? বলতে পারলি না যে দেখা হবে না। কয়েদীদের সাথে ফ্যমিলির কথা বলা নিষেধ।”

“বলেছিলাম তো। মহিলা ভীষণ জোর করল। সাথে ভাইকে নিয়ে এসেছে। ভয় দেখাল তার স্বামীর সাথে দেখা না করতে দিলে পুলিশ ডাকবে।”
জেলর সাহেব ও জামান দুইজনের মুখই সাদা হয়ে গেল।

***
১ম দিন

প্রথমেই বন্দিদের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হল। এইসময় তাদের চোখ বাঁধা ছিল যাতে তারা পুরো কমপ্লেক্সটা চিনে ফেলতে না পারে। প্রিজন কম্পাউন্ডে নেয়ার পর তাদের পরিধেয় কাপড় খুলে নিয়ে জেলখানার কয়েদীদের মত লম্বা ঢিলা ফতুয়া পরতে দেয়া হল। কিন্তু কোন পাজামা দেয়া হল না। ফতুয়াটা প্রায় হাঁটু অবধি লম্বা, ও দিয়েই লজ্জা ঢাকতে হবে। এই ইউনিফর্মের পেছনে ড জিয়ার যুক্তি হল প্রিজন এক্সপেরিয়েন্সের একটা বড় অংশ জুড়ে আছে হিউমিলিয়েশন। তাকে একটি কৃত্রিম কারাগারে খুব অল্পসময়ে এই এক্সপেরিয়েন্স তৈরি করতে হবে। সে জন্যেই কয়েদীদের পোশাকে এই ভিন্নতাটুকু আনা হয়েছে। প্রথমে সব কয়েদিই জোড়াল আপত্তি জানাল, কিন্তু তাদের কে যখন বলা হল এই পোশাক ছাড়া তাদেরকে এই গবেষণায় অংশ নিতে দেয়া হবে না এবং তারা কোন পয়সাও পাবে না, তখন একজন দুইজন করে সবাই মেনে নিল। এই পোশাকের প্রভাবটা সাথে সাথে প্রত্যক্ষ করা গেল। দেখা গেল খুব তেজি মানুষটাও এই পোশাকে কেমন যেন মিইয়ে গেল, তাদের সবার হাঁটা চলা, বসার ভঙ্গিতে পরিবর্তন লক্ষ করা গেল।

এরপর সব কয়েদির মাথা কামিয়ে দেয়া হল। তারপর সবাইকে নিয়ে যাওয়া হল তাদের প্রিজন সেলের কাছে। সেখানে তাদের কয়েদীদের নিয়ম কানুন পড়ে শোনানো হল। বলা হল বন্দিদের নাম ধরে ডাকা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, নামের বদলে প্রত্যেককে তাদের ইউনিফর্মের নাম্বার দিয়ে ডাকতে হবে। এখানে আবার অনেকে সেলের পরিবেশ নিয়ে অভিযোগ তুলল। এইটুকুন সেলে দুইজনেরই জায়গা হয়না, তাতে তিনজন! মেঝেতে তেল চিটচিটে একটা নোংরা কম্বল বিছিয়ে শোয়ার ব্যবস্থা। প্রচণ্ড গরম, কিন্তু ফ্যানের সুবিধা নেই।

বড় একটা প্রতিবাদ উঠল খাবারের সময়। খাবারের মান অত্যন্ত খারাপ। এই নিয়ে ৭২ নম্বর কয়েদি বেশ শোরগোল তুলল।
এসব কিছুর পরেও প্রথম দিনটা ভালোয় ভালোয়ই কেটে গেল।

২য় দিন

একই সাথে দুইজন বন্দির টয়লেটে যাবার অনুমতি নেই। কিন্তু ৪৬ নং জেদ ধরল তাকে এখনই বাথ্রুমে যেতে দিতে হবে, তার সর্ট ব্লাডারের সমস্যা আছে। গার্ড তার কোথায় কান দিল না। ৪৬ নং বেচারা মেঝেতেই পেচ্ছাব করে ফেলল। সেটা দেখে একজন গার্ড হেসে ফেলতেই ৭২ নম্বর তাকে মুঠি পাকিয়ে ঘুসি মারতে গেল। গার্ডদের তখনকার মত সটকে পরতে হল। কিন্তু গার্ডরা ব্যপারটা সহজ ভাবে নিল না। তারা ঠিক করল নিজেদের কতৃত্য প্রতিষ্ঠা করতে তাদের একটা কিছু অবশ্যই করা দরকার। তারা ঠিক করল ৭২ নম্বরকে কানে ধরে উঠবস করাবে, যেহেতু শারীরিক নির্যাতনের সুযোগ নেই। অন্যান্য বন্দিরা ব্যপারটা খুব সিরিয়াসলি নিল। ৭২ নম্বর তো কানে ধরলই না বরং আর সব কয়েদীদের নিয়ে গার্ডদের দিকে ধেয়ে এল।
শাস্তি হিসেবে ঠিক করা হল সেদিন রাতে বন্দিরা খেতে পাবে না।

৩য় দিন

গার্ডদের থাকার ব্যবস্থাও খুব সুবিধার নয়। জেলরের জন্যে আলাদা রুম আছে। কিন্তু বাকি ছয়জন গার্ডকে একটা বড় রুমে মেঝেতে কম্বল বিছিয়ে থাকতে হবে। এই কম্বল অবশ্য বন্দিদেরগুলো থেকে পরিষ্কার। কিন্তু মেঝেতে ভালভাবে শোয়ার জায়গা আছে মাত্র তিনজনের। মাথার উপর একটা ফ্যান আছে ঠিকই কিন্তু ওটা এত আস্তে ঘোরে যে ফ্যান থাকা না থাকা সমান কথা। ঠিক করা হয়েছে একেকবারে তিনজন ঘুমাবে আর তিনজন জেগে পাহারা দেবে। গার্ডদের খাবার বন্দিদের থেকে কিছুটা ভালো হলেও সাধারণ বিচারে অনেক নিম্নমানের।

কিছুক্ষনের মধ্যেই গার্ডরা বুঝতে পারল তাদের অবস্থা আসলে বন্দিদের থেকে খুব একটা ভালো না। পার্থক্য শুধু এটাই যে গার্ডদের হুকুম করার ক্ষমতা আছে যেটা বন্দিদের নেই। তারা হুকুম করলে বন্দিরা সেটা মানতে বাধ্য।

৪র্থ দিন

তুচ্ছ বিষয় নিয়ে দুই কয়দির মধ্যে খাবার টেবিলে ঝগড়া লেগে গেল। এক গার্ড এগিয়ে গেল ঝগড়া থামাতে। এবার গার্ডের সাথে বাকি দুজন তর্ক শুরু করে দিল। আগের দিনের অভিজ্ঞতার কারনে অনেকেই গার্ডদের উপর খেপে আছে। তারাও সোৎসাহে এগিয়ে এল। ৭২ নং কয়েদি ঝগড়াটা আরো উস্কে দিল। একপর্যায়ে বন্দিরা খাবার ঘরের চেয়ার টেবিল ভাঙতে শুরু করল। সেল থেকে ময়লা কম্বল বের করে এনে বাহিরে ছুরে ফেলল।
সংখ্যায় দুর্বল গার্ডরা দ্রুত মনিটরিং রুমে আত্মগোপন করল। এখানে জেলরের সাথে শলা পরামর্শ করে তারা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল। কয়েদীদের সেলের আলো নিভিয়ে দেয়া হল। চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। অন্ধকারের সুযোগে গার্ডরা ৭২ নম্বরকে পাকড়াও করল। এই লোকটাই বার বার ঝামেলা পাকায়। ব্যাটা কিছুটা নেতা গোছের। ওকে সাইজ করতে পারলে বাকিরা এমনিতেই ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। ৭২ নংকে চেপে ধরে ওর পরিধেয় ইউনিফরম কেড়ে নেয়া হল। তারপর তাকে নগ্ন দেহে শুধু আন্ডারওয়্যার পড়া অবস্থায় সেলের লোহার বারের সাথে আটকে রাখা হল। বাকিদের সাবধান করে দেয়া হল আর কেউ ঝামেলা পাকালে তাকেও এই শাস্তি দেয়া হবে।

৭২ নম্বরের পরিনতি দেখে সবার মধ্যে সাময়িক ভিতির সৃষ্টি হল ঠিকই, কিন্তু বন্দিদের মধ্যে আরও বড় ক্ষোভ দানা বাঁধতে লাগল। জেলরও সেটা বুঝতে পারলেন।

৫ম দিন

আজকের দিনের শুরুতেই নতুন একটা নিয়মের সুচনা করা হল। ১নম্বর সেলের বন্দিদের সরিয়ে এটাকে ফার্স্ট ক্লাস সেল ঘোষণা করা হল। ফার্স্ট ক্লাস সেলে নতুন পরিষ্কার কম্বল দেয়া হল। জেলারের রুম থেকে একটা বড় টেবিল ফ্যান এনে এই সেলে বসান হল। গতকালের গণ্ডগোলে যে তিনজনের অংশগ্রহণ সবচে কম ছিল এমন তিনজনকে এই সেলে থাকতে দেয়া হল। সেই সাথে এও ঘোষণা দেয়া হল, এখন থেকে যে বন্দিরা সবচে ভালো আচরণ করবে শুধু তারাই ফার্স্ট ক্লাস সেলে থাকতে পারবে। শুধু তাই না তারা গার্ডরা যে মানের খাবার খায় সেই মানের খাবার খেতে পাবে।

৬ষ্ঠ দিন

নতুন নিয়ম কাজ করতে শুরু করেছে। বন্দিদের মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। তার থেকে বড় কথা তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়া গেছে। ব্যপারটাকে আরও কার্যকরী করতে জেলর আরেকটি নতুন নিয়ম যোগ করলেন, শুধু ফার্স্ট ক্লাস সেলের বন্দিরা যখন খুশী বাথরুমে যেতে পারবে। বাকি বন্দিদের সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৫টার মধ্যে বাথরুমের কাজ সারতে হবে। এরপর যদি বাথরুমে যেতে হয় তাকে সেলের ভেতরেই কাজ সারতে হবে। এছাড়া জেলর সাহেব খুব চতুরতার সাথে বন্দিদের মধ্যে গুজব ছড়িয়ে দিলেন যে কয়েদীদের মধ্যে এমন একজন আছে যে আসলে জেলর সাহেবের চর। কয়েদীদের গোপন শলাপরামর্শ সব জেলরের কাছে রিপোর্ট করাই তার কাজ। এর মারাত্মক ফল পাওয়া গেল, বন্দিদের নিজেদের মধ্যে বিশ্বাস সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেল। তাদের মধ্যে ফার্স্ট ক্লাসে থাকা নিয়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতা দেখা গেল।

৭ম দিন

এই কয়দিনে সবাই নিজের নিজের চরিত্রের ভেতর ঢুকে গিয়েছে। বন্দিরা নিজেদেরকে সত্যিকারের কয়েদি ভাবতে শুরু করেছে। গার্ডরা নিজেদেরকে সত্যিকারের গার্ড ভাবছে। তারা প্রায় সতস্ফুর্ত ভাবে যে যার ভুমিকা পালন করছে। তারা যেন তাদের আসল পরিচয় ভুলেই গেছে। আজকাল আর কেউ কাউকে নাম ধরে পর্যন্ত ডাকে না, সবাই তাদের ইউনিফর্মের নাম্বার ব্যবহার করে। সাতদিনের মাথায় এদের সবাইকে তাদের স্বীয় আত্মপরিচয় থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে ফেলা সম্ভব হয়েছে। কোনটা সিমুলেশন আর কোনটা বাস্তব তারা ধরতে পারছে না। তাদের কাছে এসব কিছুই সত্যি।

সবচে মজার ব্যপার হচ্ছে ভলান্টিয়াররা যে কোন সময় চাইলেই বিদায় নিতে পারে। কিন্তু জেলর সাহেব নিয়ম করলেন কোন বন্দি নির্দিষ্ট সময়ের আগে মুক্তি পেতে চাইলে তাকে আবেদন করতে হবে এবং তার আচরনের ভিত্তিতে জেলর সিদ্ধান্ত নেবেন মুক্তি দেয়া যায় কিনা। জেলর সাহেব যখন প্রতিটা মুক্তির আবেদন খারিজ করে দিলেন কোন বন্দি শক্ত প্রতিবাদ করল না! আর গার্ডরা তাদের ক্ষমতার স্থানটি উপভোগ করতে শুরু করেছে। বাইরের দুনিয়ায় তারা সবাই ক্ষমতাহীন আমজনতার একটি অংশ। কিন্তু এই ফ্যসিলিটিতে যতক্ষন তাদের গায়ে গার্ডের ইউনিফর্ম আছে, ততক্ষন তাদের আছে ১২ টি মানুষকে আদেশ করার ক্ষমতা, আছে আদেশ না মানলে তাদের শাস্তি দেয়ার অধিকার। গার্ডরা তাদের কাজকে উপভোগ করতে শুরু করেছে। এখানে যত কষ্টই হোক, এখন বাড়ি ফেরার কোন মানেই হয়না!

৮ম দিন

আজ দিনের শুরুতেই একটা ঝামেলা হয়ে গেল। প্রিজনার এরিয়াতে সেলফোন সম্পূর্ণ নিষেধ। তারপরও ৪৬ নাম্বার কয়েদি কিভাবে যেন এক গার্ডের কাছ থেকে একটা মোবাইল ফোন চুরি করে ফেলল। তারপর সুযোগ বুঝে সে কল দিল তার স্ত্রিকে। স্ত্রির সাথে বেশি কথার সুযোগ অবশ্য সে পেল না, তার আগেই সে গার্ডদের কাছে ধরা পরে গেল। বিনা অনুমতিতে কল করার শাস্তি স্বরূপ ৪৬ নংকে নগ্ন করে সেলের দরোজার সাথে সারাদিন আটকে রাখা হল। সন্ধ্যার দিকে ৪৬ নম্বরের মাথা খারাপ মত হয়ে গেল। প্রথমে সে পাগলের মত প্রলাপ বকতে শুরু করল। তারপর সেলের বারে মাথা ঠুকতে লাগল। ফার্স্ট অফিসার মানুষটা কিছুটা স্যডিস্ট টাইপের। ৪৬ নম্বরের পাগলামিতে অধৈর্য হয়ে সে লোকটাকে পিটিয়ে নাকমুখ থেঁতলে দিল। এই প্রথম এই এক্সপেরিমেন্টে কারো উপর সরাসরি শারীরিক আঘাত করা হল। জেলর সাহেব পুরো ঘটনাই দেখলেন, কিন্তু ফার্স্ট অফিসারকে থামানো বা এক্সপেরিমেন্ট বন্ধ করার কথা তার মনে হল না। ৪৬ নম্বরকে পিটিয়ে স্যডিস্ট ফার্স্ট অফিসার এক আদিম যৌন উত্তেজনা লাভ করল। পেটানো শেষ করে তাকে বাথরুমে গিয়ে মাস্টারবেট করতে হল।

পরের দিন সকালে ৪৬ নং মারা গেল।

***
জেলর সাহেব সাথে সেকেন্ড অফিসার জামানকে নিয়ে ৪৬ নং এর ওয়াইফের সাথে কথা বলতে এলেন।

মেয়েটির বয়েস খুবই কম, হালকা গড়ন। তার সুশ্রি চেহারা ক্রোধে আগ্নেয়গিরির রুপ ধারন করেছে। সে সাথে নিজের ছোট ভাইকে নিয়ে এসেছে। ভাইয়ের চেহারাও বোনের থেকে খুব একটা সুবিধার নয়। জেলর তাদেরকে দেখেই বুঝলেন সহজে এদের বুঝ দেয়া যাবে না।

জেলর বললেন, “দেখুন আমার কর্মীরা আপনাদের বলেছে নির্দিষ্ট সময় ছাড়া ইনমেটরা তাদের ফ্যমিলির সাথে দেখা করতে পারবে না। তারপরও আপনারা কেন ঝামেলা করছেন?”

“আমি আপনাদের কোন কথা শুনতে চাই না, আপনারা শফিককে জোর করে আটকে রেখেছেন। আমি আমার স্বামীকে না নিয়ে এখান থেকে যাব না।” মেয়েটার চোখ থেকে আগুন ঝরে পড়ছে। জেলর সাহেব সত্যি সত্যি সেই আগুনের উত্তাপ অনুভব করতে পারলেন।

“দেখুন আমার মনে হয় কোথাও কিছু একটা ভুল হয়েছে। শফিক সাহেবকে তো আমরা আজ সকালেই বিদায় দিয়েছি।”

“আপনারা কি ফাজলেমি করছেন? একবার বলছেন শফিককে দেকে দেবেন আবার বলছেন ওকে যেতে দিয়েছেন। শফিককে সকালে ছেরে দিলে ও বাড়ি যায়নি কেন? আমার হাসবেন্ডকে কোথায় আটকে রেখেছেন বলেন?”

“আহ, আটকে রাখার প্রশ্ন কেন আসছে? এখানে যারা আছে সবাই সেচ্ছায় আছে। কারুকে আটকে রাখা হয়নি। শফিক সাহেবের যে রিলিজ হয়ে গেছে সেটা আমার সেপাহি জানতো না বলে আপনাদের ভুল তথ্য দিয়েছে।”

“তাহলে শফিক গতকাল ফোন দিয়ে এই কথা বলল কেন?”

“দেখুন, এখানে আমরা কিছু মাইল্ড স্ট্রেস সিমুলেশন করে থাকি। আমাদের সিমুলেশন্টা শফিক সাহেবের মনে কিছুটা প্রভাব ফেলে থাকতে পারে, যে কারনে হয়তো উনি এসব উল্টাপাল্টা কথা আপনাকে বলেছেন। চিন্তার কিচ্ছু নেই। শফিক সাহেবকে আমরা বিদায় দিয়েছি। আপনি বাড়ি গিয়েই হয়তো দেখবেন তিনি আপনাদের জন্যে অপেক্ষা করছেন”

“আমি আমার হাসবেন্ডের সাথে দেখা না করে যাব না। আমাকে দেখা করতে দিন না হলে আমি পুলিশ ডাকব। এই সুমন তুই ফোন লাগাতো পুলিশকে, এরা ভালো কথা শুনবে না” মেয়েটা তার ভাইকে ফোন করার নির্দেশ দিল। ভাইও দেখা গেল চট করে মোবাইল বের করে কার যেন নাম্বার চাপছে।

“আচ্ছা আচ্ছা দাঁড়ান। আপনাকে যদি আমি সাথে নিয়ে গিয়ে দেখাই যে আমাদের এখানে শফিক নেই তাহলে আপনি বিশ্বাস করবেন?” জেলর তাড়াতাড়ি ছেলেটাকে আটকালেন।

“মোটেই না। আপনারা প্রথম থেকেই মিথ্যা কথা বলছেন। আমি শফিককে সাথে নিয়ে যাব ব্যস।”

“ঠিক আছে” জেলর হাল ছেরে দিলেন। “আপনারা আমার সাথে আসুন। আপনাদের শফিককে ফেরত দিচ্ছি। তবে আমাদের কমপ্লেক্সে বহিরাগতদের মোবাইল নিয়ে ঢোকা নিষিদ্ধ। আপনাদের এখানেই ফোন জমা রেখে যেতে হবে।”

জেলর সাহেব অতিথি দুইজনকে পথ দেখিয়ে কয়েদিদের ডাইনারে নিয়ে গেলেন। তাদেরকে অখানে বসে অপেক্ষা করতে বলে বের হয়ে এলেন। পেছনে দরোজাটা আটকে দিতে ভুললেন না। তিনি বের হতেই সেকেন্ড অফিসার চেপে ধরল, “স্যার করলেন কি! ওদেরকে ওখানে কতক্ষন বসিয়ে রাখতে পারবেন?”

“আপাতত ডেডেবডিটা সরিয়ে ফেলা পর্যন্ত আটকানো থাকুক। যতক্ষন এখানে একটা ডেডেবডি আছে ততক্ষন আমি কোন পুলিশের হাঙ্গামায় যেতে চাই না।”

“আরে ওরা বললেই কি পুলিশ ডেকে আনতে পারবে নাকি? বাংলাদেশে পুলিশ ডাকা এতই সহজ?”

“পুলিশ না আসুক ওরা বাইরে লোক ডেকে জড়ো করতে পারে। আমি ডেডবডি নিয়ে রিস্ক নিতে চাইনা। তুমি জলদি এই জিনিস সরানোর ব্যবস্থা কর।”

জেলর সাহেবের মাথাটা চিন্তায় ছিরে যাচ্ছে। তিনি মনিটর রুমে বসে একটা সিগারেট ধরালেন। এই সময় ফার্স্ট অফিসার বিমল দৌড়ে এল। “স্যার সর্বনাশ। কয়েদিরা কিভাবে যেন ৪৬ নম্বরের মৃত্যুর খবরটা জেনে ফেলেছে।”

“কি???” জেলরের চোয়াল ঝুলে পড়ল।

তিনি দেয়ালের মনিটরে দেখতে পেলেন, কয়েদিরা সব করিডরে হাতের কাছে যাই পাচ্ছে প্রবল আক্রোশে সব ভেঙেচুরে ফেলছে। কে একজন যেন কম্বলগুলো এককরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। ধোঁয়ায় গোটা এলাকা ঢেকে যাচ্ছে। বন্দিরা ক্যমেরার দিকে হাত তুলে শাসাচ্ছে, দেয়ালে-গেটের দরোজায় লাথি মারছে।

জেলর কাপা গলায় বললেন, “যতক্ষন গেট বন্ধ আছে ওরা আমাদের ছুটে পারবে না। তুমি বাকি গার্ডদের নিয়ে গেটের এপাশে পজিশন নাও। যেভাবেই হোক ওদের থামাতে হবে।”

ফার্স্ট অফিসার বের হয়ে গেল। জেলরের হাতের সিগারেটটা পুরতে পুরতে তার আঙ্গুল স্পর্শ করে ফেলল। আগুনের ছ্যকা খেয়ে তিনি চমকে উঠলেন। এই সময় তার চোখ গেল আরেকটা মনিটরে। এই মনিটরে ডাইনারে অতিথি দুইজনকে দেখা যাচ্ছে। আরে! সেকেন্ড অফিসার ওখানে কি করছে!! বিস্ফারিত চোখে জেলর দেখলেন সেকেন্ড অফিসার জামান তার হাতের লোহার ব্যটনটা দিয়ে একবাড়িতে ৪৬ নং এর ছোট ভাইকে মাটিতে ফেলে দিল। তারপর তার অজ্ঞান দেহটা টেনে নিয়ে হ্যান্ডকাফ দিয়ে বাধল টেবিলের পায়ার সাথে। বাধা শেষ হলে এবার সে ঝাপিয়ে পড়ল মেয়েটির উপর।
জামানের সাইকোলজিক্যাল প্রোফাইল জেলরের মনে পরে গেল। জামানের টেনশন নেয়ার ক্ষমতা কম, ছোট বেলা থেকেই সেক্সুয়ালি ডিপ্রেসড। এই চরম টেনশনের মুহূর্তে ওর স্বাভাবিক বুদ্ধি লোপ পেয়েছে। সেখানে জায়গা করে নিয়েছে ওর অ্যানিম্যাল ইন্সটিঙ্কট। ওর অ্যানিম্যাল ইন্সটিঙ্কট ওকে বলছে এখন একটা রেপ করতে হবে। স্ট্রেস থেকে মুক্তির এটাই উপায়। জামান মেয়েটাকে টেবিলের উপরশুইয়ে ফেলেছে। পাশবিক আনন্দের সাথে দুহাতে খামছে ওর কাপড় ছিঁড়ে ফেলছে।

প্রচন্ড একটা শক পেয়ে যেন জেলর সাহেব জেগে উঠলেন। তার মনে পড়ল তিনি সত্যিকারের জেলর নন। তিনি ড জিয়া, একজন সাইকোলজিস্ট। এখানে যা চলছে তার কিছুই সত্যি নয়, পুরোটাই এক্সপেরিমেন্ট। তিনি নিজের এক্সপেরিমেন্টে এতটাই ডুবে গিয়েছিলেন যে তিনি এমনকি নিজেকেও হারিয়ে ফেলেছিলেন।

ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তিনি দেখলেন বন্দিরা কিভাবে যেন প্রিজনার এরিয়ার গেট খুলে ফেলেছে। ক্ষুধার্ত নেকড়ের মত তারা ঝাপিয়ে পড়ছে গার্ডদের উপর। দুইজন কয়েদি ঢুকে পড়েছে ডাইনারে। এক কয়েদি জামানকে মেয়েটার শরির থেকে টেনে নামাল । তারপর এক বাড়িতে তার মাথা থেঁতলে ফেলল। আশ্চর্য, তারপর মেয়েটাকে সাহাজ্য না করে উল্টো বন্দি দুজন এইবার অসহায় মেয়েটির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। দৃশ্যটি দেখে এই চরম দুঃসময়েও জিয়ার ঠোঁটের কোনে একটা ক্রূর হাসি খেলে গেল।

এলমেল পায়ে জিয়া নিজের ঘরে ঢুকে দরোজা বন্ধ করে দিলেন। তিনি পাগলের মত একটা কিছু খুঁজছেন। কিন্তু কোথাও পাচ্ছেন না। তিনি সবকিছু খুজে তোলপাড় করে ফেলছেন। বন্দিরা তার ঘরের দরোজায় পৌঁছে গেছে। দফায় দফায় দরোজায় শক্ত লাথি পড়ছে। দুর্বল দরোজাটা আর বেশিক্ষন ওদের আটকে রাখতে পারবে না।

জিয়া অবশেষে জিনিসটা খুজে পেলেন, একটা ছোট্ট রিভালভার। প্রচন্ড শব্দে দরোজা ভেঙে পড়ল। ভেতরে প্রবেশ করল ৭২ নং কয়েদি ও তার পেছনে আরও কয়েকজন। জিয়া রিভলভারটা সোজা তাক করলেন ৭২ নং এর বুকে। ৭২ নং রিভলভার দেখে দমে গেল না। দাঁতে দাঁত ঘষে এগিয়ে এল। তার হাতে ধরা রক্ত মাখানো একট টুকরো কাঠ।

***
ফ্যসিনেটিং। সত্যি ফ্যসিনেটিং।

এই পরিক্ষা আগেও তারা করেছেন। বাংলাদেশের আগে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যন্ডে এই একই পরিক্ষা চালানো হয়েছে। কিন্তু এত অভূতপূর্ব রেজাল্ট তারা আগে কখনো পাননি। ভিডিও ফুটেজ দেখে রডরিগেজ একরকম বাক্যহারা হয়ে গেছেন। এতটা তিনি আশা করেননি। এই তথ্য তাদেরকে কয়েকযুগ এগিয়ে দেবে। কথাটা ভাবতেই রডরিগেজের মুখে একটা তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠল। এক্সপেরিমেন্টের কেউ বেঁচে নেই। কমার্শিয়াল বিল্ডিং এর বেসমেন্টে আগুন লেগে রহস্যময় ভাবে উনিশজনের মৃত্যু হয়েছে। আগুন লাগার কারন অজানা। মিডিয়াতে নিউজটা এইভাবেই এসেছে। আগে থেকেই সব আয়োজন করা ছিল, তাই অবস্থা সামাল দিতে কোন বেগ পেতে হয়নি। সব কিছুই রডরিগেজ ভালয় ভালয় শেষ করেছেন। পেন্টাগনে বিশেষ এডভাইজারের পদটা পেতে এবার তাকে ঠেকায় কে?

আজ রাত দুটোয় রডরিগেজের ফ্লাইট। রাত এগারোটার মধ্যেই সে ব্যাগ গুছিয়ে তৈরি হয়ে নিচে নেমে এলেন। হোটেলের বেসমেন্ট পারকিং এ তার জন্যে কালো একটা মার্সিডিজ আগে থেকেই অপেক্ষা করে ছিল। স্যুটকেসটা পেছনের বাঙ্কে ফেলে রডরিগেজ উঠে বসলেন প্যসেঞ্জার সিটে।

“হ্যলো প্রফেসর। বিদায় না নিয়েই চলে যাচ্ছেন?”

রডরিগেজ ভুত দেখার মত চমকে উঠলেন। তার পাশের সিটে একটা লোক বসে আছে, পড়নের কাপড় শতছিন্ন, মুখ কালিঝুলি আর শুকনো রক্তের নিচে ঢাকা পড়েছে। লোকটার হাতে ধরা একটা ছোট্ট রিভলভার।

“তু...তু... তুমি বেঁচে আছ???”

রডরিগেজের কপালের ঠিক মাঝ বরাবর জিয়া গুলিটা করলেন। রক্ত আর ফ্যকাসে মগজের একটা ছোট্ট মেঘ তুলে বুলেটটা বের হয়ে গেল। জিয়া এবার শান্ত হাতে একটা সিগারেট ধরালেন।

দূরে কোথাও একটা কুকুর ডাকছে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০১২ রাত ২:১৪
৩৪টি মন্তব্য ২৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:০৬

অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×