টেনিসের প্রতি, বিশেষত মহিলা টেনিসের প্রতি রাশিয়ানদের আগ্রহ কুর্নিকোভার গ্লামার আর শারাপোভার গ্লামার ও পারফর্মেন্সে অনেক বেশি গাঢ় হয়ে উঠেছে এতোদিনে। ছয় বছর বয়সের সেই মেয়েটারও বয়স বেড়ে হয়েছে পনের। প্রিয় শহর, জন্মস্থান সামারার গণ্ডি পেরিয়ে এক পা এক পা এগুতে এগুতে ইতিমধ্যেই সে নিজের উপস্থিতি জানান দিয়েছে বিশ্ব টেনিস অঙ্গনে। কুর্নিকোভা-শারাপোভাদের মতোই লাস্যময়ী সুন্দরী এই টিনএজার টেনিস তারকা জুনিয়র টেনিসের র্যাংকিংয়ে নিজের করে নিয়েছে প্রথম স্থান। ওর নাম আনাসতাসিয়া পাভলু্যচেনকোভা।
পনের বছর বয়সটা পাভলু্যচেনকোভার জীবনে মধুময় হয়ে ধরা দিয়েছে। ধরা দিয়েছে বলাটা বোধ করি ভুল হবে। বলা উচিত, 1991-এর 3 জুলাই জন্ম নেয়া এই মেয়েটি 2006-এ টেনিস দুনিয়াকে জানিয়ে দিয়েছে_ সে কে এবং কী করতে চায়। এইতো, গতবছরই যে পেরুতে পারেনি প্রথম রাউণ্ডের বাধা, সে-ই এ বছরের চ্যাম্পিয়ন! আর টেনিসের সবচেয়ে মর্যাদাকর আসর গ্রান্ডস্লাম জগতে পা রাখার দ্বিতীয় বছরেই একক ও দ্বৈতে পাঁচটি গ্রাণ্ডস্লামে চ্যাম্পিয়নও কিনা পাভলু্যচেনকোভা! এ বছর গ্রাণ্ডস্লামে ওর সাফল্য ঈর্ষণীয়। ইউএস ওপেনের আগে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে চ্যাম্পিয়ন ও রোনাল্ড গেরোসে রানার্স আপ। আর দ্বৈতে শ্যারন ফিচম্যানকে সঙ্গী করে বছরের প্রথম তিনটি গ্রাণ্ডস্লামেরই শিরোপা জয়।
হাসিখুশি মেয়ে পাভলু্যচেনকোভার বড় বৈশিষ্ট্য হলো, ও সবসময়ই লড়াকু মেজাজে থাকে। যেকোনো প্রাথমিক বিপর্যয়কে সামলে উঠে, প্রতিপরে মনোবলে চিড় ধরিয়ে, হাজারো দর্শককে অবাক করে দিয়ে হারতে বসা ম্যাচ বের করে আনার অনবদ্য মানসিক দৃঢ়তা ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে ওর। ধরা যাক সদ্য জেতা ইউএস ওপেনের ফাইনাল ম্যাচটির কথা। প্রতিপ অস্ট্রিয়ান তামিরা পাজেকের বিরুদ্ধে এই ম্যাচটি কতণ স্থায়ী হয়েছিল, জানো? পাক্কা তিনঘন্টা! প্রথম সেটে 3-6 ব্যবধানে যখন সহজ হার মেনে নিল সে, তখনো যেসব সমর্থক তার প েছিল, দ্বিতীয় সেটের শুরুতেই পায়ে ব্যথা পেলে সেই সমর্থকদের মাথায় হাত দেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। বেচারারা অপো করছিল, এই বুঝি না লড়েই নিজেকে সরিয়ে নেয় পাভলু্যচেনকোভা, তাতে যাচ্ছেতাই হারার চেয়ে ইনজুরির উপর কিছুটা দায় চাপানো যাবে!
বছরটাকে নিজের করে রাখতে ইতিমধ্যে পাওয়া সাফল্যই যে তৃপ্তিদায়ক নয়, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়ে যাওয়ার মধ্যে যে বীরত্ব আছে, তার ইঙ্গিত দিয়ে টেনিসে আসা পাভলু্যচেনকোভা মাঠে নামে এবং দ্বিতীয় সেট জিতে নেয় 6-4 গেমে। আর প্রতিপও দৃঢ়চেতা হওয়ায় হাড্ডাহাড্ডি এই লড়াইটি এতো দীর্ঘস্থায়ী হয়। শেষমেষ 7-5 এ ওর অদম্য লড়াইয়ের কাছে হার মানতে বাধ্য হয় তামিরা পাজেক।
পেশার খাতিরে খেলা নয়, টেনিসটাকে বেশ উপভোগ করে 66 কেজি ওজনের এই ডানহাতি রুশ টিনএজার। ওর কোচ এস ভি পাভলুচেনকোভ। সিনেমা, নাচ আর মিউজিক ভীষণ প্রিয় ওর। পাভলু্যচেনকোভা এ বছর এ পর্যন্ত 49টি একক ম্যাচে জিতেছে, হেরেছে 6 ম্যাচে। আর দ্বৈতে 5 ম্যাচে হারলেও জিতেছে 34টিতে।
জুনিয়র টেনিসের গণ্ডি পেরিয়ে পূর্ণাঙ্গ টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে অনেক বড় হয়ে উঠতে চায় আনাসতাসিয়া পাভলু্যচেনকোভা। ও এসেছে টেনিস বিশ্বে, ও নেমেছে টেনিসকোর্টে নিজের জীবনটাকে, নিজের স্বপ্নগুলোকে নিজের মতো করে সাজিয়ে তুলতে। অদম্য লড়াইয়ের মানসিকতা, মানুষের প্রতি টান-মমতা-শ্রদ্ধাবোধ আর আত্মসম্মানবোধ বোধ ওর সঙ্গী। তোমরা ওকে চিনো তো? দেখেছো তো ওর খেলা?
[রুদ্র আরিফ। খিলক্ষেত, ঢাকা । 2006]
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০০৬ রাত ১:৩৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



