ছোট খাটো 'আত্মহত্যা' আমার ভালোলাগে না। বরং বৃহৎ আত্মহত্যায় ডুবে যেতে পারলে বেশ হতো। প্রতিদিন 1ই রকম বাঁচা, 1ই রকম ভৌতিক অবদমন বিরক্তিকর লাগছে। সেক্স আর ঘুমের ভেতর ডুবে যাওয়ার আজন্ম লোভ আমার। ঘুমটা ভালো খুব, লীক্ষী-টক্ষিও বলা যায়। প্রতিদিন প্রায় সাড়ে 10ঘন্টা ডুবে থাকতে দেয়। প্রতিবার ঘুম ভাঙ্গলে অবাক হই আমি। কয়েক সেকেণ্ড কেটে যায় সব বুঝে ওঠতে। তারপর মনে হয়, নাহ্, এখনো আছি, বহাল তবিয়তে, রোজকার বিছানায়; তার মানে, রোজকার পৃথিবীতে।
ইদানিং 1টা অবাক করা অনুভূতি হয় আমার। আজ সকালে, মানে ঘুম ভাঙ্গার পর, মানে সাড়ে 11টায়ও হয়েছে। তা হলো, আমি 20 বছর 9 মাস পেরিয়ে গেছি। পেরিয়েছি আসলে কয়েকশো দিন আগেই। কিন্তু যখন পেরুচ্ছিলাম, তখন এমনটা মনে হয়নি। এখন মনে হচ্ছে, ঘন ঘন। এবং দেখছি, আমি পৃথিবীতে আয়ুর দিক থেকে সুকান্তকে [সুকান্ত ভট্টাচার্য, কবি] ছাড়িয়ে গেছি।
ছোটবেলায় [বাহ, আমি কত্তো বড় হয়ে গেছি: সেভ করি, সেক্স করি, জব করি!], সুকান্ত ও চেগুয়েভারায় যখন ডুবে থাকতাম, যখন ছোট ছোট পায়ে বহুদূরের [আমার এখনকার বয়সে বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব 5 মিনিটের। তখন মনে হতো, বহু-বহুদূর] স্কুলটায় যেতাম আপুদের মতো বই বুকে চেপে, বড় কেউ জিজ্ঞেস করলে, তুমি কোন ক্লাসে পরো, বাবু [?], বলতাম থ্রিতে, জিজ্ঞেসকারী অবাক হতো, তাই নাকি [?], বেশ তো এগিয়েছো, ভালো-ভালো... আমি বলতাম ফোরে, 1ই কায়দায় আরেক জিজ্ঞেসকারী বলতো 'ভালো, ভালো... বেশ তো এগিয়েছো'; বলতাম ফাইভে, সিক্সে, সেভেনে, এইটে, নাইনে, নিউ টেইনে, পরীক্ষা দেবো; কোন্ পরীক্ষা? এসএসসি। বারে, এত্তোটুকুন ছেলে, তুমি মেট্টিক পরীক্ষা দেবে... কীরে বান্দর, তুই দেহি তরতরাইয়া বড় হইয়া গেলি... ভাইয়া, শোনো, তুমি না বড় হইছো, পরীক্ষা দিবা, এত্তো বড় চুল রাখছো, প্র্যাকটিক্যালে নাম্বার দিব স্যারেরা? আমি তোমার চেয়ারম্যান ভাই হিসাবে কইতাছি না, আপন মানুষ হিসাবে, তোমারে আদর করি দেইখা কইতাছি, মামার 1টা মান-সম্মান আছে না?, তুমি চুলটা কাইটা ফালাও... তোমাকে/তোকে 1টা কথা বলি? এসএসসির পর কবে না কবে দেখা হয়, তুমি/তুই উল্টা-পাল্টা ছেলেদের সাথে মিশ্য/মিশিস না; পড়াশোনায় 1টু সিরিয়াস হও/হ, পিলি্লজ... সেই বয়সটায়, সেই সময়টায় রেগুলার ভাবতাম, এমন কিছু লিখে ফেলব, কিছু ঘটিয়ে ফেলব; আর মাকে পাগল করে দিয়ে, আব্বাকে বোকা বানিয়ে, ভাইবোনকে আঙ্গুল দেখিয়ে টুপ্ করে মরে যাবো ঠিক 20 বছর 9 মাস হবার আগে; যাতে 4পাশে বেশ হইচই পড়ে যায়, যাতে লোকজন অবাক হয়ে বলে, বাহ্ ছেলেটা তো অদ্ভুত জ্ঞানী ছিল [!]... আহারে, আরেকটু যদি বাঁচতো... অন্তত সুকান্তর মতো আয়ু পাইলেও না জানি কী করতো... [!]
আমি বড় হয়ে গেছি, আমি আমার জন্মগ্রামের ধূলি ও বেড়িবাঁধ, মেঘনায় স্নানরত সিনিয়র আপুদের হাসি ও সেক্সুয়াল অ্যাপিলের ভেতর অবাধ কল্পনায় নিজেকে খুঁজতে খুঁজতে বড় হয়ে গেছি, আমি অনেকগুলো নদী পাড়ি দিয়ে রাজধানীর পেট্রলপাম্প ও আবাসিক হোটেলের পাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে, নিউজপেপার ও ইন্টারনেটের মায়াবি জাল ঘাটতে ঘাটতে, শাহবাগে বন্ধুদের শরীর ও বসুন্ধরা সিটির জিন্স-ফতুয়া-শাড়ির মেয়েদের/আন্টিদের রহস্যময় হাসির ভেতর ডুবতে ডুবতে নাগরিক হয়ে উঠছি। 3ঘন্টার লঞ্চ জার্নিকে এড়াতে সাড়ে 3 বছর হলো গ্রামে যাওয়া হয় না আমার! চেগুয়েভারা আর সুকান্তকে, ক্লাস সেভেন থেকে এসএসসি পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিন দেড় মাইল হেঁটে গিয়ে আনন্দ বাজারের 'মিনি সিনেমা হল'-এ 5 টাকার টিকেটে দেখা বাংলা সিনেমাকে রেখে এসেছি গ্রামে। এই শহরে আমি কোনোদিন সিনেমা দেখিনি হলে, ইচ্ছে হয়নি। এই শহরে এসে নিজেকে চেগুয়েভারা ভাবতে ইচ্ছে হয়নি আমার। আমি সুকান্তকে পড়িনিও 1বার, নিজে থেকে। 'জ্ঞানী' শব্দটাকেও বেশ মজাদার, ফানি মনে হয়! কিছু 1টা হওয়ার লোভ বা প্রচেষ্টা বা তাড়া আমি ভেতর থেকে পাই না। তাতে আমার মন খারাপ হয় না। খারাপ লাগে না। ভালো লাগে কি? লাগে বোধয়! চাপমুক্ত থাকায়, কিছু হয়ে ওঠার মানসিক চাপকে সরিয়ে রাখার মধ্যে দীর্ঘশ্বাসের মতো আরামদায়ক ব্যাপার আছে, বোধ করি।
আমি এখন ঘুমের মধ্যে সালমা হায়েকের স্তন দেখলে আরাম বোধ করি [সমপ্রতি ফ্রিদা, আফটার দ্য সান সেট, আস্ক দ্য ডাস্ট, ব্যান্ডিডাস এবং ব্র্যাকিং আপ সিনেমায় দেখেছি], টেস্ট ম্যাচে ব্রায়ান লারার সেঞ্চুরি দেখলে দিনটা ভালো কাটে [আজও সেঞ্চুরি করেছে লারা, আমি সারাদিন বাসায় ছিলাম খেলা দেখার জন্য; লোডশেডিং হয়নি, কিন্তু ডিশে খুব ঝামেলা করছিল; লারা নটআউট 196। 200 থেকে 4 রান কম আছে বলে খারাপ লাগছে না, বরং লারা 'নটআউট' তাতেই আমি খুশি। কাল খেলা দেখবো, আশা করছি। কিন্তু সাড়ে 10টায় ঘুম থেকে উঠতে পারবো তো? অভিজ্ঞতা বলে, না, 1টু দেরি হবে। ততক্ষণ ক্রিজে থাকবে তো লারা?], যখন তখন যেখানে সেখানে স্বল্প কিংবা দীর্ঘক্ষণের জন্য 1টানা ঘুমিয়ে পড়তে ইচ্ছে করে, ঘুমিয়েও পড়ি [রাজধানীর বিখ্যাত জ্যামে, আমি বাসে কোনোরকমে বসার সিট পেলেই ঘুমিয়ে পড়তে পারি। কলেজে পড়ার সময়, লাস্টবেঞ্চে বসে, পৌরনীতি ও বাংলা ক্লাসের সময় 2 হাতে গাল রেখে, মাঝেমধ্যে ঘুমিয়ে নিতাম। আজ, সন্ধ্যা 7টার কিছু আগে, ঘুমুতে ইচ্ছে করল বলে মোবাইলের রিংটোন অফ করে ঘুমিয়ে নিয়েছি, ঘুম ভাঙ্গল 10টার কিছু পরে। তারপর গোসল করে এখন এই যে হাবিজাবি কীসব লিখতে শুরু করেছি। আশা করছি, বেশিক্ষণ সজাগ থাকতে পারবো না, আড়াইটা-3টার মধ্যেই ঘুম তার অদৃশ্য যৌনতার মায়ায় ঢেকে ফেলবে আমাকে।]; সবচেয়ে বেশি ভালোলাগে পরিকল্পনাহীন/'এমনি-এমনি' কাটিয়ে দিতে সেকেন্ডগুলো/মিনিটগুলো/ঘন্টাগুলো/দিনগুলো/বছরগুলো/যুগগুলো/শতাব্দীগুলো [শতাব্দী? সম্ভব? সম্ভব না হলেই বা কী!]। কিন্তু ভাস্করের [ভাস্কর চক্রবর্তী, কবি] 1টা লাইন মাঝেমধ্যেই জ্বালাতন করে, রোমান্টিকভাবে; দোস্ত বাপ্পি [বিজয় আহমেদ, কবি] আরো অনেক কিছুর মতো এই পোকাটা, মানে লাইনটা মাথার মধ্যে ছেড়ে দিয়েছে: 'আমি শুধু শুধু মরে যাবার জন্য জন্মাইনি' [বোধ করি এরকমই লাইনটা। বই, মানে, 'ভাস্কর চক্রবর্তীর নির্বাচিত কবিতা' খুলে দেখতে ইচ্ছে করছে না। যাই হোক, এরকমই রিড করেছে আমার মগজ।]। ভা লো না, লা ই ন টা?
[রুদ্র আরিফ : খিলক্ষেত, ঢাকা : 21 নভেম্বর 2006-এর দিনলিপি রাত পৌনে বারোটায় শুরু করলেও দেড়টা পেরিয়ে গেছে। ক্যালেন্ডারের হিসেব মতে, 1টা দিন পেরিয়ে গেছে; কতো অলস, ভা বা যা য় ? ? ?]

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



