এদিকে গঞ্জ পেরিয়ে হানাদাররা গ্রামটির দিকে অগ্রসর হলে সিস্টারদের নিরাপত্তার তাগিদে নৌকায় করে নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন ফাদার। রেসমন্ডকেও সঙ্গে নিতে চান। এখানে থাকলে হিংস্ররা তাকেও মেরে ফেলবে_ এই ভয়কে তোয়াক্কা না করে রেসমন্ড তার প্রিয় গ্রাম, প্রিয় গির্জা ছেড়ে কোথাও না যাবার সিদ্ধান্তে অনড় থাকে। এ সিদ্ধান্ত আপাতঃদৃষ্টিতে ছেলেমানুষী মনে হলেও প্রকৃতার্থে তার মানবিকবোধ ও দেশপ্রেমের দুঃসাহসী ইঙ্গিত বহন করে।
একদিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে গ্রামের একদল তরুণ, অন্যদিকে রাতের অাঁধারে নির্বিচার গণহত্যা চালায় পাক সৈন্যরা। রেহাই পায় না আশ্রয় নেওয়া রেসমন্ডের অনেক আদর-কাড়া বোবা শিশুটিও। নিঃসঙ্গ রেসমন্ড আকাশের দিকে তাকিয়ে নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের বদলে শান্তি প্রার্থনা করে। এরই মধ্যে, যেন তার প্রার্থনা কবুল হয়েছে_ এমন ইঙ্গিত নিয়ে একদল মুক্তিযোদ্ধা আশ্রয় নেয় গির্জায়। ওরা তাকে স্বপ্ন দেখিয়ে পাকিস্তানী ঘাঁটি উড়িয়ে দেওয়ার জন্য চলে যায় ঠিকই, ফিরে আসার সময় ওদের পেছন থেকে ধাওয়া করে শত্রুসৈন্যরা। গির্জার পাশে যিশুর মতো ক্রুশবিদ্ধ করা মুক্তিযোদ্ধাদের আর্তচিৎকারে ঘরে লুকিয়ে থাকতে পারেন না রেসমন্ড, বেরিয়ে আসেন। মুক্তযোদ্ধাদের সম্পর্কে হানাদাররা জানতে চাইলে রেসমন্ড তিনবার না চেনার কথা বলেন। তার মনে পড়ে যায় ফাদারের মুখে শোনা বাইবেলের পাঠ_ মোরগ ডেকে ওঠার আগে শিষ্য পিটার তিনবার অস্বীকার করবে যিশুকে। তবে কি এই ক্রুশবিদ্ধ মুক্তিযোদ্ধারাও একেকজন যিশু?
মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করা হলেও রেসমন্ড ভেঙে পড়েন না। তার ভেতর জেগে ওঠে প্রাণশক্তি_ মহাগ্রন্থ বাইবেল মতে, ক্রুশবিদ্ধ যিশুর পুনরুত্থান অনিবার্য। এ বিশ্বাসকে দৃঢ় করে আরো একদল মুক্তিযোদ্ধা তার হেফাজতে সেল্টার নিতে আসে। ফলে, কেবল একাত্তরে নয়, 'একাত্তরের যিশু' দেশমাতৃকার দুর্যোগে দেশপ্রেমীদের পুনরুত্থানের বার্তা ছড়িয়ে দেয়।
কারিগর :
চিত্রনাট্য ও পরিচালনা : নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু; গল্প : শাহরিয়ার কবির; অভিনয় : হুমায়ুন ফরিদী, পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, জহির উদ্দিন পিয়ার প্রমুখ।
[রুদ্র আরিফ : খিলক্ষেত, ঢাকা : ডিসেম্বর 2006]
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



