somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সোয়াইন ফ্লু ও আতংক, প্রয়োজন সচেতনতা

২৭ শে এপ্রিল, ২০০৯ দুপুর ১২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গতকাল খবরে দেখলাম সোয়াইন ফ্লু নামক একটি ভাইরাসের ত্রাসে পুরো বিশ্ব কেঁপে উঠেছে। দেশে দেশে আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর গুলোতে নেয়া হয়েছে স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ বিভিন্ন সতর্কতামূলক ব্যবস্হা। এই মূহুর্তে আমাদের বিমান বন্দরে কি অবস্হা তা অবশ্য আমার জানা নেই। তবে ধারণা করে বলতে পারি যে কোন ব্যবস্হা হয়ত নেয়া হয়নি। আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন। কর্তৃপক্ষের পিন্ডি চটকানো আমার উদ্দেশ্য নয় বরং আমি চাই আপনাদের কে একটু সচেতন করতে এবং রোগটি সম্পর্কে জানাতে।

দি ইউ এস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশান (সি.ডি.সি) এর মতে, সোয়াইন ভাইরাস শুকরের মধ্যে শ্বাস প্রশ্বাসের সংক্রমণ সৃষ্টিকারী একধরণের টাইপ-এ ভাইরাস যা কিনা মানুষের মধ্যেও সংক্রমিত হতে পারে। সাধারণতঃ যারা শুকরের খামারে কাজ করেন বা ঐ ভাইরাস সংক্রমিত পরিবেশে কাজ বা বাস করেন তাদের মধ্যে এই সংক্রমণ উচ্চহারে ঘটতে পারে। আতংকিত হবার মত ব্যাপার হল মানুষ হতে মানুষেও এই সংক্রমণ ছড়াতে পারে এবং তা হতে পারে সাধারণ সর্দি-কাশি, জ্বরের মাধ্যমেই। ক্ষেত্রভেদে এই সংক্রমণ মানুষের মধ্যে সাধারণ হতে অতিব মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। ২০০৫ থেকে জানুয়ারি ২০০৯ পর্যন্ত আমেরিকাতে এই রকম ১২ টি ঘটনা প্রত্যক্ষ করা গেছে। তাছাড়া ১৯৮৮ সনের সেপ্টেম্বরে ৩২ বৎসর বয়স্ক একজন গর্ভবতী মহিলা সোয়াইন ভাইরাস কর্তৃক সৃষ্ট নিউমোনিয়া নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন এবং ৮ দিন পরে মারা যান। ১৯৭৬ সনে নিউজার্সিতে এক মারাত্মক সোয়াইন ফ্লু সংক্রমণে ২০০ জনের মত লোক আক্রান্ত হয়েছিলো এবং তাদের মধ্যে একজন মাত্র মারা গিয়েছিলো। কিন্তু এবারের আক্রমণে শুধু ম্যাক্সিকোতেই মারা গেছেন ৮১ জন। বিশ্ব স্বাস্হ্য সংস্হা (ডব্লিওএইচও) হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, এই ভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই সংস্হাটি এই ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বিভিন্ন দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। কয়েকটি দেশে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লেও ম্যাক্সিকো ছাড়া অন্য কোন দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। ম্যাক্সিকোর পরেই সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে কমপক্ষে ১১ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাছাড়া নিউজিল্যান্ডে ১০ জন, ফ্রান্সে ৪ জন ও যুক্তরাজ্যে ২ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এই ফ্লুটি আক্রান্ত শুকর ও আক্রন্ত পরিবেশ থেকে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাছাড়া মানুষ থেকে মানুষের ছড়ানোর ক্ষমতাও এর রয়েছে। সাধারণ সর্দি কাশির মতই এটা আক্রান্ত মানুষের হাঁচি, কাশি, কফ ইত্যদির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিভিন্ন দেশের ডাক্তারগণ প্রতিরোধক হিসেবে এনটি ভাইরাল ঔষধ ব্যবহার করতে বলেছেন যা এই ভাইরাস কে দুর্বল করে দেবে এবং এর বিস্তার বাধাগ্রস্ত করবে। এ পর্যন্ত এই ভাইরাসের কোন ভ্যাক্সিন আবিষ্কৃত হয়নি। তাই প্রতিরোধই আপাততঃ একমাত্র করনীয়।

এই সংক্রমণ ছোঁয়াচে এবং সাধারণতঃ আক্রমণ থেকে সুস্হ হওয়ার পর ৭দিন পর্যন্ত সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজন রয়েছে। শিশুদের ক্ষেত্রে আরো বেশি দিন সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। নিম্নে কিছূ উপায় বলা হলো যা এই ভাইরাসের বিস্তার কে প্রতিহত করতে সাহায্য করতে পারেঃ

১. হাঁচি-কাশির সময় নাক ও মুখ টিসু বা রুমাল দিয়ে ঢেকে রাখুন।
২. ব্যবহারের পর টিসু ডাস্টবিনে ফেলে দিন কিংবা রুমাল ভালোভাবে সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
৩. আপনার হাত সাবান কিংবা যে কোন জীবানু নাশক দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
৪. আক্রান্ত ব্যাক্তির সাথে মেলামেশা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।
৫. নিজের নাক, মুখ ও চোখে হাত দিবেন না, কেন না এভাবে আপনি জীবাণু সংক্রমিত হতে পারেন।

আক্রমণের গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গঃ

শিশুঃ
১. দ্রুত নিশ্বাস ফেলা কিংবা শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা, ২. দেহের রং নীল হয়ে যাওয়া, ৩. পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি কিংবা অন্য কোন তরল পানে অনীহা
৪. দুর্বলতা ও সাড়া না দেওয়া, ৫. গায়ে রেশ সহ জ্বর এবং সর্দি-কাশির মত উপসর্গ যার একটু উন্নতি হয় এবং পরবর্তীতে আরো অধিক কফ ও জ্বরসহ ফিরে আসে।

পূর্ণবয়স্কঃ
১. শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা, ২. বুকে ও পেটে ব্যাথা, ৩. মষ্তিস্কে শূণ্যতা অনুভর করা ও দ্বিধাগ্রস্ততা, ৪. দীর্ঘমেয়াদী প্রচন্ড বমি

উপরোক্ত লক্ষ্যণগুলো কারো মধ্যে দেখা দিলে আপনার নিকটস্থ স্বাস্হ্য কেন্দ্রে যোগাযোগ করুন এবং আপনার স্বাস্হ্য পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করুন।

তবে আশার কথা হল খাবারের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়ায় না। তাই ভালোভাবে সেদ্ধ করা খাবার গ্রহণ করুন। ভালো থাকুন, সুস্হ থাকুন।

সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০০৯ দুপুর ১২:৩৬
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×