পত্রিকায় দেশের খবর পড়া বাদ দিয়েছি সেই ছোটবেলায়।
টেলিভিশন থাকে মা-বাবা, ছোট ভাই-বোনের দখলে।
গত দুমাস প্রায় নেট বন্ধ।
পৃথিবী থেকে অনিচ্ছাকৃত সেচ্ছা নির্বাসন।
সেদিন // ৩০ জুন // ডেইলি স্টার অফিসে যাবার জন্য ফার্মগেটে আসি, সেখানে আমার হাতে কিছু ছোট ও বড় লিফলেট ধরিয়ে দেয় একটা ছেলে। আমি সব সময়ই কোন লিফলেট পেলে পকেটে রেখে দেই। তখনও তাই করলাম। সামনে যেতেই দেখি আরও কিছু ছেলে মেয়ে একটু পর পর লিফলেট দিচ্ছে , আমাকে যত জনই দিতে আসল বললাম পেয়েছি অন্য জনকে দিন। ভাবলাম কোন দলীয় কার্যক্রম হবে, হয়তবা বিনপি। পাশেই মাইক্রোবাসে মাইকিং চলছে, খেয়াল করি নাই নেতা-নেত্রির ডায়লগবাজি ভেবে। তবু একটু শুনলাম, তেল-গ্যাস-কয়লা খনিজ সম্পদ নিয়ে জাতিকে সোচ্চার করছে। মনে মনে বল্লাম মাইকের ভলিউম কমা বেটা সরকারি দল শুনলে পেদাবে।
আমার কাজ শেষ করে ফিরে আসলাম বাসায়। সারাদিনের এটা ওটা কাজ, পড়াশোনা, খাওয়া, ঘুম করে কাটল।
// ২ জুলাই // বিকেলের দিকে মামার দোকানে বসে আছি অনেক দিন পর, সিডি নিতে আসছি। সেই সাথে দোকান দেখাশোনা করে মামাকে তেল দেয়া। বসে আছি করার কিছুই নাই, কাস্টমার নাই। হঠাত মনে পরল পকেটের লিফলেটের কথা, বের করে পরতে থাকলাম।
বঙ্গোপসাগরের গ্যস চুক্তি : View this link
দুর্ঘটনার রাজা কনোকোফিলিপস ও বঙ্গোপসাগরের আসন্ন বিপদ: View this link
" প্রায় এমনটাই লেখা ছিল লিফলেটে "
যতই পড়ছি কান গরম হচ্ছে, ধীরে ধীরে মাথার ভেতর আগ্নেওগিরি জমছে। ইচ্ছে করছে তার গরম লাভায় চুবিয়ে শুদ্ধ করি সরকারকে। পাশেই ছোট মামা ছিল, তিনি সত্য ও ইসলামী আইন মেনে চলেন ডিজিটাল ধার্মিক। তাকে পড়তে দিলাম, তিনি পড়েই দিলেন ঝাড়ি, " এই বাম পন্থি গুলা এত দিন পর এখন হরতাল দেয়। এত ধর পাকড় হল কত মাথা ফাটল তার পর এখন দিছে হরতাল।" আমি তেমন কিছু বুঝলাম না ধরে নিলাম সে তো সব সময় আপডেট থাকে সব কিছু নিয়ে তাই হয়ত আমি কিছু বুঝলাম না। আরও বললেন, " আরে তোরা বিএনপি সহ বিরোধী দলীয় যারা আছে সবাই এক সাথ হ, সবাই নিজ নিজ জায়গায় আলাদা আলাদা করে আন্দোলন করলে কিছুই হবে না।" এরপর ক্লায়েন্ট আসল বিজি হয়ে গেলাম। কিন্তু মনে মনে রাখলাম যে কালকে বের হব, যাব হরতালে দেখতে কি হচ্ছে চারপাশে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে রেডি হতেই আম্মুর কড়া নিষেধ বের হওয়া যাবে না।
আমি জোরা জুরি করতেই শুরু হল লেকচার প্রথমেই লিমনের উদাহরন দিয়ে শুরু করে ফ্যামিলির ইজ্জত, পুলিশে ধরলে কেউ আগাই আসবে না, আত্তীয় স্বজন উেল্টা গালা-গাল করবে ইত্যাদি বলে বোনের বিয়ে হবে কি করেতে এসে থামল। আম্মুকে বোঝানো সম্ভব না। এত কথার মধ্যে আসল কথা একটাই তার ছেলের কোন ক্ষতি যদি হয়। হঠাত মনে হল ভাগ্গিস এখন মুক্তি যুদ্ধ না, নইলে আম্মুর এত কথা শুনতাম না লুকিয়ে বেরিয়ে যেতাম যুদ্ধে। যুদ্ধ ভাবতেই মনটা কেমন অস্থির হয়ে ওঠে।
বসে আছি, ভাবছি, আচ্ছা এটাও তো যুদ্ধ বর্হিশক্তি নয় নিজ দেশের ভুল সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। তবে কি এটা গৃহ যুদ্ধ। না আমার দেশ, বাংলাদেশ তো গনপ্রজাতন্ত্রীদেশ। এ দেশে কোন রাজা নেই প্রজারাই এ দেশের সকল সিদ্ধান্ত নেয়। এটুকু ভেবে আরও বেশি চিন্তায় পরে গেলাম।
না, এ দেশের প্রজারা তো তাদের রাজা নির্বাচিত করে এবং সেই রাজাকেই অনুসরন করে। তাহলে এটা কেমন গনপ্রজাতন্ত্রী দেশ হল।
গনপ্রজাতন্ত্রী দেশ হত তখনই যখন সরকারী/ রাজা-রানীদের সিংহাসনী হুকমতের বদলে প্রতিটি বিল পাসের ক্ষেত্রে জনগনের লিখিত স্বাক্ষরনামা দেয়ার নিয়ম থাকত। কিন্তু এমনটা হয়নি, হবেও না। কারন যারা করতে পারেন তারা এখনও ঘুমুচ্ছেন, আগুন লাগলেও বলবে পিপু আর যারা স্বার্থান্বেষী তারা হতে দিবেননা এবং বলবেন ফিসু।
এত শত বুঝিনা, বাংলাদেশের মানুষ যদি ওর্য়াল্ড কাপের ক্রিকেট ব্যট আর ফুটবলে সাইন করতে পারে তবে কেন সরকারি প্রতিটি বিলে প্রতিটি নাগরিকের স্বাক্ষর থাকবে না?
হু মানছি এটা হয়ত অসম্ভব কিন্তু সংবিধান বদল ও বিদেশের সাথে চুক্তির মত বড় বড় স্থানে দেশের প্রতিটি নাগরিকের মতামত স্বাক্ষরিত ভাবে থাকা উচিত। কেননা অমাদের সরকারের করা চুক্তির লাভ-লোকসান আমাদের কেই ভোগ করতে হয় এবং হবে।
যারা হরতাল করেন সবার মুখেই শুনি , এমনকি দু একজন দরদী পুলিশের মুখেও শুনেছি তারা বলে " কি করব উপরের নির্দেশ তাই করি " । এই উপরটা কারা দেশটাকি কারো রাজত্ব নাকি?
বর্তমান আন্দোলন দিয়ে জানিনা কতটুকু কি হবে হয়ত সরকারি দলকে নামিয়ে বিপক্ষ দল আসবে কিন্তু রাজার শাসন আর রাজত্ববাদ কি বন্ধ হবে?
সরকার বদল মানে রাজা বদল নয় আমাদের জনপ্রতিনিধি বদল এমনটা হওয়া উচিত।
এই আন্দোলনের জোয়ারেই যেন অবসান ঘটে বাংলার দাসত্বের, সরকারী রাজত্ববাদের।
আম্মুর নিষেধ সরকারী বিরূদ্ধে নেটেও যেনো না লিখি, কিন্তু কারো বিরুদ্ধে না, যা দেখছি শুনছি অনুভব করছি বুঝতে পারছি তাই বলছি। বাকস্বাধীনতাটুকুও কেড়ে নিতে চায় আর কত??
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০১১ সকাল ৯:৪৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





