somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঝিনুকমালার দুঃখ

২৯ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

For I am the first and the last
I am the venerated and the despised
I am the prostitute and the saint
I am the wife and the virgin
I am the woman who gives birth and
she
who never procreated I am the
consolation for the pain of birth
- Paulo Coelho

# বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিরে সটান শুয়ে পড়া শাহেদের অভ্যাস হয়ে গেছে। ঘুমায় না, কিন্তু কিছু সময় ঘুমানোর মতই ভান করে সে। কার সাথে কে জানে! আজকে রিক্সা থেকে নেমেই বুঝল অভ্যাস আজ খাটবে না, বাইরে একটা চেনা গাড়ি দাঁড়িয়ে। মেয়েটা ওর মেস চিনল কি করে? আম্মু ঠিকানা দিল নাকি?
সোয়েটারটা কাঁধে ফেলে নিজের রুমে এগুল সে। যা ভেবেছিল, সুন্দরী মেয়ের সাথে গল্প করার সুযোগ নষ্ট করে নি রাগিবরা। বেশ আসর জমে গেছে। ‘কোথায় থাকেন? কিসে পড়েন?’ টাইপের প্রশ্ন করা লাগে নি সম্ভবত, মিশুক মেয়ে।
শাহেদকে দেখে লাবিব বলল, “দেরী করলি যে!”
ও ঘুরে তাকাল, শাহেদকে দেখে হেসে আবার গম্ভীর হয়ে গিয়ে বলল, “চলো, ব্যাগ গুছাও।”
“মানে!”
“বিয়ে! বিয়ে!”
“কার?”
লাবিব ব্যাপার পরিষ্কার করল, “ওর রুনি আপার বিয়ে, তোকে তুলে নিতে আসছে!”
শাহেদ ওর দিকে তাকাল, ও দাঁত বের করে কার্ড এগিয়ে দিল। ইশ! হাসলে বেশ দেখায় মেয়েটাকে! রুনি ওর বড় বোন। শাহেদ হেসে বলল, “আমি তো ভাবলাম তোমারই বোধহয়!”
ও মুখ ভেংচে দিল। একদম বাচ্চাদের মত।
শাহেদ বলল, “চ্যাটে বললা না তো কাল?”
“হুম, ভালো করছি!”

# “আমার আর একটা নাম আছে, এইটা কি জানো?”
শাহেদ হেসে বলল, “বকবক রাণী, তাই না?”
ও মলিন মুখে, “আমি তোমাকে খুব ডিস্টার্ব করি, না?”
কথাটা শুনে মায়া লাগার কথা, শাহেদের রাগ লাগছে। ও ওর পাশে বসা পুতুলের মত মেয়েটার দিকে না তাকিয়ে চারপাশে মনযোগ দিল। বড়লোকের বিয়েবাড়ি। ওরা বসেছে বাইরের ঘরের সোফায়, চারিধারে লোক। ওই তো ওর আম্মা রুনি আপার আম্মার সাথে কথা বলছে। হইচই এর মধ্যে বাচ্চাদের চিৎকার আলাদা করে শোনা যাচ্ছে।
ও উঠে যাচ্ছে। শাহেদ ভাবল নাটকীয় কায়দায় হাত ধরে বসাবে কিনা। “নাঃ, ভালো দেখাবে না” ভেবেই অবাক হয়ে আবিষ্কার করল হাত ধরে ফেলেছে!
অনেকেই দেখছে, রসাল গসিপ তৈরি হবে। ও সব ভুলে গেল, হাত ধরে টান দিল।
গল্পের প্রয়োজনে ছেলেরা একটু ভোলাভালা হতেই পারে, কিন্তু মেয়েদের তো সেরকম হলে চলে না। মেয়েটা সেরকমই ছিল, কিংবা হবার ভান করল। চুপ করে বসে পড়ল। আর কোন কথা বলার দরকার হল না।

# আজ রুনির বিয়ে!
পরীর মতন সেজেছে ওর ছোট বোন। শাহেদ বলতে চাইল, কখনো কাউকে বলে নি, কিভাবে বলবে বুঝতে পারল না। বলা আর হল না।
“এই, আমাকে ভাল্লাগছে?”
মেয়েটার কি কোন কাণ্ডজ্ঞান নাই? একগাদা বান্ধবী নিয়ে আসছে কেমন লাগছে জিগ্যেস করতে! লজ্জা লাগে না?
কোনরকমে বলল, “ভালো”
কলরব করতে করতে ওরা চলে গেল। হঠাত সে খেয়াল করল, তার কোন বন্ধু নাই। একদল লোক নিশ্চয়ই একটা বিয়েবাড়িতে থাকবে যারা একদম একা, অথচ একা হবার কিছু নাই, সবাই চেনা লোক। শাহেদ তাদের দলে।
ওর মনে হচ্ছিল ও কোন ভুল করেছে, আর সবাই ওকে দেখছে। এখনই সবাই একসাথে হেসে উঠবে। কোনার দিকে একটা চেয়ার টেনে মাথা নিচু করে বসে পড়ল। একটা বই পাওয়া গেলে খুব ভালো হত। ওকে বলবে নাকি? সময় কাটে না কেন?
শাহেদ উঠল, কাউকে খোঁজার জন্য হাঁটলে অস্বস্তি লাগে না। কিন্তু সমস্যা হল, ও কোথায়? যায়গায় যায়গায় টিনেজ মেয়েদের গ্রুপ, অবশ্যই সেরা গ্রুপটা ওর। লজ্জা পেল, কি আবোল তাবোল ভাবছে সে!
“কোথায় ছিলে তুমি?”
শাহেদ অসহায়ের মত তাকাল, সেরা গ্রুপটা ওর সামনে।
“এইতো...”
“আমার একটা নাম আছে বলেছিলাম না? এরা খুব পছন্দ করেছে!”
“কি নাম?”
ওর বন্ধুরা বিশ্রী করে হাসতে হাসতে বলল,”ঝিনুকমালা!”
ও লজ্জার হাসি হাসল।
চারিদিকে চিৎকার, চেঁচামেচি, ঝিনুকমালা আর সামনে দাঁড়ানো পরী............
*************
কয়েক মাস আগে।
অনেক হই-হুল্লোড়ের মধ্যেও যদি কোন ফিসফিসানির গুঞ্জন ওঠে, কোনও না কোনোভাবে ঠিক কানে পৌঁছবে। সেই কান, ধুরন্ধর বাচ্চাদেরও কান। অবশ্য যদি না কারনটা নিয়ে মাথার মাথাব্যথা থাকে আর কি!
“আইজ আইবো রে!”
“তর আগে জানি”
বাচ্চাগুলো একটু বেশি উত্তেজিত। যেটা নিয়ে তারা কথা বলছে বড়রা শুনতে পেলে মার খাবে, অথচ ঘটনা সবার সামনেই ঘটবে কিংবা ঘটবে না।
শাহেদের ভিড় ভালো লাগে না, সে এখন ভিড়ের মধ্যে। ভালই লাগছে। পাশে তার বন্ধু অরুণ। অরুনের পাশে অরুণের বন্ধু, সে তাদের দিকে ফিরে আছে। উত্তেজিত। আশেপাশে সবাই উত্তেজিত।
গ্রামের যাত্রা- উত্তেজিত হবারই কথা। তবে শাহেদ অনুমান করতে পারে এই উত্তেজনার উতপত্তি অন্য সাধারন নয়। কারণটা সে বুঝতে পারছে না। অরুণকে জিগ্যেস করেছিল, লাভ হয় নি। দেঁতো হাসি হেসেছে।
“ভালো ছেলে” তকমাটা শাহেদের চিরকালই। যত না ভালো ছাত্র বলে স্যারেরা আদর করতেন তার চেয়ে বেশি করতেন ভালো ছেলে বলে। কখনো গালি দেয়নি কাউকে। এরকম ছেলেদের মেয়েরা পছন্দ করে না, সেজন্যেই সম্ভবত, সে ধরনের কোন বিষয় তার ঘটে নি। শাহেদের সাথে বন্ধুত্ব ছিল ক্লাসের সবচাইতে খারাপ ছেলেদের সাথে। ভালো ছাত্রদের সাথে তার বনত না। খারাপেরা তাকে বেশ সমীহ করত। ওর সামনে গালাগালি কমই করত, কখনো সিগারেট বাড়িয়ে দেয় নি, নিজেরা খেয়ে ধোয়াটা যত্ন করে অন্যদিকে ছাড়ত। শাহেদের মত ছেলে তাদের বন্ধু, সেই আনন্দেই তারা মোহিত! শাহেদের খুব ভাল লাগত ওদের আচরন।
অরুণ সেরকমই একটা বন্ধু। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ছুটিতে শাহেদ অরুণের গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে এসেছে। অরুণ বড়ই উত্তেজিত। এখনকার ব্যাপারটা সে ভালো ছেলেটাকে বলতে পারছে না, লজ্জা পাচ্ছে।
অরুণের বন্ধু চোখ টিপল। যাত্রা হবে, এলাকার ছেলেপেলে মিলে যাত্রা করবে। এত উত্তেজনার কি আছে? নিষিদ্ধ উত্তেজনা?
অনুষ্ঠান শুরু না হতেই জমে গেছে। গ্রামের বাচ্চাকাচ্চারা যে যেমন পারছে ধুমধাম নেচে দিচ্ছে। লাউডস্পীকারে হিন্দি গান, মঞ্চ ঘিরে মানুষ। বাড়ছে। হই-হট্টোগোল। মঞ্চের বাইরেও কেউ কেউ নাচছে, যাদের মঞ্চে ওঠার সাহস নেই।
এরকম সময়ে একটা ভটভটি গাড়ির আওয়াজ। উপস্থিত জনতা হইহই করে উঠল। গাড়ি তেরপল দিয়ে ঢাকা, ভেতরে কেউ বসে আছে বোঝা যায়। গাড়িটা এসে একেবারে পায়ের কাছে থামল ওর, শাহেদ লাফ দিয়ে সরতে গিয়ে খেয়াল করল সে যায়গাটা নাই, পুরা মাঠের লোক গাড়িটা ঘিরে দাঁড়িয়ে গেছে। মঞ্চের কিছু ছেলে এসে ওকে বাচালো, রাস্তা খালি করল বা করার চেষ্টা করল। শাহেদের মোটা ফ্রেমের চশমার জন্যই হোক বা অসহায় চাহনির জন্যই হোক, ওকে কিছু না বলে অন্যদের ঠেলে রাস্তা বানিয়ে নিল।
তিনজন নামল গাড়ি থেকে। দুটো মেয়ে, আরেকটা ছেলে। ওদের তাড়াতাড়ি করে স্টেজের পেছনে নিয়ে যাওয়া হল।

# মঞ্চ থেকে মাইকে ঘোষণা করা হল নাটক করার জন্য দুজন মহিলা শিল্পী আনা হয়েছে। নামার সময় দেখেছে সে। চড়া মেকাপে ঢাকা একজন কিশোরী, ঝিনুকমালা। অন্যজন আরেকটু বয়স্ক, দেখতেও অত সুন্দর না।
চারপাশ থেকে শুধুই শীষের আওয়াজ আসে, হঠাত করে সবার ফুর্তি বেড়ে গেছে। কারণটা শাহেদ বুঝতে পারে, ঝিনুকমালা। শাহেদের কেমন যেন ঘেন্না লাগল।
নাটক শুরু হল। অখাদ্য। এমনিতে দেখার কোনো কারণ নেই, তবু লোকজন বসে রইল। নাহ! তাদের পছন্দ হল না, দলে দলে লোক দাঁড়িয়ে গেল। চলে যাবে। প্রচ্ছন্ন হুমকি। তখন নাটক স্থগিত করে মঞ্চে আনা হল ঝিনুকমালাকে। সে নাচবে। লোকজন হাসিমুখে বসে পড়ল।
ধুমধাড়াক্কা এক হিন্দি গানে নাচছে সে, সবাই পাগলের মত লাফাচ্ছে, তাফাচ্ছে- যা হয়...আশ্চর্য, সামনের দিকে বসা চশমা পরা ছেলেটা,নামার সময় যাকে খেয়াল করেছে সে, মাথা নিচু করে বসে আছে। তাল একটু ভুল হয়ে গেল ওর, কেউ বুঝলো না। চশমা পরা ছেলেটাও না। কেউ বোঝে না, কখনোই।
আবার নাটক চলতে লাগল। শাহেদ লজ্জা পেয়ে খেয়াল করল সে নাটকের থেকে ঝিনুকমালার দিকে বেশি খেয়াল করছে। মেয়েটা কি সত্যি মাঝে মাঝে ওর দিকে তাকাচ্ছে? একটা দৃশ্যে অকে হাত ধরে টানার কথা নায়কের। শাহেদ স্পষ্ট দেখল ছেলেটা জোরে টান দিয়ে ঝিনুককে নিজের দিকে নিয়ে টুক করে চুমু খেয়ে নিল। আর ঝিনুকমালা এমন ভাব করল যেন কিছুই হয়নি। অভ্যস্ত। শাহেদের গায়ে কাঁটা দিল।
কিছুক্ষণ পরপরই ওকে নাচতে আসতে হচ্ছে, দর্শক বড় অধৈর্য। সবার উপর শাহেদের রাগ হচ্ছিল, ঝিনুকমালার উপরেও! নাচের সময়টা সে মাথা নিচু করে থাকে, লজ্জায়।
নাটকের এক পর্যায়ে কি কারণে যেন ঝিনুকমালার হাতে বিস্কুটের প্যাকেট আসল। সীন শেষে সবাই চিৎকার করে বিস্কুট দেয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছিল, বিভ্রান্ত ঝিনুকমালা কি ভেবে শাহেদদের দিকে প্যাকেটটা ছুঁড়ে দিল। শাহেদের মনে হল ওর জন্যই যেন এদিকে ছুড়েছে, এক অপার্থিব আনন্দে বুকটা নেচে গেল। বিস্কুট ও পেল না, ও দেখল ঝিনুকমালা ওর দিকে তাকিয়ে হাসল। রুক্ষ মুখে মিষ্টি হাসি! কি অদ্ভুত!
ঠিক তখন, মুহূর্তের মধ্যে কিভাবে যেন শাহেদ অনেক কিছু বুঝতে শিখে গেল। নিষিদ্ধ উত্তেজনা, মানুষের চাপা ফিসফাস, ঝিনুকমালাদের কথা, আয়োজকদের চকচকে চোখ.........শাহেদের কান্না পেল।
সে সম্ভবত মুহূর্তের জন্য হলেও ঝিনুকমালাকে নিজের করে পাবার কথা ভেবেছিল, তার কান্নাটা হতে পারত আশাভঙ্গের। সে কান্না আটকাল অপমানের, ঝিনুকমালার অপমানের। এতগুলো লোলুপ মানুষের কাছে ঝিনুকমালার অন্য কোন পরিচয় নেই, তারা তাকে চেনে শুধুমাত্র একজন নিশিকন্যা হিসেবেই। আর সেইসব মানুষের সামনেই মেয়েটাকে নাচতে হচ্ছে! এর থেকে বড় অপমান আর কী হতে পারে? ঠিক যেভাবে নাচলে একদলা মাংশপিন্ড থেকে মানুষগুলোর আদিম রিপু জেগে ওঠে ঠিক সেভাবেই নাচতে হচ্ছিল ঝিনুককে। শাহেদ চিৎকার করে বলতে চাইল, মেয়েটা একদলা মাংশ না। সেও হাসতে পারে! হাসতে চায়!
আচ্ছা, কেউ কখনো ঝিনুককে ভালবেসেছে? নিশ্চয় না। ইশ! কত ভালবাসা জমা হয়ে আছে মেয়েটায়, কেউ তার সন্ধান পায় না! শাহেদের আবার চোখে জল এল।
হঠাত ঝিনুকমালা খেয়াল করল সেই চশমা পরা মানুষটাকে আর দেখা যাচ্ছে না। একটু পর বুঝল চলে গেছে, চাহনিটা রেখে। ‘ধুস’ ভেবে পাশ কাটানোর চেষ্টা করল। সারা গ্রামের লোক তাকে দেখতে এসেছে, চশমাওয়ালাকে না। সে ই স্টেজ কাপাচ্ছে,চশমাওয়ালা না। কেন তাকে দাম দেবে ডিমান্ডের চূড়ায় থাকা ঝিনুকমালা?
আচ্ছা, কাঁপানোতেই কী চরম সাফল্য? সাফল্য মানে কী? বুকে ব্যথা নিয়ে চূড়ায় থাকাকে সাফল্য বলে? নাচতে নাচতে ঝিনুকমালার কথাটা বিশ্বাস হল না। নাচটা জমল না। ঝিনুকমালার মনে হল, তারচেয়ে বরং কেউ ওকে চাইত না, খালি একটা চাহনি থাকত ওর পাশে পাশে...ওটাই হয়তো সাফল্য!
লোক ভেঙ্গে গেল, আয়োজকরা সবাইকে বিদায় করল। সে রাতে খুব তাড়াতাড়ি রাত নামল ঝিনুকমালার।
চশমা পরা ছেলেটারও।

******
সম্বিত ফিরে পেয়ে শাহেদ দেখে একজোড়া বড় বড় মায়াবি চোখ তার দিকে ঝুঁকে। চোখ ভরতি জল, এ চোখ কিছু দেখে না, কিছু বুঝতে চায় না। নিঃসন্দেহে জগতের সুন্দরতম মুহূর্ত দেখছে সে। কেমন একটা ঘোর ঘোর ভাব।
সে আস্তে আস্তে বলল, “ঝিনুকমালাকে পাওয়া যাবে না?”
চোখটা আর পারল না, টপটপ করে জল পড়তে লাগল। খুব কম মানুষই কষ্টে জমা জলকে সুখের ধাক্কা দিয়ে বের করতে পারে। একফোটা জল শাহেদের গালে পড়ল, আখ্যানের প্রয়োজন, গল্পের তরে।
“আমিই ঝিনুকমালা!”
শাহেদ সোফায় উঠে বসে। ঝিনুকমালা তাকে বধ করেছে, সে জানে। কিন্ত ঝিনুকমালা কোনজন? এই মেয়েটা তো নয়, মেয়েটাকে সে না চাইতেই বধ করেছে। ঝিনুকমালারা অবধ্য, তারা ধরা দেবে না, তবু সে প্রানপাত করবে তাদের জন্য।
এ ঝিনুকমালা নয়। ঝিনুকমালার মত বড় বড় চোখ থাকলেই কি ঝিনুকমালা হয়? ঝিনুকমালার দুঃখ কোথায় তোমার?

# নকল ঝিনুকমালাকে সব বলল শাহেদ। কিছু কথা না বললে হয় না। শাহেদ সৌভাগ্যবান, বলার জন্য কেউ ছিল। ক’জনের থাকে?
শাহেদ ভেবেছিল ঝিনুক হয়ত মন খারাপ করবে, একটু হলেও। করেনি। হাসিমুখে শুনেছে। তাতে কি সে একটূ কস্ট পেল? আরে ধুর, মন খারাপ না করলেই তো ভালো. মিশুক মেয়ে, লাবিবের সাথে মাঝে মাঝে কথা বলতেই পারে, অন্যভাবে নেয়ার তো কিছু নেই। মিশুক, সুন্দরী মেয়ে। এরকম হয়। শাহেদ চোখ বন্ধ করে।
ঝিনুক বলেছে, ঝিনুকমালাকে খুঁজতে।
“কিভাবে?”
“এইসব মেয়েরা খুব দুখী, পালাতে পারে না। সহজেই বের করা যায়। বন্ধুকে বল।”
অরুনকে দিয়ে আয়োজক, তাদের মাধ্যমে ঝিনুকমালা। পারবে না সে?

পারা গেল। ওরা পালাবে কোথায়? সহজেই যোগাযোগ করা গেল, অরুন শুধু ‘না না’ বলছিল, চরম ভদ্র একটা ছেলের এই অধঃপতন সে মানতে পারছিল না। ভদ্র ছেলেটার যে উপায় ছিল না, অরুন তার কী বুঝবে? এই অভদ্রতা না করলে এতদিনের ভদ্রতার যে মোটেও দাম থাকে না আর!

# ঝিনুকমালা শুধু শুনল তার নাচে পাগল হয়ে কোন ভদ্রলোকের ছেলে তার কাছে আসছে। 'দেখা করতে'!
বুকটা ধ্বক করে উঠল ওর।
"কোন জায়গার নাচ?"
"মনে নাই ঠিক!"
"কবেকার নাচ? "
"মাসতিনেক আগের।"
আরো জোরে কেঁপে ওঠে বুক।
"দেবীগঞ্জ কী?"
"কি জানি! তুই দেবীগঞ্জ চিনলি কেমনে?"
ঝিনুকমালা জবাব দিল না। কি এক কারনে যেন দেবীগঞ্জ শো এর পর সে ওই এলাকার কিছু খোঁজখবর করেছিল। ইদানিং আর করত না।
বুড়ি একা একাই বলতে লাগল,”কি বদ্দরলোক! কয়, ঝিনুকমালাকে কি একটু পাওয়া যাবে? যখন অর সময় হবে! আরে ঝিনুকের কাজই ত এইডা, হা কইরা চায়া রইছে আর কয় সময় হইব না!”
ইশ! ঝিনুক যদি একবার জানত তার নাচে নয়, ঝিনুকমালাতে পাগল হয়ে ভদ্রঘরের ছেলে অভদ্র হতে চায়!

# লাবিবের বোধহয় হিল্লে হয়ে গেল!
ভাবতে ভাবতে ব্যাগ গোছাচ্ছিল শাহেদ। ওর রুমমেট এখন ওর পাশে পাল্লা দিয়ে ব্যাগ গুছাচ্ছে, দুজনের লক্ষ্যই ঝিনুকমালা। লক্ষ্য এক, রাস্তা আলাদা। বড় বিষন্ন লাগে ওর, চুপ করে শুয়ে পড়ে। লাবিব দেখেও দেখে না, জুতা পরে বেরিয়ে যায়।
“হ্যালো!”
“দেখা করবা ঝিনুক?”
প্লিজ বলতে চেয়েছিল শাহেদ, কিন্তু মনে হল সেটা বলার অধিকারটা পাওয়া গেল না।
“কী হল? তুমি না আজকে যাবা?”
“হ্যাঁ। তোমাকে দেখে যাই!”
“আসছি!”
শাহেদ ঝিনুকমালার মুখটা ভাবতে চেষ্টা করে। সেই চড়া মেকআপ, সেই হাসি, সেই রুক্ষতা...মৃত্যুর হাজার বছর পরেও ভুলতে পারি না আমি! বড় ক্লান্তি লাগে।
ঝিনুকমালা এসেছিল তার মেসে। তখন বাজছিল সুমনের,
“গানওয়ালা, আর একটা গান শোনাও
আমার কোথাও যাবার নেই, কিচ্ছু করার নেই”
“তুমি আমার ঝিনুকমালা হবে?”
বড় বড় দুই চোখ মেলে তাকাল মেয়েটা। ঝিনুকমালা।
****
ঝিনুকমালা অপেক্ষা করছিল। সে নিশ্চিত সেই ছেলেটাই বোধহয়।
বেলা বয়ে গেল। ঝিনুকমালা সেজেছিল। আস্তে আস্তে সাজ খুলে ফেলল। দলের কেউ কেউ একটু হাসাহাসি করল। সবকিছুই আগের মত রইল, এ যুগে রূপকথা নেই, রূপকথার রাজপুত্ররাও। কিচ্ছু বদলায় না। মাঝে মাঝে শুধু একজোড়া চোখ দেখে সে, চশমায় ঢাকা বড় সরল চোখ। কাস্টোমার এলে মাঝে মাঝে সে চশমা পরা চোখটার কাছে বলে এখান থেকে নিয়ে যেতে।

“চলে গেলে মনে হয় তুমি এসেছিলে।
চলে গেলে মনে হয় তুনি সমস্ত ভুবনে আছো।“
-রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:৫৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×