somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রুমান্টিক প্রেম কাহিনী 'এরই নাম ভালোবাসা' না পড়লে প্রেমের স্বাদ মিস করবেন.

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সুদর্শনা এক যুবতী। নাম সাওদা। পিত্রালয় ছেড়ে স্বামীর সংসারে এসেছে প্রায় দু’তিন বছর আগে। এর সমগ্র হৃদয় স্বামীর ভালোবাসায় কানায় কানায় ভরা। সাওদা তার স্বামীকে খুব ভালোবাসে। এতই ভালোবাসে যে, একা একা ভালো কিছু খেতে গিয়ে স্বামীর কথা স্মরণ হলে, তখন ঐ খাবার তার মুখে উঠে না। মনে মনে ভাবে, যা আমার প্রাণের স্বামী খাননি, তা আমি কিভাবে খাব? যদি খেতে হয় তাহলে তাকে নিয়েই খাব। মোটকথা একটি মেয়ে তার স্বামীকে যতটুকু ভালবাসতে পারে, যতটুকু ভক্তি-শ্রদ্ধা করতে পারে, সাওদা তার স্বামীকে এর চেয়ে শতগুণ বেশি ভালোবাসত, শ্রদ্ধা করত।

সাওদার স্বামীর নাম মুস্তাফিজ। শহরের এক অফিসে চাকুরী করেন। পনের দিন পর পর বাড়িতে আসেন। স্ত্রী সাওদা ও বৃদ্ধ মা’র সাথে দেখা করার জন্যই গ্রামে আসেন। দু’দিন থাকেন। তারপর আবার চলে যান স্বীয় কর্মস্থলে।

আজ সাওদার স্বামী শহর থেকে আসবেন। দীর্ঘ পনের দিন পর প্রাণপ্রিয় স্বামীর সুন্দর চেহারাখানা দেখবে সে। তাই ভোর থেকেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে আছে তার মন।

যথা সময়ে সাওদার স্বামী শহর থেকে এলেন।খানিক বিশ্রামের পর বরাবরের মতো এবাও প্রয়োজনীয় বাজার-সদাই করলেন।

দেখতে দেখতে মুস্তাফিজের ছুটি শেষ হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর বিদায় নিবেন তিনি। যাওয়ার সময় সামান্য পূর্বে পাশের বাড়ি থেকে একটি মুরগী কিনে সাওদার হাতে তুলে বললেন, সাওদা! আমি চলে যাওয়ার পর এটি জবাই করে মা’কে নিয়ে খেও। কেমন?

এ বলে সবার কাছে থেকে বিদায় নিয়ে মুস্তাফিজ তার কর্মক্ষেত্রে চলে গেলেন।

সাওদা স্বামীর এনে দেওয়া মুরগি জবাই করল। তারপর রান্না করে অর্ধেক শাশুড়িকে দিল। আর বাকী অর্ধেক অর্থাৎ নিজের ভাগটুকু পাতিলে যত্ন করে রেখে দিল।

সাওদার শাশুড়ী তার ভাগের গোশতগুলো সেদিনেই খেয়ে ফেলেন। কিন্তু সাওদা তার ভাগের গোশত গুলো এখনো খেতে পারেনি। কারণ, যখনই সে খেতে যায়, তার হৃদয়ের আয়নায় তখনই ভেসে ওঠে স্বামীর মায়াভরা প্রিয় মুখটি। ফলে আর খেতে পারে না সে। মনে মনে ভাবে, আমার স্বামী নিজে মুরগীটি কিনে এনেছেন। এখন তাকে ছাড়া কী করে এই মুরগীর গোশত খাই?

আমার স্বামী খাবে না অথচ আমি খাব; তা কখনো হতে পারে না। কিন্তু এখন কী করব আমি? আমার স্বামী তো আসবে সেই পনের দিন পর! এই রান্না করা গোশত এতদিন কি রাখা সম্ভব? তাছাড়া গ্রাম এলাকা। আশেপাশে ফোনের কোনো দোকানও নেই যে, তাকে ফোন করে আসতে বলব। আর চিঠি দিলে তো চিঠি পেয়ে আসতে আসতেও আন্তত পাঁচ-সাত দিন লেগে যাবে!

তাহলে এখন কী করা? অবশেষে সাওদা স্বামীকে ভালোবাসার পরম পরাকাষ্ঠাই প্রদর্শন করল। সিদ্ধান্ত নিল, স্বামীকে ছাড়া এই গোশত কিছুতেই সে খাবে না।

সেদিন থেকে সাওদা গোশত গুলো নিয়মিত জ্বাল দিয়ে রাখে। যেন নষ্ট না হয়। কষ্ট করে অন্যান্য তরকারী দিয়ে খাবার খায়। তবু সে গোশতের পাতিলে হাত দেয় না।

সাওদা যে এসব করছে, তার শাশুড়ীসহ প্রতিবেশীদের কেউই তা জানত না।

প্রতিদিন তার ঘরে গোশতের ঘ্রাণ আসে। কিন্তু গোশত রান্না করতে দেখা যায় না। তাই একদিন শাশুড়ী তাকে জিজ্ঞেস করলেন-বউমা! তোমার ঘর থেকে প্রতিদিন গোশতের ঘ্রাণ পাই। তুমি প্রতিদিন গোশত পাও কোত্থেকে?

সাওদা তার শাশুড়ীর কাছে সব কিছু খুলে বলে। বিস্তারিত শুনে তিনি দারুণ অবাক হন! বিস্ময় ভিরা দৃষ্টিতে সাওদার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন কিছুক্ষণ।

আর মনে মনে ভাবেন, এরকম স্বামী ভক্ত স্ত্রী কি এখনো দুনিয়াতে আছে? সত্যি, আমার ছেলের ভাগ্য খুবই ভালো। তা না হলে এমন বউ কি সহজে কারো ভাগ্যে মিলে?

তিনি সাওদাকে বললেন-বউমা! তোমার খাওয়া তুমি খেয়ে নাও। ওর জন্য তোমাকে ভাবতে হবে না। কিন্তু এর পরেও সাওদা স্বামীকে ছাড়া ঐ মুরগীর একটি টুকরো গোশতও খেতে পারেনি।

সাওদা তার শাশুড়ীকে বলল-আম্মা! যদি মনে চায় তবে আপনি খেয়ে ফেলুন। দয়া করে আমাকে খেতে বলবেন না। আপনার কথা রাখতে না পারার জন্য আমাকে ক্ষমা করবেন।

বউমার কথা শুনে শাশুড়ী আর কিছু বললেন না।

প্রতিদিন জ্বাল দিতে দিতে গোশত একদম শুকিয়ে মজাদার কাবাবের মতো হয়ে গেছে।

এক এক করে পার হয়ে গেল পনেরটি দিন। সাওদার স্বামি বাড়ি এলেন। দীর্ঘ পথ সফর করে আসার কারণে শরীরটা বেশ ক্লান্ত। তাই এসেই বিশ্রামের জন্য শুয়ে পড়লেন।

একে তো ক্লান্ত শরীর। তদুপরি গতরাতে ভালো ঘুম হয়নি। তাই বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেলেন তিনি।

এদিকে স্বামীর জন্য খাবার প্রস্তুত করে সাওদা এসে দেখল তার স্বামী গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। কিন্তু গরমের কারণে গোটা শরীর থেকে ঘাম ঝরছে। বাড়ীতে বিদ্যুৎ না থাকায় ইলিক্ট্রিক পাখারও কোনো ব্যবস্থা ছিল না। তাই সে পাশে বসে পাখা হাতে নিয়ে স্বামীকে বাতাস করল। সেই সাথে পরম মমতায় বামহাতের আঙ্গুলি দিয়ে তার মাথায় বিলি কাটতে লাগল।

ঘন্টাখানেক বিশ্রাম করার পর মুস্তাফিজ ঘুম থেকে জেগে দেখল, সাওদা এক হাতে তাকে বাতাস করছে এবং অন্য হাতে মাথায় বিলি কাটছে। তা দেখে মুস্তাফিজ খুশী হয়ে বলল, সাওদা! আসলেই তোমার স্ত্রী হয় না!

তোমাকে পেয়ে সত্যিই আমি মহা সৌভাগ্যবান!!

এ বলে মুস্তাফিজ বাথরুমে গেলেন। দেখলেন, সেখানে কিছুক্ষণ আগে আনা টিউবওয়েলের ঠান্ডা পানি রয়েছে। সেই সাথে রয়েছে বসে বসে হাত-মুখ ধোয়ার জন্য ছোত চৌকী ও ঘ্রাণ সাবানের সুনিপুণ ব্যবস্থা। তাছাড়া বাথরুমের ঝকঝকে তকতকে অবস্থা তো আছেই।

এসব সুন্দর ও সুচারু ব্যবস্থাপনা দেখে তিনি স্ত্রীর উপর আবারো খুশী হলেন। মন থেকে তাকে দোয়া দিলেন। তারপর হাত-মুখ ধুয়ে বাথরুম থেকে আসতেই সাওদা তার নিজ হাতে পরম আন্তরিকতার সাথে স্বামীর হাত-মুখ ও পা মুছে দিল। সেই সঙ্গে বলল, আমার আজ বড়ই খুশী লাগছে!

মুস্তাফিজ বললেন, কারণ?

কারণ কি আর খুলে বলতে হয়! সে তো আপনি জানেনই!! তবে আমার খুশী হয়ার আরেকটি কারণ হলো, আপনার খেদমত করার সুযোগ পাওয়া। বিশ্বাস করুণ , আমার মনে চায়, আপনি সব সময় আমার পাশে থাকেন আর আমি আপনার সকল প্রকার খেদমত আঞ্জাম দেই। আপনাকে নিজ হাতে প্রতিদিন ফরয গোসল করিয়ে দেই। নিজ হাতে লুকমা দয়ে খানা খাওয়াই। নিজেই পোশাক-আশাক ও জুতো পরিয়ে দিই। আর ঘন্টার পর ঘন্টা বাতাস করি ও মাথায় বিলি কাটি। আপনার আদেশ-নিষেধ গুলো অক্ষরে অক্ষরে পালন করব।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:০৩
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×