বিএনপি দায় এড়াবে কীভাবে?
বিভুরঞ্জন সরকার
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলার ঘটনার যথাযথ তদন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে হয়নি। প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া তো দূরের কথা, অপরাধীদের শনাক্ত করার কোন আন্তরিক উদ্যোগই তখন গ্রহণ করা হয়নি। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হয়েছিলেন। গুরুতর আহত হয়েছিলেন অসংখ্য নেতাকর্মী। এদের অনেকেই সারাজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, কেউ কেউ অসংখ্য স্পিস্নন্টার শরীরে নিয়ে বেঁচে থেকেও যন্ত্রণাময় জীবনযাপন করছেন। সেদিনের হামলার মূল টার্গেট ছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং দলের অন্য নেতারা। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য থেকেই সেদিন ওই জঘন্য হামলা পরিচালিত হয়েছিল। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের রক্তে ভেসেছিল বঙ্গবন্ধু অ্যাভিন্যু। ঘাতকদের ছোড়া গ্রেনেড অনেকের জীবন কেড়ে নিলেও অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। তবে তিনিও আহত হয়েছিলেন, ওই ঘটনায় তিনি শ্রবণশক্তি হারিয়েছেন। তাঁর ওপর মানসিক আঘাত ছিল খুবই মারাত্মক।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে নৃশংসতার সূচনা হয়েছিল, ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনা সে ধারারই অংশ। এই কাপুরুষোচিত হামলায় কেবল আওয়ামী লীগ নয়, গোটা জাতিই হতবিহ্বল হয়ে পড়েছিল। সব মহল থেকেই দাবি উঠেছিল, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ওই মামলা তদন্তে সদিচ্ছা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। উল্টো তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ সরকারের দায়িত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা গ্রেনেড হামলার ঘটনাকে আওয়ামী লীগেরই চক্রান্ত বলে বক্তৃতা দিয়েছেন। বলা হয়েছে, মানুষের সহানুভূতি পাওয়ার জন্য আওয়ামী লীগই নিজেদের সভায় গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে।
সরকার যদি তাদের ওই বক্তব্য প্রমাণ করতে পারত তাহলে নিশ্চয়ই সবাই এই হীনতার জন্য আওয়ামী লীগকে ধিক্কার দিত। কিন্তু সরকার তা পারেনি। ছাই দিয়ে মাছ ঢাকা যায় না। অসত্য প্রচারণা কোন সময়ই সত্যকে আড়াল করতে পারে না। তাই ওই অপপ্রচার চালিয়ে জোট সরকারের বাস্তবে কোন লাভ হয়নি। বরং এই অপপ্রচার সরকারের জন্য বুমেরাং হয়েছে। সবাই বুঝেছে, ডাল মে কুছ কালা হায়। সরকারের পক্ষ থেকে প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করা হচ্ছে, তাদের পক্ষ অবলম্বন করা হচ্ছে। অর্থাৎ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারী সন্ত্রাসী-দুর্বৃত্তদের প্রতি সরকার ও প্রশাসনের সমর্থন ছিল বলেই অনেকের কাছে মনে হয়েছে। সরকারের কোন ধরনের সংশ্লিষ্টতা না থাকলে এতবড় ঘটনা ঘটিয়ে দুর্বৃত্তরা নির্বিঘ্নে পালিয়ে যেতে পারত না। সন্দেহের আঙ্গুল বিএনপির দিকে গেছে এজন্য যে, শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সেদিনের হামলায় প্রাণনাশ হলে আওয়ামী লীগ খুবই দুর্বল হয়ে পড়ত। আওয়ামী লীগ দুর্বল হলে সব বিবেচনাতেই বিএনপির জন্য সুবিধাজনক অবস্থা তৈরি হয়। তাই গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা পুরো সফল হলে তার প্রত্যক্ষ বেনিফিশিয়ারি হত বিএনপি এবং বেগম জিয়া, যেমন বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রধান বেনিফিশিয়ারি হয়েছিলেন জিয়াউর রহমান।
এটা কারও অজানা নয় যে, শেখ হাসিনা আগাগোড়াই নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে আছেন। সে জন্য সাধারণত তার প্রকাশ্য সভা-সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছাড়াও দলীয় স্বেচ্ছাসেবকরা বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু ২১ আগস্ট দলীয় স্বেচ্ছাসেবকদের স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে দেয়া হয়নি, পুলিশের পক্ষ থেকে নানাভাবে বাধা দেয়া হয়েছিল বলে জানা যায়। পুলিশের ২৫০ সদস্য সেদিন শেখ হাসিনার সভার নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল। কিন্তু এই পুলিশ সদস্যরা কি দায়িত্ব পালন করেছে সে বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাদের চোখের সামনে পর পর ১৩টি গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হলো, কিন্তু হামলাকারীদের কাউকে পুলিশ ধরতে পারল না কেন? গ্রেনেড হামলায় শত শত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী আহত হলো, অথচ নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা সবাই থাকল অক্ষত, নিরাপদ। রহস্যটা কি? গ্রেনেড বিস্ফোরণে নিহত-আহতদের জরুরিভাবে হাসপাতালে নেয়ার জন্য যখন সবাই ছোটাছুটি করছে তখন পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছিল কোন উদ্দেশ্যে? হামলাকারীদের নির্বিঘ্নে পালাতে সাহায্য করার জন্য? সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন আসে, পুলিশের সদস্যরা শেখ হাসিনার, নাকি হামলাকারীদের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেছিল? পুলিশের সাবেক কর্মকর্তাদের কেউ কেউ বলেছেন, ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার সমাবেশে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা যথাযথ ছিল না। নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বে যারা ছিল তারাও যথেষ্ট সতর্ক ছিল না। এসব থেকে যে কারই এটা মনে হতে পারে যে, ওই ঘটনার পেছনে সরকার ও প্রশাসনের হাত বা সহায়তা ছিল। গ্রেনেড হামলার ঘটনার পর মামলা তদন্তের ক্ষেত্রেও যা করা হয়েছে তা থেকেও এটা মনে হওয়াই স্বাভাবিক যে, সরকার ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটন না করে ঘটনাটিকে অন্যখাতে প্রবাহিত করতে অথবা ধামাচাপা দিতে চেয়েছে।
এমন ভয়াবহ ঘটনার পর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে পুলিশ প্রশাসনের উচিত ছিল পুরো ঘটনাস্থল ঘিরে রাখা, প্রতিটি আলামত ভালভাবে সংরক্ষণ করা। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে উল্টোটা। আলামত সংরক্ষণের কোন ব্যবস্থা না করে বরং পরিকল্পিতভাবেই সব আলামত নষ্ট করা হয়েছে। তদন্তকারীদের যে বিশেষ কোন মহল থেকে প্রভাবিত করা হয়েছে সেটাও বোঝা গেছে তাদের তৎপরতা থেকেই। এই প্রভাবশালী মহলটি যে সরকারের বাইরের ছিল না সেটা বুঝতে কারও কষ্ট হওয়ার কথা নয়। নোয়াখালী থেকে জজ মিয়া নামের একজন ছিঁচকে অপরাধীকে ধরে তার কাছ থেকে স্বীকারোক্তি আদায়ের নাটক সাজিয়ে তদন্তকারীরা পুরো ঘটনাটিকে গুরুত্বহীন করতে চেয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পেছনে কারা জড়িত, কোন উদ্দেশ্যে ওই হামলা পরিচালিত হয়েছে, সে দিক থেকে মানুষের দৃষ্টি সরকারের জন্য তদন্তকারীরা জজ মিয়াকে ব্যবহার করেছে। তদন্তকারীদের এই ধরনের ঘৃণ্য কাজকে প্রভাবিত বা উৎসাহিত করেছে কারা? কোথা থেকে, কিভাবে শক্তিশালী আর্জেস গ্রেনেড সংগ্রহ করা হলো সে প্রশ্নও সামনে আনা হলো না। বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারও পক্ষে যে গ্রেনেড ব্যবহার করা সহজ নয় সেটাও তদন্তকারীরা আমলে নিতে ভুলে গেল। কেন? এ সব কারণেই এ ধারণা বদ্ধমূল হয় যে, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকেই এ ধরনের নাটক সাজাতে প্ররোচিত করা হয়েছিল। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা না করে তাদের নির্মূল করার ফ্যাসিবাদী মানসিকতা থেকেই এটা করা হয়েছে। এ ধরনের মানসিকতা বাংলাদেশে কোন রাজনৈতিক শক্তি পোষণ করে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনীতি চর্চায় বিএনপি-জামায়াত জোট যে বিশেষভাবে পারদর্শী সেটা তারা ২০০১ সালে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর থেকেই দেখিয়ে এসেছে। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়ার অপরাধে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সীমাহীন অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়ে বর্বরতার রেকর্ড সৃষ্টি করা হয়েছে।
এক-এগারোর পর ড. ফখরুদ্দীন আহমদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার তদন্ত নতুনভাবে শুরু হয় এবং বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় তদন্তের নামে যে নাটক করা হয়েছে সেটা সবার কাছে আরেকবার স্পষ্ট হয়। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জোট সরকারের প্রতিমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু এবং তার ভাই মওলানা তাজউদ্দিনের সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া যায় নতুন তদন্তে। এটা এখন অনেকেই বিশ্বাস করেন যে, ভালভাবে তদন্ত হলে থলে থেকে আরও অনেক বিড়াল বের হবে। পিন্টু কি দলের হাইকমান্ডকে এড়িয়ে এককভাবেই এতবড় ঘটনায় নিজেকে জড়িয়েছে? মনে হয় না। দেশের রাজনীতিকে সন্ত্রাসমুক্ত করার জন্য আবদুস সালাম পিন্টু ছাড়া বিএনপির আর কোন কোন প্রভাবশালী নেতানেত্রী ২১ আগস্ট হামলার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে জড়িত সেটা বের হওয়া প্রয়োজন। প্রকৃত পরিকল্পনাকারীরা বার বার আড়ালে থাকলে দেশ থেকে হত্যা ও সন্ত্রাসের রাজনীতি বন্ধ হবে না, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াও বাধামুক্ত হবে না।
আশার কথা যে, এবার ২১ আগস্ট উপলক্ষে আয়োজিত এক সভায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত জোর দিয়ে বলেছেন, ২১ আগস্টসহ সব হত্যাকা-, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার দেশের মাটিতেই হবে। যতবড় রথী-মহারথীই হোক, অন্যায়কারীদের শাস্তি পেতেই হবে। শেখ হাসিনা যথার্থই বলেছেন, রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়েই মোকাবেলা করতে হবে। প্রতিপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার পরিকল্পনা থেকেই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করা হয়। শেখ হাসিনার এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশের সুযোগ নেই। দেশের রাজনীতিতে সুস্থ ধারা ফিরিয়ে আনতে হলে, রাজনীতিকে সন্ত্রাসমুক্ত করতে হলে শক্তি প্রয়োগ করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করার ফ্যাসিবাদী মানসিকতা পরিহার করতে হবে সব রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের। অভ্যস্ত ধারা থেকে বেরিয়ে আসা কিছুটা কষ্টকর। এটা একটা বড় ধরনের সংগ্রাম। নিজের সঙ্গে নিজের সংগ্রাম। রাজনীতির পালে নতুন হাওয়া দেখতে চাইলে এই কষ্টকর সংগ্রামে জয়ী হওয়ার চেষ্টা করার কোন বিকল্প নেই। আমাদের দেশে হত্যাসহ যে-কোন ধরনের বড় অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়া বা বিচারকে ফাঁকি দেয়ার যে অপসংস্কৃতি গড়ে উঠেছে সেটা দূর করতে হবে। বিচারের মাধ্যমে অন্যায়কারীকে শাস্তি দেয়া গেলেই আমরা এই অপসংস্কৃতি মুক্ত হতে পারব। শেখ হাসিনার বর্তমান সরকার অন্যায়কারী সব 'রথী-মহারথী'কে সত্যি যদি বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারে তাহলে সবাই তাকে সাধুবাদ জানাবে। এই সরকারের পক্ষে বিপুল জনসমর্থন রয়েছে। কাজেই ন্যায়বিচারের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিতে সরকারের কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকবে না_ এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা।
২১ আগস্টের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে যখন দেশবাসী ঐক্যবদ্ধ তখন বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন অভিযোগ করেছেন, 'সরকার গ্রেনেড হামলার দায় বিএনপির ওপর চাপাতে চায়।' ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ সব হত্যাকা-ের সুষ্ঠু বিচার দাবি করে বিএনপি মাহসচিব বলেছেন, '২১ আগস্ট নিয়ে তদন্ত হয়েছিল। এই সরকারের সেই তদন্ত পছন্দ হয়নি।' বিএনপিতে কয়েকজন নেতা আছেন, যারা বুক ফুলিয়ে অসত্য বক্তব্য দিতে পারদর্শী। দিনকে রাত আর রাতকে দিন বলতে তাদের বুক একটুও কাঁপে না। এককালে বাম রাজনীতির পতাকাবাহী খোন্দকার দেলোয়ার জীবন সায়াহ্নে দাঁড়িয়ে বিএনপির সেই গোষ্ঠীতে নাম লিখিয়েছেন, যাদের কাছে দলের চাইতে বড় কিছু নেই। দল তাদের ভাগ্য বদলে দিয়েছে। ফলে দলই তাদের কাছে একমাত্র আরাধ্য। যা হোক, ২১ আগস্ট সম্পর্কে বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি মহাসচিবকে কয়েকটি প্রশ্ন না করে পারা যায় না। প্রথমত, ২১ আগস্ট নিয়ে আপনাদের জোট সরকারের আমলে যে তদন্ত হয়েছিল সেটা কি আপনার পছন্দ হয়েছিল? জজ মিয়ার কাহিনী কি আপনার কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়? আপনি সব হত্যাকা-ের সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন। খুব ভাল কথা। আপনারা ক্ষমতায় থাকতে আহসানউলাহ মাস্টার, মঞ্জুরুল ইমাম, শাহ এএসএম কিবরিয়াসহ যেসব চাঞ্চল্যকর রাজনৈতিক হত্যাকা- সংঘটিত হয়েছে, তার কোনটিরও কি 'সুষ্ঠু বিচার' আপনারা করেছেন? কেন করেননি? আপনারা দেশে অপরাজনীতির বীজ বুনেছেন। আর এখন আশা করছেন ভিন্নরকম ফল। সেই বহুল প্রচারিত প্রবাদবাক্যটি ভুলে গেলে চলবে কেন যে, 'ঢিলটি মারলে পাটকেলটি খেতে হয়!' আপনি বলছেন, 'সরকার গ্রেনেড হামলার দায় বিএনপির ওপর চাপাতে চায়।' দেশবাসীর প্রশ্ন, বিএনপি এই দায় এড়াবে কীভাবে? ঘটনার সময় থেকে আজ পর্যন্ত কার্যকারণ বিশ্লেষণ করলে যে কারও মনে তো এটাই বদ্ধমূল হওয়ার কথা যে, এই হামলার সঙ্গে বিএনপির যোগসাজশ আছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তদন্তে বেরিয়ে এলো যে, আপনাদের আমলের প্রতিমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু ওই ঘটনায় জড়িত আছেন। বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই অভিযোগ থেকে মুক্ত হওয়ার আগেই গত নির্বাচনে আপনারা তাকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়ে কি প্রমাণ করলেন? গ্রেনেড ও সন্ত্রাস নিয়ে ব্যাপকভাবে আলোচিত পিন্টুর ভাই মওলানা তাজউদ্দিন পালিয়ে আছেন। অর্থাৎ পরিবারটি সন্ত্রাসী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে যখন সন্দেহ প্রবল, তখনই পিন্টু ও তাজউদ্দিনের আরেক ভাইকে ঘটা করে ছাত্রদলের সভাপতি বানানো হলো। এ থেকে কি বোঝা যায়? বিএনপি যদি খুনি-সন্ত্রাসীদের ভার নিজে থেকেই নিজেদের কাঁধে বহন করতে চায়, তাহলে বিএনপিকে দায়মুক্ত করবে কে? বিএনপি কোন ধারার রাজনীতির সমর্থক তা জেনেশুনেও কেউ কেউ বিএনপিকে সমর্থন করে, ভবিষ্যতেও হয়তো করবে। তাই বলে সবার কাছ থেকে সমর্থন প্রত্যাশা করা ঠিক হবে না। কিছু মানুষকে কিছু সময়ের জন্য বিভ্রান্ত করা যায়, সব মানুষকে সব সময়ের জন্য বিভ্রান্ত করা যায় না_ এই মনীষী বাক্যটি বিএনপি মহাসচিব ভুলে গেছেন কি?
[লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট]

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





