somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

র‍্যাগ- ক্রাইম অর ফান!?!

১১ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জানুয়ারি ২৯, ২০১২
সময়ঃ ভোর ৬:৩০
স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবিশাল জগতে পা রাখার প্রথম দিন আজ। বহুদিনের লালিত স্বপ্ন- প্রকৌশলী হবার পথ চলাটা তাহলে শুরু হয়েই গেল। বাবা-মা কে ছেড়ে এই প্রথম বাসার বাইরে থাকার অভিজ্ঞতা হতে যাচ্ছে আমার। এর আগে কখনোই বাসার বাইরে হল/মেসে থাকার সুযোগ হয়নি।
ওরিয়েন্টেসনের পর আগে থেকেই ঠিক করে রাখা মেসে শুরু হবে আমার নতুন দিনগুলি।
সময়ঃ বিকাল ৪:৩০
মেসের লাইফটা তাহলে শুরু হয়েই গেল। অজানা এক ভয় কাজ করছে আব্বু-আম্মুর চোখে মুখে। আর আমি তা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। বাসার বাইরে এই প্রথম একা একা কিভাবে থাকবো এই চিন্তাই হয়তো কাজ করছিলো তাঁদের মাঝে।
আসরের নামাজ পড়ার জন্য গেলাম মেসের নামাজ পড়ার জায়গাটিতে। সেখানে আগে থেকেই একজন নামাজ পড়ছিলেন। আমি তার পাশে দাঁড়িয়ে নামাজ শেষ করলাম। প্রায় একই সময়ে সে ও নামাজ শেষ করে আমার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছিল। চাহনি দেখে বুঝতে পারলাম তিনি আমার সিনিয়র।
- আসসালামুআলাইকুম ভাইয়া।
- রুয়েটে ভর্তি হইসো?
- জী ভাইয়া
- রাত ১০ টায় অমুক (ভাইয়া উনার রুম নাম্বার বললেন) নাম্বার রুমে আমার সাথে দেখা করবা।
রীতিমত আদেশের সুরেই বলেছিলেন এই কথাটি।
র‍্যাগের এক অজানা আতংক ততক্ষণে আমার মধ্যে কাজ করা শুরু করে দিয়েছে।
সময়ঃ সন্ধ্যা ৭:০০
আব্বু-আম্মু চলে গেল কিছুক্ষণ আগে। এখন নিজের দেখভাল নিজের করার সময় এসে গিয়েছে। রুমমেটের সাথে পরিচয় হল- ওর সাথেই আড্ডা দিচ্ছি।
সময়ঃ রাত ৯:৩০
ডিনার শেষে আড্ডা দিচ্ছি রুমমেটের সাথে এমন সময় দরজায় নক... - বড় ভাইয়ারা অমুক নাম্বার রুমে দেখা করতে ডাকছে।
মোটামুটি মানসিক একটা প্রস্তুতি বিকেল থেকেই নিচ্ছিলাম; এখন সেই প্রস্তুতির পরীক্ষা দেবার পালা। আমি আর আমার রুমমেট গেলাম ভাইয়াদের সাথে দেখা করতে। আগে থেকেই তালিম নিয়ে রাখা বিদ্যে অনুযায়ী অতি বিনয়ের সাথে সালাম দিলাম সবাইকে (ততক্ষণ পর্যন্ত ভার্সিটির সিনিয়র ভাই হিসেবে তাদের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা কাজ করছিলো)।
রুমে ঢুকবার পর আমাকে বলা হল রুমের লক লাগিয়ে দেবার জন্য। আজ্ঞাবহ হয়ে তা পালন করলাম।
বড়ভাই (১): নাম কি?
আমার রুমমেটঃ জী ভাইয়া, XYZ (রুমমেট নিজের পুরো নামটা শুদ্ধ উচ্চারণে proper মাখরায, তাল, লয় ঠিক রেখে বলতে সক্ষম হল)
বড়ভাই (২): (রীতিমত হুংকার দিয়ে ধমকের সুরে) কি?? তোর নাম জী ভাইয়া? [পুনশ্চ এই ভাইয়া আর নামাজে দেখা হয়েছিল যে ভাইয়া, দুজন একই মানুষ(!)]
রুমমেটঃ না ভাইয়া, আমার নাম XYZ.
বড়ভাই (২): তোর নাম কি? (আমাকে ইঙ্গিত করে)
আমিঃ তাহমীদ জামান খান। (রুমমেটের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এক কথায় উত্তর শেষ করলাম)
এরপর ওই বড়ভাই (২) আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন কোন ডিপার্টমেন্ট এ ভর্তি হয়েছি আমি।
অন্যান্য ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়া বন্ধুদের কাছে এই প্রশ্নের উত্তর কিভাবে শুদ্ধ করে দিতে হয় তা আগেই জেনে ছিলাম। আমি আমার ডিপার্টমেন্টের নাম বললাম।
কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে রুমমেট করে বসলো আরেক ভুল। সে তার ডিপার্টমেন্টের নামের সংক্ষিপ্ত রূপটি বলল তাদেরকে। আর তাদের হুংকার দেখে কে? ডিপার্টমেন্টের নাম ভুল বললে কি শাস্তি পেতে হয় তা হয়তো একজন রুয়েটিয়ানকে নতুন করে বলে দেবার প্রয়োজন নেই।
আমার রুমমেটের জন্যও শাস্তি নির্ধারণ করা হল। ১ তা কাগজ দিয়ে ভাইয়া (২) বললেন- “যা এই কাগজে ৭০০ বার ডিপার্টমেন্টের নাম শুদ্ধ করে লিখে আনবি”।
- “ভাইয়া এই এক পৃষ্ঠায় কি ৭০০ বার লেখা যাবে?” রুমমেটের সহজসরল মনের প্রশ্ন।
আরেকটা খুন করে ফেলার মতো অপরাধ করে ফেললো আমার রুমমেট। অন্তত ভাইয়ার ধমক আর বকাঝকা করার তরিকা দেখে আমার ওই সময় তা-ই মনে হয়েছিল।
শাস্তির মাত্রা বেড়ে গেল আমার রুমমেটের। একটি ম্যাচের কাঠি অর্ধেক করে ওই অর্ধেক টুকরা রুমমেটের হাতে দিয়ে বলল- “যা এই পৃষ্ঠার এক side এ ৭০০ বার তোর ডিপার্টমেন্টের নাম লিখে আনবি আর আরেক সাইডে তোর রুমের volume মেপে আনবি এই কাঠি দিয়ে মেপে। ৩০ মিনিট সময় তোর জন্য, যা... ”
রুমমেট চলে গেল। নিজের হার্ট বিটের শব্দ নিজে স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিলাম। মনে মনে চিন্তা করছিলাম- রুমমেট তো চলে গেল। এখন আমার পালা, আল্লাহ্‌ই জানে কি করে এরা আমার সাথে।
বড়ভাই (২): তুই মেকানিক্যালে পড়িস তাই না?
- জী ভাইয়া
- ফেসবুকে তোদের একটা গ্রুপও আছে দেখলাম। (গ্রুপটি একটি ক্লোজড গ্রুপ ছিল)
- জী ভাইয়া- ওই গ্রুপের অ্যাডমিন কে জানিস?
- জী ভাইয়া
- নাম কি অ্যাডমিনের?
- ভাইয়া আমি আর A (আমার আরেক বন্ধুর নাম বললাম) এই দুজন অ্যাডমিন।
এই কথা বলার পর রীতিমত একটা উৎসাহের ঝলক বয়ে গেল সবার মধ্যে। ‘পাইছি তরে’, ‘আইজকা খাইয়ালামু তরে’ টাইপ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো সবাই। পাশেই এক ভাইয়া তার পিসি তে ফিফা খেলছিলেন। আমার শেষ বাক্যটি শুনে তিনি তার খেলায় বিরতি টানলেন।
যে ভাইয়া এতক্ষণ ধমক দিচ্ছিলেন (ভাইয়া-২) তিনি রীতিমত ফুঁসে উঠলেন। না জানি কি মহাপাপ করে ফেলেছি আমি।
- বেশি পাকনা হইয়া গেছো তাই না? ক্যাম্পাসে আসার আগেই গ্রুপ খুইলা ফালাইসো। এত বেয়াদবি কে শিখাইসে?
- চুপ করে রইলাম আমি। তার ধমক শুনে আমার হাত কাঁপছিল। আরো কিছুক্ষণ অশ্লীল গালিগালাজ চলতে থাকলো। তবুও চুপ করে রইলাম। একটা সময় জিজ্ঞেস করা হল-
- খুব তো গ্রুপ খুইলা বইসস। ডিপার্টমেন্টের হেডের নাম জানিস? ডিনের নাম জানিস?
Silence is often the best answer. কিন্তু ওই অশ্রাব্য গালিগুলো শুনার পর কেন জানি নিজের মধ্যেও একটা ইগো কাজ করছিলো – দেখি তুমি কতটা খারাপ হইতে পারো।
তাই হেড স্যারের নাম জানা সত্ত্বেও ওই ভাইয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে কিছুটা তাচ্ছিল্য করেই বলেছিলাম- জানি না।
একথা শুনার পর ওই ভাইয়া আমাকে চড় মারার জন্য উদ্দ্যত হলেন। নিজেকে গুটিয়ে নিলাম। ওই সময় রুমে উপস্থিত সবার প্রতি কেমন যেন একটা ঘৃণা কাজ করছিলো।
একটু পর আমাকে একটি ল্যাপটপ দিয়ে বলা হল- “তুই তো চরম বেয়াদব। তোর গ্রুপের সব পোলাপানও নিশ্চয়ই তোর মতই বেয়াদব। তুই তোর গ্রুপের নাম এখনই চেঞ্জ করবি। গ্রুপের নাম হবে- ‘আমরা বেয়াদব গ্রুপ’। চেঞ্জ কর এখনি... ”
আমি গ্রুপের নাম চেঞ্জ করে দিলাম বাধ্য হয়ে। এরপর আমাকে আমার রুমে পাঠিয়ে দেয়া হল। আমি রুমে ফিরে সেল ফোনে গ্রুপের সব মেম্বার রিমুভ করে গ্রুপটি ডিলিট করে দিলাম।
পরদিন আমার কিছু কিছু ফ্রেন্ড আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল কাল হঠাৎ গ্রুপের এই রকম উল্টাপাল্টা নাম দেবার কারণ কি? আমি ওদের পুরো ঘটনা খুলে বললাম।
এভাবেই আমার ক্লাসমেটদের সামনে আমাকে humiliate করা হয়েছিল। শুধুমাত্র একটা ফেবু গ্রুপের কারণেই আমি মহাবেয়াদব আখ্যা পেয়ে যাই।
===================
===================
রুয়েটে ক্লাস শুরু করার আগের দিনের ঘটনা এটা। আমার ডিজিটাল ডায়রি (আমি আমার পিসি তেই প্রতিদিনের ঘটনা লিখে রাখি/রাখার চেষ্টা করি) থেকে হুবহু প্রকাশিত (শুধুমাত্র নামগুলো প্রকাশ করা হয়নি)।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:৫১
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×