"তুমি আজকাল আমাকে ফোন করো না কেন ? এত কি ব্যস্ততা তোমার ?ইচ্ছে হলে ফোন উঠাও নাহলে রিং বাজতে বাজতে থেমে যায়, কেন এমন কর ?" অভিমানী কন্ঠে অভিযোগ করল তিতির । জুবায়ের কোন উত্তর দিল না চুপচাপ শুনল তার অভিযোগ আর অনুযোগ। এসব প্রশ্নের কি উত্তর হওয়া উচিত ?" আমাকে ভুল বুঝ না please , আমি একটু পারিবারিক ঝামেলার মধ্যে আছি তাই গত ২ মাস তোমার কোন খোজ খবর নিতে পারিনি" কিনবা এমন হতে পারে , 'আমি ইদানিং জীবনটাকে নতুনভাবে সাজাতে চাইছি তাই পুরোনো সব কিছু বদলে সামনে এগোতে চাই, নতুন সঙ্গী নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম তাই খোঁজ নিতে পারিনি।'।
কিনত্ত ২ টার একটা কিছুও বলা হয়ে উঠে না জুবায়েরের, কেবল চুপ করে থাকে। কি বলবে তিতিরকে ? ইচ্ছে করে না তাই যোগাযোগ রাখে না।
কাউকে আজকাল ভাল লাগে না জুবায়েরের, বন্ধু-বান্ধব,আত্মীয়-স্বজন, কর্মক্ষেত্রের কেউ না। তিতির কথা বলেই চলছে একটার পর একটা গত ২ মাসের সঞ্চিত কথামালা আর জুবায়ের মানে জুবি কেবল হুম হাম করছে, এভাবে বেশিক্ষন চালানো যাবে না জানে জুবি। একটুপরই তিতির চেঁচাবে কেন কথা না বলে হ্যা বা না দিয়ে কথা শেষ করছে।মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে তিতিরকে মাইর দিতে এত গদগদ টাইপ বাংলা সিনেমার নেকামি মার্কা প্রেম ভালবাসার কি আছে ? অসহ্য লাগে জুবির, একটু খোচা দিয়ে কথা বলতে পারলেই রাগ করে তিতির ৩ দিন কথা বলবেনা ৪ নম্বর দিনে চিবিয়ে চিবিয়ে জুবি কে লম্পট, মিথ্যুক, ধান্দাবাজ ইত্যাদি নানা বিশেষনে ভূষিত করব। জুবি প্রতিত্তরে কিছু কথা বললেই কান্না ভেজা গলায় তিতির চুপ করে থাকবে ,অবশ্য এসবে জুবির কোনো সমস্যা নেই গত ৩ বছর ধরেই এমন চলছে।
তিতির রাগ করলে কি বলতে পারে, রাগ কমলে কি বলবে, জিদ করে কি করবে, কোন কথায় তেলে বেগুনে জ্বলে উঠবে আর কোন কথায় চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পরবে সবই বুঝে জুবি । মেয়েটা যে কেনো এত বলদ, গাধা,বোকা নিজের ভাল মন্দ বুঝে না সেটা ভেবেও জুবির রাগ লাগে। জুবির মত চাল চুলা নেই, নানা রকম পারিবারিক সমস্যায় জর্জরিত স্বাধীনচেতা বদমেজাজী বাউন্ডলে ছেলেটাকে বাধতে চায় কেন ? কই আগেও তো নানারকম মেয়ে জুবির জীবনে এসেছে কেউ তো এতদিন পিছে পরে থাকেনি, কেন সম্পর্ক গুলো কে হালকা ভাবে নেয়া যায় না ? ধ্যুতত্তরি ! ফোনটা কেটে দি্যে জুবি বাসার নিচের রাস্তার পাশের ঝুপরি দোকানে গেল একটু সিগারেট টানতে। আহ্ ! যত টান তত তৃপ্তি !
পায়ে ২ ফিতার স্যান্ডেল , বারমুডা হাফপ্যান্ট , গোল গলার হাফ হাতা টি-শার্ট পরা জুবায়ের দোকানের বেঞ্চিতে বসে বসে পায়ের উপর পা তুলে চায়ে চুমুক দেয় আর সিগারেট টানছে আর ভাবছে, হাতে একদম টাকা পয়সা নেই সামনে ঈদ। বাবা, মামা-মামী মামাতো ভাই বোন সবাইকে কিছু কিনে দিতে পারলে ভাল হত। এক পার্টি টাকা দিবে দিবে করে গত ৩ মাস ধরে ঘুরাচ্ছে টাকার টিকিরো দেখা নেই। চোখটা আবারো জ্বালাপোড়া করছে ডাক্তার দেখানো দরকার নাহলে পুরোপুরি অন্ধ হতে সময় লাগবে না । ফ্রী ল্যান্স ওয়েব সাইট ডিজাইন করে খুব বেশী টাকা কামানো যায় না, মাঝে মাঝে নাটকের স্ক্রীপ্ট লেখে সেটাও নাটক নির্মাতাদের পিছে পিছে ঘুরে ঘুরে টাকা আদায় করতে হয়। কেউ কেউ তো আবার পুরো নাটক বানিয়ে প্রচার হওয়ার পরো টাকা দেয় না উল্টো ভাব ধরে জুবির মত উঠতি স্ক্রীপ্টরাইটার কে প্রোমোট করে ধন্য করে ফেলেছে । কারো অধীনে কাজ করার মত মানুষ সে নয় তাই চাকুরী তার জন্য না, কিছুদিন কাজ করেছিল একটা outsourcing firm এ দিন রাতের কাজের কোনো হিসাব নেই, বিড করে কাজ পাওয়া এত সহজ না তাই ছেড়ে দিয়েছে ।এর মধ্যে বোঝার উপর শাকের আটি বাবার বিজনেস পার্টনার জালিয়াতি করে জুবির বাবাকে ফাসিয়ে দিয়েছে, এত টাকা ব্যাংক লোন ।
একমাত্র সন্তান হিসেবে বাবার এই দুঃসময়ে জুবির পাশে থাকা দরকার তা যত রাগ থাকুক না বাবার উপর । বাবা প্রতিদিন মুখ শুকনা করে দোকানে যান মায়া লাগে বাবার জন্য । মা মরা ছেলে জুবায়েরের জন্য তিনি কি কিছুই করেননি ? এই বাড়ী, জুবির আলাদা গাড়ী, চাকর বাকর সবই তো তার জন্যই কই জুবায়ের তো এই ২৭ বছরের জীবনে তেমন আয় রোজগার কিছুই করতে পারেনি, নিজের টাকায় একটা হোন্ডা কিনার সামর্থ
তার নেই। বাবার নারীঘটিত ব্যাপারগুলো ছাড়া খুব কি মন্দ তার বাবা ?
নাহ কোন যুক্তি মনমত হচ্ছে না, sensetive issue তাই বাদ । মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় নিজেকে শেষ করে দিতে বাবার মলিন মুখটা মনে পড়ে, আরেকজনের কথাও মনে পড়ে তিতিরের বড় বড় টানা টানা মায়া কাড়া চোখ । জুবির মৃত্যু সংবাদ শুনলে তিতির পাগলই হয়ে যাবে----------এত ইমোশোনাল আর ছেলেমানুষ এই গাধাটা । মাকরসার জালের মত জুবিকে ভালোবাসার জালে আটকে ফেলেছে তিতির, এত চেষ্টা করেও এই পঙ্গু মেয়েটাকে জীবন থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারেনি জুবায়ের । তিতিরের একমাত্র বন্ধু জুবি, এমন কোন কোথা নেই যা জুবিকে বলে না তিতির, ওর চারদেয়ালে বন্দী জীবনে একটাই খোলা জানালা সেটা জুবায়ের নামক ছন্নছাড়া যুবকের জন্য । মাঝে মাঝে চেষ্টা করেছে অন্য মেয়েদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার খুব বেশী এগোয়নি । কেমন জানি খাপছাড়া লেগেছে,
তিতিরের নরম হাত ধরে যতটা তড়িতাহত হয়েছে অন্য মেয়ে সঙ্গীর সাথে সব করেও আহামরি কিছুই মনে হয়নি । তিতির মনে হয় টের পায়, কি জানি এটা নিয়ে তো কোন প্রশ্ন করে না ! এটাও একটা মানুষিক চাপ, প্লেটনিক লাভ আর ফিজিকাল রিলেশনের দন্দ । উহ্ আঙ্গুলের ডগায় সিগারেটের ছ্যাকা । নাহ্ এবার উঠতে হবে - জীবন-জীবিকার টানে ।
গুন গুন করে গাইতে লাগল..................
http://www.youtube.com/watch?v=WjG2qLSaCqo
++++++++
জুবায়ের কে নিয়ে আরেকটি লেখা পরতে হলে
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১২ সকাল ১১:৩৮