somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মোহভঙ্গ

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রথমাংশ: গাজীপুর শাইনিং পাথ হাইস্কুলে অতিবাহিত করা যৌবনের উত্তাল সাড়ে ছয়মাস একদিন
বিদায়টা ছিল খুব আবেগঘন। কিছু শিক্ষার্থীকে দশমের কক্ষে ডেকে কিছুক্ষণ লেকচার দেই। একপর্যায়ে কেঁদে মাটিতে প্রায় লুটিয়ে পড়ি। ওরাও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে। কারও চোখে জল ছলছল করছিল। আমি আসলে ওদের ছেড়ে আসতে পারছিলাম না। যাদের সঙ্গে টানা সাতটা মাস কাটিয়েছি, যারা ছিল আমার সুখ-দুঃখের সাথী; তাদের ছেড়ে আমি কী করে থাকব?

নবমের ফরহাদকে ক্যামেরা আনতে বলেছিলাম। সে ছবি তুলল। প্রায় সব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সাথে ছবি তোলা হলো। আমি যখন থাকব না, এই শিক্ষার্থীদের কথা যখন মনে পড়বে; ছবি দেখে নিশ্চয়ই প্রাণ জুড়াবে।

ইদের ছুটি ছিল। শিক্ষার্থীদের শেষবারের মতো আদর করে বিদায় নিলাম। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম আর কখনও শিক্ষকতা করব না। সুস্থ হওয়ার পর তাহলে কী করব? আহার-রুজি কীভাবে জুটবে? একটা পাঞ্চিং হাউজে কাজের ব্যবস্থা করে গেলাম। ইদের পর এখানেই কাজ শুরু করব।

আগস্টের বাইশ তারিখ ছিল ইদ। বাড়িতে গিয়ে দেখি বাবা অসুস্থ। তাকে ডাক্তার দেখানো দরকার। এদিকে স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাণ পুড়ছিল। দশমের শান্ত’র কাছে আমার মোবাইল নম্বর রেখে এসেছিলাম। আশা করেছিলাম অনেকেই ফোন দেবে। কিন্তু হায় ইদের দিন বৃষ্টি ছাড়া আর কেউ ফোন দেয়নি।

হিয়া ম্যাডাম আর ছোটন স্যারের সাথে মোবাইলে সুখ-দুঃখের কথা পাড়লাম। হিয়া শান্ত’র ফেসবুক আইডি দিয়েছিল। এরপর একে একে দীপ্তি, লাবণ্য, শরিফ, হৃদয় প্রমুখদের ফেসবুক আইডি পেয়ে গেলাম। তাদের সাথে কুশল বিনিময় হতে থাকে।

বিদায়বেলায় যে ছবিগুলো তুলেছিলাম, ফেসবুকে তার কিছু আপলোড করলাম। ক্যাপশনে লিখলাম, ‘পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কী রে হায়, ও সেই চোখের দেখা প্রাণের কথা সে কি ভোলা যায়?’ না, আমি কাউকে ভুলতে পারিনি। মোবাইলের ওয়াল পেপারে তাদের ছবি দিয়ে রেখেছি।

দু’দিন পর লক্ষ্য করলাম দু’জন ফেক আইডি পোস্টে বাজে মন্তব্য করেছে। ছবি ডিলিট করতে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। ‘এরা কারা?’ জিগ্যেস করেও সদুত্তর পেলাম না। একটা আইডি আমাকে গালিগালাজও করেছে। অনুমান করলাম, আমার শিক্ষার্থীদের অভিভাবকতুল্য কেউ হয়তো এমন কাজ করেছে। মনটা ভেঙে খানখান হয়ে গেল। ‘ভালোবাসার প্রতিদান কি এই?’

ইদের পর পাঞ্চিং হাউজে কাজ শুরু করলাম, কিন্তু কাজে মন বসল না। ছোটন স্যারকে জানালাম। তিনি আবার ‘শাইনিং পাথ’ এ যোগদান করতে বললেন। আমার প্রাণ কাঁদছিল শিক্ষার্থীদের জন্য, তাই আমি সম্মতি জানালাম। ছোটন স্যার প্রধান শিক্ষকের কাছে নিয়ে গেলেন। ইংরেজি শিক্ষকের পদটা তখনও শূন্য ছিল। প্রধান শিক্ষক আমাকে পরদিন যোগদান করতে বললেন।

নতুন করে স্কুলে যেতে সঙ্কোচ হচ্ছিল। আগেই তো বিদায় নিয়ে চলে গিয়েছিলাম, আবার কী করে আসি? ব্যাপারটা জীবদ্দশায় চল্লিশা করার মতো হয়ে গেল না? যে শিক্ষার্থীরা লোক লাগিয়ে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করল, তাদের সামনে যাওয়া কি ঠিক হবে?

সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে স্কুলে ঢুকে গেলাম। দশমের মেয়েদের ওপর রইল বুক ভরা অভিমান। ‘তোমরা কী করে পারলে?’ বলতেই ওরা জোরালো প্রতিবাদ জানাল; বলল, “আমরা এমন কাজ করিনি।”
আমি বললাম, “তোমরা না করলেও তোমাদের বড়ো ভাই গোত্রের কেউ করেছে।”
তারা এ কথাও নাকচ করল; বলল, “না, আমাদের কোনো বড়ো ভাইও করেনি।” জানি না তারা সত্য না মিথ্যে বলেছে, তবে বিলক্ষণ বুঝতে পারি তাদের অনুমতি ছাড়া ছবি আপলোড করায় তারা মর্মাহত।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে ছবি তুলবে, ফেসবুকে আপলোড দেবে; এখানেও শিক্ষার্থীদের অনুমতি লাগবে? কী ভালোবাসলাম ওদের? ঐ দিনই ওদের ছবি ফেসবুক থেকে সরিয়ে ফেলি।

আরও কষ্ট আমার জন্য অপেক্ষা করছে, সে কথা জানতাম না। এক মেয়ে রাত্তিরে ম্যাসেজ দিল, “স্যার, ফেবুতে আসেন।” গেলাম। “আপনি যে আমার সাথে কথা বলেন, অন্যরা অন্যভাবে দেখে। প্লিজ, আমার সাথে কথা বলবেন না; বললে হেড স্যারের কাছে বিচার দেব। আর আমি অন্য একজনকে পছন্দ করি।”

আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম। বলে কী? আমি ভেবেছিলাম এ বোধহয় আমার প্রেমে পড়েছে, বিদায় বেলায় ওর চোখে কিছু একটা দেখেছিলাম! গাজীপুর এসে আমার প্রথম কাজটা হলো, এর ঘোর কাটানো। এখন দেখছি এ আমাকে হুমকি দিচ্ছে, আমাকেই সরে যেতে বলছে। কী অদ্ভুত!

দশমের প্রতি আমার যে বিশ্বাসটুকু অবশিষ্ট ছিল, উপর্যুক্ত ঘটনায় তা তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল। আমার মোহভঙ্গ হলো। মনে হলো, না এলেই ভালো হতো। প্রকৃতি আমার মনোভাব বুঝতে পেরেছিল বোধহয়। আমি আর টিকতে পারব না। কিছুদিন যেতে না যেতেই একটা ধর্মীয় কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ায় আমি চাকরি হতে অব্যাহতি নেই।

২ আশ্বিন ১৪২৫ বঙ্গাব্দ
গাজীপুর।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৪:০৮
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিছু হিন্দু অখন্ড ভারত চায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৮




মুসলিম অখন্ড ভারত শাসন করেছে তখন তারা ছিলো সংখ্যা লঘু। খ্রিস্টান অখন্ড ভারত শাসন করেছে, তারা তখন সংখ্যা লঘু মুসলিম থেকেও সংখ্যা লঘু ছিলো। তারপর মুসলিমদেরকে সাথে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। টাইম ম্যাগাজিনের আগামীর ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় বাংলাদেশের নাহিদ ইসলাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৮:১২




নাহিদের ভাষ্য, ‘আমাদের নতুন প্রজন্মের পালস বুঝতে হবে। বাংলাদশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহিংসতার যে পালাক্রম– অবশ্যই তার অবসান হতে হবে। আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’ ... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গল্প প্রকাশিত হবার পর নিষিদ্ধ হয়

লিখেছেন জাহিদ শাওন, ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:৫০


এক কাপ চা, শীতের সন্ধ্যায় বেশি ঝালের ভর্তায় মাখানো চিতই পিঠার অজুহাতে বুকপকেটে কতবার প্রেম নিয়ে তোমার কাছে গিয়েছিলাম সে গল্প কেউ জানে না।
আজকাল অবশ্য আক্ষেপ নেই।
যে গল্প... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধী চেষ্টা করেছিলেন বাংলাদেশের মিলিটারীকে ক্ষমতা থেকে দুরে রাখতে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৩:২৪



১৯৭১ সালের জেনারেশন'এর কাছে ইন্দিরা (১৯১৭ - ১৯৮৪ ) ছিলেন ১ জন বিশাল ব্যক্তিত্ব; যু্দ্ধ লেগে যাওয়ার পর, উনি বলেছিলেন যে, বাংগালীরা ভালো ও নীরিহ জাতি, তিনি এই জাতিকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন - পর্ব ৩

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৮:২৩

জুলাই ১৮: ছাত্রলীগের হামলা, সাধারণ শিক্ষার্থীদের হত্যা এবং ঢাবি প্রশাসনের নির্দেশে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের নির্বিচার হামলার প্রতিবাদে ১৭ই জুলাই কমপ্লিট শাট ডাউন কর্সুচী ঘোষনা করে বৈষম্যিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×