somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবন নদীর ঘাটে ঘাটে

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রাইমরোজ পর্ব
সময়টা ছিল ঝঞ্চাবিক্ষুব্ধ। কী করবো, না করবো বুঝতে পারছিলাম না। সবকিছু ছেড়ে হয়ত বাড়ি চলে যেতে হতো। কারণ, এখানে চলার মতো সামর্থ্য ছিল না আমার। কয়েক জায়গায় সিভি দিয়েছিলাম, দুটো ইন্টারভিউও দিয়েছিলাম। দুঃখজনকভাবে কোন ডাক পাই নি।

হঠাৎই 'শাইনিং পাথ' থেকে ইসমাইল স্যার ফোন দিলেন। কুশলাদি জিজ্ঞেস করার পর জিজ্ঞেস করলেন, 'বর্তমানে কী করছেন?'
'কিছু না' বলতেই বললেন, 'শিমুল নামে আমার এক বন্ধু প্রাইমরোজ নামে একটা স্কুলে পড়ায়, ওখানে একটা পোস্ট খালি আছে। আপনি চাইলে দেখা করতে পারেন।'
এমতাবস্থায় খুব খুশি হলাম। বললাম, 'উনার মোবাইল নাম্বারটা দিন।'

ইসমাইল স্যার স্কুল এর অবস্থান বললেন, শিমুল স্যারের মোবাইল নাম্বারও দিলেন। শিমুল স্যারকে ফোন দিলাম। উনি পরদিন দশটায় স্কুলে যেতে বললেন।

পরদিন দশটার আগে আগে স্কুল এ গেলাম। 'শিমুল স্যার কোথায়?' জিজ্ঞেস করতেই একজন বললেন, 'উনি ক্লাসে আছেন।'

প্রধান শিক্ষক বসে ছিলেন। উনার সাথে পরিচিত হলাম। অমায়িক লোক। ১৭ বছর হলো স্কুলটা প্রতিষ্ঠা করেছেন। উনি চাকরি করতেন। তার অবর্তমানে আরেকজন প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন। দূর থেকে স্কুল পরিচালনায় সমস্যা দেখা দেওয়ায় নিজেই এখন স্কুলে বসেছেন।

কিছুক্ষণ পর শিমুল স্যার এলেন। উনার সাথে বেতন সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে কথা হলো। বেতন কম। কিন্তু কিছু করার নেই। একেবারে ঝরে পড়ার চেয়ে কোনোমতে বেঁচে থাকাটাও কম কথা নয়। তাছাড়া এ ধরণের প্রতিষ্ঠানে বেতন তুলনামূলকভাবে কমই থাকে। সুপারিশ থাকায় আমাকে তাও অন্যদের চেয়ে বেশি বেতন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলো, ৮ম এর চল্লিশ মিনিটের কোচিংও দেওয়া হলো।

সেপ্টেম্বর এর ২৪ তারিখ, ২০১৮ সাল। চাকরি শুরু করলাম 'প্রাইমরোজ' এ। সাধারণত আমি ইংরেজি পড়াই। ইংরেজি শিক্ষক থাকায় চলে যাওয়া শিক্ষকের ক্লাস করতে হবে আপাতত। এক মাসের জন্য ক্লাসের সময়সূচী পরিবর্তন করা হচ্ছে না। নভেম্বরে তো বার্ষিক পরীক্ষাই।

প্রথমে ক্লাস করতে গেলাম ৭ম শ্রেণিতে। মোটামুটি কুড়ি জন এর মতো শিক্ষার্থী। তারপর ৮ম শ্রেণিতে, তারপর আবার ৮ম শ্রেণি। পর্যায়ক্রমে ৬ষ্ঠ ও ৪র্থ শ্রেণিতে।

সব ক্লাসেই মোটামুটি বাংলা পড়াতে হতো। ৮ম ও ৪র্থ তে সাথে তথ্য ও বিজ্ঞান।

৮ম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ১০ জন এর মতো। নিয়মিত পাঁচ-ছ জন। পাঁচ-ছ জনের দু'জন বাদে সবাই ক্লাসে অমনোযোগী। এদের পড়াতে কী যে কষ্ট করতে হলো! বিরক্তিতে মেহেদী নামের একজনকে খুব মারধরও করলাম। আরিয়ান নামের একজন ক্লাসটা অতিষ্ঠ করে রাখত। রোমান নামের একজন ছিল; সেও ছিল অস্থির টাইপ।
মিতু, শামিম ছিল ভদ্রগোছের। হাবিবা আর অন্তরা ছাত্রী হিসেবে ভালোই ছিল, কিন্তু এদের ভদ্রতার বালাই ছিল না।

৬ষ্ঠ শ্রেণিতে প্রায় ১৪ জন এর মতো শিক্ষার্থী ছিল। এদের মধ্যে মিতু, রিফা, তামান্না, প্রিয়াঙ্কা, জান্নাত, সাজ্জাদ, সুদীপ, রোপম এর কথা মনে পড়ছে। পড়ালেখা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে এরা প্রায় সবাই ভালো ছিল।

৪র্থ শ্রেণিতে পড়ানো একটু কষ্টকর ছিল। শিক্ষার্থী বেশি থাকায় খুব হৈ-হুল্লা হতো। তাছাড়া এদের ক্লাসটা শেষে হওয়ায় কে কার আগে বেরোবে সেই প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থাকত। এই ক্লাসের কয়েকজনের নাম মনে পড়ছে। এরা হলোঃ সিয়াম, জিহাদ, মোস্তাকিম, নিলয়, জুহান, ইভা, জিমিয়া, তন্নি, ফাতিমা ও তৃষা।

৫ম শ্রেণিতে কম ক্লাস নিয়েছি। এ ক্লাসের সবাই প্রায় মেধাবী ছিল। তার স্বাক্ষরও রেখেছে। এ বছর ২৯ জনের ১৮ জনই এ+ পেয়েছে। বাকিদের নাম্বার প্লাসের কাছাকাছি। এখানে কয়েকজনের নাম বলছি। এরা হলোঃ নবনীতা রায় পাপড়ি, পুষ্পি, এ্যানি ও অপর্ণা।

৮ম শ্রেণির রেজাল্ট খুব একটা ভালো হয় নি। তবে সবাই পাশ করেছে। ফেলের ছাত্ররা পাশ করাই বড় কথা- এটাই আপাতত সান্ত্বনা।

ডিসেম্বরে ক্লাস পরীক্ষা সব শেষ হয়ে যাওয়ায় স্কুলটা আমার কাছে বিরানভূমি মনে হলো। এমনিতে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত, শিক্ষার্থী কম; তার ওপর স্কুলের বয়োজ্যেষ্ঠ কয়েকজন শিক্ষক 'গাজীপুর পাইলট' নামে একটা স্কুল শুরু করলেন। 'প্রাইমরোজ' এর শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার তীব্র আশঙ্কা দেখা দিল।

'শাইনিং পাথ' এ অনেক শিক্ষার্থী ছিল। এখানে এত কম শিক্ষার্থীর মাঝে মন টিকল না। প্রধান শিক্ষককে জানিয়ে দিলাম, 'আমি আর এখানে থাকছি না।'
উনি আরও কিছুদিন থাকতে অনুরোধ করলেন। আমি অপারগতা প্রকাশ করলাম।

আরও দু'য়েক জায়গায় কথা হয়েছিলো। কোন এক জায়গায় ঢুকে যাবো বলে মনস্থির করে ফেলেছিলাম। ডিসেম্বরের শেষদিন পর্যন্তও জানতাম না অবশ্য কোথায় ঢুকবো। তবে 'নজরুল বিদ্যানিকেতন ও হাইস্কুল' নামে একটা প্রতিষ্ঠানে মোটামুটি পাকা কথা হয়েছিলো।

'প্রাইমরোজ' ছাড়ার পেছনে আরও কারণ ছিল। বেতন কম হওয়ায় এখানে থাকতে হলে টিউশনির ওপর নির্ভর করতে হতো। এটা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। আর সবসময় ইংরেজি পড়ানোতে অভ্যস্ত; এখানে ইংরেজি শিক্ষক থাকায় আমার কাছে মনে হয়েছিলো আমি না থাকলেও চলবে।

স্কুলটা এমনিতেই প্রচন্ড ধাক্কা খেয়েছে, তার ওপর আমি চলে আসায় প্রধান শিক্ষক খুব মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন। আমার পরিচিত একজনকে বলেছিলেন, 'উনি যদি ভালো কোথাও যেতেন, তাহলে তো সমস্যা ছিল না; উনি তো আরেকটা স্কুলেই ঢুকেছেন।'

আমি জানি না উনি কোথা থেকে জেনেছেন আমি আরেকটা স্কুলে ঢুকেছি। আমি উনাকে বলেছিলাম অন্য একটা ভালো চাকরিতে ঢুকবো হয়ত। পরিশ্রম বেশি হওয়ায় আর ঢোকার চেষ্টা করি নি। উনি হয়ত ভেবেছেন, আমি উনাকে মিথ্যে বলেছি। ভাবাটাও দোষের কিছু নয়; এ প্রতিষ্ঠানের পুরনো দু'জন শিক্ষিকা উনার সাথে প্রতারণা করে অন্য স্কুলে ঢুকেছেন।

ঠিক প্রতারণা হয়ত বলা যাবে না। এখানে সুবিধে করতে পারেন নি, অন্যত্র তো যাবেনই। আমি খুব বিস্মিত হয়েছিলাম এটা জেনে যে, আমার বেতন একটু বেশি ধরায় উনারা ঈর্ষান্বিত হয়েছিলেন; হওয়ারই কথা অবশ্য। আমি উড়ে এসে জুড়ে বসে বেতনে বেশি ভাগ বসাচ্ছি আর উনার বছরের পর বছর থেকে কম বেতনে চাকরি করবেন?

১ জানুয়ারি ছিল বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের তারিখ আর বই উৎসব। আর ঐ দিনই ছিল 'প্রাইমরোজ' এ আমার ৩ মাস চাকরির শেষদিন।

৫ মাঘ ১৪২৫ বঙ্গাব্দ
গাজীপুর।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:২১
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×