
ত্রিশালে ছিলাম তখন। ‘কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়’ এর ‘গাহি সাম্যের গান’ মঞ্চের সামনে বসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করছিলাম। সম্ভবত নজরুল জয়ন্তী ছিল। গানে যখন বুঁদ হয়ে আছি, হঠাৎ পরিচিত একটা কণ্ঠস্বর কানে এলো। পেছনে তাকিয়ে দেখি লুৎফর। কলেজ জীবনের সহপাঠী।
প্রসঙ্গত, লুৎফরের সাথে পরিচয় হাইস্কুলে থাকতে। অবশ্য তখন সে সহপাঠী ছিল না। দু’জন দুই স্কুলে পড়তাম। অনেকদিন যোগাযোগ ছিল না ওর সাথে। ‘আনন্দ মোহন কলেজ’ এর সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ দেখা। তারপর থেকে আবার যোগাযোগ শুরু।
যাহোক, তাঁবুর বাইরে চলে এলাম। লুৎফরের সাথে এক মেয়ে। নাম বলল, বিথী। চিনলাম না। পরে সে নিজেই বলল যে, কলেজে আমরা একসঙ্গেই পড়তাম। হতে পারে। আমরা ‘বিজনেস স্টাডিজ’ এর শিক্ষার্থীরা ‘মানবিক’ এর শিক্ষার্থীদের সাথে অতটা মেশার সুযোগ পেতাম না। ক্লাস-প্রাইভেট নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হতো। তাছাড়া আমি মুখচোরা হওয়ায় ছেলেদের সাথেই মিশতাম না। মেয়েদের সাথে মেলামেশা তো দূর কী বাত!
বিথী এক মেয়েকে ফোন দিল। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে চলে এল ও। শেওড়াতলায় বসে গপসপ করছিলাম। মেয়েটার সাথে পরিচিত হলাম। ছোটোখাটো গড়নের শ্যামলাবরণ মেয়ে। চেহারায় মায়া আছে। কিন্তু কথা বেশি বলে। ‘থিয়েটার ও পারফরম্যান্স’ বিভাগে পড়ে। মেয়েটা হিজাব পরা। কথাবার্তায় রক্ষণশীল মনে হলো অথচ এ কি না ‘থিয়েটার ও পারফরম্যান্স’ এ পড়ে? অবাক লাগল। ও বলল, “এ বিভাগে পড়ে সবাই নাটক-সিনেমায় অভিনয়ই করে না। অন্য ক্ষেত্রও আছে।”
বলে রাখি, ও ত্রিশালের স্থায়ী বাসিন্দা। যাহোক, কথা প্রসঙ্গে বললাম, “নজরুল খুব অভিমান নিয়ে গেছে ত্রিশাল থেকে। আপনারা লোক ভালো না।” ঠাট্টাচ্ছলে বললাম।
মনে হলো, সে বিরক্ত। বলল, “কেউ যদি রাত ৩টায় বটগাছের নিচে বসে বাঁশি বাজায় লোকের সমস্যা হয় না?”
অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরি করে যখন বিদায় নেব, তখন মেয়েটা আমার সম্পর্কে জানতে চাইল। সব বললাম। লেখালেখি যে পছন্দ, সেটাও বললাম। যেহেতু সে থিয়েটার নিয়ে পড়ে, ভাবলাম নিশ্চয়ই সাহিত্য পছন্দ করবে।
এদেশের অনেক শিক্ষার্থী যে নিজের পছন্দের বাইরের বিষয় নিয়েও পড়ে, এটা প্রথমবার বুঝতে পারলাম। ও ঠিকই থিয়েটারে পড়ে, কিন্তু ভালো লাগা এখানে না। হয়তো অন্য বিষয়ে সুযোগ পায়নি, তাই দায়ে পড়ে এ বিষয়ে পড়ছে।
লেখালেখি নিয়ে পড়ে যেন না থাকি, হিতোপদেশ দিল। বিরক্ত বোধ করলাম। কিন্তু কিছু বলার সুযোগ নেই। কথা প্রসঙ্গে জানতে পারলাম, অ্যাসাইনমেন্ট হিসেবে একটা নাটক লিখেছে সে। বললাম, একটা কপি যেন আমাকে দেয়।
পরদিন কল দিল আমাকে। খোঁজখবর নিল। কিন্তু তেমন উৎসাহ বোধ করলাম না আমি। অন্য একদিন দেখা করব বললাম। কয়েকদিন পর ত্রিশালে গিয়ে ফোন দিয়ে বললাম, “ক্যাম্পাসে আসবেন?”
ও বলল, “বিকেল হবে।”
আমার ক্লাস শেষ হয়ে গিয়েছিল। তাই এতক্ষণ অপেক্ষা করার ধৈর্য ছিল না। অন্যদিন দেখা হবে বলে লাইন কেটে দিলাম।
এরপর সে অনেকবার কল দিয়েছিল। কল ধরিনি। ভালো লাগাটা চলে গিয়েছিল। কেন? এখনও স্পষ্ট মনে পড়ে ও লেখালেখি অপছন্দ করত। প্রথম পরিচয়ের দিনই আমার ওপর খবরদারি ফলাতে শুরু করেছিল সে। আমি তো মুক্ত জীবনানন্দ! আমি কি বাঁধনে জড়াতে পারি?
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৪৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



