somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কত রাত না খেয়ে ছিলাম (দ্বিতীয়াংশ)

০১ লা জুলাই, ২০২২ সকাল ৭:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রথম পর্বের লিঙ্ক: Click This Link
কিন্তু খেতে তো হবে। না খেয়ে কি কেউ বাঁচতে পারে? একদিন-দু’দিন না খেয়ে থাকা যায়, কিন্তু দিনের পর দিন কি সম্ভব? তাই লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে হোটেলওয়ালাকে বললাম, একবেলার খাবারটা একটু কষ্ট করে আমার বাসায় দিয়ে আসা যায় কি না?

ওনার ওখানে দশ-বারো বছরের এক ছেলে কাজ করত। ওই ছেলে একদিন আমার ঘরে খাবার নিয়ে গেল। ভাতের প্লেট ছিল খোলা। লোকজনের সামনে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়লাম। স্কুলের ছেলেমেয়েরা দেখে ফেলল। এরপর থেকে ব্যাগে ভরে খাবারটা আমি নিজেই নিয়ে যেতাম।

স্কুলে ঢোকার সময় বলা হয়েছিল কোচিং চালু হবে এখানে। বেতন দুই হাজার হলেও কোচিং থেকে আরও তিন হাজার আসতে পারে। মোট পাঁচ হাজার। ভালুকার মতো মফস্বল এলাকায় এই টাকায় ভালোই চলবে। আমার ব্যক্তিগত খরচ তো আর অত বেশি না। বিড়ি-সিগারেটের আসক্তি নেই।

ত্রিশালে যখন ছিলাম, মনে মনে চাইতাম অন্তত তিন হাজার টাকা উপার্জন করতে। থাকা-খাওয়াটা চললেই হতো। বাড়ি থেকে টাকা নেওয়াটা ভালো লাগত না। তাছাড়া বাড়ি থেকে টাকা কেমনে দেবে? বাবা সৌদি আরবে থেকে দেশে চলে আসার পর তেমন কিছু করতে পারতেন না। সংসার খরচ, আমি ও আমার বোনদের পড়ালেখার খরচ সব মামারা দিতেন। তাদের কাছ থেকে খরচ নিতে আত্মসম্মানে লাগত।

ত্রিশালে এক সহপাঠীকে নিয়ে মেসে উঠেছিলাম যখন, দু’জন চিন্তা করতাম কীভাবে টিউশনি করা যায়। দিনরাত কত পরিকল্পনা করলাম। একসময় দেখা গেল সে কয়েকটি টিউশনি পেল, অথচ আমি একটাও পেলাম না। এক-দু’জন সহপাঠীর অনেক টিউশনি ছিল। সঙ্কোচে বলতে পারিনি, তাই তারা দেয়ওনি। তাদের ওপর অভিমান হতো খুব। কিন্তু কার সাথে অভিমান করব? এ সংসারে আমার আপনজন কে?

একসময় ময়মনসিংহ শহরে চলে গেলাম। কিন্তু সেখানেও কোনো টিউশনি পেলাম না। বিভিন্ন কোচিংয়ে সিভি দিলাম, ডাকেওনি। এমন হতাশায় নিমগ্ন হলাম যে, আমার পড়ালেখা শিকেয় ওঠেছিল। সে অন্য কাহিনী।

যাহোক, স্কুলে কোচিং চালু হলো। চলল কয়েকদিন। সর্বোচ্চ চেষ্টা করলাম এখানে টিকে থাকতে। কিন্তু ভাঙা কপাল কি আর জোড়া লয়? কিন্ডারগার্টেনের প্রধান হান্নান স্যার অসুস্থ হয়ে পড়লেন। ওনি কিছুদিন প্রতিষ্ঠানে ছিলেন না; এই সুযোগে বয়োজ্যেষ্ঠ কয়েকজন শিক্ষক কোচিংয়ের শিক্ষার্থীদের ভাগিয়ে নিয়ে গেলেন।

অকূলপাথারে পড়লাম আমি। প্রথমে যে কোচিংয়ে কাজ করার জন্য ভালুকায় গিয়েছিলাম, সেই কোচিংয়ের মহিলা একটা টিউশনি জোগাড় করে দিয়েছিলেন। একদিন পড়ানোর পর দ্বিতীয় দিন গিয়ে দেখি শিক্ষার্থী বাসায় নেই। ফোন দিলাম। অভিভাবক জানালেন, ছেলে স্কুলের শিক্ষকের কাছে পড়বে।

অনাহারে, অর্ধাহারে দিন কাটছিল আমার। এরমধ্যে হঠাৎ স্কুলের দু’জন মেয়েকে পড়ানোর প্রস্তাব পেলাম। বেতন এক হাজার করে। আমি তো তখন বেজায় খুশি। এগুলো শুরু করার পর আরও কিছু ছেলেমেয়ে জুটে গেল। মনে হলো অভাবের দিন বুঝি ফুরাল। কিন্তু তেমন কিছু হলো না। এই যে স্কুলের কিছু ছেলেমেয়ে আমার কাছে পড়ছে, বয়োজ্যেষ্ঠদের অনেকের সহ্য হলো না। আমার বিরুদ্ধে দল পাকাতে লাগলেন। স্কুলের প্রধান আমাকে পছন্দ করতেন, কিন্তু ওনার অনুপস্থিতিতে আমার টিকে থাকাই কঠিন হয়ে দাঁড়াল। কয়েকজন শিক্ষক সরাসরি অভিভাবকদের বললেন আমার কাছে যেন ছেলেমেয়েদের না পড়ায়। সরাসরি আমার বিরোধিতা করতে লাগলেন। বদনাম করতে লাগলেন।

একদিন স্কুলটা ছাড়তেই হলো। এরপর কয়েকটা কোচিংয়ে যোগাযোগ করলাম। ‘ভালুকা আইডয়াল’ নামে একটা থেকে ডাকল। সেখান থেকে আমার বাসা অনেক দূর। তাই বাসা পাল্টানোর সিদ্ধান্ত নিলাম। ভালুকার ‘মেঘার মাঠ’ নামক জায়গায় বাসাটা নিলাম। একমাস কোচিং করানোর পর সেখানকার এক ছাত্রকে বেত্রাঘাত করার কারণে চাকরিটা চলে গেল।

এরমধ্যে কয়েকটা টিউশনি ছিল। এছাড়া কিছুদিন আগে হঠাৎ এক কাজিনের সাথে বহু বছর পর দেখা হয়। তার মেয়েকে পড়াই। সে দু’বেলা খেতে দেয়। যদিও মাস শেষে তাকে কিছু টাকা দিয়ে দিই।

কাজিনের বাসা থেকে ‘মেঘার মাঠ’ এর বাসাটা বেশ দূরে। ‘হলি চাইল্ড’ নামে অন্য একটা কোচিংয়ে যুক্ত হলাম। ওই কোচিং শেষ করে আরও টিউশনি করে, ভাগ্নিকে পড়িয়ে নিজের বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত এগারোটা-বারোটা বেজে যেত।

নাহিদ নামে আমার একজন প্রিয় ছাত্র ছিল। ওর মা আমাকে সবিশেষ স্নেহ করতেন। বাসায় গেলে যত্ন--আত্মী করতেন, খাওয়াতেন। সুসম্পর্ক হয়ে গিয়েছিল এই পরিবারটার সাথে। একবার কী এক কারণে নাহিদকে বকাঝকা করলাম। সে মুখ ফুলিয়ে রাখল। তাদের বাসায় খাই বলে খাবারের খোঁটা দিল।

যে ছেলেটাকে এত পছন্দ করতাম, এক মুহুর্তে সব ভালো লাগা উধাও হয়ে গেল। তাকে পড়ানো বাদ দিলাম। অবশ্য তাতে তেমন সমস্যা হলো না আমার। টিউশনি আরও দুটো ছিল। আর একটা কোচিং তো ছিলই। সেগুলো করে মোটামুটি চলে যেত।

কোচিংটা একসময় সমস্যায় পড়ল। শিক্ষকদের বেতন হয় না। আমি যার মাধ্যমে গিয়েছিলাম, ওনি বেতন দিতে অপারগতা প্রকাশ করলেন। একসময় কোচিংটাই ছেড়ে দিলাম।

নানান কারণে মনটা বিষণ্ণ হয়ে ওঠল। মনে হলো ভালুকা ছাড়ার সময় বুঝি হলো। এখানে একদম মন টিকছে না আমার। যদিও টিউশনি করে টিকে থাকা যেত, কিন্তু এত এত ‘প্রতিকূলতা’ আমাকে স্থির হতে দিল না। গাজীপুরে পরিচিত এক ছোটো ভাইয়ের কাছে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৪৪
২২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শিকার !

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:১২



একটা শিকার-
শিকার করবো বলে মনে মনে পুষলেও শেষ পর্যন্ত করিনি স্বীকার!
যে লোহার আকশি দিয়ে শিকার গাঁথবো ভেবেছিলাম
প্রান্তরে নেমে দেখি আকশিরও মুখ ভোতা!
সে নাকি নিজেই কবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি'র লাখ লাখ কর্মী অপেক্ষা করছে, সর্দারের ১ম নতুন ডাকাতীর খবরের জন্য।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৩১



আওয়ামী লীগের সময়, যারা ১৭ বছর ডাকাতী করে যা জমায়েছিলো, বিএনপি'র কয়েক লাখ লোজজন তাদের থেকে একটা বড় অংশ ছিনিয়ে নিয়েছে; সেই প্রসেস এখনো চলছে। তবে, বস... ...বাকিটুকু পড়ুন

=জোর যার, ক্ষমতা তার=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৫৪



কনুইয়ের গুতাতে কার, জায়গাটা দখলে
কে সে, জানো তো সকলে!
ক্ষমতার লড়াইয়ে, বল চাই-
দেহে বাপু জোর চাই
জোর যার, ক্ষমতা তার,
রাজনীতির ছল চাই।

ক্ষমতাটা নিতে চাও, জোর চাই
দেহ মাঝে বল চাই,
ধাক্কায় নির্বল, ফেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামপন্থী রাজনীতির বয়ান এবং জামাতের গাজওয়াতুল হিন্দ-এর প্রস্তুতি

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০


গোরা উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ নিজে ব্রাহ্ম হয়েও, ব্রাহ্ম সমাজের আদর্শের বিপরীতে "গোরা" নামে একটি চরিত্র তৈরি করেন। গোরা খুব কট্টরপন্থী হিন্দু যুবক। হিন্দু পরিচয়ে বড় হলেও, আসলে সে আইরিশ দম্পতির... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫ আগস্টের পর তো কিছুই বদলায়নি

লিখেছেন মুনতাসির, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৯

অনেকেই বলেন, ৫ আগস্টের পর তো কিছুই বদলায়নি। এই কথাটার সূত্র ধরেই এগোনো যায়। ৫ আগস্টের পর আমাদের কোন কোন পরিবর্তন এসেছে, সেটাই আগে দেখা দরকার। হিসাব করে দেখলাম, বলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×