
শাহবাগে একজনের সাথে দেখা করে মালিবাগ এসেছি। একটা কাজ করে ভাবছি কোচিংয়ে যাব কী যাব না। ভাবতে ভাবতে দুই ঘণ্টা পার। হঠাৎ ফেসবুক গ্রুপে দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন মেসেজ করলেন, “রূপক স্যার, আপনি কোথায়?” কোচিং কাছেই ছিল। দ্রুত সেখানে চলে গেলাম।
ক্লাস করতে করতে মেজো বোন ফোন দিল। সে সচরাচর এমন সময় ফোন দেয় না। জানে আমি বাইরে থাকি।
তার সাথে কথা বলে জানলাম মা অনেক অসুস্থ। হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে তাকে। একসপ্তাহ ধরে নাকি শ্বাসকষ্ট। বুক ফেটে কান্না এলো আমার। কিন্তু ঢাকা শহরে কান্না করার জায়গা কই? অসুস্থ এজন্য না শুধু, মার জন্য কিছুই করতে পারছি না; এজন্য মন ভারি হলো।
আমার বাবা বছরের পর বছর ধরে অসুস্থ। ওনার সেবা-শুশ্রূষা করতে করতে মা কাহিল হয়ে গেছেন। আলাদাভাবে ওনার চিকিৎসা করানো হয়নি। মাঝেমধ্যে ফার্মেসি থেকে অল্পবিস্তর ওষুধ আনা হয়, কিন্তু বড়ো ডাক্তার কখনও দেখানো হয়নি।
২
রাতে মেজো বোন আবার ফোন দিল। বোনজামাই একটা বিপদে পড়েছেন। ওনি পল্লি চিকিৎসক। এক মেয়ের চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন তিনি। সে খায় না ঠিকমতো। খাওয়ার স্যালাইন দিয়ে চলে এলেন। পরদিন দেখা গেল মেয়েটা মারা গিয়েছে।
মেয়েটাকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। কোনো ঝামেলা ছিল বোধহয়। শ্বশুরবাড়ির লোকজন একদিন পরে নিয়ে যেতে বলল। পরদিন যে লাশ যাবে কে জানত! আমরা ধারণা করছি মেয়েটাকে হত্যা করা হয়েছে।
মেয়েটা খুব দুঃখী ছিল। বাবা দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। মা অন্য লোকের সাথে ভেগে গেছেন। ভাইদের অভাবের সংসার। সে ভাইদের বিপদে ফেলতে চায়নি, তাই হয়তো কষ্ট করে রয়ে গিয়েছিল। বিয়ে হয়েছে মাত্র ৩ মাস।
হত্যা মামলা হয়েছে। একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বোনজামাইয়ের কাছে ফোন আসে পুলিশের। ৪-৫ বার দেখাও করেছে। তদন্তের খাতিরে আসতেই পারে। কিন্তু ইদানীং মনে হচ্ছে পুলিশ টাকা খেতে চায়।
বেচারা মেয়ে বিয়ে দিয়ে সর্বস্বান্ত। এখন টাকা পাবে কই? মেজো বোন আমাকে বলে মেয়ের ভাইকে কিছু বলতে। সে আমার সহপাঠী ছিল। সহমর্মিতা জানাব না কি বোনজামাই বিপদে যেন না পড়ে; সেজন্য অনুরোধ করব ভেবে পাই না। মেজো বোন ফোন নাম্বার নেয়। সহপাঠীর সাথে কথা বলে। সহপাঠী জানায় ওনার কোনো সমস্যা হবে না। সমস্যা হবে না, কিন্তু তবুও পুলিশ দেখা করতে বলে। বোনজামাই আতঙ্কে থাকেন। আমি ফোন দেই সহপাঠীকে। সে ফোন ধরে না।
৩
টিউশনিতে যাব, কিন্তু ফোন দিয়ে জানায় বাচ্চা অসুস্থ। যাই না। পরদিন গিয়ে দেখি বাচ্চার মাও অসুস্থ। আলাপ করে চলে আসি, বুদ্ধি পরামর্শ দেই। এদিকে নিজেও অসুস্থ। প্রেশার লো হয়ে যায়। চলতে পারি না। পরদিন আবার পড়াতে যাই। অল্প পড়াই। বাচ্চা অসুস্থ তো! তারপর অভিভাবকের সাথে গল্পসল্প করে চলে আসি।
এদিকে কোচিংয়ে যাওয়ার ইচ্ছে হয় না। অল্প টাকা, কিন্তু ৬ ঘণ্টা কথার ওপরই থাকতে হয়। অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ছুটি নেই।
একটা চাকরির কথা। গিয়ে কথা বলি। অনলাইন বেজড চাকরি। কতটুকু পারব সেটা নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। এদিকে অন্য একটা চাকরি হওয়ার কথা। সেটাও অনলাইন বেজড। বাসায় ওয়াইফাই নেওয়ার চিন্তা করতে করতে সময় যায়। বাসায় মালিকের চেয়ার টেবিল আছে। চাইলেই কম্পিউটার বসিয়ে ব্যবহার করতে পারি। ভাবতে ভাবতে অন্যদের দখলে চলে যায়।
গত ৫-৬ বছরে কী করলাম, জীবনের হিসেব কষি। শুয়ে-বসে চিন্তা করা ছাড়া তেমন অর্জন দেখি না। যা উপার্জন করি, বাড়িতে পাঠিয়েও সে টাকায় কোনোমতে চলা যায়; কিন্তু আমার চলে না। কেন চলে না সেটাও মেলাতে পারি না। সবার অঙ্ক মেলে আমার অঙ্ক মেলে না। এমন না যে প্রচুর খরচ করি বা কোনো নেশার বদভ্যাস আছে।
বিভিন্ন জায়গায় সিভি পাঠাই, কিন্তু সুখবর আসে না। টেনশনে দিনদিন মেজাজ খিটখিটে হতে থাকে। নিজেকে পাগল পাগল মনে হয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০২৪ দুপুর ১২:০৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




