somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশ্ববিদ্যালয়ে র‌্যাগিং- জঘন্য এক অনুশীলন

২১ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ১০:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিশ্ববিদ্যালয়ে র‌্যাগিং খুব প্রচলিত ঘটনা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বোধকরি সবচেয়ে কুখ্যাত। ঢাবি, জগন্নাথও কম যায় না। মেডিকেল, বুয়েটও আছে। চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোয় কমবেশি এর চর্চা চলে। জাতীয়ও বাদ না। ঢাকা কলেজ, তিতুমীর কলেজও এর অন্তর্ভুক্ত। এমনকি মেয়েদের হলেও চলে। শোনা যায় ইডেন, জাহাঙ্গীরনগরের মেয়েরাও বেশ এগিয়ে।

শুধু হলে চলে; এমন না। ক্যাম্পাস সংলগ্ন ছাত্রাবাসেও র‌্যাগিং চলে। যাকে এক প্রকার নির্যাতনও বলা যায়। আদব-কায়দা শেখানোর নাম করে নিপীড়ন করা হয় শারীরিক এবং মানসিকভাবে। গত বছরও তো ঢাবির এক শিক্ষার্থী তার ভর্তি বাতিল করে এলাকার এক কলেজে ভর্তি হয়েছিল। অনেকে চুপ করে সহ্য করে যায়। পরবর্তীতে সে একই কাজ করে জুনিয়রদের সাথে। এমনটাই বহুদিন ধরে চলে আসছে।

আগে বিষয়গুলো নিয়ে তেমন কথা বলা হতো না। যেমন বলা হতো না মাদ্রাসায় শিশু বলাৎকার নিয়ে। এখন কোনোকিছুই চাপা থাকে না। সব দিনের আলোর মতো সামনে চলে আসে। তবুও যে পরিস্থিতির খুব বেশি পরিবর্তন হয়েছে, ব্যাপারটা তেমন না। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে অনেকে তো কুকর্ম করেও ঘুরে বেড়ায়।

আমার পড়ালেখা প্রত্যন্ত এলাকায়। স্কুল, কলেজ; এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ও ময়মনসিংহে। যদিও উপজেলা ভিন্ন।

১৮ বছরের আমি মাত্র ত্রিশালে গিয়েছি। কয়েকমাস ময়মনসিংহ সদরে কোচিং করলেও এই প্রথমবার কোনো জায়গায় অনেকদিন থাকার জন্য গেলাম। পথঘাট চিনি না। উঠলাম ‘খাদিজা ছাত্রাবাস’ নামে এক ছাত্রাবাসে। রুমমেট নাহিদ নামের এক বড়ো ভাই। তার বাড়ি রংপুর। লোক খারাপ না। তবে তুখোড় ধূমপায়ী। সারা ঘর সিগারেটের প্যাকেটে ভর্তি। পরিষ্কার করে কোনোমতে রাত্রীযাপন করলাম।

পরদিন পত্রিকা পড়তে গেলাম। রুমমেট বড়ো ভাই বললেন, “সিনিয়ররা আগে পড়বে।” আমি তো থ বনে গেলাম। আমি যখন পত্রিকা হাতে নিই, ঘরে কেউ ছিল না।

সন্ধ্যে নেমে এসেছে কেবল। আমি একটু বাইরে বের হব। হঠাৎ একজন ইশারায় একটা ঘর দেখিয়ে বলল, ওই ঘরে বড়ো ভাইয়েরা যেতে বলছে।

একটু বিব্রত আমি। কাউকে তেমন চিনি না। হঠাৎ কোথায় যাব? এমনিতেও মানুষের সাথে মেলামেশা কম আমার। যেতে যেহেতেু বলছে, না গেলে হয়তো সমস্যা হবে। তাই সাহস করে গেলাম। যা হওয়ার হবে।

ঘরে প্রবেশ করে দেখি ১৫-২০ জন খাট, চেয়ারে বসে আছে। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজনকে জেরা করছে। আমি ভাবলাম, হয়তো কোনো অপরাধ করেছে, তাই জেরা করছে।

আমি দরজার কাছে দাঁড়ানো। দেখলাম বামপাশের এক কোণে চাপ দাড়িওয়ালা এক ছেলে কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে। চেহারা কাঁদো কাঁদো। পরবর্তীতে তার নাম জেনেছিলাম ফিরোজ। তার পাশে দাঁড়ানো একজনের চেহারা ভীত-সন্ত্রস্ত। আরিফ তার নাম। বোধকরি একটু আগে তার ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেছে। উভয়ের বাড়ি গাজীপুর।

আমার পাশে একজন কান ধরে দাঁড়িয়েছিল। বেশ লম্বা আবার ফর্সা ছেলেটার চেহারা লাল হয়ে আছে। মিরাজ নাম। চট্টগামে তার বাড়ি। তার সামনে একটা পত্রিকা। অর্ধ নগ্ন এক মডেলের ছবি দেখা যাচ্ছিল। তাকে বলা হলো মডেলের ছবিতে চুমো দিতে। যা বলা হলো, ভয়ে ভয়ে তাই করল।

আরও অন্যদের বিভিন্ন শাস্তি দেওয়া হলো। এবার আমার পালা। বলল, “২ এর নামতা বল।” মেজাজ খারাপ হয়ে গেল আমার। চেনা নেই, জানা নেই এমন কাউকে তুইতোকারি করে কেমনে মানুষ! বিরক্ত হয়ে বললাম, “২ এর নামতা পারি না।”

এটা বলাই কাল হলো আমার। ৩ ঘণ্টা চলল অকথ্য গালিগালাজ। ইমরান নামের একজন ছিল তাদের সর্দার। এছাড়াও মনির, জনি নামেও দুই জন ছিল।

৩ ঘণ্টা পর পাশের ঘরে নেওয়া হলো আমাকে। আমিনুল আর অপু নামের দুই বড়ো ভাইয়ের ঘর। অপু একটা খোলামেলা ছবি দেখিয়ে বলল, “এর বুকে চুমা দে।” আমি তো অপমানে বিবর্ণ হয়ে গেছি। যখন কথা শুনছি না, গালমন্দ শুরু করল এখানেও। চলল রাত ১০টা পর্যন্ত। বদরুল নামের এক বড়ো ভাইয়ের সাথে এখানেই পরিচয় হয়েছিল। ওনি আমাকে উদ্ধার করে নিয়ে যান।

রাতে ঘুম হলো না। প্রতিশোধ নিতে মন অস্থির। কিন্তু কেমনে নেব? এখানে তো পরিচিত বা প্রভাবশালী কেউ নেই। পরদিন ঘর থেকে বের হলাম। তৌহিদ নামের একজন তার ঘরে ডেকে নিল। তার সাথে সুমন নামের একজন। যতটা সম্ভব তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করল। এই তৌহিদ সম্পর্কে শুনেছিলাম অর্থনীতির ফার্স্ট বয়। হিসেব মেলাতে পারছিলাম না। এত জঘন্য যার ব্যবহার, সে ফার্স্ট হলেই কী না হলেই কী! এ নাকি এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের বড়ো একটা পদে আছে।

অনেক বছর আগে ময়মনসিংহে একবার দেখা হয়েছিল। আগ বাড়িয়ে কথা বলেছিল। বিরক্ত মুখে উত্তর দিয়েছিলাম। হয়তো বুঝতে পেরেছিল তাকে ক্ষমা করতে পারিনি। কেমনে ক্ষমা করব? ছাত্রাবাসে থাকাটা তো কঠিন করে তুলেছিল। তাও কষ্ট করে ৬ মাস ছিলাম। যেদিন চলে আসব; সেদিনও সে খারাপ ব্যবহার করেছিল। এসব জানোয়ারকে কি কখনও ক্ষমা করা যায়? অবশ্য সে ক্ষমা চায়ও নি।

মারুফ নামের একজন ক্যাম্পাসে দুর্ব্যবহার করেছিল। এমন এমন কত ঘটনা যে আছে, মনে পড়লে খুব অসহায় বোধ করি। র‌্যাগিং যে কত ঘৃণ্য, ভুক্তভোগী ছাড়া অন্যরা কখনও বুঝবে না। এখনকার উদ্ধত ছেলেমেয়েদের কিছুটা শিষ্টাচার শেখানোর দরকার আছে বটে। তবে সেটা অবশ্যই সীমার মধ্যে রেখে। সেটা নিপীড়ন যেন না হয়ে যায়। আর যারা আগে থেকেই ভদ্র, তাদের নিশ্চয়ই বেশি কিছু শেখানো দরকার পড়ে না?
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০২৪ দুপুর ১:০৫
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজনীতির পন্ডিত, ব্লগার তানভীর জুমারের পোষ্টটি পড়েন, জল্লাদ আসিফ মাহমুদ কি কি জানে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৯



সামুর রাজনীতির ডোডো পন্ডিত, ব্লগার তানভীর ১ খানা পোষ্ট প্রসব করেছেন; পোষ্টে বলছেন, ইউনুস ও পাকিসতানীদের জল্লাদ আসিফ মাহমুদ ধরণা করছে, "সেনাবাহিনী ও ব্যুরোক্রেটরা বিএনপি'কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নীল নকশার অন্ধকার রাত

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৬


কায়রোর রাস্তায় তখন শীতের হিম হাওয়া বইছিল। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। দুইটা বড় সংবাদপত্র অফিস: আল-আহরাম এবং আল-মাসরি আল-ইয়াউম—হঠাৎ করেই আগুনে জ্বলে উঠলো। কিন্তু এই আগুন কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদি ভাই, ইনসাফ এবং একটা অসমাপ্ত বিপ্লবের গল্প

লিখেছেন গ্রু, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৮



ইদানিং একটা কথা খুব মনে পড়ে। হাদি ভাই।

মানুষটা নেই, কিন্তু তার কথাগুলো? ওগুলো যেন আগের চেয়েও বেশি করে কানে বাজে। মাঝেমধ্যে ভাবি, আমরা আসলে কীসের পেছনে ছুটছি? ক্ষমতা? গদি? নাকি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×