somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সহজ কথা যায় না লেখা সহজে

১৭ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ৮:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সহজ কথা যায় না লেখা সহজে
এবারের (২০২৩) বইমেলায় গিয়ে একবার অসুস্থ বোধ করছিলাম। মানে, মাথাব্যথা আর শারীরিক দুর্বলতায় (সম্ভবত প্রেশার লো হয়ে গিয়েছিল) ভুগছিলাম। আমার এক ছাত্র, যে বইমেলায় দায়িত্ব পালন করছিল (শাহবাগ থানার অধীন) সে আমাকে বইমেলাস্থ প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে গেল।

ওখানে দু’জন স্ত্রীলোক বসা ছিলেন। তারা আমার নাম এবং বয়স একটা খাতায় টুকে নিলেন। তারপর জানতে চাইলেন কী সমস্যা আমার। সমস্যার কথা জানালাম তাদের। তারপর সুন্দর মতো একটা প্যারাসিটামল দিলেন তারা। নাম-বয়স আর সমস্যা যেভাবে আগ্রহ নিয়ে জানতে চেয়েছিলেন, আমি ভেবেছিলাম বিশেষ চিকিৎসা সেবা পাব। কিন্তু এখন দেখি শুধু প্যারাসিটামল।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কথা মনে পড়ল। তখন মেডিক্যাল সেন্টারে গেলে এই প্যারাসিটামল দিত। হয়তো মাঝেমধ্যে হিস্টাসিন দিত। মনে মনে ভাবতাম, শুধু এই ওষুধ বিতরণের জন্য মেডিক্যাল সেন্টার?

আসলে দোষ তাদের না, বস্তুতঃ দোষ কারও না। বইমেলা বলি, আর বিশ্ববিদ্যালয় বলি; যে পরিমাণ মানুষ, সবাইকে একটা করে প্যারাসিটামল দিলেও কিন্তু অনেক।


বিভিন্ন স্কুলে যখন পড়াতাম, মাঝেমধ্যে গাল-মন্দ করতাম শিক্ষার্থীদের। বিনা কারণে না অবশ্য। পড়া না পারলে বা কথা না শুনলে। মাঝেমধ্যে মারধরও করতাম। অবাক করা ব্যাপার হলো, এরা খুব কম সময়ই আমার নামে অভিযোগ করেছে। মন খারাপ করেছে ঠিক আছে, কিন্তু একসময় স্বাভাবিক হয়ে গেছে। অথচ অনেক শিক্ষক সামান্য রাগ করে কথা বললে ক্ষেপে যেত ওরা। মা-বাবার আদরের ছেলে-মেয়ে। এরা কোনো শাসন-বারণ পছন্দ করত না।

আমার সহকর্মীরা বিশ্বাস করতেন না আমি বকাঝকা করতে পারি। তারা সবসময়ই আমাকে ভদ্রগোছের ভাবতেন। ভাবতেন ভাজা মাছটি উল্টে খেতে পারি না। অথচ ভাজা মাছ খুব পছন্দের আমার। কাঁটাসহ খেয়ে ফেলি।

এখন দুটো বাচ্চাকে একসঙ্গে পড়াই। ছোটটা পড়ে প্লেতে। পড়াতে গেলে আমার মুখ দেখে বুঝে যায় মন ভালো না কি খারাপ। মাঝেমধ্যে বকাঝকা করলে বলে, “স্যার, আপনার কি মন খারাপ?” তখন খুব মায়া হয়। বলি, “হ্যাঁ, মা।” তখন সেও মন খারাপ করে। একসময় স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করি। সেও স্বাভাবিক হয়।

বড়োটা থ্রিতে পড়ে। চুপচাপ স্বভাবের। সেও আমাকে পড়তে পারে। পড়ালেখা ঠিকমতো না করলে বকলে মন খারাপ করে। পরে মন খারাপ করেছে কি না জানতে চাইলে বলে, “না, স্যার। ভালোর জন্যই তো বকেছেন। অন্যসময় তো আদর করেন।”

বাচ্চারা কখনও জানার সাহস করে না কেন মন খারাপ বা এসব। কিন্তু অন্যরা যখন জিগ্যেস করে, আমি বুঝে উঠতে পারি না ঠিক কী বলব। অনেক সময় দেখা যায়, ওদের কৌতূহল নিবৃত্ত করতে গিয়ে একটা কিছু বলে ফেলি। কিন্তু পরক্ষণে নিজেকে অসৎ মনে হয়। মনে হয়, আমি হাতুড়ে ডাক্তার। অসুখ নির্ণয় না করেই ওষুধ খুঁজি। আসলে রোগ সারে না।


১০ বছর বয়স থেকে ছড়া লিখি। পরবর্তীতে কবিতা, গল্প; এমনকি উপন্যাসও আছে। যদিও প্রকাশিত হয়নি। গল্প-কবিতা কিছু কিছু পত্রিকা বা সাময়িকীতে গেছে। তো এসব লিখতে গেলে মনে হয় যা বলতে চাই, বলতে পারিনি। এমনও হয়েছে, গোটা লেখা বদল করে ফেলেছি। এমনকি মূল বক্তব্য পুরোপুরি বদল হয়ে গেছে।

আমার মনে আছে, একবার এক বসায় ৭০টা কবিতা কেটে দিয়েছিলাম। গত ১৯ বছরে যতগুলো কবিতা লিখেছি (৮০০+), এখান থেকে নিজের কাছে ভালো মনে হওয়াগুলোই রেখে দিই, বাকিগুলো বাতিলের খাতায় থাকে।

দেখা যায়, বেশিরভাগ লেখা নিয়ে অতৃপ্তি থাকে। মনে হয়, সময় নিয়ে লেখা উচিত ছিল। অথচ সময় নিয়ে কিছু লিখতে পারি না। এখন যে লেখাটা লিখছি; এটাও তাৎক্ষণিক। মানে, ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে মাথায় যা এসেছে, তা নোটপ্যাডে লিখছি। আর লেখার ভাবনাটা এসেছে সন্ধ্যের ঠিক আগে আগে।


‘সর্বাঙ্গে ব্যথা ওষুধ দেব কোথা’ পঙক্তিটার সঙ্গে সকলেই কমবেশি পরিচিত। মানুষের মাঝেমধ্যে এমন অবস্থা হয়ে দাঁড়ায় যে, সে ঠিক বুঝতে পারে না তার সমস্যাটা ঠিক কোথায়। অথবা ধরতে পারে না কোথায় তার সমস্যা নেই। এত এত সমস্যার সাগরে সে সাঁতরে বেড়ায় যে, সে দিশা খুঁজে পায় না। তখন সে মানসিক অসুস্থ হয়ে যায় অথবা আত্মহননের পথ বেছে নেয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যে নিজেকে ধরে রাখতে পারে, সেই টিকে থাকে।

টিকে থাকতে হলে দরকার সমস্যার কারণ অনুসন্ধান। তারপর সে অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া। ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ না থাকলে ধৈর্য ধরা প্রয়োজন। মনোবল বাড়ানো প্রয়োজন।

পৃথিবীটা মস্ত বড়ো। সবার যে প্রথম চেষ্টায় সফল হতে হবে, এমন না। ব্যর্থ হওয়ারও দরকার আছে জীবনে। নেলসন ম্যান্ডেলা বিজয়ী হয়েছেন, সেটা মনে রাখা যেমন জরুরি, তারচেয়েও জরুরি এটা জানা যে, তিনি কতবার ব্যর্থ হয়েছেন। হারতে হারতেই তো মানুষ জিততে শেখে।

যার অল্প রুজি সে যেমন বেঁচে থাকে, যার অনেক রুজি সেও বেঁচে থাকে। হয়তো জীবনধারা ভিন্ন। এখানে মুখ্য হলো বেঁচে থাকা আর জীবনটাকে উপভোগ করা, জীবনকে অর্থবহ করে তোলা। অনেক অর্থ থাকা সত্ত্বেও অনেকে জীবনে আনন্দ খুঁজে পায় না, অথচ অনেকে সামান্য অর্থ উপার্জন করেও জীবনের অর্থ খুঁজে পায়।

পৃথিবীটা সুন্দর। এখানে সুন্দরভাবে বাঁচতে শিখতে হয়, অন্যকেও সঙ্গে নিতে হয়। জীবনকে উপভোগ করাই বড় কথা।

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০২৪ বিকাল ৪:১২
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×