somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শাহরিন নূর মোহাম্মদ কলেজে পড়ত

০৮ ই জুন, ২০২৩ রাত ১১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি কী মার্চ মাসের কথা। গাজীপুরের টেকনগপাড়া এলাকায় থাকতাম আমি। একটা স্কুলে পড়াতাম আর রুমে বসে লেখালেখি করতাম। ফেসবুক চালাতাম, ইউটিউব ঘাঁটতাম। আর ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনা করতাম

একবার একটা সিরিয়াস লেখা পোস্ট করলাম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। খেয়াল করলাম, কেউ একজন হাসির রিয়েক্ট দিয়েছে সে লেখায়। খুব বিরক্ত লাগল। সিরিয়াস বিষয়ে কেউ হাসাহাসি করলে তা গায়ে লাগবেই না বা কেন?

হাসির রিয়েক্টদাতাকে (দাত্রী) মেসেজ করলাম। বললাম, ‘মানুষের সমস্যা নিয়ে হাসাহাসি করতে হয় না।'

মেসেজের রিপ্লাই করল সে। দুঃখ প্রকাশ করল। জানাল, আমার লেখা নিয়মিত পড়ে। ভাবলাম, ফাঁপড় নিল না কি। পরে দেখি না সত্যি সত্যিই পড়ে। আমার কোন কোন লেখা তার মনে দাগ কেটেছে, তাও বলল।

সেই থেকে শুরু। নেটে এসে মেয়েটার প্রথম কাজ হলো, আমাকে মেসেজ দেওয়া, আমার খোঁজখবর নেওয়া। আমার যেহেতু স্কুলের বাইরে তেমন কাজ নেই, ওর সঙ্গে চ্যাটে সময় কাটতে লাগল।

আমার সম্পর্কে তার বিস্তর কৌতূহল। এমন কৌতূহল আগে কেউ কখনও দেখায়নি। আমারও বলতে ভালো লাগে। তার সম্পর্কেও জানতে চাই। সে কোথায় থাকে, কী করে; তার পরিবার সম্পর্কেও সব বলে। একমাত্র ছোট ভাই সম্পর্কে বলে।

এভাবে কয়েকমাস চলল। একদিন সে মেসেজ করল, ‘কাল থেকে নেটে আসব না।’ আমি হালকাভাবে নিলাম। কারও সমস্যা থাকতেই পারে, নেটে নাই আসতে পারে। এটা তো সিরিয়াসলি নেওয়ার কিছু নেই। তাই না?

আমি আমার কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। নেটেও আসা অনেকটা কমিয়ে দিলাম। চাকরিতে সমস্যা হচ্ছিল। সেটা নিয়েই সময় যাচ্ছিল। কারও কথা বিশেষ মনে পড়ল না।

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের কথা। একদিন এক মেয়ে, ফাহিমা আক্তার জান্নাত (নাবালিকা), ইনবক্সে ‘আই লাভ ইউ’ লিখে মেসেজ দিল। আমি খুব বিব্রতবোধ করলাম। ভাবলাম, কেউ হয়তো মশকরা করে চরিত্র যাচাই করছে।

কড়া রিপ্লাই দিলাম। সে জানাল, ৮ম শ্রেণির সেতু সে।

কালো কিন্তু ছিমছাম গড়নের একটা মেয়ে সেতু। খুবই ভদ্র মেয়ে। কয়েকমাস পড়িয়েছি। আমার প্রতি তার আগ্রহ ছিল কখনও খেয়াল করিনি।

প্রসঙ্গত, ততদিনে আগের চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছিলাম আমি। নতুন এক চাকরিতে ঢুকেছি কিছুূদিন হলো।

যাহোক, এসব যখন ঘটছে, তখন শাহরিনের কথা মনে পড়ল। সে নেটে থাকবে না; এটা আমাকে জানানোর মানে কী ছিল? সে কি ভাবছিল আমি তাকে বলব, থেকে যাও?

মেসেজ দিলাম, ‘সব ভালো তো?’

কয়েকমিনিট পর রিপ্লাই, ‘এতদিন পর?’

বুঝতে পারলাম, সে এতদিন অপেক্ষায়ই ছিল। তার পরবর্তী কাজকর্মগুলোও প্রমাণ করতে লাগল বিশেষ কিছু।

যে মেয়েটা একসময় নেটে থাকত না বললেই চলে, সে চুপেচুপে মায়ের মোবাইলে ফেসবুকে ঢোকে। তারপর তার একমাত্র কাজ আমাকে মেসেজ দেওয়া।

আমি তাকে যখন ‘সব ভালো তো?’ লিখে মেসেজ দিলাম, তখন ঢাকায় একুশে বইমেলায় যাচ্ছিলাম। বইমেলা শেষে গাজীপুর পৌঁছতে পৌঁছতে রাত দুটোর উপর বেজে গিয়েছিল। সে আমার অপেক্ষায় ছিল তখনও পর্যন্ত।

এপ্রিলের ১ তারিখে হঠাৎ আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসল। আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। সে অবস্থা বুঝতে পেরে বলল, আমাকে বোকা বানিয়েছে (এপ্রিল ফুল)।

সিরিয়াস টাইপ মেয়ে এমন করার কথা না। আমি দ্বিধায় পড়লাম।

আমি তখন টেকনগপাড়া ছেড়ে বারবৈকা এলাকায় থাকি। এখানে অন্য একটা স্কুলে চাকরি নিয়েছি। বেতন সুবিধার না। কিন্তু অন্য কিছু করারও ছিল না। তাই পেটেভাতে থাকতে হচ্ছিল।

একসময় গাজীপুরের কোনাবাড়ি চলে গেলাম। তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হতে লাগল। এখানে এক-দু’জন সহকর্মীর সঙ্গে মাঝেমধ্যে ঘুরতে বের হতাম। একদিন বের হব বলতেই জিগ্যেস করল, ‘ছেলে সহকর্মী না কি মেয়ে?’
ঠাট্টা করে বললাম, ‘মেয়ে।’

আর মেসেজ নেই তার। পরে যখন ছেলে সহকর্মীর সঙ্গে সেলফি তুলে পাঠালাম, তার মান ভাঙল।

যে মেয়েটার ফেসবুকে একটা ছবি পর্যন্ত নেই, সে আমাকে স্বেচ্ছায় ছবি দিতে লাগল। একটু অবাকই লাগল অবশ্য। তার সঙ্গে চ্যাট করে জানতে পারি, সে রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে। বাবা ব্যবসায়ী, তবে পাক্কা হুজুর।

এই যে এতদিন চ্যাট হলো, কখনো কলে কথা বলার কথা খেয়াল হয়নি। সেও বলেনি। যদিও একাধিকবার বলেছে, চ্যাটে সব কথা লেখা যায় না।

তখন মোবাইল নাম্বারটা দিয়েছিলাম। সে বলেছিল, সুযোগ হলে কল দেবে।

২০২০ সালের মার্চে করোনার উপদ্রব শুরু হলো। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেল। এপ্রিল কী মে তে আমি বাড়ি চলে এলাম। এর মধ্যে একটা দুঃখজনক ব্যাপার ঘটল। আমার ৭ বছরের ফেসবুক আইডি শকুনের নজরে পড়ল।

১৭ দিন পর অন্য একটি আইডি খুলে তাকে মেসেঞ্জারে নক দিলাম। তার কাছে যেহেতু আমার নাম্বার ছিল, ভাবছিলাম কল দেবে। হয়তো বাসায় সুযোগ পায়নি, তাই দেয়নি।

রিপ্লাই দিল। নতুন আইডিতে এডও হলো। আবার চ্যাট হতে লাগল। এর মধ্যে এলাকায় এক বন্ধুর লাইব্রেরিতে নিয়মিত যাতায়াত শুরু করলাম। অখণ্ড অবসর যেহেতু, বইপত্র পড়া শুরু করলাম।

এক সপ্তাহ নেটে ছিলাম না। তারপর একদিন নক দিলাম তাকে। সিন করল বটে, কিন্তু রিপ্লাই নেই। একদিন পর দেখলাম তার ফেসবুক আইডি ডিএকটিভ।

অনেকদিন পর আমার একটা স্টোরি সিন করেছিল সে। জিগ্যেস করেছিলাম, ‘রিপ্লাই দিলে না?’
সে জানিয়েছিল, তার বিয়ের কথাবার্তা চলছে। অতিশীঘ্রই বিয়ে হয়ে যাবে। আমিও যেন বিয়ে করে নিই; সেই নসিহত করল।

তারপর একদিন খেয়াল করলাম, সে আমাকে মেসেঞ্জারে ব্লক করে দিয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০২৩ ভোর ৬:৩২
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরিবি

লিখেছেন মৌন পাঠক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ৯:২১


চিত্রঃ অন্তর্জাল

গরিবি বা ফকিন্নি ও সেল করা যায়,
উহারে এনক্যাশ করা যায়।

সেই এনক্যাশমেন্টটা গরিব নিজেও সেল করতে পারে, আবার তার গরিবানারে অন্য কেউও এনক্যাশ করতে পারে।

দেশের সিংহভাগ এতিমখানা মাদ্রাসা এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

হেলুসিনেশন। চ্যাপ্টার ৮

লিখেছেন স্প্যানকড, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:৩৪

ছবি নেট ।

এ তুমি কি সেই তুমি?
যাকে খুঁজি দিবানিশি
এ তুমি কি সেই তুমি?
যার জন্য নিজেকে
খতম করতে রাজি।

এ তুমি কি সেই তুমি?
যার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কবিতা

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:৪২

"শেষ অধ্যায়"

তুমি আমায় দেবতাদের দেয়া
অভিশপ্ত সিসিফাস ভেবোনা,
আসলে আমি হই, জলন্ত কোনো অগ্নিকুণ্ড,
অথবা ভালোবাসার দুরন্ত কোনো
এক দুর্বাঘাস।

যেখানে তুমি নিশ্চেন্তে মুখ ডুবিয়ে
শ্বাস নিতে পার। অথবা তুমি
জানই না,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ প্লিজ বলে না, ধন্যবাদ বলে না, সরিও বলে না। ***************************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৩:১৫

আমাদের দেশের মানুষের খুব কমন একটি বিষয় একটু খেয়াল করলেই যে কারো চোখে পরে। আমাদের দেশের মানুষ পারতপক্ষে প্লিজ, সরি, ধন্যবাদ এই জাতীয় শিষ্টাচার বা এটিকেট (Etiquette) সমৃদ্ধ শব্দগুলোর ব্যবহার... ...বাকিটুকু পড়ুন

হ্যালোকাহিনী :) The HELLO Story

লিখেছেন আফলাতুন হায়দার চৌধুরী, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৫:৪৬

আমরা ফোন বাজলে প্রথমে বলি হ্যালো। প্রশ্ন হল হ্যালো আসলে কি?

কিছু মানুষ বিশ্বাস করতো হ্যালো হলেন টেলিফোনের আবিষ্কারক বিখ্যাত বিজ্ঞানী আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেল এর প্রেমিকা। এই নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×