somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্কুল পালানোর গল্প

০৪ ঠা জুলাই, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


তৃতীয় শ্রেণিতে উঠার পর স্কুল পালানো শুরু। টিফিনের পর কয়দিন ক্লাস করেছি, ঠিক মনে পড়ে না। ঘণ্টা পড়ার পর শার্টের নিচে হাফপ্যান্টের সঙ্গে বইগুলো চেপে ভোঁ দৌড়।

যেদিন বই বেশি থাকত, জানালা দিয়ে বাইরে সেগুলো ফেলে দিতাম। তারপর প্রস্রাব করার বাহানায় বাইরে এসে বইগুলো নিয়ে পাশের জঙ্গলে ঢুকতাম। তারপর কে আমাকে পায়!

চারটার আগে বাড়িতে গেলে মা বকবে, তাই টইটই করে সারা গ্রাম ঘুরে বেড়াতাম। চারটা বাজার পর বাড়িতে যেতাম। বইগুলো রেখে খেয়েদেয়ে আবার বাইরে বেরোতাম। সন্ধ্যে পর্যন্ত খেলাধুলা চলত।

আমাদের কমন খেলা ছিল দাঁড়িয়াবান্ধা। এছাড়া কাবাডি খেলতাম, ক্রিকেটও খেলতাম। ব্যাট হিসেবে ব্যবহার করতাম তালপাতার ডগা। জাম্বুরা দিয়ে ফুটবল বানিয়ে ফুটবলও খেলা হতো।

সন্ধ্যের পর সাড়ে আটটা পর্যন্তু চলত পড়ালেখা। তারপর টিভি দেখা। টিভি বলতে বিটিভি। বিটিভিতে তখন ভালো ভালো নাটক হতো। ধারাবাহিক নাটকগুলোর পর্ব দেখার জন্য সপ্তাহ করে অপেক্ষা করতে হতো।

আমাদের বাড়িতে যখন টিভি ছিল না, তখন পাশের বাড়িতে চলে যেতাম। সেখানে যদি ব্যাটারিতে চার্জ না থাকত, দেড় কিলোমিটার পথ হেঁটে পাশের গ্রামে চলে যেতাম। শুক্রবারে চলা বাংলা সিনেমা তো কখনোই মিস করতাম না।

পুকুরে সাঁতার কাটা ছিল নিত্যদিনের অভ্যাস। দেখা যেত দিনে এক-দু’ঘণ্টা সময় সাঁতার কেটেই চলে যেত। জাল দিয়ে মাছ ধরতাম। অনেক সময় বরশি দিয়ে। বাড়ি থেকে বেশ দূরে একটা খাল ছিল। কিশোর বয়সে বহুবার সেখানে জাল নিয়ে মাছ ধরতে যেতাম। খালুইয়ে করে মাছ আনতাম।

আমাদের গ্রামটা বেশি বড়ো নয়। প্রায় সব বাড়িতেই যাতায়াত ছিল। আমার বাবাকে সবাই চিনত। স্কুলে যাওয়ার সময় এক পোস্ট মাস্টারের বাড়ির ওপর দিয়ে যেতে হতো। ওই বাড়িটাকে কেউ কেউ উচালিবাড়ি বলত। উচালি জিনিসটা কী; এটা কখনও জানা হয়নি।

চতুর্থ, পঞ্চম বা আরও ওপরের ক্লাসে উঠার পর খুব কমই স্কুল মিস করেছি। স্কুল পালালেও স্কুলে যাওয়া কিন্তু কমেনি। ন্যূনতম টিফিন পর্যন্ত ক্লাশ করেছি। বৃষ্টি-বাদলও স্কুলে যাওয়া থামাতে পারেনি। ছাতা না থাকলে দেখা গেছে কলাপাতা মাথায় দিয়ে স্কুলে গেছি।

পঞ্চম শ্রেণিতে বাংলায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছিলাম। গণিতে বরাবরই দুর্বল ছিলাম। হাইস্কুলে ইংলিশে ভালো করতে শুরু করি। এই ধারাবাহিকতা কলেজ পর্যন্ত থাকে। কিন্তু গণিতের ভয় কখনও কাটেনি। কলেজে উঠার পর হিসাববিজ্ঞানের প্রতি ঝোঁক বাড়তে থাকে।

হাইস্কুলে উঠে বেশ চাপে পড়ি। হাতের লেখা না নিলে নীল ডাউন করে রাখা হতো। আর পড়া না পারলে মার। পড়ার জন্য মার কমই খেয়েছি, তবে হাতের লেখা না নেওয়ায় নীল ডাউন হওয়া কমন ছিল। আমার লেখা নিতে মনে থাকত না। অনেকদিন লেখা লিখেও ভুলে বাড়িতে রেখে গিয়েছি।

দশম শ্রেণিতে পড়ি তখন। অসুস্থ হয়ে পড়ায় দু’দিন স্কুলে যেতে পারিনি। সুস্থ হয়ে স্কুলে যেতে ভয় লাগছিল। কারণ, তখন নতুন নিয়ম হয়েছে ক্লাশে। একদিন না গেলে দশ টাকা জরিমানা, সাথে মার ফ্রি। তৃতীয় দিনও মিস গেল। স্কুলে যাব কী যাব না, ভাবছি। তিন দিনে ত্রিশ টাকা জরিমানা। সাথে ত্রিশটা বেত্রাঘাত।

ভয়ে স্কুলেই গেলাম না দেড় মাস। ক্লাস টিচার দ্বিজেন স্যারের মার খাওয়ার শখ হয়নি। বাড়িতে থেকেই পড়তাম। সহপাঠীদের কাছ থেকে পড়া জেনে নিতাম। এরপর বেশিদিন ক্লাস ছিল না অবশ্য। সামনে নির্বাচনি পরীক্ষা। একেবারে সে সময়ই স্কুলে গেলাম।

ছবি: ইন্টারনেট

আরও পড়ুন: পুরানো সেই দিনের কথা (ছেলেবেলার পোংটামি)
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০২৪ বিকাল ৫:৫১
৩৫টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৪৯

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

সবাই যখন ওসমান হাদিকে নিয়ে রিকশাওয়ালাদের মহাকাব্য শেয়ার করছে, তখন ভাবলাম—আমার অভিজ্ঞতাটাও দলিল হিসেবে রেখে যাই। ভবিষ্যতে কেউ যদি জানতে চায়, এই দেশটা কীভাবে চলে—তখন কাজে লাগবে।

রিকশায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×