somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মোবাইলে দুষ্টুমি

১০ ই জুলাই, ২০২৩ দুপুর ১২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মোবাইল আসার পর নম্বর বানিয়ে মিসকল দেওয়া ছেলেপেলের অভাব বোধহয় বঙ্গমুলুকে কখনোই ছিল না। আমি এসব তো করতামই, এর বাইরে যা করতাম, তা হলো- অপছন্দের শিক্ষকদের নম্বরে মিসকল দিতাম। কলব্যাক করলে রিসিভ করে রেখে দিতাম।

আমিনুল ইসলাম নামে এক শিক্ষক ছিলেন, আমরা ডাকতাম মঞ্জু স্যার। পেটানো স্বাস্থ্য ছিল উনার। গায়ের রং ছিল কুচকুচে কালো। ছেলেপেলেরা তাকে ‘পাঠা স্যার’ ডাকত। যদিও ব্যাপারটা বেয়াদবি পর্যায়ে চলে যেত। কিন্তু সেসবে ভ্রুক্ষেপ করত না কেউ।

কার কাছ থেকে যেন নম্বর পেয়ে উনাকে মিসকল দিলাম। ব্যাক করলেন কিছুক্ষণ পর। রিসিভ করতে ভয় লাগছিল। আমার সঙ্গে যে ছিল, সে বলল, “ভয় কেন? রিসিভ করে রেখে দে।” তাই করলাম। উনি কিছুক্ষণ হ্যালো, হ্যালো করে মোবাইল রেখে দিলেন।

উনার প্রতি ছেলেপেলের রাগের অন্ত ছিল না। সবসময় একটা ভাব নিয়ে থাকতেন। গ্রামের সরকারি স্কুল যেহেতু, আমাদের মতো চাষাভুষার ছেলেমেয়েরাই পড়ত বেশি। আমাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হতো। আরও একটা ব্যাপার খারাপ লাগত, যারা প্রভাবশালী তাদের ছেলেমেয়েদের যে যত্ন নেওয়া হতো, আমাদের তার সিকিভাগও নেওয়া হতো না। দেখা গেছে, ইচ্ছে করে পরীক্ষায় ফেল করানো হতো অনেককে। কলেজে উঠার পর এক স্যারের কাছে প্রাইভেট না পড়ায় নম্বর কম দিলেন। একজন তো আমাকে ইয়ার চেঞ্জ পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দিয়েছিলেন। অথচ বোর্ড পরীক্ষায় দেখা গেছে ওই বিষয়ে আমি ৮৫+ নম্বর পেয়েছি। এলাকায় যখন প্রাইভেট পড়াতাম, অনেক বছর পরও ওসব শিক্ষকের নামে একই অভিযোগ করত আমার শিক্ষার্থীরা। আমরা তেমন কিছু বলতেও পারতাম না। অনেক ছেলেপেলে ভাবতে শুরু করেছিল, শিক্ষকরা বোধহয় এমনই হয়। এ পেশাটার প্রতি ঘৃণা তৈরি হলো অনেকের।

দ্বিজেন স্যারের ছেলে তন্ময়ের সঙ্গে খাতির ছিল আমার। আমি তাকে শালা সম্বোধন করতাম, সে করত সম্বন্ধী। তাদের বাড়িতে গিয়ে স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়ায় সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছিল। তুম্পা নামে তার এক বড়ো বোন ছিল অবশ্য। একবার-দু’বার দেখেছিলাম। সম্পর্ক হয়নি, হওয়ার সুযোগও ছিল না।

তো একবার তন্ময়কে মোবাইলে মেসেজ দিলাম শালা সম্বোধন করে। পরদিন গিয়ে জানতে পারি, আসলে মেসেজটা তার বাবা, মানে দ্বিজেন স্যারের নম্বরে গিয়েছিল। আমি তো ভয়ে শেষ। স্যার অবশ্য কিছু বলেননি। এক-দু’দিন আমাকে দেখলে বিরক্তিভাব নিয়ে তাকিয়ে থাকতেন।

এ তো গেল দুষ্টুমির কথা। এবার দুটো ভালো ঘটনা বলি। একজন আমাকে কল দিয়ে গালমন্দ করছিলেন। বলছিলেন, টাকার মধ্যে নম্বর লিখে রাখিস। টাকা কি তোর বাপের? হেনতেন আরও কত গালমন্দ। মুখ বুজে সব সহ্য করলাম। ওপাশের অশ্রাব্য গালমন্দ শেষ হলে জানতে চাইলাম, কথা শেষ হলো কি না।

কিছু বলেন না। আমি বললাম, “আপনি কি কখনও টাকায় আপনার নম্বর লিখেছেন?” উনি না বললেন। আমি জানতে চাইলাম, “আপনার তাহলে কেন মনে হলো আমি টাকায় নিজের নম্বর লিখেছি? গালমন্দ শোনার শখে? এমন কি হতে পারে না কেউ শত্রুতা করে আমার নম্বর লিখেছে?” ওপাশের লোক আমার কথায় সায় দিলেন। আমি বোঝাতে সক্ষম হলাম আমি টাকায় নম্বর লিখিনি। উনি মাফ চাইলেন।

ওই সময়টায় অনেকেই শত্রুতা করে এর ওর নম্বর টাকায় অথবা টেবিল বা দেয়ালে লিখে রাখত। বিশেষ করে কোনো মেয়েকে প্রস্তাব দিলে সে রাজি না হলে তার নম্বরটাই লক্ষ্য থাকত। বাথরুমের দরজায় ছেলেমেয়ের নাম লিখে রাখত মাঝখানে যোগ চিহ্ন দিয়ে। আমি অবশ্য অতটা পেকে যাইনি তখনও। মনে পড়ে, কলেজে উঠার পর এক দাদা জিগ্যেস করেছিলেন, “লাভার আছে কি না?” আমি অবাক হয়ে জানতে চাইলাম, “এটা আবার কী?” উনি হেসে বলেছিলেন, “বাসায় গিয়ে ডিকশনারি খুঁজে বের করিস।” এখন ভাবলে অবাক লাগে লাভার মানে তখনও বুঝতাম না! এমন না যে লাভ শব্দটা পড়িনি, বা শুনিনি!

যাহোক, ছেলেরা আরও একটা কাজ করত তখন। কারও হাতের লেখা নকল করে এখানে-সেখানে উল্টোপাল্টা লিখে রাখত। একবার একজন পত্রিকার পাতায় এক মডেলের ছবির ওপর বুকের কাছে আমার নাম লিখে রেখেছিল। দন্তস্য এমনভাবে লিখেছিল, ঠিক যেভাবে আমি লিখি। বস্তুতঃ আমার নামটা ঠিক আমার মতোই লিখেছিল। আমি নিজেও দ্বিধান্বিত ছিলাম। যদিও আমি জানতাম, এমন কাজ আমি কখনও করব না। আমার ক্লাসমেট এক কাজিন লেখাটা পড়ে আমার দিকে শ্যেনদৃষ্টিতে তাকিয়েছিল। আমি তাকে কিছু বোঝাতে পারিনি।

এবার লেখাটা শেষ করব। এটাও গালমন্দ নিয়ে। আমাকে ফোন করে শালা সম্বোধন করে বকাঝকা করলেন একজন। আমি এবার ঠাণ্ডা মাথায় সব সহ্য করে একসময় বললাম, “দুলাভাই, স্টক শেষ?” ওপাশের লোকটা এবার থতমত খেল। এত গালমন্দের পর কেউ এমন নম্রভাবে কথা বলার কথা না।

উনি বুঝতে পারলেন ভুল নম্বরে ডায়াল করেছেন। উনি বললেন, “আপনি মিশুক না?” আমি বললাম, “মানুষটা আমি মিশুক, কিন্তু আমার নাম মিশুক না।” আমার কথা শুনে উনি নিজের ভুল বুঝতে পেরে দুঃখ প্রকাশ করলেন। আমি বললাম, “ঠিক আছে দুলাভাই। কাকে ফোন দিলেন; এটা নিশ্চিত হয়েই গালমন্দ বা যা খুশি বলতে পারেন। সবাই আপনার শালা নাও হতে পারে।”

ছবি: ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০০
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিকল্প খুজতে গিয়ে একি হাল?

লিখেছেন অনুপম বলছি, ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ২:৪৭

একটি লাল ফ্যাসিবাদী গল্প:

এক বার সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলি একটি স্টেসনারি দোকানে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ডায়মন্ড বল পেন আছে?’
সেলসম্যান মুখের উপর বলে দিল, “নেই” ।

চলে যাচ্ছেন । নিজেই ফিরলেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছের মানুষ

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:১৮

সংসার জীবন থেকে সন্যাস নিয়ে যেদিন ঘর থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলাম
সেদিনই কিছু কাছের মানুষ ঘরে এসে হাজির।
সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ঘরের দরজা পার হওয়ার আগেই দেখলাম-
সবাই আমার জিনিসপত্র নিজেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

খাও তবে কাঁচকলা, খাও তবে ঘন্টা। (ফেসবুকীয় রঙ্গ)

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫৪


(সুপ্রিয় ব্লগার ডঃ এম আলী ১৭ ই জুলাই, ২০২৪ রাত ১:৪২ শেষবার মন্তব্য করেছিলেন। তারপর আর উঁনাকে ব্লগে দেখা যাচ্ছে না- আশা করি উঁনি সুস্থ ও ভাল আছেন।)
বুভুক্ষুদের খাদ্য তালিকায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতের ৬০ কিলোমিটারের মধ্যে ঢুকে পড়েছে চীন, স্বাধীনতার পথে হাটছে মনিপুর

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:০৪



ভারতের ৬০ কিলোমিটারের মধ্যে ঢুকে পড়েছে চীন। অন্যদিকে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে সেভেন সিস্টারস এর অন্যতম সিস্টির মনিপুর। ভারতের পতাকা নামিয়ে তারা ইতিমধ্যে নিজেদের সাত বর্ণের পতাকা উত্তলন করেছে।

বাংলাদেশের স্বৈরাচার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি কলা খাই না!

লিখেছেন জটিল ভাই, ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭

♦أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشِّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্'র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
♦بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্'র নামে)
♦ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)


(ছবি নেট হতে)

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×