প্রতিদিন কত শত বিবাহবিচ্ছেদ হয়। বেশিরভাগই আমাদের গা সওয়া হয়ে গেছে। আমরা অনেক সময় ভুল মানুষকে নির্বাচন করি। সে হিসেবে বিবাহবিচ্ছেদ অস্বাভাবিক কিছু না। যদিও বিবাহের ক্ষেত্রে অনেক বিষয় বিবেচনা করা উচিত। অবশ্য দেখা যায় অনেক বিবেচনা করে বিয়ে করলেও ঝামেলা হয়ে যায়। মানুষের মন তো বোঝা যায় না। ৩০-৪০ বছর সংসার করার পরও অনেক বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। জীবনানন্দের ভাষায় বলতে হয়- ধীরে প্রেম মুছে যায় নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়।
বিবাহবিচ্ছেদ স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়ালেও কিছু কিছু বিচ্ছেদ আমাদের একটু বেশিই ব্যথিত করে। বিশেষ করে পাবলিক ফিগার যারা আছেন, যারা আমাদের প্রভাবিত করেন; তাদের বিচ্ছেদ আমরা মানতে পারি না। যেমন হুমায়ুন-গুলতেকিনের ব্যাপারটা। তিন দশকের সংসার কেমনে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল!
গায়ক হিসেবে তাহসান যেমন জনপ্রিয়, ব্যক্তি হিসেবেও যদ্দুর জানা যায় এমন নির্ভেজাল মানুষ কমই হয়। আমি কখনও তার সম্পর্কে নেতিবাচক কিছু শুনিনি। তাহসান শিক্ষক হিসেবেও নাকি তুমুল জনপ্রিয়! অথচ তার ১১ বছরের সংসারটাও টিকল না। মিথিলা কোনো এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তাহসানকে বিয়ে করা ভুল ছিল। অনেকে ভ্রু কুচকে ছিলেন। বলেছিলেন, একমাত্র বাচ্চাটার জন্য হলেও আলাদা হওয়া উচিত হয়নি। আমি অবশ্য এই তত্ত্ব সমর্থন করি না। ভালোবাসা না থাকলে দায়িত্ববোধের চিন্তা করে থেকে যাওয়া সমীচীন নয়।
আঠারো বছরের সম্পর্ক থেকে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো- সুফি যখন বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিলেন, হ্যাঁ করেছিলাম ঘটনাটা জেনে। দীর্ঘদিনের সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটছে; সে জন্য না। মেয়েরা যেখানে উঁচু স্তরের ছেলেদের পছন্দ করে, সেখানে সুফি একজন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী স্বামীকে ছেড়ে যাচ্ছেন; এটা বিস্ময়কর বটে। সুফি প্রমাণ করলেন সব মেয়ে টাকা বা প্রভাব-প্রতিপত্তির কাঙাল না। যদিও বিল গেটসের ঘটনাটা আমরা ভুলে যাইনি। তবে সত্যি কথা হলো- বিল গেটসের বিচ্ছেদের চেয়ে ট্রুডোর ঘটনাটা বেশি বিস্ময়কর। আমার মনে হয় না তাকে কেউ অপছন্দ করে। বোধ করি তার দেশের বিরোধীদলের লোকেরাও তাকে পছন্দ করে।
বেশি ভালো ভালো না এই গল্পটা মনে পড়ে মাঝেমধ্যে। এক বুড়ির কাজ ছিল গ্রামের নববধূদের খুঁত ধরা। কার চুল ছোট, কার নাক বোঁচা, কার দাঁত উঁচু- এসব। তো গাঁয়ে নতুন এক বধূ এলো। দেখা গেল তার কোনো খুঁত নেই। দুষ্টু ছেলেমেয়েরা বুড়িকে ধরল কিছু বলতে। বুড়ি বললেন, “বেশি ভালো ভালো না।”
বেশি ভালো ভালো না তত্ত্বটা আমি অবশ্য বিশ্বাস করি। আমার কয়েকজন বন্ধু অতিমাত্রায় ভদ্র। আমি লিখিত দিতে পারি এরা ভালো। যদিও ভালো-মন্দ ব্যাপারটা আপেক্ষিক। যাহোক, আমার এসব ভালো বন্ধু তাদের স্ত্রীদের কাছে অবহেলিত। অনুমান করি তাদের এসব ভালো মানুষি হয়তো একসময় একঘেঁয়ে মনে হয় তাদের কাছে। সংসার জীবনে একটু ঝগড়াঝাঁটি না হলে চলে না।
আমার এক বান্ধবীরও একই অভিযোগ তার স্বামীর বিরুদ্ধে। ভদ্রলোক বিবাহিত জীবনের ১২ বছরে নাকি একদিনও স্ত্রীর সঙ্গে জোরে কথা বলেননি। বান্ধবীর খুব শখ তার সাথে ঝগড়া করার। কিন্তু ভদ্রলোক ঝগড়ার আগেই আত্মসমর্পণ করে বসেন।
কবি জীবননান্দ দাশও তার স্ত্রীর কাছে বিরক্তিকর মানুষ ছিলেন। যদিও ব্যাপারটা একদিকে ঠিকই ছিল। সংসারে এত অভাব থাকলে কোন বউয়ের মন ভালো থাকে! জীবনানন্দের দারিদ্র্য কিংবদন্তি পর্যায়ে পৌঁছলেও লোকে এটা বলে না উনি অনেক চাকরি পেয়েছেন কিন্তু কেন ধরে রাখতে পারেননি? তাছাড়া এত নিশ্চুপ মানুষকে কে পছন্দ করবে?
জানা যায়, সক্রেটিসও দাম্পত্যজীবনে ঝামেলায় ছিলেন। স্ত্রী তার সাথে সবসময় লেগে থাকতেন। সক্রেটিস এসব থোড়াই কেয়ার করতেন। তবে ভীতিকর ব্যাপার হলো- সক্রেটিস বিপদে পড়ার পেছনে তার স্ত্রীরও নাকি হাত ছিল!
রবীন্দ্রনাথ যে তা তার স্ত্রীর কাছে প্রিয় ছিলেন, তা না। মৃণালিনী দেবী আত্মজীবনীতে লিখে গেছেন রবীন্দ্রনাথ কবি হিসেবে, বাবা হিসেবে সফল হলেও স্বামী হিসেবে ঠিক অতটা দায়িত্ববান ছিলেন না। একটা মানুষ তো চতুর্দিক সামলাতে পারে না। তাও দুঃখ হয় মৃণালিনীর জন্য।
সংসার জীবন সত্যিই কঠিন এক ব্যাপার। দেখা যায়, যে রাষ্ট্র পরিচালনায় সফল সে সংসার পরিচালনায় অতটা সফল না। আবার যে সংসার চালায় সে রাষ্ট্রীয় খুঁটিনাটি বুঝতে অক্ষম।
ছবি: ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৩