somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাষ্ট্র চালনা আর সংসার চালনা এক নয়

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২৩ রাত ১০:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রতিদিন কত শত বিবাহবিচ্ছেদ হয়। বেশিরভাগই আমাদের গা সওয়া হয়ে গেছে। আমরা অনেক সময় ভুল মানুষকে নির্বাচন করি। সে হিসেবে বিবাহবিচ্ছেদ অস্বাভাবিক কিছু না। যদিও বিবাহের ক্ষেত্রে অনেক বিষয় বিবেচনা করা উচিত। অবশ্য দেখা যায় অনেক বিবেচনা করে বিয়ে করলেও ঝামেলা হয়ে যায়। মানুষের মন তো বোঝা যায় না। ৩০-৪০ বছর সংসার করার পরও অনেক বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। জীবনানন্দের ভাষায় বলতে হয়- ধীরে প্রেম মুছে যায় নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়

বিবাহবিচ্ছেদ স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়ালেও কিছু কিছু বিচ্ছেদ আমাদের একটু বেশিই ব্যথিত করে। বিশেষ করে পাবলিক ফিগার যারা আছেন, যারা আমাদের প্রভাবিত করেন; তাদের বিচ্ছেদ আমরা মানতে পারি না। যেমন হুমায়ুন-গুলতেকিনের ব্যাপারটা। তিন দশকের সংসার কেমনে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল!

গায়ক হিসেবে তাহসান যেমন জনপ্রিয়, ব্যক্তি হিসেবেও যদ্দুর জানা যায় এমন নির্ভেজাল মানুষ কমই হয়। আমি কখনও তার সম্পর্কে নেতিবাচক কিছু শুনিনি। তাহসান শিক্ষক হিসেবেও নাকি তুমুল জনপ্রিয়! অথচ তার ১১ বছরের সংসারটাও টিকল না। মিথিলা কোনো এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তাহসানকে বিয়ে করা ভুল ছিল। অনেকে ভ্রু কুচকে ছিলেন। বলেছিলেন, একমাত্র বাচ্চাটার জন্য হলেও আলাদা হওয়া উচিত হয়নি। আমি অবশ্য এই তত্ত্ব সমর্থন করি না। ভালোবাসা না থাকলে দায়িত্ববোধের চিন্তা করে থেকে যাওয়া সমীচীন নয়।

আঠারো বছরের সম্পর্ক থেকে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো- সুফি যখন বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিলেন, হ্যাঁ করেছিলাম ঘটনাটা জেনে। দীর্ঘদিনের সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটছে; সে জন্য না। মেয়েরা যেখানে উঁচু স্তরের ছেলেদের পছন্দ করে, সেখানে সুফি একজন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী স্বামীকে ছেড়ে যাচ্ছেন; এটা বিস্ময়কর বটে। সুফি প্রমাণ করলেন সব মেয়ে টাকা বা প্রভাব-প্রতিপত্তির কাঙাল না। যদিও বিল গেটসের ঘটনাটা আমরা ভুলে যাইনি। তবে সত্যি কথা হলো- বিল গেটসের বিচ্ছেদের চেয়ে ট্রুডোর ঘটনাটা বেশি বিস্ময়কর। আমার মনে হয় না তাকে কেউ অপছন্দ করে। বোধ করি তার দেশের বিরোধীদলের লোকেরাও তাকে পছন্দ করে।

বেশি ভালো ভালো না এই গল্পটা মনে পড়ে মাঝেমধ্যে। এক বুড়ির কাজ ছিল গ্রামের নববধূদের খুঁত ধরা। কার চুল ছোট, কার নাক বোঁচা, কার দাঁত উঁচু- এসব। তো গাঁয়ে নতুন এক বধূ এলো। দেখা গেল তার কোনো খুঁত নেই। দুষ্টু ছেলেমেয়েরা বুড়িকে ধরল কিছু বলতে। বুড়ি বললেন, “বেশি ভালো ভালো না।”

বেশি ভালো ভালো না তত্ত্বটা আমি অবশ্য বিশ্বাস করি। আমার কয়েকজন বন্ধু অতিমাত্রায় ভদ্র। আমি লিখিত দিতে পারি এরা ভালো। যদিও ভালো-মন্দ ব্যাপারটা আপেক্ষিক। যাহোক, আমার এসব ভালো বন্ধু তাদের স্ত্রীদের কাছে অবহেলিত। অনুমান করি তাদের এসব ভালো মানুষি হয়তো একসময় একঘেঁয়ে মনে হয় তাদের কাছে। সংসার জীবনে একটু ঝগড়াঝাঁটি না হলে চলে না।

আমার এক বান্ধবীরও একই অভিযোগ তার স্বামীর বিরুদ্ধে। ভদ্রলোক বিবাহিত জীবনের ১২ বছরে নাকি একদিনও স্ত্রীর সঙ্গে জোরে কথা বলেননি। বান্ধবীর খুব শখ তার সাথে ঝগড়া করার। কিন্তু ভদ্রলোক ঝগড়ার আগেই আত্মসমর্পণ করে বসেন।

কবি জীবননান্দ দাশও তার স্ত্রীর কাছে বিরক্তিকর মানুষ ছিলেন। যদিও ব্যাপারটা একদিকে ঠিকই ছিল। সংসারে এত অভাব থাকলে কোন বউয়ের মন ভালো থাকে! জীবনানন্দের দারিদ্র্য কিংবদন্তি পর্যায়ে পৌঁছলেও লোকে এটা বলে না উনি অনেক চাকরি পেয়েছেন কিন্তু কেন ধরে রাখতে পারেননি? তাছাড়া এত নিশ্চুপ মানুষকে কে পছন্দ করবে?

জানা যায়, সক্রেটিসও দাম্পত্যজীবনে ঝামেলায় ছিলেন। স্ত্রী তার সাথে সবসময় লেগে থাকতেন। সক্রেটিস এসব থোড়াই কেয়ার করতেন। তবে ভীতিকর ব্যাপার হলো- সক্রেটিস বিপদে পড়ার পেছনে তার স্ত্রীরও নাকি হাত ছিল!

রবীন্দ্রনাথ যে তা তার স্ত্রীর কাছে প্রিয় ছিলেন, তা না। মৃণালিনী দেবী আত্মজীবনীতে লিখে গেছেন রবীন্দ্রনাথ কবি হিসেবে, বাবা হিসেবে সফল হলেও স্বামী হিসেবে ঠিক অতটা দায়িত্ববান ছিলেন না। একটা মানুষ তো চতুর্দিক সামলাতে পারে না। তাও দুঃখ হয় মৃণালিনীর জন্য।

সংসার জীবন সত্যিই কঠিন এক ব্যাপার। দেখা যায়, যে রাষ্ট্র পরিচালনায় সফল সে সংসার পরিচালনায় অতটা সফল না। আবার যে সংসার চালায় সে রাষ্ট্রীয় খুঁটিনাটি বুঝতে অক্ষম।

ছবি: ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৩
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×