somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেঘের ওপর আকাশ

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


থাকে শুধু অন্ধকার
মোহনের হাতে মাত্র একটা টিউশনি। ৬-৭ মাস ধরে পড়াচ্ছে এটা। ওয়াসী নামের যে মেয়েটাকে সে পড়ায়; সে ভিকারুননিসায় তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তার সাথে তার প্লে পড়ুয়া ছোটোবোন অনুশাও পড়ে। এ টিউশনি থেকে মাসে চার হাজার টাকা আসে মোহনের। কোচিং তো অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছে। দূর হয়ে যায়, আবার টাকাও কম- এটা একটা কারণ; এছাড়া তালাত ইকবালের এখানে কাজ করবে বলে মুগদার টিউশনিটাও ছেড়ে দিয়েছে সে।

তালাত ইকবাল দু'মাস ঘুরিয়ে কোনো টাকা-পয়সা দিলেন না। সরাসরি বলতে লজ্জা লাগে, তাই হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করেছিল মোহন যেন অন্তত থাকা-খাওয়ার টাকাটা দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো গতিই হলো না। তালাত ইকবাল কেবল ঘোরালেন। মোহন চরকির মতো ঘুরল। কয়েকদিন অপেক্ষা করে অবশেষে সব আশা বাদ দিল।

একবেলা-দু'বেলা না খেয়ে থাকা যায়, কিন্তু দীর্ঘদিন তো সম্ভব না। কোনো একটা বিহিত হওয়া দরকার। এভাবে আর কতদিন চলবে? ইদানীং টিউশনিতে নাস্তাও দেওয়া হয় না। মোহনের সকল দুয়ার বন্ধ হয়ে গেছে। সে পড়েছে মহা মুশকিলে। উদ্ধার হওয়ার রাস্তা পাওয়া যাচ্ছে না।

নতুন বাসাটার সিট ভাড়া এখনও দেওয়া হয়নি। বাড়িওয়ালী বারবার তাগাদা দিচ্ছেন। মোহন বড্ড অস্বস্তিতে পড়েছে। বাড়িওয়ালীকে কয়েকবার ঘোরানো হয়েছে। এখন তো মুখ দেখানো দায়। এ পরিস্থিতিতে কার কাছে সে টাকা চাইবে? তাকে সহযোগিতা করার মতো কেউ নেই জগৎ-সংসারে।

এর মধ্যেই হঠাৎ এক ভদ্রলোক মোহনকে ফোন দিলেন। স্বল্প পরিচিত। মোহনের সাথে প্রায় দেড় ঘণ্টা কথা বললেন। তার বিষয়ে জেনে সহমর্মিতা জানালেন। তারপর বললেন, তার নিজস্ব একটা ওয়েবসাইট আছে। পুরোনো দিনের বিভিন্ন কবি-সাহিত্যিকের লেখা, ক্ল্যাসিক ব্যান্ড বা বাউল সাধকদের গান নিয়ে কাজ করেন তিনি। ভদ্রলোক প্রবাসে থাকেন। দেশে তার এক বন্ধু আছেন, তিনি বিষয়টা নিয়ে কাজ করেন। তার একজন সাহায্যকারী দরকার।

মোহনকে প্রবাসী ভদ্রলোকের বন্ধুর নাম্বারটি দেওয়া হলো। এবং বলা হলো তিনি যেভাবে বলেন, সেভাবে কাজ করতে হবে। সপ্তাহে ৩-৪ দিন, মাসে মোটামুটি পাঁচ হাজার টাকা দেওয়া হবে। আর এমন এক সময়ে কাজে বসতে হবে, যখন দু'দেশের টাইমিংটা ঠিক হয়। তিনজন একসাথে কাজ করবে। মোহন সম্মতি দিল। এছাড়া তার কিছু করারও নেই। অকূলে তার দিশা প্রয়োজন।

হঠাৎ বাড়ি থেকে খবর এল বাবা গুরুতর অসুস্থ। মোহন সব ফেলে বাড়ি চলল। বাবাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে নেওয়া হলো। কয়েকদিন তার চিকিৎসা চলল। বাবা মোটামুটি সুস্থ হলেন। তাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হলো। এরপর কয়েকদিন বাড়িতে থেকে ঢাকায় ফিরল মোহন। বন্ধু রিফাতের ডেস্কটপটাও সাথে করে নিয়ে এল। মোহন গাজীপুর আসার আগে তার ল্যাপটপটা বিক্রি করে দিয়ে সব টাকা রিফাতকে দিয়ে দিয়েছিল। অনিশ্চিত এক ভবিষ্যতের দিকে এগোচ্ছিল সে, ল্যাপটপ বা দামি জিনিসের আবশ্যকতা ছিল না। এখন যখন দরকার পড়ল রিফাত তার ডেস্কটপটা দিয়ে দিল।

নতুন বাসায় সিট ভাড়া দিতে হবে। ইন্টারনেট সংযোগ, রাউটার, কিবোর্ড- এসবের জন্য টাকা দরকার। অথচ পকেটে একটা কানাকড়ি নেই। এসব জেনে প্রবাসী ভদ্রলোক মোহনকে হাজার পাঁচেক টাকা অগ্রিম দিলেন। সব ঠিকঠাক করল মোহন। কিন্তু তার মাথায় চিন্তা রয়েই গেল। কাজটা সে ঠিকমতো পারবে তো? পাঁচ হাজার টাকায় আসলে কী হবে? ঢাকায় কোনোমতে সিট ভাড়া আর খাবার খরচ দিতেই ৯-১০ হাজার টাকা লাগে। অন্যান্য খরচের কথা তো বাদই। আবার বাড়িতে টাকা দেওয়া দরকার। কয়েকমাস যাবত কিছুই দেওয়া হচ্ছে না। নিজেরই চলে না আবার বাড়িতে টাকা দেবে! অসম্ভব ব্যাপার।

প্রবাসী ভদ্রলোকের বন্ধুর সাথে কথা হলো। তিনি রজনীকান্ত সেনের একটা গানের বইয়ের সফট কপি মোহনকে দিলেন, যেটা সংশোধন করতে হবে৷অনেক জায়গায় শব্দ ভেঙে গেছে; সেসব ঠিক করতে হবে। শুরুতে একটু সমস্যা হলেও ধীরে ধীরে সব বুঝতে পারল মোহন। কিন্তু সমস্যা হলো, সে টাকার চিন্তায় কাজে মনোযোগ দিতে পারে না। সারাক্ষণই মাথায় ঘুরে কেমনে ন্যূনতম ২০ হাজার টাকার চাকরি জুটানো যায়। নিজের চলতে হবে। বাড়িতে টাকা দিতে হবে।

প্রবাসী ভদ্রলোক মোহনের ওপর প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হলেন। সে যে আসলে অমনোযোগী; এটা বুঝতে তার সমস্যা হলো না। তবে এর নেপথ্য কারণ বোধকরি অনুধাবণ করতে পারলেন না। মোহনের নিজেরও অনুশোচনা হলো এটা ভেবে যে, অগ্রিম টাকা নিল কিন্তু কাজ করতে পারছে না। ব্যাপারটা এমন না যে তার সদিচ্ছার অভাব। আসলে সে চেষ্টা করলেও পারছে না।

ধাতস্থ হয়ে কাজে বসল মোহন। কিন্তু লেখা বুঝে না। চোখের সমস্যাটা কয়েকদিন ধরে আবার বেড়েছে। বহু বছর আগের সফট কপি এমনভাবে ভেঙে গেছে, কিছু বোঝা যায় না। যতি বা বিরামচিহ্ন অস্পষ্ট। মাঝেমধ্যে কম্পিউটার বন্ধ হয়ে যায়। মোহন বুঝতে পারে কম্পিউটারের মেয়াদই প্রায় শেষ। ২০০৯ সালের কম্পিউটার ২০২২ সালে জোর করে চালানো হচ্ছে।

প্রবাসী ভদ্রলোক দেখলেন মোহনের হাতের স্পিড ভালো না। তিনি ভেবেছিলেন মোহনের এ বিষয়ে দক্ষতা আছে। এখন জানলেন মোহন এতদিন ধরে মোবাইলে টাইপ করে, কম্পিউটারে না। এতদ্বসত্ত্বেও তিনি মোহনকে বারবার সুযোগ দিলেন। তিনি চাচ্ছিলেন মোহন কাজটা করুক। তার দুরবস্থার কথা তিনি ভালোই জানেন। কিন্তু মোহন কাজ ঠিকমতো করতে পারল না।

প্রবাসী ভদ্রলোক সুযোগ দিলেও তার বন্ধু মনে হয় খুব বিরক্ত হচ্ছিলেন। তা হওয়ারই কথা। সারা দিন কাজে ব্যস্ত থাকেন। তার নিশ্চয়ই দায় পড়েনি কাউকে হাত ধরে সব শেখানোর। তিনি যথেষ্ট চেষ্টা করেছেন।

মোহন একেবারে মনোবল হারিয়ে ফেলল। একসময় সে অপারগতা প্রকাশ করল। এবং প্রবাসী ভদ্রলোককে জানাল, সে অগ্রিম টাকা ফেরত দিতে চায়, যদিও এ মুহুর্তে টাকার সংস্থান নেই। ধার করতে হবে কারও কাছ থেকে। তবে কষ্ট করতে হলো না মোহনকে। ভদ্রলোক জানালেন, তিনি টাকাটা নেবেন না।

অসম্পূর্ণ
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৭
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×