দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে হৈচৈ হচ্ছে, হৈচৈ হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে। একটা পক্ষ আগের সরকারের সময়ে হৈচৈ করত কিন্তু বর্তমানে চুপ। আরেকটা পক্ষ আগে চুপ ছিল এখন সরব। তৃতীয় পক্ষটা আগেও সরব ছিল; এখনও সরব। তবে এরা একটু বেকায়দায় পড়ে গেছে।
আগে দ্রব্যমূল্য বা আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কথা বলে অন্তত কোনো ট্যাগ খেতে হতো না। অথচ এখন আফসোস লীগ ট্যাগ খেতে হচ্ছে।
আগে যারা দ্রব্যমূল্য বা আইনশৃঙ্খলা নিয়ে নীরব ছিল, তারা নিশ্চয়ই দালাল ছিল? এখন যারা নীরব থাকছে বা সমালোচকদের বিভিন্ন ট্যাগ দিচ্ছে তারা কী?
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বলা যায়: দেশের বিভিন্ন জায়গায় বন্যা ও কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে কাঁচাবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যে কারণে দামটা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে তুলনামূলক অনেক বেশি। এ অবস্থা বেশিদিন থাকবে না। কিন্তু এটা কী করে বলা যায়, ১৫ বছর কোথায় ছিলেন? ১৫ বছর খারাপ ছিল বলে এখনও খারাপ যাবে? তাহলে কেন এত আন্দোলন? কেন এত রক্তপাত?
কেউ কেউ দেখলাম আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বলছেন, ১৫ বছরের জঞ্জাল দুই মাসে দূর করা সম্ভব না। ঠিক কথা। কিন্তু চট্টগ্রাম বিভাগে যখন বন্যা হলো, অনেক টাকা সাহায্য উঠল। সেই টাকার যথাযথ হিসেব যখন দেওয়া হচ্ছিল না, তখন দেখলাম অনেক জ্ঞানী লোকও তাদের সাফাই গাইলেন। বললেন, ১৮ লাখ কোটি টাকা গেল সেদিকে খবর নেই, এই কয়েক টাকা (নয় কোটি বা তার বেশি) নিয়ে এত হৈচৈ! প্রকারান্তরে তাদের কাজকে সমর্থন দিলেন। একবারও ভাবলেন না এরা যদি এখনই পরিষ্কার না থাকে ভবিষ্যতে পরিষ্কার থাকবে এর নিশ্চয়তা কী? ব্যাপারটা কি এমন শত্রুর পতনে অন্য যে কাউকে সমর্থন দেওয়া যাবে? নিজের বিবেককে প্রশ্ন করা যাবে না?
যাহোক, টাকার হিসেব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায় লোকে চট্টগ্রাম বিভাগে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য টাকা দিল ব্যাংকে রাখার জন্য?
হুমায়ুন আজাদ বলেছিলেন, পাকিস্তানিদের বিশ্বাস করি না গোলাপ নিয়ে এলেও। আমার মনে হয় এই কথাগুলো বাঙালিদের জন্যও প্রযোজ্য। আমাদের জাতিগত স্বভাব কি বদলাতে পারব? আদৌ আমরা কি সভ্য হতে পারব?
দেশে লোকে সরকারি চাকরি চায় দাপট দেখাতে, অসৎভাবে উপার্জন করতে। এই চরিত্র মনে হয় না কখনও বদলানো যাবে। সরকারি চাকরির দাপট আর টাকা কমে গেলে লোকে ওদিকে মুখও ফিরে তাকাবে না।
আমরা কিন্তু জাতি হিসেবে খুবই কিউট। নিজে অসৎ, অথচ অন্যকে সৎ উপদেশ দিই। নিজে কথা বলতে চাই, অথচ অন্যকে তার মতো কথা বলতে দিতে চাই না। সম্প্রতি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাপসী তাবাসসুম উর্মির সঙ্গে কী কাণ্ডটাই না হলো! ইউনূসের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটা মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় উর্মি একটা পোস্ট দিয়েছিলেন। আর যায় কোথায়? চাকরিও গেল, মামলাও হলো। আগের সরকারের সময় এমন ঘটনা ঘটেছে। তাহলে অন্যদের সাথে ইউনূসের পার্থক্যটা কোথায় রইল?
আইনের শাসনের প্রতি বিশ্বাসী ইউনূস নিজের ৬৬৬ কোটি টাকা করের মামলা ছাড়িয়ে নিলেন। গায়েবি মামলা শুরু হলো দেশে। ওদিকে বড় বড় আসামিরা মুক্তি পেতে লাগল। নিয়মকানুনের বালাই নেই। দুই মাসে এত এত খুন হলো, লুটপাট হলো- এসব নিয়েও পদক্ষেপ নেই।
আগের সরকারের সময় শুনতাম রায় এক জায়গা থেকে আসে। এখন দেখলাম সিস্টেম তো একই।
আমাদের পল্টি নিতে বেশি দেরি লাগে না। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের জন্য জানপ্রাণ দিয়ে দিয়েছিলাম। এমন পণ করেছিল কেউ কেউ নিজে একবেলা খেয়ে হলেও রোহিঙ্গাদের খাওয়াবে। কয়েকদিন পর যখন তাদের আসল রুপ বের হয়ে এলো তখন পল্টি নিতে দেরি হলো না। সব দায় একজনের কাঁধে দিয়ে দিলাম।
লালন কম দুঃখে লেখেননি, এক কানায় কয় আরেক কানারে, চলো চলো ভবপাড়ে, নিজে কানা পথ চেনে না পরকে ডাকে বারংবার।
ছবি: সংগৃহীত
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৮:৪৩